E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জনসংখ্যা দিবস ভাবনায় ‘কন্যা শিশু’!

২০১৯ জুলাই ১১ ১৬:১২:২০
জনসংখ্যা দিবস ভাবনায় ‘কন্যা শিশু’!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন


‘মা’ শব্দটি বড়ই মমতামাখা। সব পুরুষ-নারী অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষেরই রয়েছে নিজস্ব নিজস্ব মা। মার গর্ভ থেকেই একদিন না একদিন ভূমিষ্ট হয়েছিলাম আমরা প্রত্যেকেই। সেই ‘মা’ শব্দটি শুনলেই আমার ‘গর্ভধারিনী মা’ হৃদয়ের কোনে জেগে উঠেন। ‘মা’ ডাকটি কর্ণগহব্বরে প্রতিধ্বনিত হলেই জেগে উঠে আমার সেই মায়ের সমস্ত আবেগ-শিহরণ। টুকরো টুকরো স্মৃতির নানান উপত্যকা।

আমার গর্ভধারিনী মা আর ‘প্রত্যাশিত কন্যা শিশু’র অবয়বটি আমার কাছে সম্পূর্ণ এক। ভাবনাটির দীর্ঘসূত্রিতার প্রক্ষেপণ নিজস্ব বিশ্বাসভাবনার অনুসঙ্গী। আমার নিকট তা বারংবার প্রত্যাশিত শব্দটিকে এজন্য বলা যে, আমাদের স্বামী-স্ত্রী দুজনার কাছেই সেই স্বপ্নের কন্যাটি তার আগমনবার্তা নিয়ে অদ্যাবধি পৃথিবীর ভূতল স্পর্শ করেনি। করবে কি না তাও জানা নেই।

তখন নিস্তব্ধ রাত। পৃথিবীর আর সব স্বামী-স্ত্রীর মতো এ সময় আমরা দুজন পাশাপাশি শয়নরত। যুগল অভিসারী অভিযাত্রায়। ঠিক এই সময়টা প্রতিটি স্বামী-স্ত্রীর দৈনিক সংসারযাপন শীর্ষক টুকরো টুকরো প্রতিটি পর্বের বিশ্লেষণমুখর নিজস্বপ্রহর। এই বিশেষ সময়টাতে দাম্পত্যে জোয়ার আসে অভিন্নতায় হারিয়ে যাবার তবে। যাই হোক, ওরকম কিছুতে তখন মনোনিবেশ করিনি আমরা। শুধু শঙ্কা দানা বেঁধেছিল মনে আর মননে : আমাদের দু’জনার প্রার্থনারত শিশুটি যদি ‘কন্যাশিশু’ হয়, তবে... ?

আমার স্ত্রী উৎকণ্ঠিত। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অলিগলতে বয়ে যাওয়া বিশেষত কন্যাশিশুদের প্রতি মানুষরুপী জানোয়ারগুলোর নৃংশস সহিংসতা পুরো জাতিকে স্তম্বিত, ভয়ানক করে তুলেছে। মানুষ তাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাসগুলো হারাতে বসেছে। আমার স্ত্রী নানা কথার ভেতর দিয়ে বুঝতে চাইছেন- আমাদের সন্তানকামনাটা এ দেশের সাম্প্রতিককালের প্রেক্ষাপটে ঝুঁকিমুক্ত সিদ্ধান্তের চিরনির্ভর অংশ কি না?

আমি তার আবছা অন্ধকারময় মুখটা সাংসারিক নানা টানাপোড়েন আর চিরবিষন্নতায় মিলিয়ে যেতে দেখি! গভীর কষ্ট জাগে! হৃদয় কেপে ওঠে! প্রার্থিত কন্যাশিশুটির আগমন বীজবপন তবে কি একটি ভুল সিদ্ধান্তের নীরব তাচ্ছিল্য হবে? যা এক সময় আমাদের পরিবারকে নিয়ন্ত্রণহারা মালবোঝাই ট্রাকের মতো দুমড়েমুচড়ে দিয়ে তীব্র শোক আর গগণবিদারী হাহাকারে আমাদের ক্ষতবিক্ষত করে মারবে? আমি কি তাকে তার ‘মা হওয়ার অধিকার’ থেকে এভাবে বঞ্চিত রাখতে পারি? নাকি এটা উচিত? নানান কথারা প্রশ্ন হয়ে কিলবিল করে উঠে!

ঘুম পালিয়েছে দূরে। সীমান্তের ওপাটায়। উৎকণ্ঠার সেনা-সদস্যরা এমনভাবে আমাদের দুজনের চিন্তাভূমির রাজ্যের চারপাশে এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যে ঘুমশান্তি তার গভীরতা নিয়ে কিছুতেই প্রবেশ করতে পারছে না এখানে। দিতে পারছে না আমাদেরে অবচেতনার মুগ্ধতা। কেবল দুশ্চিন্তা, কেবল উৎকণ্ঠা, কেবল অদেখা হাহাকার। হায়রে !

অনাদিকাল থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে সহজতর সমীকরণে একই পরিবারে অসংখ্য কন্যাশিশু ভূমিষ্ঠতার আনন্দছড়ায়। শুধু আমাদের মতো সংখ্যালঘু মধ্যবিত্ত পরিবারের বেলায় এতো উৎকণ্ঠা! এতো হিসাবনিকাশ! এ তো আমাদের সীমাহীন শরীরী খেলা নয়। এ তো আমাদের রাত্রিছুঁয়ে অতি গোপন প্রহর নয়। এটি অবশ্যই একটি সুস্থ দম্পতির সন্তানধারণ আর পরিকল্পনাগ্রহণের আত্মবিশ্লেষণের উজার জমিন।

আমার গর্ভধারিনী মার মতো আমার লক্ষ্মীতুল্য শিশু ‘মা’ আসবে কি আসবে না; তা সময়ের কাছে আজ চির অজানা। আমাদের শুক্রানু-ডিম্বানুময় শরীরশীর্ষক চিরনির্ভর প্রেম কিংবা ‘এক্স’ ‘ওয়াই’ ক্রোমজমের ধারা আমাদের প্রার্থিত-কাঙ্খিত সেই কন্যাশিশুটির বাবা-মা হতে দেবে কি না তাও আজ চির রহস্যময়। ওদিকে অনিশ্চিত প্রহর কাঁদে শিশু মায়ের আশায়। স্বপ্নে ভাসে ঝুনঝুনিময় শিশুপায়ে তার উঠোন দাপিয়ে বেড়ানোর অসম্ভব সুন্দর শিহরিত প্রতিধ্বনি।

প্রতি বছরের মতো এবারও ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’ এলো। কিন্তু এবারের দাম্পত্যঘেরা প্রশ্নগুলো অন্য বছরের তুলনায় একেবারে আলাদা। জানি না, আগামী বছরটি পরিবারের কন্যাশিশুর প্রশ্নে আরো সুকঠিন আলাদা হবে কি না?

নতুন করে একটি কন্যাশিশুকে এই বাংলাদেশে আনতে পারা উচিত নাকি অনুচিত - তার সঠিক সিদ্ধান্ত আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়ই আজও নিতে পারলাম না। দুর্ভাগ্য আমাদের!

লেখক : সাংবাদিক ও আবৃত্তিশিল্পী, [email protected]

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test