E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘সুযোগ সন্ধানী’ সালিম সামাদকে প্রেসমিনিস্টার পদে নিয়োগ ও একজন ‘ত্যাগী’ সাবান মাহমুদের আক্ষেপ

২০১৪ জুলাই ২৩ ২০:৫১:৫৭
‘সুযোগ সন্ধানী’ সালিম সামাদকে প্রেসমিনিস্টার পদে নিয়োগ ও একজন ‘ত্যাগী’ সাবান মাহমুদের আক্ষেপ

পুলক ঘটক : প্রবীন সাংবাদিক সালিম সামাদকে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দুতাবাসে প্রেসমিনিস্টার পদে নিয়োগ করা হচ্ছে, এ খবর শোনার পর একজন সহকর্মী হিসেবে প্রীত হয়েছিলাম। তার নিয়োগের পক্ষে GO (Government Order) ইস্যু করা হয়েছিল। তবে যতদূর জেনেছি এখন তার নিয়োগ কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার লন্ডন যাত্রার প্রাক্কালে নাকি বলে গেছেন, তিনি দেশে ফেরার পর বিষয়টি ফয়সালা করবেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘ধিরে চলার’ কৌশল গ্রহণ করেছেন একটি নতুন প্রেক্ষাপটে।

গত ১৮ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)’র ইফতার আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী যোগ দিয়েছিলেন। ইফতারের পর প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক নেতাদের সাথে এক রুদ্ধদ্বার মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। সভায় নির্বাচিত সাংবাদিক নেতারা ছাড়াও ইউনিয়নের কয়েকজন সাবেক সভাপতি/সম্পাদক, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও নেতৃস্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। ঐ সভায় সাংবাদিকদের তরফ থেকে সালিম সামাদের ঐ নিয়োগের বিরুদ্ধে বক্তব্য আসে। এর পরদিন দৈনিক প্রথম আলোতে একটি সংবাদ ছাপা হয়। যাতে বলা হয়, “সভায় উপস্থিত প্রায় সবাই সেলিম সামাদের বিরোধিতা করেন।” প্রকৃতপক্ষে ঐ সভায় একজন মাত্র সাংবাদিক সালিম সামাদের নিয়োগের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন। তিনি সাবান মাহমুদ, ডিইউজে’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক। অন্যরা সবাই নিরব ছিলেন। সাবান মাহমুদের যুক্তি ছিল, ”সালিম সামাদ কখনও ছাত্রলীগ করেন নাই। তিনি কেন আওয়ামীলীগ আমলে এরকম একটা পদ পাবেন? সালিম সামাদ সবসময় আওয়ামীলীগ বিরোধী। তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। তিনি শেখ হাসিনার বাজে সমালোচনা করে বিভিন্ন সময় ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছেন, ইত্যাদি।” বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি দিয়ে তদন্ত করার জন্য সাবান মাহমুদ প্রদানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। এসময় প্রধানমন্ত্রী তার পাসে উপবিষ্ট তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর দিকে তাকিয়ে রসিকতা করে বলেন, “জাসদের তথ্য মন্ত্রীতো, এটা জাসদের কোটায় নিয়োগ।” সাবান মাহমুদের বক্তব্যের প্রতিবাদ করার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন বিএফইউজে’র কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল। কিন্তু তাকে বসিয়ে দেয়া হয়।
মিটিংএর শেষ পর্যায়ে আমি এক ধরণের দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি এবং পাল্টা বক্তব্য দেই। সালিম সামাদের অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল অবস্থান, জামাত-বিএনপি আমলে তার উপর ঘৃণ্য নির্যাতন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের প্রসঙ্গ টেনে আমি বলেছিলাম, তাকে প্রেসমিনিষ্টার পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত যথাযথ হয়েছে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। আমার বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জামায়াত-বিএনপি আমলে যারা অন্যায় নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তাদের প্রতি একটা সহানুভূতীশীল অবস্থান আমাদের থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার কয়েক মহুর্ত পরই ঘটনা জানাজানি হলে, অনেক সাংবাদিক প্রেসক্লাবের ব্যালকনিতে সাবান মাহমুদের বক্তব্যের প্রতিবাদে চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন। তখনও প্রেসক্লাবে দুই শতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে হিমশিম খেতে হয়েছে সাংবাদিক নেতাদের। এসব বিষয়ের কিছুই প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আসেনি।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় তা নিরসনের জন্য ডিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ (Quddus Afrad) এর পরদিন নিজের একটি নোটসহ সংস্লিষ্ট সংবাদের লিংকটি ফেসবুকে পোষ্ট করে দেন। কুদ্দুস আফ্রাদ লিখেছেন, “প্রথম আলোর প্রতিবেদনের "মত বিনিময়" অংশের শুরুতেই যে তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে, তা পুরোপুরি বস্তুনিষ্ঠ নয় । প্রথমত. মত বিনিময়ের শুরুতেই সেলিম সামাদ প্রসঙ্গটি ছিলনা । দ্বিতীয়ত. সভায় উপস্থিত প্রায় সব সাংবাদিক সেলিম সামাদের বিরোধিতা করেননি । মাত্র দু'জন সাংবাদিক এ প্রসঙ্গে সভায় বক্তব্য দেন । একজন নিয়োগ প্রস্তাবের বিরোধিতা করলে, অপরজন সেলিম সামাদের পক্ষে বক্তব্য দেন।“
আসলে সাবান মাহমুদ তার বক্তৃতায় আকস্মিকভাবে সালিম সামাদকে ঐ পদে নিয়োগের বিরোধিতা করেন এবং নিয়োগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান। এরকম দাবি করার আগে তিনি ডিইউজের বর্তমান নেতৃত্বের সাথে কোনও আলোচনাই করেন নাই এবং তিনি যে ডিইউজে’র একজন প্রবীণ সদস্যের সম্মানসূচক একটি নিয়োগের বিরুদ্ধে এরকম বক্তব্য দিতে পারেন -এটা আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি।
এই ঘটনার পর ফেসবুকে সাবান মাহমুদ যা লিখেছেন তার জবাব দিতেই আমার আজকের অবতারণা। তিনি সালিম সামাদকে “সুযোগ সন্ধানী আদর্শচ‌্যুত” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, “আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসা মানে কি সুযোগ সন্ধানীদের রাজত্ব কায়েম করা ?”
এখানে আমার প্রশ্ন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর সুযোগ সন্ধানীদের রাজত্ব কায়েম না হলে সাবান মাহমুদ হঠাৎ বড়লোক হলেন কিভাবে? তার লাল গাড়ি চালানোর টাকা কে যোগায়? আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত তিনি কি রকম জীবন যাপন করতেন তা সাংবাদিক সমাজ দেখেনি? সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদ ব্যবহার করে তিনি নিজের নামে সরকারের ঝিলমিল প্রকল্পে একটি তিন কাঠার প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন। এরপর তদ্বির করে সেই প্লটকে আবার ৫ (পাঁচ) কাঠায় রুপান্তরিত করেছেন। তার নেতৃত্বে সাংবাদিক কোঠায় প্লট বরাদ্দের নামে কি হয়েছে এ নিয়ে কথার শেষ নেই। একথা সর্বজন বিদীত যে সাংবাদিকতার চেয়ে তব্দির বাণিজ্যেই তিনি বেশী সময় দেন। কথিত আছে, এই সময়ে তিনি একাধারে পাঁচটি পরিচয় ব্যবহার করে তার প্রভাব বলয় তৈরি করেছেন: ”১) আমি সাংবাদিক, ২) আমি সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, ৩) আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ, ৪) আমি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম, ৫) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে চেনেন, আমি তার কাছের লোক।”
অথচ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার আগে তার ভুমিকা কি ছিল? বিশেষতঃ ২০০১ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতা হারালো তারপর ? এসময় সারা দেশে আওয়মীলীগের কর্মী-সমর্থকদের উপর নানাবিধ নির্যাতন নেমে আসে। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় তদানিন্তন সরকারের পৈশাচিকতার শিকার হয়। ইসলামী জঙ্গীবাদ নতুন প্রাণশক্তি পেয়ে নিজেদের প্রবল প্রকাশ দেখাতে শুরু করে। মুক্ত গণমাধ্যম তথা সাংবাদিকতার উপর আঘাত নেমে আসে। একুশে টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে সরকারী বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হয়। বিএনপি-জামাতের দলীয়করণ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সরকারি সংবাদ সংস্থা বিএসএস থেকে বহুসংখ্যক সাংবাদিককে চাকুরিচ্যুত করা হয়- যা ছিল বিএসএস’র ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কর্মচ্যুতি। দেশে একের পর এক সাংবাদিক নির্যাতন ও হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে। প্রথিতযসা সাংবাদিক মনিক শাহা, দিপঙ্কর চক্রবর্তী, হুমায়ুন কবির বালু, গৌতম দাস, সামসুল আলম বেলাল প্রমুখ মারা পরেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনতাসির মামুন, বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, এনামুল হক চৌধুরী এবং সালিম সামাদকে গ্রেফতার করে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হয়। ময়মনসিংহের সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ মামলার আসামী করা হয় এনামুল হক চৌধুরী ও মুনতাসির মামুনকে। শাহরিয়ার কবির এবং সালিম সামাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রহিতার মামলা দেয়া হয়। বাংলার অন্যতম সেরা লেখক ও প্রথা বিরোধী বুদ্ধিজীবি হুমায়ুন আজাদকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয় এবং পরবর্তীতে তিনি মারা যান। সুফী সাধকের মাজার, আহমদিয়া মসজিদ, খ্রীষ্টান চার্চ, সিনেমা হল এবং মু্ক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল রাজনীতিকবৃন্দ একের পর এক বোমা হামলা শিকার হন। ২১ আগষ্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা বিফল হলেও মারা পরেন অনেকে।
দেশের সেই দু:সময়ে কি ছিল সাবান মাহমুদের ভূমিকা? আমরা যেদিন মানিক সাহা হত্যার প্রতিবাদে মিছিল করছিলাম, তিনি কেন সেই মিছিলে যোগ দেন নি? দিপঙ্কর, গৌতম, বালু, বেলাল হত্যার প্রতিবাদ মিছিলে কেন পাওয়া যায়নি সাবান মাহমুদকে? আমরা যখন বিএসএস-এ গণ চাকুরীচ্যুতির প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছিলাম তখন তিনি কেন তাতে যোগ দেননি? প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সরব ছিলাম। কিন্তু তিনি কি করেছেন?
‘৯৬ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন সাবান মাহমুদ বিটিভির চাকরি বাগিয়ে নিয়েছিলেন। এই চাকরির সুবাদেই তার পরিচিতি বাড়ে। কথিত আছে যে জামাত-বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ঐ চাকরী রক্ষার তাগিদে তিনি তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে কোনও উচ্চবাচ্চ করেন নি। এমন কি তিনি বিএনপি নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন চাকরি বাঁচানোর জন্য। বিএনপি’র এক মন্ত্রীর কাছে তিনি নাকি বলেছিলেন, “আমি তো প্রফেসনাল সাংবাদিক। আমার চাকরিটা খাইয়েন না। আমার প্রতি অাস্থা রাখেন। এতদিন শেখ হাসিনার পক্ষে নিউজ করেছি, এখন খালেদা জিয়ার পক্ষে নিউজ করব।” এটা আমার অন্যের মুখে শোনা কথা। তিনি আসলে কি বলে বিএনপি নেতাদের তুষ্ট কারা চেষ্টা করেছেন তা তিনিই জানেন। তবে একথা সত্য যে, তার শেষ রক্ষা হয় নি। অন্য অনেকের সঙ্গে তাকেও বিটিভি’র চাকরি হারাতে হয়।
২০০৬ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসল। সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলেন, আর সাবান মাহমুদরা ভীরে গেলেন “সংস্কারপন্থী” আওয়ামীলীগ নেতাদের কাতারে। ”সংস্কারপন্থী” নেতারা সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছের লোক ছিলেন। প্রেক্ষাপট আবারও বদলে গেল। ২০০৮-এ আওয়ামীলীগ নির্বাচিত হল। এবার ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার জন্য একটা শক্ত প্লাটফরম দরকার। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করলেন তিনি। হেরে গেলেন। ২০১১ সালে আবারও ভোটে দাঁড়ালেন। এই নির্বাচনে টাকার বান ছুটল। সম্ভাব্য শক্ত প্রতিদ্বন্দীর সাথে আপোষরফা করে তাকে বসিয়ে দিলেন। সাবান নির্বাচিত হলেন। তার বিপরিত মেরুতে থেকে বরাবরের মত আমি আবারও সর্বাধিক ভোট পেয়ে নির্বাহী পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হই।
সাবানের নেতৃত্বাধীন ঐ কমিটিতে থেকে তার কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ্য করার সুযোগ আমার হয়েছে। নিজের ”সংস্কারপন্থী” অবিধা অপ্রমাণের জন্য গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ইউনিয়ন নেতাদের বৈঠকের সময় শেথ হাসিনা’র কাছে তার অার্জি আমি কাছে থেকে প্রত্যক্ষ্য করেছি। সাবান যখন বলছিলেন, “আপা ডিইউজে’র ইতিহাসে আমিই প্রথম আপনার ছবি ইউনিয়ন অফিসে ঝুলিয়েছি” এর প্রত্যুত্তরে শেখ হাসিনার সেই কড়া জবাব আজও স্পষ্ট মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, “কে তোমাকে বলেছে আমার ছবি টানাতে? আমি কি নিজের ছবি কোথাও টানাতে বলি? সংবিধান সংশোধন করে আমি আমার পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানোর বিধান করেছি।” গণভবন থেকে বিদায় নেয়ার প্রাক্কালে শেখ হাসিনার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেছিলেন সাবান। সালাম করার সময় প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেছিলেন, “আপা, সামনে জামাত-বিএনপি’র সরকার বিরোধী আন্দোলন। একটা কঠিন সময় আসছে। দোয়া করবেন, যেন আপনার পক্ষে রাজপথে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়াতে পারি। শেখ হাসিনা বিরক্ত হয়ে এর উত্তরে বলেছিলেন, “কিসের কঠিন সময় আসছে? তোমাকে কে বলেছে এসব? তোমাকে কিছু করতে হবে না।” শেখ হাসিনার সেই রাগত: কণ্ঠস্বর কেবল আমি একা নয়, বিএফইউজের তৎকালীন সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ডিইউজে’র সাবেক সভাপতি শাহ আলমগীর (পিআইবি’র বর্তমান মহাপরিচালক), বিএফইউজে’র মহাসচিব আব্দুল জলিল ভুঁইয়াসহ অনেকেই কাছে দাঁড়িয়ে শুনেছেন। এসব কথার মধ্য দিয়ে সাবান কেবল নিজেকে নয়, সকল সাংবাদিক নেতাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিলেন।
তাই আমার জিজ্ঞাসা, কে আসলে সুযোগ সন্ধানী? সালিম সামাদ, নাকি সাবান মাহমুদ। সাংবাদিকতার জন্য কিংবা সমাজের প্রগতিশীল উন্নয়নের জন্য কার ত্যাগ রয়েছে? সালিম সামাদের, না কি সাবান মাহমুদের? ছাত্র জীবনে সালিম সামাদ আওয়ামীলীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন না একথা সত্য। সমাজতান্ত্রিক অাদর্শের আহ্বান অসংখ্য তরুনের মত তাকেও কোনও একদিন জাসদের রাজনীতির দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। সে অনেক পুরনো কথা। পরবর্তী জীবনে তিনি আর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকেন নি। তবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য, তথ্য অধিকারের জন্য, একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণের জন্য সালিম সামাদের যে নিরন্তর লড়াই তা তার সহকর্মীদের অজানা নয়। সাংবাদিক ইউনিয়নের একজন নেতার পরিচয় ব্যবহার করে সালিম সামাদের নিয়োগের বিরোধিতা করলেন সাবান মাহমুদ। তাকে বললেন, ”সুযোগ সন্ধানী”। একথা শুনে পাগল রবীন্দ্রনাথ আর একবার বলছেন, “আমি শুনে হাসি আঁখি জলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে? তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।”
প্রধানমন্ত্রীর কাছে চেষ্টা করলেও সহজে পৌছানো যায় না। কাজেই তার কাছে সালিম সামাদ প্রসঙ্গে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে যে ক্ষতি সাবান মাহমুদ করেছেন, তা আর আমরা সহজে বদলাতে পারব না। প্রকৃত সাংবাদিক নেতা কখনও তার ইউনিয়নের কোনও সদস্যের চাকরিতে নিয়োগের বিরোধীতা করতে পারে না। ক্ষতি করতে পারে না। এটা নেতার ধর্ম নয়। আমরা যারা সাংবাদিক সমাজকে নিয়ে “রাজনীতি করি” তাদের সবাইকে অনুরোধ করব এই ধর্মটি মাথায় নিয়ে পথ চলার জন্য।
আমার আর একটি অনুরোধ আছে। তা হল, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাংবাদিকদের যে ঐক্যবদ্ধ ফোরাম তাকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দিবেন না। ছাত্রলীগের অনেক প্রাক্তন ত্যাগী নেতা বিভিন্ন সময় সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে এসেছেন। অতীতে যারা ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ কিংবা অন্য কোনও ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন তারাও এসব সাংবাদিক নেতার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন। কোনও সংঘাত হয়নি। কিন্তু সাবান মাহমুদ ভিন্ন রাজনৈতিক প্লাটফরম থেকে উঠে আসা সাংবাদিক নেতাদের সাথে যে ধরণের হিংসাত্মক আচরণ করেন, তাতে ফোরামের ঐক্যই কোনও এক সময় হুমকীর মধ্যে পড়তে পারে। এ বিষয়ে সকলের সজাগ দৃষ্টি কামনা করি।

লেখক : সাংবাদিক

(এএস/জুলাই ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test