E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মানবতা কতদূর!

২০২০ জুন ২৫ ২২:০৪:৫৫
মানবতা কতদূর!

রহিম আব্দুর রহিম


২৫ জুন জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকার ৪ এর পাতার একটি সংবাদ শিরোনাম, ‘কাঁঠাল চুরি করায় পিঁটিয়ে হত্যা করা হয় সলমানকে।’ সংবাদ বডির সারাংশ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামের সলমান (১৫), তার বাবা মো. শাহাদ মিয়া। গত ১৭ জুন, এই শিশুকে তার মা রান্নার জন্য শুকনো খড়কুটো আনার জন্য বাড়ির পেছনে পাঠায়। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ১৮ জুন এই শিশুর মৃত দেহ পাওয়া যায় পাশের গ্রামের তোয়াব খান (৫০) এর কাঁঠাল বাগান টিলায়। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সিংহবাদ গ্রামের বাসিন্দা মৃত সুজন খানের ছেলে এই তোয়াব খান। বাগানের মালিক তোয়াব খান শিশুটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে এটা নিশ্চিত হয়েছেন কুলাউড়া থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানা অফিসার ইনচার্জ মো. ইয়ারদোস হাসান জানান, ‘নিহত শিশুটির মা ১৮ জুন অজ্ঞাত আসামী করে একটি খুনের মামলা থানায় দায়ের করেন। পুলিশ ক্লু-বিহীন খুনের রহস্য উদঘাটনে নামেন। তারা নিশ্চিত হন, শিশুটি তোয়াব খানের গাছের কাঁঠাল পাড়ার অপরাধে খুন হয়েছে।’ দীর্ঘ ৬ দিন পর পুলিশ খুনিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। খুনের প্রত্যক্ষ সাক্ষী না থাকায়, গ্রেফতারকৃত তোয়াব আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা পুলিশ আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছেন।

দুরন্তবেলার শিশুরা মৌসুমী ফলমুল, প্রতিবেশীর বাগ-বাগিচা থেকে পেড়ে খায়নি, এমন নজির কেউ দেখাতে পারবে না। গাঁও-গ্রামের ৯৫% মানুষজন এখনও শিশুদের কৌতুহলী এমন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ তো দূরের কথা অনেকেই এ ব্যাপারে আনন্দ পান। কৌতুহলী শিশুদের আনন্দের এই কাজকে চুরি হিসেবে বলাও একটা অমানবিক কাজ। সেই ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়স্ক সভ্য সমাজের একজন ব্যক্তি শিশুটিকে পিটিয়ে মেরে ফেললো! ধিক্ মানবতা। পুলিশ যেহেতু অপরাধীকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে পেরেছেন, এই খুনের অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা হোক এটাই সভ্য বিবেক কামনা করছেন।

বেশ কয়েক বছর আগে সিলেটের কুমারগাঁও বাস স্টেশনের একটি দোকানের বারান্দার খুঁটিতে বেধে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, শেখ সামিউল আলম রাজন নামের ১৩ বছর বয়সের এক শিশুকে। এ ঘটনায় ওই খুনিকে পুলিশ বিমান বন্দর থেকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছিলেন। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে বিচারক খুনিকে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করার রায় দিয়েছিলেন। একই সময়ে অন্য আরও একজন শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার মজুমদারখালি শান্তি নিকেতনে। পিকন দে নামের ৮ বছর বয়সের এই শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল, তারই মামা সুজন দে। ওই সময় নোয়াখালীর ছাগলনাইয়া কলেজ রোডে, ১১ বছর বয়সের এক শিশুকে খুঁটিতে বেধে নির্মম নির্যাতনের ভিডিও চিত্র প্রকাশ হয়েছিল। এধরনের হত্যাকান্ড এবং নির্মমতার কি বিচার হয়েছে তা এখনও সাংবাদিক বন্ধুরা জানাননি।

শিশুরা অবুঝ! তারা নিরাপদ আশ্রয়, আনন্দঘন পরিবেশ চায়। কিন্তু আমরা কি তা দিতে পারছি? আমাদের সমাজে শিশুদের অবস্থান কোথায়? প্রায় সময়েই শিশু নির্যাতনের ভয়াবহ সংবাদ আমাদের শুনতে হচ্ছে। শিশু খুন, নির্যাতন ও ধর্ষণ অহরহ ঘটেই চলছে। চুরির অপরাধে সলমান আহমদকে পিঁটিয়ে হত্যা করা হল। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং অনলাইনের সংবাদ শিরোনামে প্রতিদিনই আমাদের দেখতে হচ্ছে, জানতে হচ্ছে লোমহর্ষক ঘটনার মানবিক বিপর্যয়ের তথ্যচিত্র। সলমানকে তোয়াব খান লাঠি দিয়ে মাথায় ও নাকে একাধিক আঘাত করেছে। আমরা আর সলমানদের হত্যাকান্ড দেখতে চাই না। আর এজন্য চাই অপরাধী যেই হোক, তার উপযুক্ত সাজা।

পাঠকের মতামত:

১৯ মার্চ ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test