E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হাসু বুবুর গল্প : অ্যা ডটার’স টেল

২০১৮ নভেম্বর ১৮ ১৬:০০:১৬
হাসু বুবুর গল্প : অ্যা ডটার’স টেল

কবীর চৌধুরী তন্ময়


দুই বোন। পিতা হারা। পরিবারের আপনজন ছাড়া। পুরো পরিবার ধ্বংসস্তুপের নীচে তলিয়ে গেছে, পরিবারের সবাইকে খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়েছে। বুলেটের আঘাতে আঘাতে ঝাঝড়া করেছে ছোট্ট ভাই রাসেলকে পর্যন্ত। চারপাশে শত্রু মহল। যেখানেই দেখবে, নাম-পরিচয় জানলে হত্যা চেষ্টা করবে। বংশকে নিরবংশ করার শেষ কাজটি দুই বোনকে হত্যা করা। এঁরা দৌঁড়াচ্ছে, মরণ-পণ দৌঁড়াচ্ছে। একটু বাঁচার আকুলতা নিয়ে, শত্রু মহলকে নিশ্চিহ্ন করতে বাঁচতে হবে।

পিতা মুজিব ছাড়া তাঁর পাহাড় সমান স্বপ্ন আগলে রেখে মানুষ-মানবতার জন্য কাজ করার উদ্যোম, বছরের পর বছর পিতার আদর্শ লালন, পরিবারের সবাইকে হারিয়ে শত্রুর মাঝখানে এতোগুলো দিন দুবোনের ভীষণ কষ্টের বোঝা বয়ে বেড়ানো, দুই বোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করা, বেঁচে থাকা, শত প্রতিকূলতার কাছে দমে না যাওয়া, ৮১’র পরবর্তী রাজনৈতিক জীবন, ২১ আগস্ট বাঙালি জাতিকে আবারও অভিভাবকহীন করার ষড়যন্ত্র মোকাবেলার একটি গল্প বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত ডকু-ড্রামা ‘হাসিনা: অ্যা ডটার’স টেল’।

আমি ব্যক্তিগতভাবে যেহেতু লেখালেখি আর গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত তাই এই ডকু-ফিল্মের অধিকাংশ তথ্য-উপাত্তের সাথে আমি পরিচিত। আবার ডকু-ফিল্মের স্থিরচিত্র যেমন রিকশা ভ্যানে চড়া, ব্যাডমিন্টন খেলা, একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে নিজের হাতে রান্না করার দৃশ্যটি বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায়-এটিও অনেকের কাছে পরিচিত ছিল।

তবে, কেউ রাজনীতি পছন্দ করুক, আর না করুক, ‘হাসিনা: অ্যা ডটার’স টেল’ একটি অসাধারণ প্রামাণ্যচিত্রাটি সবার পছন্দ হবে এবং গ্রহণযোগ্যতা পাবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার জীবনীভিত্তিক পাশে শেখ রেহানার উপস্থিতি ও তাঁর কন্ঠ; ডকু-ফিল্মটি হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

ডকু-ড্রামার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ মিনিট। এখানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও তার পরিবারের সদস্যদের দেখা যাবে। উঠে আসবে শেখ হাসিনার সাধারণ জীবনের বেশ কিছু অসাধারণ মুহূর্ত। এ ছাড়াও শেখ হাসিনার জীবনের বিজয়, বিষাদ ও নৈকট্যের দিকগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

সত্তর মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্রে শেখ হাসিনার দর্শন, একজন ইন্ডিপেনডেন্ট সিটিজেন হিসেবে তিঁনি ইতিহাসের বড় একটি অধ্যায়কে কীভাবে যত্নসহকারে আগলে রেখেছেন-এটি দেখা গিয়েছে।
আরেকটি ব্যাপার আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে, ডকু-ফিল্মটি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত, একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার ওপর নির্মিত নয়। এখানে শেখ হাসিনার পারসোনাল জার্নি দেখানো হয়েছে এবং এটি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেফারেন্স হতে পারে, ইতিহাসও হতে পারে।

শুনেছি, ডকু-ড্রামার আবহ সংগীতের কাজ করেছেন কলকাতার দেবজ্যোতি মিশ্র। তিঁনি দৃশ্যের পড়তে পড়তে অসাধারণ আবহ সংগীতযুক্ত করেছেন। আমি কিছুক্ষন থমকে যায়! কিছুটা নিরবতা আমার মাঝেও কাজ করে। চোখ গড়িয়ে অশ্রুজল পড়ে...! বিশেষ করে ৭৫-এর প্রেক্ষাপট নিয়ে শেখ হাসিনার নিরবতার সাথে আমিও হারিয়ে যায়। রক্ত আমার শরীরে টগবগিয়ে উঠে। মানুষ এতো নিষ্ঠুর হয় কী করে? আবার এই নিষ্ঠুর মানুষগুলো-এদেশে বসবাস করছে কীভাবে? রাজনীতি, রাষ্ট্রক্ষমতায় কীভাবে এই বর্বরগুলো অধিষ্ঠিত হয়েছিল-কিছুক্ষনের জন্য আমার ভিতরেও এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করে।

‘হাসিনা: অ্যা ডটার’স টেল’ ডকু-ফিল্মটি সবার কাছে গ্রহনযোগ্যতা পাবে। এখানে অতিরিক্ত কিছুই করা হয়নি। তবে অজানা বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ কওে ৭৫’র পর দুই বোন ভারতে বসবাস করার সময়ও নিজেদের পরিবারের সকল সদস্যদের হারিয়ে অবশেষে নাম-পরিচয়টুকুও গোপন রাখতে হয়েছে। কতটুকু প্রতিকূল পরিবেশ থাকলে, শত্রুপক্ষের বিষাক্ত রক্ত চক্ষু আড়ালে বাঁচার জন্য নিজের নাম পরিবর্তনের তথ্যটুকু চল্লিশ বছর পর নতুন করে উঠে এসেছে।

নির্মাতাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই এখানে যে, দর্শককে পুরো ঘটনার সঙ্গে, প্রতিটি দৃশ্যের সঙ্গে এবং সংগীতের মধ্যে হাঁটাতে পেরেছে বিশেষ মনোযোগের সহিত। দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও আটরপৌরে ও সাদাসিধে জীবনবোধ, দেশ ও জন্মভূমির প্রতি দায় এবং রাজনীতি ও সরকারে সর্বোচ্চ জায়গায় থেকেও সহজ সাবলীল জীবনাচার চলচ্চিত্রের গভীরতাকে ফুটিয়ে তুলেছে।

আরেকটি ব্যাপার আমাকে মুগ্ধ করেছে-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন দর্শনের সঙ্গে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন দর্শনের একটি চমৎকার মিলবন্ধন এই ছোট্ট চলচ্চিত্রটির মধ্য প্রতীয়মান। শেখ হাসিনার মমত্ব সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু দুইবোন টুঙ্গিপাড়া তাঁদের শেকড়টিকে যে এত গভীরভাবে লালন করেন, ভালোবাসেন, মাঝে মাঝে শৈশবে ফিরে যান-এটি এই প্রথম জানা গেল।

বাংলাদেশের বাঙালিরা আমার বাবাকে মারবে, এটা তো ধারণারও বাইরে ছিল...! -শেখ রেহানার এই কথার মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি তাঁর পরিবারের গাঢ় বিশ্বাস ছিল; এই দেশের বাঙালিরা কখনো তাঁদের আঘাত করতে পারে না।

‘আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল...’ বঙ্গবন্ধু’র পছন্দের গানটি এতোটাই মুগ্ধ করেছে, এতোটাই গভীরে স্পর্শ করেছে-এটি এক অন্য রকম নতুনত্ব সৃষ্টি হয়েছে। দর্শক এই ডকু-ফিল্মটি বার-বার দেখবে বলে আমার বিশ্বাস।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আজকের কিছু বিভ্রান্ত প্রজন্মের কাছে ছোট পরিসরে হলেও এটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল ডকু-ফিল্ম। পিতা থেকে কন্যা এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত প্রজন্ম একটি দেশ, একটি জাতিকে কী দিতে পারে-এটিও শিক্ষনীয় বিষয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব, বাংলাদেশের সকল সিনেমাহলগুলোতে এটিকে দেখানোর ব্যবস্থা করা। সহজ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে এটিকে তুলে ধরা উচিত।

হাসু বুবুর গল্প : অ্যা ডটার’স টেল- এ ডকু-ফিল্মটি সেই মানুষটির গল্প, যার বাবা শুধু একজন মানুষ ছিলেন না, একজন নেতা ছিলেন না। যার বাবা শুধু তাঁর একার বাবা নন, ষোলো কোটি মানুষের বাবা, জাতির জনক। এই গল্প জাতির জনকের সেই কন্যার গল্প, ষোলো কোটি মানুষের ভালোবাসার হাসু বুবুর গল্প. ঘাসু আপার গল্প। যেখানে অসাধারণের মাঝে সাধারণ। একজন নেতা, একজন যোদ্ধা, একজন ধৈর্য্যশীল ব্যক্তিত্ব এবং একজন মানবিক রাজনীতির রাজনৈতিক মনোভাব স্পষ্ট প্রতীয়মান যা নতুন প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)।

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test