E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভারতের কাছ থেকে এটা আশা করেনি বিশ্ব!

২০১৯ ডিসেম্বর ১৫ ১৬:৫৬:৩১
ভারতের কাছ থেকে এটা আশা করেনি বিশ্ব!

মাহবুব আরিফ


বাংলাদেশসহ তিন দেশে নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের রক্ষার কথা ভারতের পার্লামেন্টে বেশ জোরালো ভাবেই তুলে ধরেছেন সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সত্যি কথাটা হচ্ছে, যারাই এই তিন দেশে সংখ্যাগুরু তারাই আবার ভারতে সংখ্যালঘু। আমরা যদি বিষয়টি একটু ভিন্ন ভাবে আলোকপাত করতে চাই, তবে একথা স্পষ্ট যে, অন্তত বিগত দিনে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর অত্যাচার নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানো হয়েছে। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার বার এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বলা হলেও এ ধরনের কার্যকলাপ কিন্তু এখন পর্যন্ত থেমে নেই। পত্রপত্রিকা খুললেই হিন্দু বৌদ্ধদের জমি দখল. মন্দির প্যাগোডা বা গির্জায় আক্রমণের কথা আমরা দেখি। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের দ্বারা মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার সংবাদ একটাও দেখিনি। তা হলে একথা স্পষ্ট যে ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের মাঝে এ নিয়ে উদ্বেগ ও অসন্তোষ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে ভারতের রাজ্যসভা একটি সাম্প্রদায়িক বিল পাশ করবে সেটা নিশ্চয়ই একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জন্যে শোভা পায় না।

ভারত ও বাংলাদেশ এই দুই দেশের মাঝে দীর্ঘ দিনের মধুর সম্পর্কের দিন কি শেষ হয়ে এসেছে? অন্তত একথা হলফ করেই বলা যায় যে, ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে পাস হওয়া বিলটি নিয়ে শুধু বাংলাদেশ কেন জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ করা হয়েছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব প্রদান করার বিষয়টি যে মানবতার দৃষ্টিতে সাংঘাতিক রকম সাম্প্রদায়িক একটি বিষয় তাতে কোনই সন্দেহ নাই। অন্যদিকে ভারতের আইন বিভাগ বিগত বছরগুলোতে মানবতার পক্ষে সমকামিতাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কিছু যুগান্তকারী রায় প্রদান করে বিশ্বে দারুণ ভাবে প্রশংসিত হয়েও ভারতের বিজেপি সরকারের নেয়া বিলটি ভারতের ঐতিহাসিক সেক্যুলার সংবিধানকে দুর্বল করে দিল তাতে কোন সন্দেহ নাই।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমরা যতই চিৎকার চেঁচামেচি করিনা কেন, রামু, কক্সবাজার, নাছিরনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাগুলো আমাদের আসল সত্যটা বার বার মনে করিয়ে দেবে। কিন্তু এসব ঘটনার সাথে ভারতের পক্ষ থেকে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ প্রদর্শন করে বাংলাদেশকে ভিন্নভাবে সাহায্যে এগিয়ে আসার প্রয়োজন ছিল, নতুন নাগরিকত্ব আইনটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটে যাচ্ছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। আর তা দৃশ্যমান হচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের শেষ মুহূর্তে ভারত সফর বাতিলের ঘটনায়।

ষোল কোটি মানুষের মাঝে বাংলাদেশে মুসলিমদের সংখ্যা ৮৯ ভাগ, হিন্দু যা আছে তা সংখ্যায় প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এক বছরের ব্যবধানে দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মোট জনসংখ্যার ১০.৭ শতাংশ। কিন্তু উনিশ শত একান্ন সালে যে আদমশুমারি হয়েছিল তাতে বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠীর ২২ শতাংশ ছিল হিন্দু। ১৯৭৪ সালের আদমশুমারিতে এটা নেমে আসে ১৪ শতাংশে।

আর সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে এটা নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশে। এক্ষেত্রে বলা যায় যে ভারতের হিন্দুদের মাঝে একটি চাপা অসন্তোষ বা ক্ষোভ থাকাটি স্বাভাবিক। তাই বলে ভারত রাজ্যসভাতে অঙ্ক কষাকষিতে এ ধরনের একটা ভুল করে বসবে, তা আধুনিক বিশ্ব কোনদিন কল্পনাও করতে পারে নাই। নাগরিকত্ব যদি দিতেই হয় তবে তা হবে সকল জাত, ধর্ম ও বর্ণের মানুষের জন্যে সমান ভাবে। চোখের ওপর চশমা তুলে দিল্লির নতুন নাগরিকত্ব বিলটি পাশ করা মানেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটা, ভারতের পক্ষে এত বড় ধাক্কা সামাল দেয়া সম্ভব হবে কি?

লেখক : সুইডেন প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test