E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খুনি মাজেদ, করোনাকালের চাল চোর

২০২০ এপ্রিল ১৮ ২৩:০৯:০৫
খুনি মাজেদ, করোনাকালের চাল চোর

রহিম আব্দুর রহিম


বঙ্গবন্ধুর সপরিবার হত্যাকা-ের অন্যতম আসামি বরখাস্তকৃত ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ দীর্ঘ ২৩ বছর পালিয়ে থাকার পর গত ১৬ মার্চে দেশে ফেরেন। ৬ এপ্রিল ২০২০ খ্রিস্টাব্দে সন্ধ্যায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত এই পলাতক আসামি রাজধানী ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় রিকশায় ঘোরাফেরার সময় গাবতলী পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশের জেরার মুখে পড়েন। একপর্যায়ে সে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদের পরিচয় দেওয়ায় পুলিশ তাকে আটক করে। পরে পুলিশের টেরোরিজম ইউনিটের একটি দল তাকে মিরপুরের একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তথ্য দিয়ে গ্রেফতার দেখায়। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে গ্রেফতারের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ ঢাকা ক্যান্টনম্যান্ট আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডের ১০/এ বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছিলেন। আইনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে এই খুনির ফাঁসির দ-াদেশ, ১১ এপ্রিল রাত ১২টা ১ মিনিটে কেরানীগঞ্জ জেলা কারাগারের ফাঁসির রায় কার্যকর করে।

মাজেদ দীর্ঘ ২৩ বছর কীভাবে, কোথায় পালিয়েছিলেন, তার কোনো সঠিক তথ্য কোন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে নেই। তবে অপরাধবিজ্ঞানীদের ধারণা, খুনি আব্দুল মাজেদ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ছদ্মবেশে আত্মগোপনে ছিলেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ে জড়িত সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ঘাতকদের অন্য পাঁচ খুনি আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেম উদ্দীন।

এর মধ্যে কানাডায় নূর চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রাশেদ চৌধুরী, জার্মানিতে মোসলেম উদ্দীন, শরিফুল হক ডালিম স্পেনে অবস্থান করছেন। ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা। তবে খন্দকার আব্দুর রশিদ কোন দেশে অবস্থান করছেন সঠিক তথ্য পুলিশের কাছে নেই। যেমনটি ছিল না আব্দুল মাজেদের অবস্থানের তথ্য। খুনি মাজেদের গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দীনের বাটামারা গ্রামে। বাবা আলী মিয়া চৌধুরী, ব্যক্তিজীবনে মাজেদ ৪ কন্যা ও এক পুত্রসন্তানের জনক। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারকে হত্যা করার পর মেজর শাহরিয়ারের সঙ্গেই রেডিও সেন্টার দখলে মাজেদ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন।

ওই সময় ‘স্বৈরাচার মুজিব’কে হত্যা করা হয়েছে এই শিরোনামে ঘনঘন বুলেটিন প্রচারে নেতৃত্ব দেন। শুধু তাই নয়, খুনি আব্দুল মাজেদ ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বরে জেল হত্যায় অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে তাকে সচিব পদমর্যাদায় চাকরিতে ভূষিত করেন। মাজেদকে জিয়াউর রহমান সেনেগালের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগও দেন। একসময় এইসব খুনিকে রক্ষায় ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচার রহিত করে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। ওই সময় ২৪ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছিল। বিচারিক আদালত এই মামলায় ১৫ জনকে মৃত্যুদ-াদেশ প্রদান করেন। আপিল বিভাগ ১২ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে। নিম্ন আদালত খুনিদের ফাঁসির রায় দেয়। ওই সময়েই খুনিরা আত্মগোপনে চলে যায়। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে ইন্টারপোলের মাধ্যমে এসব আসামীর বিরুদ্ধে রেড এলার্ট জারি করে বাংলাদেশ পুলিশ।

অপরদিকে পূর্বেই গ্রেফতারকৃত খুনিদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার, রশিদ খান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দীন আহম্মেদ ও মুহিউদ্দীন আহম্মেদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় তারা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। প্রায় দুই যুগ পালিয়ে থাকা খুনি আব্দুল মাজেদ কীভাবে, কোথায়, কাদের আশ্রয়ে, পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থান করেছেন, তা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে এপার ওওপার বাংলার বিশ্লেষকদের মাঝে।

হিসাবনিকাশ চলছে রাজনৈতিক ও গবেষকদের আড্ডায়। গোয়েন্দা সংস্থাও এর বাইরে নয়। ১৩ এপ্রিল একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আব্দুল মাজেদ ভারতের কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। ওখানে অলি আহম্মেদ নামে পরিচিত ছিলেন। ২০১১ সালে উলুবেরিয়ার সেলিনা নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন। তাদের ৬ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। মাজেদ ওই এলাকায় ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত, টিউশনি করেই চালাতেন জীবন-জীবিকা। সেলিনাকে বিয়ের আগে থাকতেন কলকাতার তালতলার এক ভাড়া বাড়িতে। বিয়ের পর পার্ক স্ট্রিটের এই বাড়িতে থাকা শুরু করেন। নতুন জায়গায় এসে সবার শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে দাঁড়ান। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কম কথা বলা তার অন্যতম স্বভাব মাঝে মাঝে একটি চায়ের স্টলে আড্ডা দিতেন। তার সম্মান বাড়ার কারণ ওই অঞ্চলের শিক্ষাগুরু। কেউ জানত না এই শিক্ষকই বঙ্গবন্ধু স-পরিবার হত্যার সাজাপ্রাপ্ত অন্যতম পলাতক আসামি।

৭২ বছর বয়স্ক খুনি মাজেদের শরীর খারাপ যাচ্ছিল, ফলে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে পিজি হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করান। ২২ ফেব্রুয়ারি রিপোর্ট নিতে বাড়ি থেকে বের হন। ওই দিনই তার স্ত্রী সেলিনা পার্ক স্ট্রিট থানায় ‘স্বামী মিসিং’ ডাইরি করেন। তদন্তে নামে স্ট্রিটের থানা-পুলিশ। পুলিশ মাজেদের ভাড়া বাড়ি থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করে। যে ব্যাগে অন্যান্য কার্ডের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র, ভারতীয় পাসপোর্ট, সিমকার্ড পুলিশ পেয়েছে। পুলিশের ধারণা মাজেদ ২০১০-২০১১ খ্রিস্টাব্দের কোনো একসময় ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভারতে বিয়ে করার সুযোগ পান এবং মাস্টার সেজে জীবন যাপন শুরু করেন।

এর আগে কোথায় ছিলেন, এমন প্রশ্ন স্বাভাবিক। এর আগে এই খুনি মাজেদ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তাবলিগ জামাতের মারকাজে যোগদান করে সারা ভারতসহ সময় অসময়ে বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছেন বলে অপরাধ ও অপরাধী গবেষকরা ধারণা করছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি দোসররা ধর্মের লেবাস পরে দীর্ঘদিন সমাজ রাষ্ট্রে প্রভাব খাটিয়েছে, একসময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই পাকিস্তানি দোসর যুদ্ধাপরাধীদের হাতে পতাকা তুলে দেওয়া হয়েছিল। একই কায়দায় অবলম্বন করে মাজেদ ইসলামের লেবাস নিয়ে ভারতে আত্মগোপনে ছিলেন।

এমনকি ওই দেশের কোনো স্থায়ী মুসলিম ব্যক্তির সহযোগিতায় ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বসবাস করার সুযোগ পেয়েছেন এমন ধারণাও করছেন বিশ্লেষকরা। সর্বোপরি নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কোভিড-১৯ রোগের মহামারিতে পৃথিবী যখন লকডাউনে স্থবির, তখন ভারত সরকারের সন্দেহ, দিল্লির নিজামুদ্দীনে ১৩ মার্চ ২০২০ থেকে ১৫ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত তাবলীগ মারকাজের বড় সমাবেশ থেকে কোভিট-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে।

ভারতের সন্দেহের বিষয়টি বাস্তব ভিত্তি দাঁড় করাতে সেই দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা দিয়েছে, ‘ভারতে যতগুলো করোনা পজিটিভ কেস শনাক্ত হয়েছে, তার ৩০ শতাংশই তাবলিগের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে, ভারতের ২২ হাজার তাবলীগ সদস্যকে বেছে বেছে কোয়ারান্টাইনে রাখতে হয়েছে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লাভ আগারওয়াল বলেছেন, ‘গত রোববার পর্যন্ত সারা দেশে যে সোয়া তিন হাজারের মত করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছিল, তার মধ্যে ১ হাজার ২৩ জনই কোনো না কোনোভাবে তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সম্পর্কিত।’

উল্লেখ্য, ভারতের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে ১৭টি রাজ্যে করোনা রোগী পাওয়া গেছে। কেবল থেকে কাশ্মির, গুজরাট থেকে আসাম এমনকি নিকোবর দীপপুঞ্জেও করোনা থাবা গেড়েছে। ফলে ভারত সরকার বাড়ি বাড়ি তল্লাসী চালিয়ে তাবলীগ জামায়াতের সদস্যদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। মাজেদ এই করোনাকালে তাবলীগ জামাতের মারকাজ সমাবেশে যোগদান করেছিলেন এমনটি অনেকেই ধারণা করছে। ভারত পুলিশের তল্লাশির হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার জন্য বাসা ছেড়েছেন অথবা এই সময় স্ত্রী তাকে দূরে থাকতে বাধ্য করায় ১৬ মার্চে ভারত ত্যাগ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন কিনা বিষয়গুলো বিশ্লেষণের ব্যাপার রয়েছে। আব্দুল মাজেদ ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যার প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর সর্বকনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেল তাকে বলেছিল, ‘আঙ্কেল, আমি পানি খাব, আমি মায়ের কাছে যাব।’ এই করুণ আর্তি তার কানে পৌঁছায়নি। মীর মোশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধুর কাহিনীর সীমারের চরিত্র তার কাছে হার মেনেছিল।

এই খুনির ফাঁসির রায় যেদিন কার্যকর হয়, ওইদিন করোনা আতঙ্কের পৃথিবীর বাংলাদেশের হালকা বাতাসসহ গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই বলছেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হল, পাপ ধুয়ে গেল’। কারাসূত্র জানিয়েছে রাত ১০টার দিকে খুনি মাজেদকে মাছ আর সবজি দিয়ে ভাত খেতে দেওয়া হয়। সে সামান্য কিছু খেয়ে পুরোটা রেখে দেয় প্লেটে। এরপর পানি পান করে রাতের খাবার শেষ করে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কারা মসজিদের ইমাম মাজেদকে দুই রাকাত নামাজ পড়তে বলেন এবং তওবা করান। তওবা করার সময় সে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। শেষ ইচ্ছার বিষয় জানতে চাইলে মাজেদ কারা কর্মকর্তাদের বলে, ‘বঙ্গবন্ধুর মত একজন ব্যক্তিক মারার দুঃসাহস কারো ছিল না, কিন্তু সেই কাজটি আমরা করেছিলাম। এতদিন বিদেশ থাকতে পারলাম, আর এখন কেন দেশে এলাম বুঝতে পারছি না। মরণ আমাকে টেনে এনেছে।’ এর আগে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার প্রাক্কালে বলেছেন, ‘আমি আমার কৃতকর্মের ফল হাতে নিয়ে মৃত্যুবরণ করছি। তোমরা যতদিন বেঁচে থাকবে অন্তত ভালো কিছু করো।’ খুনি মাজেদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সপরিবার খুনের অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন। ৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি তার আবেদন খারিজ করায় ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।

ফাঁসির দিন কেরানীগঞ্জ কারাগারের সামনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ঝাড়– হাতে অপেক্ষা করছিল লাশ নেওয়ার পথে ঝাড়– নিক্ষেপ করার জন্য। অপরদিকে ভোলায় যাতে তার লাশ দাফন না করা হয় এজন্য স্থানীয় এমপি সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ করেন। প্রশাসন ঝামেলা এড়াতে রাতারাতি সিদ্ধান্ত নেয় আব্দুল মাজেদের দ্বিতীয় স্ত্রীর গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের সাতগ্রাম কবরস্থানে দাফনের এবং সেই অনুযায়ী দাফন করা হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা তার লাশ কবর থেকে তুলে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার আল্টিমেটাম দেন।

আসামির বিচার হয়েছে কিন্তু এ ধরনের বিতর্কিত প্রতিবাদ কেউ ভালো চোখে দেখছে না। কারণ, বঙ্গবন্ধুকে যেদিন সপরিবারে হত্যা করা হয়, তার পরের দিন আমাদের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহেরা খাতুন বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার খবর পেয়ে তিনি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিয়ের পিঁড়ি ত্যাগ করেছিলেন। শেষপর্যন্ত চিরকুমারীর জীবন বেছে নেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর হত্যার সরাসরি প্রতিবাদকারী একমাত্র বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী ও তার অনুসারীরা দীর্ঘদিন নির্বাসনে ছিলেন। তিনি ছাড়া কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদের সাহস দেখাননি। কোনো সরকারই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেনি। বরং বিচার বন্ধে আইন করেছিল।

একমাত্র শেখ হাসিনা ও তার সরকার অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছেন। বর্তমানে মাজেদের নাতি ভোলার বোরহানউদ্দীন উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিব উল্লাহ্্ পলাশ মিয়া বিশ্বাস। খুনির আত্মীয়স্বজনকে দলে জায়গা দিয়ে বিতর্কিত প্রতিবাদ! জাতির পিতার পূর্বপুরুষেরা ছিলেন সম্ভ্রান্ত মুসলিম ও অলি-আউলিয়াদের বংশধর। করোনাকালে তার হত্যাকান্ডের অন্যতম আসামি করোনার ভয়ে দেশে ফিরে ধরা দিয়েছে। এ যেন প্রকৃতির প্রতিশোধ বলেই মনে হচ্ছে। বিশ্লেষকদের ধারণা এবং দৃঢ় বিশ্বাস, খুনিদের তথ্য পুলিশের কাছে নেই ঠিকই, তবে তারা খুবই কাছে আছে; নিকটেই আছে, তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পলাতক খুনিদের আত্মীস্বজনদের লকডাউনের আওতায় আনলেই এরাও সহজে ধরা পড়তে পারে। আমরাও মহান নেতার খুনিদের গ্রেফতারে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা কামনা করছি।

গত ১৪ এপ্রিল দৈনিক একটি পত্রিকার শিরোনাম ছিল কমিউনিটি সংক্রমণে করোনা ছড়িয়েছে ৩৫ জেলায়। একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ১৮২, মৃত ৫ জন। অন্য একটি জাতীয় পত্রিকার পাশাপাশি দুটি শিরোনামের একটি ছিল গরিবের চাল নিয়ে নয়ছয় চলছে। পাশের সিঙ্গেল কলামে ৩৬ বস্তা চাল জব্দ, গ্রেফতার ৮। অন্য দুটি পত্রিকার শিরোনাম ছিল, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের অংশবিশেষের শিরোনাম তার একটি, ‘আমরা ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যার জিডিপির ৩.৩ শতাংশ। ...আপনারা ভয় পাবেন না, আঁধার একদিন কেটে যাবেই।’ প্রধানমন্ত্রী এই দুর্দিন দুঃসময়ে জাতিকে সাহসের সঙ্গে বেঁচে থাকতে যেমন অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে কাজ করছেন ঠিক ওই সময় জনপ্রতিনিধিত্বের মহান দায়িত্ব থেকে দরিদ্রের চাল চুরির কাজটি অব্যাহত রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে দেশের ৪১,১৩৯ জন ইউপি মেম্বর ১৩,৭১৩ জন মহিলা ইউপি মেম্বার, ৪৫৭১ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ৯৮৪ জন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ-মহিলা), ৪৯২ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ৩৩০ জন মেয়র এবং ৩৫০ জন এমপিসহ মোট ৬১,৫৭৯ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ১০ জন চাল চোর থাকতেই পারে।

তুলনামূলকভাবে হিসাব অনুযায়ী, চোরের চেয়ে ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি। তবে প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের আগেই সৎ জনপ্রতিনিধি এবং তার সরকারের রাষ্ট্রকাঠামোর ৫২ জন মন্ত্রী, ৬৪ জন সচিব, ৬৪ জন ডিসি, ৬৪ জন এসপি, ৪৯০ জন ইউএনও, ৬৫০ জন ওসির সমন্বয়ে গঠিত প্রণোদনা প্যাকেজ মনিটরিং কমিটি গঠন এখন সময়ে দাবি।

লেখক : শিক্ষক ও নাট্যকার।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test