একাত্তরের বাংলাদেশ : কতটা এগুলো-কতটা পিছালো?
রণেশ মৈত্র
১৯৭১ এর সারাটি বছর ধরেই বাঙালি একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক, বাঙালি জাতীয়তাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা করে ঐ বছরের মধ্য - ডিসেম্বরে এসে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে।
গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে বাঙালি সেদিন বিজয় অর্জন করেছিল তার তাৎপর্য্য ছিল অসীম। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদক তাড়াতে গিয়ে মুসলিম লীগ ও বৃটিশ শাসকদের ষড়যন্ত্রে ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম অংশে মুসলিম সংখ্যাধিক্য থাকা অঞ্চলগুলি নিয়ে সৃষ্টি হলো পাকিস্তান। সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপক উত্থানের পটভূমিতে সৃষ্ট ঐ পাকিস্তানের প্রতি বাঙালি মুসলিম সমাজের সমর্থন ছিল ব্যাপক। পাকিস্তানকে “ইসলামী প্রজাতন্ত্র” বলেও ঘোষণা করা হলো। ইসলামী জোলের জয় জয়কার প্রতিষ্ঠিত হলো।
কিন্তু ঐ জোশ তো দীর্ঘস্থায়ী হলো না। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েকমাস পরেই ১৯৪৮ এর মার্চে ঐ বাঙালি মুসলিমরাই মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্য্যাদায় অসীন করার লক্ষ্যে শাসক মুসলিম লীগের বিরূদ্ধে আন্দোলনে নামতে বিন্দুমাত্র পিছপা হন নি।
ভাষা আন্দোলন ১৯৪৮ এ শুরু হলেও এবং সে আন্দোলনের আস্তন ধীরে ধীরে জ্বলতে থাকলেও ১৯৫২ র ফেব্রুয়ারীর একুশ তারিখে বুকের রক্ত ঢাকার রাজপথে ঢেলে দিয়ে তাদের প্রাণের দাবীর অনুকূলে প্রথম বিজয় ছিনিয়ে আনলেন।
এভাবে বিজয় অর্জনের শুরু। আর তারপরে আন্দোলন থেমে না থেকে ধারাবাহিকতার সাথেই তা একের পর এক চলতে থাকে-অর্জিত হতে থাকে একের পর এক বিজয়। ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান এক মহা বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস-খ্যাত ছয় দফার ভিত্তিতে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান-আদিবাসী-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ব্যাপকতম এবং ইষ্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠে। এই ঐক্যই ১৯৭০ এর নির্বাচনী রায় এ সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়। একই ঐক্য আবার ১৯৭১ এর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে নিশ্চয়তা এনে দেয়।
আর সেই ঐক্যই মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সমগ্র বিশ্ববাসীকে সমবেত করতে নিয়ামক ভূমিকা রাখে। বিজয়ের বরমাল্য শোভা পায় বাঙালি জাতির গলায়। বঙ্গবন্ধু যথার্থই জাতির জনকে পরিণত হন।
যে স্বাধীন বাংলাদেশ-ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের, সাড়ে সাত কোটি বাঙালি ২৩ বছর ধরে নিয়মতান্ত্রিক লড়াই এবং শেষতক নয় মাস ব্যাপী সশস্ত্র যুদ্ধ করে অর্জিত স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধুকে উপহার দেন। এ উপহার গ্রহণ করেই বঙ্গবন্ধু ক্ষান্ত হন নি স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তির পর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই বাহাত্তরের ৪ নভেম্বর তারিখে উপহার দেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান-যা বাহাত্তরের সংবিধান নামে খ্যাত হয়। তাতে ঘোষিত হয়, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের চার মৌলনীতি-গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র। এই স্বাধীনতা ও সংবিধান বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন।
এই অর্জন শত্রুদের করে দিল দুর্বল। কারণ ঐ সংবিধানে না ছিল “বিসমিল্লাহ্”, না ছিল জামায়াতে ইসলামী সহ ধর্মাশ্রয়ী দলগুলির বৈধতার সামান্যতম স্বীকৃতি, না ছিল রাষ্ট্রধর্ম। ধর্ম ব্যবসায়ীরা তা মাইকে তারা ঘোঁট পাকালো-মসজিদে মসজিদে নামায শেষে তারা বাংলাদেশকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানো হয়েছে বলে বয়ান দিতে থাকলো - ওয়াজ মাহফিল ডেকে সাঈদী প্রমুখরা এ রাষ্ট্রের ও তার মৌলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলতে বিরামহীন অপচেষ্টা চালাতে থাকলো। ফলশ্রুতিতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নির্মমভাবে নিহত হলেন।
এলেন জিয়াউর রহমান-মুক্তিযুদ্ধের একজন সেকটর কম্যান্ডার। বঙ্গবন্ধু হত্যার সরাসরি বেনিফিসিয়ারী। কোদাল হাতে মাটি কেটে থাল বানালেন। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সেবক শুনালেন। উন্নয়নের বয়ান গাইলেন। সাথে সাথে “বিসমিল্লাহ্” বসিয়ে দিলেন সংবিধানের শুরুতে। পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযমকে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব দিলেন। জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মাশ্রয়ী দলগুলিকে বৈধতা দিলেন। ফিরে আসতে সুরু করলো পাকিস্তানী ধারা যা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়।
জিয়াউর নিহত হন চট্টগ্রাম সফর গিয়ে সেখানকার সার্কিট হাউসে। অল্প কিছু কাল থাকলেন বিচারপতি সাত্তার। তিনি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিও হলেন। বন্দুকের নল দিয়ে তাঁকে হঠিয়ে এলেন আলহজ্ব হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। তিনি সংবিধান বদলের ষোলকলা পূর্ণ করে তাতে বসিয়ে দিলেন, “বাংলাদেশের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম”। একই সাথে তাঁকে নিয়ে নারী বাহিনীও উদঘাটিত হতে থাকলো একের পর এক।
বে-আইনী পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা প্রথম দখল করেন জিয়াউর রহমান। অত:পর এরশাদ। উভয়েই স্বৈরাচারী-মুখোশধারী। তাই এই স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে। ১৯৯০ এর গণ-অভ্যূত্থানে এরশাদের পতনও ঘটেছে।
অতঃপর ১৯৯১ তে অনুষ্ঠিত হলো সাধারণ নির্বাচন। জিতলো বি.এন.পি। না তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান নি। জামায়াতের নির্বাচিত কয়জনকে সাথে নিয়ে গরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতাসীন হলেন বেগম জিয়া প্রথম বারের মত। জিয় এরশাদের সংশোধনী বজায় রাখলেন সংবিধানে।
এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। অন্যান্যের মধ্যে দাবী ছিল বাহাত্তরের মূল সংবিধান ফিরিয়ে দাও। “বিসমিল্লাহ্” রাষ্ট্রধর্ম বাতিল কর, জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করো, ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে দাও.......ইত্যাদি।
অতঃপর ১৯৯৬ তে দীর্ঘকাল পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলো। কিন্তু সংসদে দুই তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা না থাকায় তখন সংবিধান সংশোধন সম্ভব ছিল না বলে সে দাবী তাখন তোলাও হয় নি।
আবারও ক্ষমতায় এলো ২০০৮ সালের নির্বাচনে। এবারের গরিষ্ঠতা থাকলেও সেনা সমর্থিত পূর্বতন সরকার সৃষ্টি সমস্যাবলীর জট খুলতেই সময় লেগে যায়। তদুপরি বি.ডি.আর নিধনের ঘটনাও জাতিকে পীড়িত করে রেখেছিল। তবে চাইলে অতি সহজেই তখন ঐ সরকার পারতো বাহাত্তরের মূল সংবিধান ফিরিয়ে আনতে।বামপস্থীরা সে দাবী তুলেছিলেনও।
যা হোক, অর্পিত রাজনৈতিক স্থিতিশীললতা অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধনের অনুকূল পরিবেশ রচনা করে। সরকার যথাসাধ্য যে সুযোগ গ্রহণও করে। ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হতে থাকলো তবে পুঁজিবাদী পন্থায় যা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে আকাংখিত ছিল না। রাষ্ট্র বরং সহয়ক ভূমিকা রাখতে সুরু করলো পুঁজিবাদী পন্থায় অর্থনীতির বিকাশে। যদিও পুঁজিবাদীরা ছিল তখন অপেক্ষাকৃত দুর্বল। তাই তাদেরকে আঘাত হেনে দিব্যি সমাজতন্ত্রের পথে অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। কিন্তু সে পথে হাঁটেন নি বঙ্গবন্ধুহীন আওয়ামী লীগ সরকার।
তা সত্বেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন তখন থেকে আজ পর্যন্ত নিহায়েত কম নয়-যদিও একই সাথে পাল্লা দিয়ে বৈষম্য বাড়ছে-বাড়ছে রাজনীতিতে স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতাও। সাম্প্রদায়িকতাও দিব্যি জাকিয়ে বসেছে বাংলাদেশের বুকে।
এগোলাম কতটুকু?
বাংলাদেশ আজ ৪৭ বছরে পদার্পন করেছে। এই সময়কাল একটি জাতির জীবনে নেহায়েত কম সময় নয়। তাবে ৪৭ বছরের যাত্রাপথ যে সর্বদাই মসৃন ছিল তাও নয়। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং পরবর্তী ১৬-১৭ বছর ধরে চলেছে অবৈধ দুটি সরকারের স্বৈরশাসন। আমরা জানি, এই কারণে বাংলাদেশের পথ চলা ব্যাহত হয়েছে প্রায় বিশটি বছর ধরে। অত:পর বি.এন.পি’র ১০ বছরের জামায়াত বান্ধব শাসন। ফলে প্রায় ৩০ টি বছর হারিয়েছি আমরা।
বাদ-বাকী ১৭ বছর মাত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলেন। এই সময়কালে সূচিত অগ্রগতি সমূহ নিম্নরূপ:
এক. বঙ্গবন্ধুরশাসন মাত্র সাড়ে তিন বছর। ঐ সময়কালে মাত্র দশ মাসেই বঙ্গবন্ধু বাহাত্তরের সংবিধান উপহার দিলেন-যা ছিল সর্বসম্মত এবং দেশ বিদেশে প্রশংসিত।
একই আমলে পাক-বাহিনীর যুদ্ধকালে বিধ্বস্ত হওয়া সেগুলি পুন: নির্মাণ, সমুদ্র-নিরাপত্তা উদ্ধার, মাইন মুক্ত করে চট্টগ্রাম বন্দরকে জাহাজ চলাচল উপযোগী করা, দেশী-বিদেশী চক্রান্ত সৃষ্ট কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ (১৯৭৪) প্রতিরোধ করা প্রকৃতি।
দুই. শেখ হাসিনা ক্ষমতায় প্রথম আসেন ১৯৯৬ সালে। তখন ক্ষমতা গুছানো থেকে অতীতের জঞ্জাল সরানো, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের লক্ষ্যে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাক্যল প্রভৃতি কাজের সাথে স্যীমান্ত চুক্তির মাধ্যম উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ী এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে অবকাঠামো গত উন্নয়নের দিকে বেশী নজর দেন তবে তার সিংহভাগ পূর্বাঞ্চলের অবকাঠামো নির্মানেই ব্যয়িত হয়। পশ্চিমাঞ্চল অনেকটাই বরাবরের মত উপেক্ষার কবলে পড়ে।
তিন. দৃশ্যমান উন্নতি ঘটছে বিদ্যুত উৎপাদনে। যদিও অত্যাধিক ব্যয়বহুল পথে এই উৎপাদন কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। স্বল্পতার ব্যয়েও করা যেত এবং করা উচিতও ছিল। তা না করে বিদ্যুতও হয়ে দাঁড়িয়েছে ধনিকগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানোর উপাদানে দারিদ্র্য পীড়িত অধিকাংশ জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছেন ভয়াবহ আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে।
চার. নিজস্ব ব্যয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া সর্বাধিক সাহসী অর্থনৈতিক পদক্ষেপ যার জন্যে শেখ হাসিনা ধন্যবাদার্হ।
পাঁচ. রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সর্বাধিক সাহসী পদক্ষেপ হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বিচারের রায় দ্রুততার সাথে কার্য্যকরকরণ। তবে ইদানীং বা মাস ছয়েক হলো ঐ বিচার কার্য্যে লক্ষ্যনীয় ধীরগতি জনমনে সংশয়ও সৃষ্টি করেছে।
মোটাদাগে উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তির দিক এগুলিই। আরও আছে কিছু কিন্তু সেগুলি তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় না।
ডিজিটাল বাংলাদেশ? হ্যাঁ, এটিও উল্লেখযোগ্য তবে তা এখনও প্রাথমিক পর্য্যায়ে। আরও বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তা শতভাগ লোকালয়ে, বসতিতে, বাজার-বিপনীতে, অফিস আদালতে, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তথা সর্বত্র দিবারাত্র বিরামহীন সরবরাহ নিবশ্চিবত না হওয়া পর্য্যন্ত এবং পরিপূর্ণভাবে দারিদ্র বিমোচন না হওয়া পর্য্যন্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
অপ্রাপ্তি
মোটাদাগে প্রাপ্তির দিকগুলি উপরে উল্লেখ করলাম। সেগুলোকে কোনক্রমেই খাটো করা যাবে না। তেমনই আবার নিম্ন বর্ণিত অপ্রাপ্তিগুলিকেও খাটো না করে সেগুলিকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের জন্য এক অপরিহার্য্য প্রয়োজন বলে অকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করে। এই অপ্রাপ্তিগুলো সরকারের ভূল নীতির কারণে ঘটে চলেছে। দু:খজনক হলো এগুলির সমাধানের সামান্যতম উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।
যা হোক, অপ্রাপ্তিগুলো নিম্নরূপ:
এক. বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানে যে চার মৌলনীতি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছিলো তার মধ্যেই বিবৃত ছিল পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির ২৩ বছর ব্যাপী নিয়মতান্ত্রিক ও সশস্ত্র সংগ্রামের সীমাহীন তাৎপর্য্য। ঐ মূলনীতিগুলোই বুঝিয়ে দেয় বাংলাদেশ ও পকিস্তানের মধ্যেকার মৌলিক পার্থক্য যে পার্থক্যের বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানীরা কখনও আপন বলে ভাবে নি-বাঙালিও কদাপি পাকিস্তানী বলে যেতে পারে নি। দুটি দেশ বা জাতরি আত্মপরিচয়ের মধ্যে ব্যবধান ছিল এতটাই গভীরে।
দুই. ১৯৭৫ এর মধ্য আগষ্টে সপরিবারে বর্বরোচিত নিষ্ঠরতায় হত্যার পর ক্ষমতা দখল করলেন অবৈধভাবে জিয়াউর রহমান। ততোধিক অবৈধভাবে বাহাত্তরের সংবিধানটিতে প্রতিক্রিয়াশীল সংশোধনী এনে দেশটাকে পাকিস্তান মুখী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন সামরিক আইনের খড়েগর মাধ্যমে।
অসাম্প্রদায়িকতা ধর্মনিরপেক্ষতা কেন্দ্রিক ঐ সংবিধানে “বিসমিল্লাহ্” সংযোজন, যুদ্ধাপরাধী দেশদ্রোহী পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনে অবৈধভাবে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান নিষিদ্ধ ঘোষিত সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা-বিরোধী জাময়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ প্রমুখ উগ্র সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলকে বৈধতা প্রদান করে জাতির মৌলিক অর্জনকে ধর্মের নামে বিতর্কিত করে তোলেন। গণতন্ত্রের নিধনযজ্ঞও সুরু করেন। প্রবর্তন করেন পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জাতীয়করণকৃত কলকারখানাগুলিকে পূর্বতন মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে।
তিন. অত:পর এলেন আর এক দুর্নীতিবাজ, অবৈধ স্বৈরশাসক-হোসায়েন মুহাম্মদ এরশাদ। পরিপূর্ণ অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী এই স্বৈরশাসক বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ অগ্রসর হয়ে সংবিধানে লিখে দিলেন “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” যা পৃথিবীর অপর কোন মুসলিম রাষ্ট্রের সংবিধানেও নেই। উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ৮ দল, বি.এন.পি নেতৃত্বাধীন ৭ দল ও ওয়ার্কার্স পার্টি নেতৃত্বাধীন ৫ দলের যৌথ ও ঐক্যবন্ধ আন্দোলনের তোড়ে ভেসে গিয়ে ১৯৯০ সালে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
চার. ৮ ও ৫ দলের দাবী ছিল বাহাত্তরের মূল সংবিধান অবিকল পুন:স্থাপনের লক্ষ্যে বিসমিল্লাহ্, ধর্মাশ্রয়ী দলগুলির (জামায়াতে ইসলামী সহ) বৈধতা ও রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সংবিধানে পুন:স্থাপন করা, সংবাপত্র ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সুনিশ্চিত করা। নারী পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও ধনী নিধনের মধ্যেকার বিরাজমান বৈষম্যের অবমান ঘটানো।
পাঁচ. সকল স্বৈরশাসনের অবসান দৃশ্যত: কার্য্যত: ঘটানো সম্ভব হলেও মৌলিক অঙ্গীকারগুলি পূরণ না করে জিয়া এরশাদ প্রবর্তিত আদর্শিক সকল জঞ্জাল দিব্যি বজায় রাখা হয়েছে। যেমন “বিসমিল্লাহ্” , “জামায়াতে ইসলামী সহ সকল ধর্মাশ্রয়ী দলের বৈধতা” ও “রাষ্ট্রধর্ম” এগুলির সবই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও বাহাত্তরের সংবিধান পরিপন্থী।
ছয়. সংবিধানের উপরোক্ত রূপ সাম্প্রদায়িকীকরণ বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থানের আদর্শিক অনুখূলতার সৃষ্টি করেছে যা সমাজে/শিক্ষাঙ্গনে বিস্তৃতি লাভ করে চলেছে।
সাত. ধর্মীয় ও জাতিগত নিপীড়ন দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। মন্দির বিগ্রহ ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ যেন কোন অপরাধি নয়। তার বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও দৃশ্যমান নয়।
আট. ব্যাপকভাবে হিন্দুদের দেশত্যাগ ঘটে চলেছে রাষ্ট্রের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। দেশত্যাগের কারণ যে তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করে দৈনন্দিন নিপীড়ন-নির্য্যাতন-তা বন্ধের নূন্যতম উদ্যোগ নেই।
নয়. অর্পিত সম্পত্তি (প্রত্যর্পন আইন ১৬ বছর আগে প্রণীত হলেও তা বাস্তবায়ন না করে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্প্রদায়িকতার লালন করা হচ্ছে। ২০০১ এর হাজার হাজার সংখ্যালঘু নির্য্যাতনের জন্য দায়ীদের বিরূদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করা হলো না। এ দাবী সর্বজনীন হলেও সরকার নীরব।
দশ. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যা উন্নন ঘটছে তার সকল ফলই ভোগ করছে ধনিক সমাজ-দরিদ্ররা অধিকতর বৈষম্ম্যের শিকার হচ্ছে;
এগার. দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বি-মধ্যবিত্ত-নি¤œবিত্তের আয়ত্তের বাইরে কিন্তু তার রাশ টানার উদ্যোগ নেই।
লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত।
পাঠকের মতামত:
- পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন
- ৭ চেয়ারম্যান ও ৯ ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
- কৃষি জমি থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে বদল যাচ্ছে জমির শ্রেণী
- পাংশায় ৩০ পিচ ট্যাপেন্টাডল উদ্ধার, মাদক ব্যবসায়ী সহ ৬ আসামি গ্রেফতার
- রাজবাড়ীতে লটারিতে বরাদ্দের পর পাল্টে গেল চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রতীক
- গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৮ নির্দেশনা
- কাতারের কাছে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সহায়তা চায় বাংলাদেশ
- ঝিনাইদহে গাঁজাসহ মাদক কারবারি আটক
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
- বড়াইগ্রামে প্রধান শিক্ষক পিঞ্জুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
- চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপদাহে নষ্ট হচ্ছে কৃষি ফসল
- দাম কমলো সোনার
- রেলওয়ের চাকরিতে যোগ দিতে এসে বিপাকে যুবক
- নাটোরের ভাতিজিকে ধর্ষণের পর হত্যা, চাচার ফাঁসি
- বৃষ্টির আশায় লালপুরে ইস্তিসকার নামাজ আদায়
- সিরাজগঞ্জের ৩ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ
- বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশনে চলাচলে নতুন নির্দেশনা
- উপজেলা নির্বাচন: বিএনপির হুশিয়ারিকে পাত্তা দিচ্ছেনা তৃণমূল নেতারা
- লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬ জনসহ ১৩ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা
- রিক্সা-ভ্যান চালকদের মধ্যে পানি ও স্যালাইন বিতরণ করলেন পুলিশ সুপার
- বাঁচতে চায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হাদী ইয়াকুব
- বিএনপির ৭ আইনজীবীর আদালত অবমাননার আদেশ বুধবার
- ‘মোস্তাফিজ চলে গেলে আমরা খুব কষ্ট পাবো’
- ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবি পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার’
- বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত
- সাভার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মিষ্টি চৌধুরী
- ভোরের কাগজের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আতিকুর রহমান আর নেই
- সালথায় প্রচণ্ড খরতাপে পাটের ক্ষতির আশঙ্কা
- পদ্মশ্রী পুরস্কার গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
- ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে হত্যার রাজনীতি বন্ধ করেছেন’
- ‘বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ করতে আগ্রহী কাতার’
- রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর, দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু
- ডিএমপির মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ৩০
- আইপিএলে অনন্য রেকর্ড গড়লেন চাহাল
- ডার্বি জিতে পাঁচ ম্যাচ আগেই ইন্টার মিলান চ্যাম্পিয়ন
- তাপপ্রবাহে পুলিশ সদস্যদের প্রতি ১১ নির্দেশনা
- বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই
- দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন
- ‘আরেকটি আগ্রাসনের চেষ্টা করলে শক্তিশালী জবাব দেওয়া হবে’
- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির
- মালয়েশিয়ায় মাঝ আকাশে দুই হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ, নিহত ১০
- ‘পাকবাহিনী নজিরবিহীন নারকীয় হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠে’
- কৃষি জমিতে পুকুর খননে সাংবাদিকদের প্রতিবাদ, ইউএনওর জরিমানা
- কালুখালী টিসিইউ’র নিজেস্ব নির্মানাধীন ভবন পরিদর্শন
- বরকত-রুবেলসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট, অব্যাহতি ৫
- মধুপুরে কৃষকের নামে বরাদ্দ কৃষিযন্ত্র বিক্রি করে কৃষি কর্মকর্তা কোটিপতি!
- বাগেরহাট সদরে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী
- 'স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার্থীরাই হবে উন্নয়নের হাতিয়ার'
- কেন্দুয়া সরকারি কলেজের সম্ভাব্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ঝড়
- ‘পেনশন ব্যবস্থায় যুক্ত হলে শেষ বয়সে টেনশনে থাকতে হবে না’
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- সিলেটের ভ্রমণ কাহিনী
- শুধু প্রভাবশালীদের পক্ষেই আইন!
- অম্ল-মধুর যন্ত্রণায় অপু বিশ্বাস
- লাইন ধরে খেতে হয় লিখনের জগা খিচুড়ি !
- আমার বোন শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি : চিনে নিন কে এই বরকত!
- 'ইতিহাসের ইতিহাস'
- ধনী হওয়ার আট কার্যকর উপায়
- মেয়ে পটানোর কৌশল!
- লক্ষাধিক রাখাইন জনগোষ্ঠী আড়াই হাজারে নেমে এসেছে
- উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের নতুন যাত্রা ১ বৈশাখ
- লোভী মানুষ চেনার সহজ উপায়
- আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ১৪'তোমার সহজাত উদারতা তোমাকে আকাশের সীমানায় উন্নীত করলেও তোমার ঘনিষ্ঠ অনেকের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ তোমার নৃশংস মৃত্যুর পথে কোনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি'
- বাংলা বই পড়ার ওয়েবসাইট
- শাকিবের নায়িকা শ্রাবন্তী, অপুর নায়ক জিৎ
- মঠবাড়িয়ায় ৯ বছরের শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা
- হুমায়ূনের মৃত্যুর কারণ মদের পার্টি !
- দেশে ফিরছেন তারেকস্ত্রী জোবায়দা রহমান
- বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়
- ইউটিউবে নায়লার আত্মপ্রকাশ
- নেপালের ভূমিকম্প প্রাকৃতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি !
- বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে !