E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

র‌্যাব বিলুপ্ত করার সময় আসেনি

২০১৪ আগস্ট ০২ ১২:৫৪:০৫
র‌্যাব বিলুপ্ত করার সময় আসেনি

চৌধুরী আ. হান্নান : দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে র‌্যাব এখনও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য বাহিনী। আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতির সময় প্রয়োজনের ত্যাগিদে এই এলিট ফোর্সের সৃষ্টি হয়েছিল।

বিগত ১০ বছর প্রায় ৮০০ হত্যাকান্ড ঘটনার জন্য র‌্যাবকে দায়ী করেছে আন্তর্জাতিক মানবধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। র‌্যাবকে ঘাতক বাহিনী উল্লেখ করে একে বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে নিউইয়র্ক ভিত্তিক সংস্থাটি।

একটি সশস্ত্র বাহিনীর ১০ বছরের সাফল্য ও ব্যর্থতার পরিসংখ্যান ভিত্তিক হিসাব সাধারণ জনগণের নিকট জরুরী নয়। তাদের কাছে বেশী জরুরী আতংকহীন পথচলা-শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন। বিগত মসয়ে ‘ক্রস ফায়ারে’ যত লোক মারা গেছে তাদের অধিকাংশই বড় ধরণের অপরাধে অভিযুক্ত এবং অনেকেই হত্যা মামলার আসামী। তবে র‌্যাবের অপারেশনে কিছু নিরাপরাধ লোক মারা গেছে বলে জনমনে বিশ্বাস রয়েছে। আগাছা পরিস্কার করতে গেলে দু-একটি ভাল গাছের চারাও নষ্ট হয়। অথবা এক্ষেত্রে নিরাপরাধ লোকের মৃত্যুকে দুর্ভাগ্য বলে মেনে নিতে হবে।

দেশের বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় একজন হত্যা মামলার আসামীকে আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শাস্তি নিশ্চিত করতে ৫/১০ বছর লেগে যায়। তারপর আবার রয়েছে এক ভয়ংকর অস্ত্র-রাষ্ট্রপতির ক্ষমা। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে যত বড় অপরাধী তার শাস্তি কার্যকর হওয়ার সম্ভবনা তত কম। যার ক্ষমতা (রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক) আছে তার জন্য সকল সুবিধা বিদ্যমান। তার পক্ষে জেলখানাকে ‘স্বর্গে’ পরিনত করা কোন অসম্ভব বিষয় নয়। এ অবস্থায় আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে সরকারের বিশেষ বাহিনী গঠন করা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে। কিন্তু যুগে যুগে দেশে সরকারের গঠিত নিজস্ব বাহিনী অনিদিষ্ট সময় ধরে পরিচালনার ফল শুভ হয়নি। এই ধরনের বাহিনী প্রথম দিকে সরকার টিকিয়ে রাখতে বাড়তি শক্তি যোগায় কিন্তু ধীরে ধীরে তা দলীয় বাহিনীতে পরিনত হয়ে পড়ে এবং শেষ দিকে সরকার পতন ত্বরান্বিত করে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চিঠির মধ্যে আমেরিকার কোন নতুন কুটনীতিক অনুপ্রবেশ কিনা তা ভেবে দেখার সময় এখন। নিকট অতীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন কয়েকটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হয়নি। বাংলাদেশের জন্ম-লগ্নে আমেরিকা আমাদের শত্রু রাষ্ট্র ছিল, যুদ্ধাপরাধী বিচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য তাদের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনার মাধ্যমে নানা রকম কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে। বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে লিখিত অলিখিত অনেক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তারা। একটি ছোট্ট দেশের নিকট আপাত কুটনৈতিক পরাজয় আমেরিকাকে আহত ব্যাঘ্র করে তুলবে।

বিশ্বের একটি পরাশক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি মর্যাদার সাথে সমুন্নত রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এশীয় অঞ্চলের দেশগুলো তা বিস্ময়ের সাথে প্রত্যক্ষ করেছে। পৃথিবীর অপর পিষ্ঠের অন্য গোলার্ধের এক দেশ এশীয় অঞ্চলে মোড়লগিরি করবে, সে দিন হয়ত ফুরিয়ে আসছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত এখন বিশ্বরাজনীতিতে এমন এক শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে যে মার্কিন রাষ্ট্রকে এদিকে উঁকি দিতে হলে চীন ও ভারতের মনোভাব বুঝতে হবে।

র‌্যাব বিলুপ্তি বা সংস্কারের বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাটির চিঠি কোন ভুমিকা রাখবে না। সিদ্ধান্ত নিবে কেবল বাংলাদেশ সরকার। বিগত ১০ বছরে কিছুটা সুনাম ক্ষুন্ন হলেও র‌্যাব আছে বলেই আমরা ঘুমাতে পারি। সন্ত্রাসীদের নিকট র‌্যাব এখনও এক আতংকের নাম।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test