E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঋণ খেলাপিদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক

২০১৯ জুন ০২ ১৭:০৫:৪১
ঋণ খেলাপিদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক

চৌধুরী আবদুল হান্নান


পরিস্থিতি এতটা নাজুক যে খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। জনস্বার্থে অনেক সময় আদালতের এমন ভূমিকা দেখা যায়, ফলে আদালতের প্রতি জনআস্থা আরও বৃদ্ধি পায়।

উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ঋণ খেলাপিদের তালিকা জমা দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এক পর্যায়ে এ বিষয়ে দায়েরকৃত রিট শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার-১৯৭১ এর ৪৬ ধারার বরাত দিয়ে আদালতকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রকাশে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই তালিকা দেওয়া যাচ্ছে না।”

এ বিষয়টি আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য নয়, আইনের ছাত্ররা এর ব্যাখ্যা দিতে পারেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আদালত যে কোনো কিছু চাইতে পারে সেখানে অন্য আইন বা বিধান বাঁধা হতে পারে না।

টাকার অনেক ক্ষমতা, আর যে টাকা কষ্টার্জিত নয়, অবলীলায় পাওয়া তার ক্ষমতা আরও ব্যাপক। অবৈধ কালো টাকার অবাধ প্রবাহে সৃষ্ট সামাজিক অস্থিরতায় ভুগছে প্রতিটি নাগরিক।

ঋণ খেলাপিরা ব্যাংক খাতের মূল সমস্যা তৈয়ারী করে রেখেছে, তারা বেপরোয়া। তারা বুঝতে পেরেছে ঋণ পরিশোধ না করলে তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। তাদের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি এবং আর্থিক প্রতাপ অসীম, অর্থ শক্তির কাছে আমরা বার বার অসহায় হয়ে পড়ছি।

আদালতের নির্দেশ পরিপালনে গড়িমসি করে বাংলাদেশ ব্যাংক কার স্বার্থ রক্ষা করছে? ব্যাংক খাত বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন যাবৎ পরামর্শ দিয়েছেন তাদের নাম-পরিচয় পত্রিকায় ছেপে দেওয়ার জন্য যাতে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক চাপ সৃষ্টি হয়। জনস্বার্থ বিবেচনা করে উচ্চ আদালতের নির্দেশের সাথে সাথে ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করে দেওয়ার এক বিরল সুযোগ তৈরি হয়েছিল।

বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির ২০১৬ সালের মার্চে দায়িত্ব নেওয়ার পর পর সমকাল পত্রিকায় ২১ এপ্রিল, ২০১৬ এ “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নরের কাছে প্রত্যাশা” শিরোনামে আমার একটি লেখা ছাপা হয়েছিল। তাতে প্রত্যাশা ছিল, নতুন গভর্নর ব্যাংক খাতে আলো জ্বালাবেন কিন্তু আলো জ্বলেনি আজও বরং আঁধার ঘনিভূত হচ্ছে।

নানা চাপ, হস্তক্ষেপের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পাছে না বলে যে অভিযোগ আছে তা অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু তাদের সক্ষমতা প্রমান করার কোনো প্রচেষ্টাও চোখে পড়ছে না।

আইন দ্বারা গঠিত একটি স্বাধীন সংস্থা এভাবে অনুগত, নতজানু হওয়া মানায় না। উচ্চ আদালতের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করলে একদিকে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের নতুন পথ উন্মুক্ত হতো এবং অন্যদিকে তাদের অক্ষমতার দুর্নামও কিছুটা হলেও লাঘব হতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগে কোনো নীতিমালা নেই। গভর্নর নিয়োগে আনুগত্য নয়, দক্ষতা বিবেচনা করতে হবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test