E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এ আগুন জ্বালিয়ে রাখো

২০১৯ মে ০৩ ১৫:০২:০৪
এ আগুন জ্বালিয়ে রাখো

চৌধুরী আবদুল হান্নান


নুসরাতের গায়ে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুন নিভেছে তার  জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে। নুসরাত সকলকে কেবল কাঁদিয়ে যায়নি আগুন জ্বেলে দিয়ে গেছে, আক্রোশের আগুন। সে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়েছে আমাদের জাগিয়ে দিয়ে। আগুন কেবল সৃষ্টিকে ধ্বংসই করে না সকল আবর্জনা পুড়িয়ে নতুন সৃষ্টির পথও তৈরী করে দেয়।

নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে নুসরাত প্রতিকার চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করেছিল কিন্তু থানা পুলিশ তার পাশে দাড়ায়নি, নিরাপত্তাও দেয়নি। বরং মূল অভিযুক্তকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। শুধু তাই নয় নুসরাতকে উল্টো ফাঁসাতে চেয়েছে।

জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারের বেতনভূক্ত কর্মচারীর এমন আচরণ সবাইকে বিস্মিত করেছে। যদিও সোনাগাজী থানার সাবেক ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে কিন্তু পুলিশ যখন পুলিশের অপরাধের তদন্ত করে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে এমন প্রশ্ন থেকেই যায়।

পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নুসরাত পরীক্ষা অসমাপ্ত রেখেই তার জীবনের সমাপ্তি টেনেছে। মর্মস্পর্শী, হৃদয় বিদারক তার এ পরিনতিতে কেবল স্বজনরাই কাঁদেনি, কেঁদেছে বাংলাদেশ।

এ তো শুধু ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসা নয়, বাংলাদেশের যে কোনো প্রত্যন্ত মফস্বলে, রাজধানী থেকে শুরু করে প্রতিটা নগরে, বন্দরে, জনপদে, রাজপথে এ একই গল্প। যৌন নির্যাতনের সব খবর তো জানাজানিই হয় না, ভূক্তভোগীরা তা গোপন রাখার চেষ্টা করে।

ইসলামে মেয়েদের প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার স্বীকৃত অথচ এ ধর্মের ধারক ও প্রচারকদের কিছু সংখ্যকের হাতে ইসলাম ধর্মের মূল বাণী বিকৃত, এদের যত ফতোয়া নারীর বিরুদ্ধে, নারীকে ঢেকে রাখা, গৃহবন্দী করে রাখাই এদের বাণী।

কিন্তু আমাদের মেয়ে নুসরাত তো বোরখা, হিজাব, হাতে-পায়ে মুজা পড়েও তার শিক্ষকের যৌন লালসা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি। এ সকল ভন্ড হুজুরদের এখনই প্রতিহত করতে হবে অন্যথায় নুসরাতরা বাঁচবে না।

এ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই নৈতিক চরিত্র গঠনের আদর্শ বিদ্যাপীঠ বলে মনে করা হয় অথচ মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক দ্বারা ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনা কম নেই।

নুসরাতের মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে সারাদেশ যেখানে উত্তাল সেখানে দেশের আলেম সমাজ বিস্ময়করভাবে নিশ্চুপ। চরিত্রহীন, লম্পট, চোপর, গুন্ডাদের ধর্মের কাহিনী শুনিয়ে কাজ হবে না, বিচার করতে হবে। জনমনে বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়েছে যে, বিচারহীনতার কারণে এ ধরনের নৃশংস, মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে চলেছে।

নুসরাতের মৃত্যুকালীন ডাক- “আমার যা হবার হোক দোষীদের যেন বিচার হয়” বৃথা যেতে পারে না।

আমরা কত ধৈর্যশীল, সীমাহীন আমাদেও ধৈর্যশক্তি। আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু যন্ত্রনায় মেয়ের আর্তচিৎকারের ডাক শুনেও বিক্ষুব্ধ জনতা এমন লম্পট হুজুরের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়নি।

নুসরাত হত্যার বিচার এ সরকারের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। আইনমন্ত্রী, রাষ্ট্রের আইন কৌশলী এটর্নি জেনারেলসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন, এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি মনিটরিং করেছেন, হাইকোর্টও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন-প্রয়োজনে আদালত হস্তক্ষেপ করবে। এবার নুসরাত হত্যার বিচার না হয়েই পারে না।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test