অনিশ্চিত পথে ছুটছে বাংলাদেশ
রণেশ মৈত্র
মার্চে যেদিন বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেল, সেদিনই যেন জাতির জীবনে অনিশ্চয়তার এক অবিশ্বাস্য দিগন্ত খুলে গেল। কেমন এ রোগটি কেউ জানি না। পরিণতি কি তাও অজানা। সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় বিজ্ঞানসম্মত হলেও (বারবার হাত ধোয়া)। মেঝে ও আঙিনাগুলি প্রতিদিন কয়েকদফা জীবাণুমুক্ত করণ, ঘরবন্দী হয়ে থাকা, মানুষের সাথে দুই গজের মত দূরত্ব বজায় রাখা, জরুরী প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে মাস্ক পিপিই পরিধান করা, বাইরে থেকে ফিরে এসে সকল কাপড়চোপড় সাবান জলে অন্তত: আধ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে রোদে শুকানো, জুতা -স্যান্ডেল জীবাণু মুক্ত করে বাইরে রেখে দেওয়া অত:পর ভালমত স্নান করে কাপড়-চোপর পরিধান করে ঘরে আসা।
আর যদি বাড়ীতে কারও আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায় তবে তাকে একা এক ঘরে রাখা, তার কোন জিনিষ স্পর্শ না করা, বাইরে থেকে খাবার তাঁর ঘরের সামনে রেখে দেওয়া, পৃথক বাথ ও টয়লেট তার জন্য নির্দিষ্ট রাখা, ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে স্যাম্পল নিয়ে টেষ্টের ব্যবস্থা করা, পজিটিভ পেলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, নেগেটিভ পেলেও দু’সপ্তাহ লক্ষণাক্রান্তের মত পৃথক ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা। সবাই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রভৃতি।
রোগটা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যতগুলি নির্দেশনামা জারী করা হয়েছে, আমি নিশ্চিত, গ্রামে বসবাসকারী দেশের ৯৫ ভাগ মানুষই ওগুলি মানতে অক্ষম এবং তার অন্তত: অর্ধেক মানুষ ওগুলি মেনে চলতে অনিচ্ছুকও। এই যেখানে পরিস্থিতি সেখানে মানুষ কিভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে, চিকিৎসাই বা কি হবে?
আরও বড় ব্যাপার হলো, এখনও অন্তত: ৫৪টি জেলায় করোনা টেষ্ট করার কোন ব্যবস্থাই নেই। জেলার সংখ্যা তো ৬৪। তার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় এবং চট্টগ্রামে একাধিক স্থানে টেষ্ট করার ব্যবস্থা থাকলেও, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, খুলনা, বরিশাল সিলেট ও ময়মনসিংহে মাত্র একটি করে স্থানে টেষ্টিং এর ব্যবস্থা এ যাবত করা হয়েছে।
প্রতিদিন মাত্র ১০,০০০/১২,০০০ হাজার করে টেষ্ট করা হয় এবং এ যাবত (০৩ জুন পর্যন্ত) টেষ্ট করা সম্ভব হয়েছে মাত্র তিন লক্ষের কিছু বেশী মানুষের স্যাম্পল।
এহেন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিফতর প্রতিদিন মধ্যাহ্নে প্রেস ব্রিফিং করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর ও মৃতের যে দৈনন্দিন তথ্য সরবরাহ করে চলেছেন তা কতটা সঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যেতে পারে। টেষ্টিং ব্যবস্থা নেই এমন জেলাগুলিতেও প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটছে। তাঁদের কেউই কি করোনা সংক্রমিত ছিলেন না? যেহেতু তাঁর টেষ্ট করা হয় নি তাই ধরে নেওয়া হয়, তিনি করোনা রোগী ছিলেন না। কিন্তু এটা তো নেহায়েতই অনুমান। তাই প্রতিটি মৃতেরও অন্তত: মরণোত্তর টেষ্ট করা হোক যাতে বুঝা যায় তাঁদের মৃত্যু করোনা আক্রান্ত হয়ে ঘটেছে কি না।
মৃত রোগীর সংখ্যা জানা প্রয়োজন তবে বেশী প্রয়োজন সুচিকিৎসার, যাতে করে কোন রোগীকে মৃত্যু বরণ করতে না হয়। কিন্তু সমস্যা হলো, করোনা রোগীদের চিকিৎসার কোন সুনির্দিষ্ট ও কার্য্যকর ওষুধ আজও পৃথিবীর কোথাও আবিস্কৃত হয় নি। লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন যাতে নির্ভরযোগ্য ওষুধ আবিস্কারের পর পরই যথেষ্ট পরিমাণে বাংলাদেশে তার আমদানি হয় এবং ন্যূনতম মূল্যে তা বিক্রীর ব্যবস্থা হয়।
রোগীর চিকিৎসা যখন ওষুধ অভাবে অনিশ্চিত তখন তার সংক্রমণ ঠেকানোই হওয়া প্রয়োজন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু প্রতিরোধের জন্য যা যা প্রয়োজন (তারও কোন ওষুধ আজতক আবিস্কার না হওয়াতে) তা সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের পক্ষে ব্যয়সাধ্য এবং অনেকে সেগুলি মানছেনও না। এই পরিস্থিতিকে ভয়ানক বললেও সম্ভবত: কম বলা হয়।
কারণ প্রতিমূহুর্তে আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে দেশ-বিদেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে সংখ্যা প্রচার করে চলেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। আতংকজনকও বটে। এশিয়ার দেশগুলিতে, বাংলাদেশ সহ, ঐ সংখ্যাগুলি যথেষ্ট কম ছিল গোড়ার দিকে। কিন্তু যতই দিন যেতে লাগলো-ততই সংখ্যা হুহু করে বাড়তে থাকলো। এখন বস্তুত:ই সারা এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে, করোনা রীতিমত ভয়ের নাম, ভীতির নাম, আতংকের নাম।
আমরা যেমন নানাভাবে সংকটজনক ও ভীতিজনক এই খবরগুলি পাচ্ছি, সন্দেহ নেই, সরকার তার চাইতে অনেক অনেক বেশী খবর পাচ্ছেন। কিন্তু সার্বিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার কি এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক? তাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলি কি তা প্রমাণ করে?
দেশবাসীর অভিজ্ঞতা
সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলি, দুঃখজনক হলেও সত্য, জনগণের অভিজ্ঞাতয়, করোনা নিয়ন্ত্রণের অনুকূলে যায় নি। ডিসেম্বরে রোগটি ধরা পড়ে চীনে। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, কড়া নিয়মানুবর্তিতা জারী করে তারা দ্রুতই রোগের ব্যাপ্তিকে নিয়ন্ত্রণে আনে। বিশাল দেশ ও পৃথিবীর সর্বাধিক জনসংখ্যার এই দেশে অল্প সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হয়-মৃত্যুর সংখ্যাও যথেষ্ট কম।
কিন্তু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এ ব্যাপারে করুণ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিফতর দফায় দফায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কথা বললেও তা ব্যাপক মানুষের কাছে পৌঁছায় নি। সংবাদপত্র সারা দেশে সরবরাহ ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বন্ধ টেলিভিশনের সংখ্যা এবং ব্যবহার সীমিত। শহরগুলিতে প্রধান প্রধান সড়কে মাইকিং করে স্বাস্থ্যবিধি পালনের আহ্বান জানান হয় কিন্তু তা অধিকাংশ মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়।
অনেকে ঐ নির্দেশনাগুলি মেনে চলেন অনেকে চলেন না। যাঁরা মানছেন না সেই মার্চ থেকে আজ পর্য্যন্ত তাঁদেরকে মানানোর কোন সরকারি উদ্যোগ নেই। রাস্তায় কথনও কখনও পুলিশ-মিলিটারী দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা যায় স্বাস্থ্য বিধি মানানোর জন্য আর অহেতুক কেউ যাতে বাড়ীর বাইরে না যান তা নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু অমান্যকারীদের প্রতি সম্ভবত: প্রয়োজনেও কঠোর হওয়ার নির্দেশ উপরমহল থেকে না থাকায় তাঁদেরকে লাঠি হাতে অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অবশ্য কখনও কখনও কোথাও কোথাও মোবাইল কোর্ট বসিয়ে কাউকে কাউকে কিছু জরিমানা করতে দেখা গেছে-এই মাত্র।
পরিণতিতে যাঁরা আইন মেনে চলেন ও চলছেন তাঁরা হন আতংকিত। একেই তো গোড়ার দিকে (মার্চ) স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদেরকে টেষ্টিং বা কোয়ারান্টাইনে না রেখে এদেশে করোনা আমদানী করা হলো-মানুষ সংক্রমিত হলো ঢাকা-নারায়নগঞ্জে (ভয়াবহভাবে) “সাধারণ ছুটি” ,লক ডাউন নয় চলাকালে। চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই ডাক্তার-নার্স-হাসপাতাল-বেড অপরাপর সরঞ্জাম যথা আই.সি.ইউ, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর প্রভৃতির নিদারুন অভাব। কিন্ত ক্রমান্বয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়তে লাগল।
মানুষের আতংকও বাড়তে থাকলো
এই আতংক, এই অব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সংক্রমণের ক্রম-বৃদ্ধি, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়-বাড়ন্ত, ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ বেশ বড় সংখ্যায় আক্রান্ত হওয়া এবং অনেকের মৃত্যুবরণ করা, বহুক্ষেত্রে রোগী হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরেও কোথাও ভর্তি হতে না পেরে পথেই মৃত্যু বরণ করা, সক্রিয় এবং সাহসী ডাক্তার কোথাও আই সি ইউ বা ভেন্টিলেটার না পেয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করা, ইত্যকার ঘটনা দেশবাসীকে শংকিত করে তুলেছে।
এসকল কারণে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধিকে উপেক্ষা করে ১০ মে থেকে হঠাৎ করেই সব কিছু অর্থাৎ দোকান-পাট, কলকারখানা “সীমিত” আকারে খুলে দিয়ে নতুন আতংকেরও সৃষ্টি করা হয়। এক ভয়াবহ নাটকও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করলেন এপ্রিলে। গার্মেন্টস শিল্প মালিকেরা ঘোষণা দিলেন, তাঁদের রফতানি চাহিদা রক্ষা না করতে পারলে গার্মেন্টসের বিদেশী বাজার হারানোর আশংকা। এই যুক্তিতে কারখানাগুলি খোলার ঘোষণা দিলে লাখে লাখে শ্রমিক পরিবহন বন্ধ থাকা সত্বেও গ্রাম থেকে ছুটে আসেন সামান্যতম স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে। কারখানাতেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বা অন্যান্য বিধি মানার কোন আয়োজনও না থাকায় প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় উঠলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে তাদের আবার গ্রামে ফেরত চলে যেতে হয়। এই আসা-যাওয়ার মাধ্যমে করোনা-ভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়ে।
১০ মে দোকানপাট ‘সীমিত’ আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা কাটার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বেশীর ভাগ ব্যবসায়ী তেমন আয়োজন না রাখায় আবারও সমালোচনার ঝড় ওঠে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কিছু ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। এই করতে করতে এসে পড়ে ঈদ। বলা হলো ঢাকার লোক ঢাকাতেই ঈদ করবেন। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়ত নিষিদ্ধ করা হলো। কিন্তু বাধা কোথায়? ঢাকা থেকে হাজারে হাজারে মানুষ ছুটলো নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে নিজ নিজ জেলা বা গ্রামের উদ্দেশ্যে ঈদ করতে। ছুটতে দেখা গেল বাস, ট্রেন, লঞ্চ-ষ্টীমার (দক্ষিণবঙ্গগামী) বাদে ফেরী, নৌকা, রিকসা, স্কুটারে করে। হঠাৎ ঘোষণা করা হলো ব্যক্তিগত কার চলবে। ব্যস অমনি কার, মাউক্রোবাস ছুটতে থাকলো যার যার এলাকায়। এনিয়ে ব্যবসাও কম হলো না। ঈদ শেষে আবার তাঁরা ফিরলেন ঢাকার মুখে। ইতোমধ্যে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর থেকে বাড়ী আসার পর করোনা ভাইরাস কি পরিমাণ ছড়িয়েছে তা সঠিকভাবে জানতে হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে মনে হয় প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই।
একদিনে মৃত ৪০ সংক্রমিত ২,৫০০
২ জুন তারিখে সরকারি তথ্যমতে বিগত ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৩,০০০ এর কিছু বেশী সংক্রমিত এবং ৩৭ জনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছে। এর দু’দিন আগে মৃতের সংখ্যা গতকাল ৪০ এ পৌঁছেছিল। ক্ষনৈ: ক্ষনৈ: মৃতের ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ গৃহবন্দী থাকবে, ২৪ ঘন্টা টিভিতে এই খবরগুলি দেখবে। শংকিত, আতংকিত হবেন না কেন।
সর্বশেষ পদক্ষেপ
৩১ মে “সীমিতভাবে” সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস, বাজার-বিপণী দেশব্যাপী খুলে দেওয়া হয়েছে শুরু করা হয়েছে রেল, ষ্টীমার চলাচল। ১ জুন থেকে বাস। সকলেই অর্ধেক যাত্রী বহন করবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে বলে কথা ছিল। বাস বেসরকারি। তারা ভাড়া বৃদ্ধি দাবী করলে ৬০% বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের তীব্র বিরোধিতা সত্বেও।
টেলিভিশনে লাইভে দেখা গেল বিভিন্ন ফেরীঘাটের ছবি । স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই-শারীরিক দূরত্ব কোন ছার।
এগুলি কেন করা হলো ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ ও মৃত্যু সত্বেও। জীবিকার স্বার্থে? বলা হচ্ছে জীবিকা ছাড়া জীবন বাঁচবে কি করে? আপাত সত্য বটে। কিন্তু যদি পালটা প্রশ্ন করা যায়, জীবন না থাকলে জীবিকা কার স্বার্থে? উত্তর নেই-কিন্তু প্রশ্নটা ১৭ কোটি মানুষের মাথায় ঘুরছে।
কেরালা মডেল : আমাদের শিক্ষণীয়
আমরা খুঁজেই পাচ্ছি না-কিভাবে এই সংকট মোকাবিলা করবো। অথচ সামনে আছে বেশ কয়েকটি মডেল। যেমন কিউবা। তারা নিজ দেশে করোনায় কাউকে মরতে দেয় নি-সময়োপযোগী এবং সুশৃংখল ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে। ভিয়েতনামেও ঠিক তাই। একই ঘটনা নেপালেও সেখানে অনুল্লেখযোগ্য সংক্রমণ ও মৃত্যু। এখন বলি ঘরের কাছের কেরালর কথা। ৩১ মার্চের প্রথম আলোয় প্রকাশিত নিবন্ধটি। তাতে বলা হয়েছে; কেরালা সরকার এপ্রিলের শুরুতেই পথে ঘাটে কিওস্ক বসিয়ে সাধারণ মানুষের করোনা পরীক্ষা শুরু করে। ১৪ মে ডেইলি স্টার ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শশী থারুরের “কেরালা মডেল” শিরোনামে প্রাকশিত কলামে সেখানে কীভাবে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে সফল রাজ্য হিসেবে সারা বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছে।
ভারতের প্রথম করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছিল কেরালা রাজ্যেই। চীনের উহান ফেরত একজন মেডিক্যাল ছাত্র সবার আগে ভারতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন ১৮ জানুয়ারী যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৪ মার্চ ভারতে লক ডাউন ঘোষণা করেন, তখন ভারতের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী ছিল সবচেয়ে বেশী। কিন্তু ভারতের মধ্যে সবার আগে করোনা সংক্রমিত রোগী সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসায় সফল হয়েছে এই কেরালা। চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও কেরালায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম এভং মৃত্যুহার মাত্র ০.৫৩ শতাংশ যা সারা বিশ্বে সাড়া ফেলেছে।
কেরালার এই অবিস্বাস্য সাফল্যের মূলমন্ত্র কি? রাজ্যজুড়ে অতি দ্রুত করোনা টেষ্টিং, ট্রেসিং অব কন্টাক্টস এবং ট্রিটমেন্টকে (ট্রিপল টি) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আক্রান্ত পরিবারকে ২৮ দিনের কোয়ারান্টিনে নিয়ে আসার বাধ্য বাধকতা কঠোরভাবে পালন করে চলেছে কেরালা-যেখানে ভারতের অন্য রাজ্যগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী ১৪ দিনের কোয়ারাইন্টিন চালু করেছে।
ঐ ১৮ জানুয়ারি কেরালায় করোনা এলার্ট জারী করে রাজ্যের চারটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা সব যাত্রীকে বাধ্যতামূলক চেক-আপের আওতায় নিয়ে এসেছে এবং সন্দেহজনক কেসগুলো হাসপাতালে অথবা কোয়ারান্টিনেনিয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারির ৪ তরিখে কেরালা রাজ্যকে ‘কোভিট-১৯ ডিজাষ্টার এলাকা’ গোষণা করা হয়।
সারা ভারতে যখন ২৪ মার্চ লকডাউন ঘোষণা করা হয় তার আগেই কেরালায় ৩০,০০০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর অংশগ্রহণে হাজার হাজার মানুষ কোয়ারেন্টিনের আওতায় চলে এসেছিল। এই টোট্যাল মবিলাইজেশন কেরালায় সম্ভব হয়েছিল বহু বছর ধরে যথোপযুক্ত অর্থায়ন সহকারে প্রধান অগ্রাধিকার দিয়ে গড়ে তোলা কেরালায় পাবলিক হেল্থ ব্যবস্থা কারণে।
শতভাগ জনগণের অভিগম্য আধুনিক জনস্বাস্থ্য কাঠামো গড়ে তুলেছে কেরালা। কেরালার লক ডাউন বা কোয়ারেন্টিনের বাধ্যবাধকতা অনেক বেশী মানবিক এবং সহনীয় পর্য্যায়ের য়েছে।
কুদুমবাশ্রি নামের এক এলাকার তৃণমূল সংগঠন ও নারী সমিতির সদস্যরা মহামারি সংক্রণের প্রথম পর্য্যায়েই ২০ লাখ মাস্ক এবং ৫,০০০ লিটার হ্যা- স্যানিটাইজার তৈরী করে সরকারি স্বাস্থ্য দফতরকে সরবরাহ করেন। উপরন্ত তাঁরা ১২০০ কমিউনিষ্ট কিচেন তৈরী করে প্রতিদিন তিন লাখ মানুষকে রান্না করা খাদ্য সরবরাহ করছেন। কেরালা রাজ্যের সবচেয়ে বেশী অভিবাসী-অধ্যুষিত অঞ্চল। অতএব কোন অভিবাসী পরিবার বিপদে পড়লে তাদের সহায়তা প্রদানেও জন প্রতিনিধি এবং প্রমাসন খুবই সক্রিয়।
ভারতের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্য হলো কেরালা। তাই মহামারি ও কমিউনিটি সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশী হলেও কেরালা কমিউনিটি সংক্রমণ এবং এ সংক্রান্ত মৃত্যুকে সর্ভনি¤œ পর্য্যায়ে রাখায় সফল হয়েছে। কেরালার জনগণের ৯৪ শতাংশ শিক্ষিত এবং শতভাগ মৌল স্বাস্থ্য সুবিধা ও উন্নত চিকিৎসা সুবিধার আওতায় চলে এসেছে। ধনীদের জন্য বয়বহুল হাসপাতাল গড়ে তোলার চেয়ে সকলের জন্য উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছে।
কেরালায় সব প্রবীণ কৃষক পেনশন পান। ন্যায় বিচার সমুন্নতকারী প্রবৃদ্ধি মডেলের এক অনন্য নজির কেরালা। আয় ও সম্পদ বৈষম্যকে নিয়ন্ত্রণে রেখে জনগণের মাথাপিছু জিডিপির প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়িয়ে চলেছে রাজ্যটি। কেরালায় পরমত সহিষ্ণুতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এবং কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট
বাংলাদেশে?
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র শুরুর দিকে উল্লেখ করেছি। ১৪ মে অ্যামেন্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, মহামারির মোকাবিলায় বাংয়লাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ‘মুখ থুবড়ে’ পড়েছে। তাই কেরালা মডেল এখনও আমাদের রূগ্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর অনুকরণীয় মডেল হতে পারে। তেমনি কিউবা, ভিয়েতনাম, নেপাল প্রভৃতি সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্র থেকেও শিক্ষা নিতে পারি যদি সত্যই বাংলাদেশটাকে আধুনিক গণতান্ত্রিক শোষণামুক্ত দেশে পরিনও করতে চাই।
কিন্তু যে পথে বাংলাদেশ হাঁটছে তা আত্মঘাতি ও অনিশ্চয়তার পথ।
লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।
পাঠকের মতামত:
- চিত্রনায়ক সিয়ামের জন্মদিন আজ
- ‘সবার সমর্থন পেলে শান্ত অসাধারণ অধিনায়ক হবে’
- যশোরে অস্ত্র ও মাদক মামলায় দুইজনের কারাদণ্ড
- যশোরে পাচারকারীর পায়ূপথে পাওয়া গেল ৭০ লাখ টাকার স্বর্ণেরবার
- ষষ্ঠ দিনে ১ ঘণ্টাতেই শেষ রেলের ১৪ হাজার টিকিট
- উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, স্বস্তির হবে ঈদযাত্রা
- কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুইজন নিহত
- পরিবহন সেক্টরে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে বিএমপির কঠোর হুঁশিয়ারি
- সাভারে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত যুবকের মৃত্যু
- ‘বিএনপির হৃদয়ে এবং চেতনায় পাকিস্তান’
- ফরিদপুরে ঐক্যের ডাক দিয়ে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় নেতা বিপুল
- দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫
- ডিএমপির মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ৪০
- জাতিসংঘে স্থায়ী মিশনে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
- রমনা কালিবাড়িতে শতাধিক বাঙালি ইপিআরকে পাক সেনারা নৃশংসভাবে হত্যা করে
- আরও কমলো দেশের রিজার্ভ
- ‘যত জঙ্গি ধরেছি, একজনও মাদরাসার ছাত্র নন’
- গাজায় নিহত আরও ৭৬, প্রাণহানি বেড়ে প্রায় ৩২৫০০
- ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলবে ১৫ টি ফেরি ও ২২ টি লঞ্চ
- শাশুড়ীকে হত্যার দায়ে পুত্রবধূ ও পরকীয়া প্রেমিকের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড
- বিধবা মাকে ভরণপোষণ না দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় শিক্ষক ছেলে গ্রেপ্তার
- বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যানিং দপ্তরের উপ-পরিচালককে সাময়িক বহিষ্কার
- জামালপুরে মৎস্যজীবী দলের ইফতার মাহফিল
- পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু
- সোমালিয়ায় জিম্মি জাহাজ উদ্ধার নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন আত্মঘাতী: টিআইবি
- নগরকান্দায় সুলভ মূল্যে ডিম-দুধ-মাংস বিক্রি
- ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
- কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর হাইস্কুলে নিয়োগ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে বিভক্ত পরিচালনা পরিষদ
- মহম্মদপুরে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু
- টাঙ্গাইলে ফেনসিডিলসহ আটক ৪
- এবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেন কলেজ অধ্যক্ষ
- ভারতীয় নাগরিক দীপককে পরিবারের কাছে হস্তান্তর
- বিলাইছড়ি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান
- বিভীষিকার ১২ বছর: বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশায় ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুরা
- দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছেন সালথা থানার ওসি
- বাগেরহাটে তিন শতাধিক অসচ্ছল পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
- গাছে ঝুলছিল আম্বিয়া বেগমের মরদেহ
- ‘খুনি জিয়া-মোশতাক চক্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিস্যাৎ করে’
- বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে দুইদল জেলের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৬
- ভোলার তজুমদ্দিনে সরকারি খাল বিক্রি, নীরব প্রশাসন
- লালপুরে অবৈধভাবে বালু ও ভরাট উত্তোলন বন্ধে পাহারার নির্দেশ
- টঙ্গীবাড়ীতে কুরবানির গরুর ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ, সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা
- চেউটিয়া খাল উন্মুক্ত করে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে আশাশুনিতে মানববন্ধন
- মায়ের জানাজা পড়ালেন প্রধান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম
- নড়াইলে ২ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হোসনেয়ারা গ্রেফতার
- প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত
- ‘এপেক্স ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিস্ট কাউন্সিল’র বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কমিটি গঠন
- কান্তজী মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণ ঘটনাটি যথেষ্ট সমালোচিত হচ্ছে?
- চাহিদার তুঙ্গে সিকুয়েন্স পাঞ্জাবি, বাহারি পোশাকে মেতেছে নারীরা
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- সিলেটের ভ্রমণ কাহিনী
- শুধু প্রভাবশালীদের পক্ষেই আইন!
- অম্ল-মধুর যন্ত্রণায় অপু বিশ্বাস
- লাইন ধরে খেতে হয় লিখনের জগা খিচুড়ি !
- আমার বোন শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি : চিনে নিন কে এই বরকত!
- 'ইতিহাসের ইতিহাস'
- ধনী হওয়ার আট কার্যকর উপায়
- মেয়ে পটানোর কৌশল!
- লক্ষাধিক রাখাইন জনগোষ্ঠী আড়াই হাজারে নেমে এসেছে
- উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের নতুন যাত্রা ১ বৈশাখ
- লোভী মানুষ চেনার সহজ উপায়
- আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ১৪'তোমার সহজাত উদারতা তোমাকে আকাশের সীমানায় উন্নীত করলেও তোমার ঘনিষ্ঠ অনেকের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ তোমার নৃশংস মৃত্যুর পথে কোনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি'
- বাংলা বই পড়ার ওয়েবসাইট
- মঠবাড়িয়ায় ৯ বছরের শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা
- হুমায়ূনের মৃত্যুর কারণ মদের পার্টি !
- শাকিবের নায়িকা শ্রাবন্তী, অপুর নায়ক জিৎ
- দেশে ফিরছেন তারেকস্ত্রী জোবায়দা রহমান
- বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়
- ইউটিউবে নায়লার আত্মপ্রকাশ
- নেপালের ভূমিকম্প প্রাকৃতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি !
- বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে !