E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগস্ট হোক শপথ নেয়ার মাস

২০১৪ আগস্ট ১৪ ১৭:১৩:১৬
আগস্ট হোক শপথ নেয়ার মাস

চৌধুরী আ. হান্নান : বাঙালীর নিকট আগস্ট আসে বেদনা নিয়ে, কান্না নিয়ে। আওয়ামী লীগ ও এর অংগ সংগঠন মাসব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জাতির পিতার হত্যার করুণ শোক গাঁথা স্মরণ করে থাকে। অন্য কোন রাজনৈতিক দলকে এ শোকবহ ঘটনা স্মরণ করতে দেখা যায় না। বঙ্গবন্ধু কেবল আওয়ামী লীগের নন, তিনি বাংলাদেশের জাতির পিতা। আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলের সরকার আছে বলেই ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করা সম্ভব হচ্ছে।

১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় চার নেতার হত্যার পর ও হত্যাকারী ও দেশী বিদেশী নেপথ্য নায়কদের সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাথে জোড়া দিতে না পারলেও দেশটাকে করে দিল উত্তাল নদীতে মাঝিবিহীন নৌকা।
গত ৪২ বছরের মধ্যে একটা দীর্ঘ সময় স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। ইতিহাস মুছে ফেলা, ইতিহাস বিকৃত করার এক মহোৎসব চালানো হয়। তারা ইতিহাসের এক প্রাচীন রাজার কথা মনে করিয়ে দেয়।
প্রায় ২২৫০ বছর পূর্বে ওয়াং চেং নামে চীন দেশে এক রাজা ছিলেন। নিজের সম্পর্কে তার অতি উচ্চ ধারণা। তিনি চাইতেন তার লোকেরা অতীত ইতিহাস ভুলে যাবে। ইতিহাস শুরু হবে তার সময় থেকে। তার পূর্বে অনেক সফল রাজা ছিলেন। তাতে কী? আদেশ জারী করে যে সকল বই পুস্তক ইতিহাস ও মর্যাদাবান লোকদের নিয়ে লেখা হয়েছে, সে গুলো আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল। অনেক পন্ডিত ব্যক্তিগণ যারা তাঁদের প্রিয় বই গুলো লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন তাঁদের জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছিল। খৃষ্টপূর্ব ২০৭ এ তার মৃত্যুও পরই তার সকল কর্মের পরিসমাপ্তি ঘটে। তিনি ইতিহাসের নায়ক হতে চেয়েছিলেন কিন্তু ইতিহাস তাকে খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
‘৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর যারা বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাসকে মুছে দিযে নতুন ইতিহাস রচনায় ব্রতী হয়েছেন তারাও একদিন খলনায়কে পরিনত হবেন। মানুষ যদি ইতিহাসের শিক্ষা গ্রহণ করতো তাহলে পৃথিবীর চেহারা অন্য রকম হতে পারতো।
আগস্ট ট্রাজেডিতে দৈবক্রমে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সব হারানোর বেদনা নিরন্তর বয়ে চলেছেন।
হাসিনা সরকারের কাছে আমাদের অনেক বাড়তি প্রত্যাশা। যাঁর হারানোর কিছু নেই, লোভ লালসা নেই, অপরকে দেয়ার জন্য বিধাতা তাঁকে অসীম ক্ষমতা দেন।
গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ চাই কিন্তু তার আগে চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। মানবাধিকার চাই কিন্তু তার পূর্বে চাই সন্ত্রাস মুক্ত সমাজ এবং শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের নিশ্চয়তা।
রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমান সরকারের বৈধতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। তবে বর্তমান মন্ত্রী পরিষদের সদস্য নিয়েগের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সততা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দিয়েছেন বলে আলোচনা আছে। প্রধান বিরোধীদল জামায়াত সমর্থিত বিএনপি চায় এখনই সংলাপ শুরু করতে এবং অবিলম্বে নতুন করে নির্বাচন। সরকারের পক্ষ থেকে অনেকে বলে দিয়েছেন পাঁচ বছর শেষেই নির্বাচন হবে এবং এখনই কোন সংলাপ নয়। সংঘাতের আশংকা স্পষ্ট। কিন্তু মানুষ নিকট অতীতের রাজনৈতিক বিভীষিকার পুনারাবৃত্তি চায় না।
আওয়ামী লীগ সরকারকে গত টার্মে বেশির ভাগ সময় ব্যয় করতে হয়েছে গদি সামলাতে, কাজ করবে কখন? একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার বিরোধীদল যে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায় তাতে মনে হয়েছিল, তারা রাজনীতি করে কেবলই ক্ষমতা দখলের জন্য। গত সংসদের মোট কার্যদিবস ৪১৮ দিনের মধ্যে বিরোধীদল সংসদে উপস্থিত ছিল ৭৬ দিন। তাঁদের নেত্রী উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১০ দিন। এমন বিরোধীদল নিয়ে আমজনতার কী লাভ? কালপরিক্রমায় বিএনপি এখন যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামের কোলে ঘুমিয়ে পড়া জনবিচ্ছিন্ন একটি দলের নাম।
রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কল্যাণমূলক কাজ করে সরকারের জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করার সময় এখন। গত বছর শেষের দিকে বিএনপি জামায়াতের তাণ্ডব, হেফাজতে ইসলামের উত্থানে সরকার যখন দিশেহারা, খর-রোদে এক পসলা বৃষ্টির মত উপস্থিত হয় শাহবাগের ‘গণজাগরণ মঞ্চ’। সরকার তা ঠিকই কাজে লাগিয়ে হাঁপ ছাড়ার সুযোগ পায়।
‘৭১ পরবর্তী প্রজন্ম পাঠ্য পুস্তক পাঠ করে মুক্তিযুদ্ধ বুঝতে পারেনি, বিভ্রান্ত হয়েছে কেবল। এটা জাতির এক বড় ব্যর্থতা। তারা নিজ আগ্রহে এবং বিশ্বব্যাপী তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক বিবর্তনের কল্যাণে অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বুঝতে সক্ষম হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাথা হৃদয়ে ধারণ করে বাংলাদেশের সর্বত্র বড় হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম। শোক আর কান্না এবার রূপান্তরিত হবে শক্তিতে এবং আগস্ট হবে আমাদের শপথ নেয়ার মাস। বাংলাদেশকে স্বীকার করে না এমন শক্তি আর কখনও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হবে না। বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ কন্যা দেশকে সে লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাবেন - এ আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : সাবেক ব্যাংকার
(এএস/আগস্ট ১৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test