E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তুরিন আফরোজ সমাচার

২০১৯ নভেম্বর ২৯ ২২:৪৪:০৯
তুরিন আফরোজ সমাচার

মাহবুব আরিফ


আদালতের আপিল বিভাগের সাবেক তিনজন বিচারপতি, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের তদন্তে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ নির্দোষ! ওয়াও, এতদিনে অরিন্দম কহিল বিষাদে! এত যদি নেকা কান্না, তবে এতদিন পর এই রিপোর্ট প্রকাশ করা কেন! রিপোর্টটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদ থেকে তুরিন আফরোজকে অপসারণের পরেই কেন প্রকাশ করা হলো? আসলে আমাদের মত আম জনতা শুধুই এই প্রশ্ন করে বেড়ায়, উত্তর কোনদিনই পায় না, এই হচ্ছে দেশের হালচাল!

প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার পক্ষ তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সাদা কালো কোন প্রমাণ কি জনগণের সামনে হাজির করতে পেরেছেন? নাহ, সেটা এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ধূম্র জালের মতই মনে হচ্ছে! তদন্ত করতে গেলে নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে হয়। ১৯৭৩ সালের আমাদের যে ট্রাইব্যুনালের আইন সে আইন অনুযায়ী একজন প্রসিকিউটরের আসামীর সঙ্গে দেখা করবার অধিকার রয়েছে। এটি আইনে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এই দুটি বিষয়ে তদন্ত কমিটি তুরিন আফরোজকে নির্দোষ পেয়েছেন। যে কোন নাগরিকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের স্বচ্ছতা যাচাই বাছাই করা, আর সেটা জনসাধারণে সমানে তুলে ধরাই হচ্ছে জবাবদিহিতা! আর তাই যদি হয়, তবে তুরিনের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকা লেনদেনের যে অভিযোগ করা হয় সেটার বিষয়ে আমাদের জানার অধিকার আছে কি? এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ বিষয়ে সরকার কতটুকু আন্তরিক।

গত ১০ মে ২০১৮ আমাদের সময়ের সাথে এক সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অপর একজন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, 'তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে গোপন বৈঠকের যে অভিযোগ উঠেছে, তা প্রমাণ হলে ট্রাইব্যুনাল থেকে নিয়োগ বাতিল করা হবে। ওই কাজের মাধ্যমে তুরিন পেশাগত নৈতিকতার স্খলন করেছেন উল্লেখ করে জেয়াদ আল মালুম বলেন, তিনি অর্থাৎ তুরিন আফরোজ কোনোভাবেই আসামির কাছে মামলার নথিপত্রের কপি হস্তান্তর করতে পারেন না। এটা পেশাগত নৈতিকতার স্খলন। এ অপরাধে বার কাউন্সিল থেকে সনদ বাতিল হতে পারে। এছাড়া আইন মন্ত্রণালয় যদি মনে করে অপরাধ খুবই গুরুতর, সেক্ষেত্রে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে আইন মন্ত্রণালয়ের উপর।' এক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন সামনে এসে যায় যে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম কি আইন জেনেই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন নাকি কোন সিন্ডিকেটের জালে আটকা পড়েছেন?

তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেটা নিয়ে আমরা গত বছরই একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছি। যার সদস্য হচ্ছেন উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের ৩ জন সাবেক বিচারপতি। তারা হলেন: বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। তদন্ত কমিশনের কাজ ছিল একটি রিপোর্ট তৈরি করা। তাহলে আরও একটি প্রশ্ন আমাদের সামনে চলে আসে যে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের অপেক্ষা না করেই কি ভাবে গত ১১ নভেম্বর ‘শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের’ দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদ থেকে তুরিন আফরোজকে অপসারণ করে সরকার? সরকারী তদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট বা এর স্বচ্ছতা প্রকাশ করাই তো সরকারের জবাবদিহিতা! পরিশেষে এটাই বলতে চাই একজন কর্মঠ ও কর্মের মাধ্যমে সফলতা অর্জনকারী সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে অতীত সকল অভিযোগের সত্যটা আমাদের সামনে প্রকাশ করা হোক। আরও একটি প্রশ্ন, দুর্নীতির এই মহাসাগরে ২৫ কোটি টাকার লেনদেনটা আসলে কোথায় ঘটেছে বা কোন সিন্ডিকেটের হাতে গিয়ে পড়েছে সেটাও স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রকাশ করা হোক।

লেখক : সুইডেন প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test