E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উলুখাগড়ারা দখল নেয় পরিশ্রমের ফসল

২০২০ মে ১৩ ১২:৪৯:৪৫
উলুখাগড়ারা দখল নেয় পরিশ্রমের ফসল

মানিক বৈরাগী


বুবু আমি আমরা অতো সাহস, স্পর্দা দেখাইনি শ্রদ্ধা ভালোবাসার কারণে। সারাক্ষণ মাথায় থাকতো তোমার নিরাপত্তা যেনো বিঘ্নিত না হয়। আমাদের মাথায় কাজ করতো শেখ হাসিনা নিরাপদ মানে নিরাপদ বাংলাদেশ নিরাপদ জনতা।

আমি দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে আমার প্রথমবার পরিচয় পর্বে বুবু বলেই সম্বোধন করেছি। বুবুই ছিলো আমাদের ধ্যানজ্ঞা। আজ এসব কি দেখি। সহ্য করতে না পেরে কিছু অতীত

আমার স্কুল কলেজের সহপাঠীদের মধ্যে যারা কোন ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র সংগঠনের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত ছিলো না তারা আজ চাকুরি ব্যবসা বাণিজ্য করছে।

যারা আমাদের থেকেও কম মেধাবী পরিক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য নিয়মিত ক্লাস প্রাইভেট পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, তারাও আজ কোন না কোন ভাবে অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল।

আমার সময়ে অনেক কঠিন আওয়ামীলীগ নেতার ছেলেদের দেখেছি মিছিলে ডাকলে আসছে না কিন্তু প্রতিপক্ষ শিবিরের ক্যাডারদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে। আমার ক্লাসের অনেক বন্ধুকে দেখেছি ক্লাসের অবসরে ক্যানটিনে বা আমতলায় বসে চুটিয়ে প্রেম করতে ক্লাসের সেরা সুন্দরীর সাথে।

আর আমরা একদিকে এরশাদের পুলিশ, ছাত্র সমাজের গুন্ডা, শিবির ক্যাডারদের চোখ রাঙানি কে থুড়ি মেরে উড়িয়ে এরশাদ বিরোধী মিছিল মিটিং করে স্যারের বকুনির ভয়ে ক্লাসের শেষ বেঞ্চে গিয়ে বসেছি। কলেজের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি পর্বে কবি নির্মলেন্দু গুণের হুলিয়া কবিতা আবৃত্তি করে বেশ তালি পেয়েছিলাম। টুকটাক যে প্রেমের প্রস্তাব আসেনি তাও নয়, কিন্তু মিছিলে শ্লোগানের প্রেম আমাকে সেই সব সুন্দরী তরুণীদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাবার ফুরসুত পাইনি।

আজ সেই সুন্দরী ক্লাস বান্ধবীরা আজ কে কোথায় আছে জানিনা। তখোন আমাদের চোখে মুখে স্বপ্ন স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ হলে গণতন্ত্র ফিরে এলে ক্যাম্পাস শিবির মুক্ত হবে, মুক্ত ক্যাম্পাসে হবে তোমার আমার দেখা।

স্বৈরাচার পতন করে দেশে এলো জিয়ার স্বৈরণী খালেদা। কি দেখলাম যে ছাত্রদল আমাদের সাথে শিবির বিরোধী আন্দোলন করতো তারাই আবার শিবিরের সাথে মিলে আমাদের তাড়াতে শুরু করে।আমাদের কপালে প্রেমের বয়সে প্রেম জুটেনি কোন সুন্দরী তরুণীর।

আমরা পারিবারিক ভাবেই দু'জন মানুষের সাথে অলিখিত প্রেমে পড়েছি। একজন প্রেমিক পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অপরজন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা। আমাদের ধ্যান জ্ঞান প্রেম প্রীতি স্বপ্ন ভালোবাসা প্রেম সবকিছুই আবর্তিত হচ্ছে শেখা হাসিনাকে ঘিরে। এ এক মোহান্ধ প্রেম।

বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা'র সাথে আমার জীবনে চারবার সাক্ষাৎ হয়। প্রথমবার -বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায়, দেশরত্ন শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা।তিনি চকরিয়া চকরিয়া এসেছেন চকরিয়া কোরক বিদ্যাপিঠের সামনে বিজয় মঞ্চের মাঠে জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন। আমি চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তখন এই পদ ছিলো একটি। আমি মঞ্চের দায়িত্ব পালন করছি। বুবু মঞ্চে এসেছেন আমারা স্বাগত জানিয়েছি, সালাম করেছি, আপা আমাদের সাথে কুশল বিনিময় করেছেন। কিন্তু সংকোচ শ্রদ্ধা বিনয়ের কারণে নেতাদের ডিঙিয়ে আপার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার চিন্তাই করিনি।

দ্বিতীয়বার - বুবু চকিয়া কলেজের মাঠে জনসভায় ভাষণ দিবেন। আমি চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। আবারও মঞ্চের দায়িত্ব, বুবু যথারীতি মঞ্চে এলেন। বসলেন কুশল বিনিময় করলেন, মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের অবিরাম বক্তব্য চলছে। আপা সবার সাথে পরিচয় হলেন, কাছে ডাকলেন কিন্তু একটা ছবি তোলার কথা মাথায়ই আসেনি।
তৃতীয়বার - আমাদের কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম মোজাম্মেল হক সাহেব চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে প্রয়াত হয়েছেন। আমি তখন কক্সবাজারের জেল খানায়। জেলা খানায় আমার ওয়ার্ডের মেড ছিলো আমার চকরিয়া হাফেজ বেলাল ডাকাত। বেলাল ডাকাত কে খালেদার বিশেষ বাহিনী ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করে। বেলালের বিষয় অন্য কোন সময় লিখবো। আমার নেতা মোজাম্মেল সাহেব প্রয়াণের খবর পাই বেলাল থেকে। আমরা জেল খানায় হাফেজ বেলাল ডাকাতের ইমামতীতে গায়েবানা জানাজা পড়ি।

মোজাম্মেল হক সাহেবের শোকসভা যেদিন সেইদিন আমি দ্বিতীয়বার জেল জীবনের মুক্তি পাই। আমার নেতা আমার আইনজীবী এডভোকেট আমজাদ হোসেন এজলাসে বলেছেন আজ জাতিয় সংসদের মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা আসছেন কক্সবাজারে। তিনি সারাদেশে রাজনৈতিক বন্দীদের বিষয়ে কক্সবাজারের জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। আমার মক্কেল একজন রাজনৈতিক কর্মী ও ছাত্রনেতা। তার অপরাধ যেহেতু প্রমাণিত হয়নি তাকে জামিন দেয়া হোক।
সেদিন আমি জেল থেকে মুক্তি পাই। সরকারি পিপি ছিলো কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামিম আরা স্বপ্না। তিনি কিছুই প্রমাণ করতে না পেরে আমাকে ক্যাডার টেডার বলে বিরোধিতা করেছিলেন। আমি স্বপ্নার বিরোধিতার মুখে জামিন পেয়ে যায়।

তৎকালীন বিরোধী দলিয় নেতা আজকের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কক্সবাজার শহীদ দৌলত ময়দানে মোজাম্মেল হক সাহেবের শোক সভায় ভাষণ দেন। বুবু সেই দিন ঢাকা ফিরেন নি, ফিরে ছিলেন এরপর দিন। বুবু কক্সবাজারের হিলটপ সার্কিট হাউজে অবস্থান করেছিলেন। এরপর দিন আওয়ামীলীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। বৈঠক শেষে কারা মুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেছিলেন। কারা নির্যাতিত নেতাদের পক্ষ থেকে আমি বক্তব্য রেখেছিলাম। নেত্রী আমাদের সাথে ছবি তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু ছবি ব্যবসায়ীদের ঠেলাঠেলি তে দুর্বল শরীর নিয়ে ঠেলাঠেলি করে ছবি তুলতে পারিনি। বুবুও রাগ করে বেরিয়ে পড়েছিলেন।

চতুর্থবার -তৃতীয় বার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কক্সবাজার আসেন কক্সবাজার ক্রিকেট স্টেডিয়াম উদ্ভোদন করার জন্য। আমি নেত্রীর সাথে দেখা করার জন্য জেলা আওয়ামীলীগ নেতা ও আমলাদের সাথে দেখা করার সুযোগ চেয়ছিলাম নিজের দৈন্যদশা থেকে রেহায় ও চিকিৎসার প্রয়োজনে। তারা কেউই আমাকে পাত্তাই দেয়নি। তাই বাধ্যহয়ে সাক্ষাতের দাবিতে শহীদ মিনারে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি গ্রহণ করি। পরে অবশ্য বুবু আমি ও শহীন কে ঢাকায় সাক্ষাতের সুযোগ দেন।দেখা হয় কথা হয় কান্নাকাটি হয়।কিন্তু ছবি তোলার বিষয় টি মাথায়ই আসেনি।

বর্তমানে কি দেখতে পাচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাথে যদু মদু কদু জিকে রকি টকি কতো হাবিজাবি লোকের সাথে ছবির ছড়াছড়ি। আর এসব ছবি দেখিয়ে বাংলাদেশের জনগণ হচ্ছে প্রতারিত। ঘটছে অপরাধ। এসব অপরাধীদের মধ্যে ক'জন ধরা পড়ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নিরাপত্তার সাথে জড়িত তারা কারা? তাদের কে কারাই বা সুযোগ করে দেয়।তাদের মুখোশ ও জাতি দেখতে চায়। এখন মনে হয় আমরাই সেই বোকা অন্ধের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনা বলে বলে নিজের জীবন জাহান্নাম বানিয়ে উলুখাগড়া এসে লুটে নেয় আমাদের পরিশ্রমের ফসল।

লেখক : কবি, কক্সবাজার।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test