E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

রাষ্ট্রধর্মের নাম হবে 'ন্যায়বিচার'

২০২০ আগস্ট ২০ ১৫:১১:২৪
রাষ্ট্রধর্মের নাম হবে 'ন্যায়বিচার'

আবীর আহাদ


১৯৭১ সালে আমরা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে অথবা কোনো ধর্মকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ করিনি । আমরা নিরেট বাঙালি জাতীয়তাবাদী চিন্তাচেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টানসহ বিভিন্ন পাহাড়ি উপজাতি ও ণৃগোষ্ঠী নির্বিশেষে সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্ব দিয়ে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে মুক্তিযুদ্ধ করেছি । বহু মানুষ, বহু মত, বহু পথ ও বহু চিন্তার কোনো দেশে বিশেষ কোনো ধর্ম প্রাধান্য পেতে পারে না ।

তাছাড়া রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকে না । রাষ্ট্র তার ভুঘণ্ডে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মকে সমদৃষ্টিতে সমমর্যাদায় পালন করার নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে । কারণ রাষ্ট্র নামাজ পড়ে না, রোজা রাখে না, হজ্ব করে না, পূজা-অর্চনা করে না, প্রসাদ খায় না ! রাষ্ট্রের কোনো তসবীহ, পৈতা নেই । সে কথা বলতে পারে না । হাঁটতে পারে না । তাকে সবাই মিলে চালিয়ে নিতে হয় । আর এই 'সবাই' হলো সেই রাষ্ট্রের জনগণ-----কোনো মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান, পাহাড়ি উপজাতি ও কোনো ণৃগোষ্ঠী নয়----ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ ।

সুতরাং রাষ্ট্রের কোনো সাম্প্রদায়িক ধর্ম নেই বা থাকে না । রাষ্ট্রের কাছে সেই দেশের সব নাগরিক তথা আস্তিক-নাস্তিক ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ সমান । রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বসবাসকারী সব নাগরিকের জানমাল ও মানমর্যাদা----এককথায় মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের । এর অর্থ, রাষ্ট্রের নিশ্চিত একটা ধর্ম আছে এবং থাকা উচিত । আর সেই ধর্মটি হলো ন্যায়বিচার । সবার প্রতি ন্যায়বিচার : ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই রাষ্ট্রের ধর্ম ।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতাকে কবর দেয়া হয়েছে । বাংলাদেশ চলবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ভিত্তিতে । এখানে বিশেষ কোনো ধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হতে পারে না । ইসলামী সমাজ ও ইসলামী আদর্শ----মদিনা সনদে অথবা আল-কোরআনের কোথাও " রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম " বলতে কোনো কিছু নেই । তাছাড়া ইসলামে ধর্ম পালনে জবরদস্তিও নেই । এ জন্য পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, লা-কুম দ্বীনাকুম ওয়ালিয়েদ্বীন----যার যার ধর্ম তার তার কাছে এবং লা-ইকরা হা ফি-দ্বীন----ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই । এছাড়া পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে: কোন ধর্ম ঠিক, কোন ধর্ম বেঠিক, তা নির্ণয়ের ভার আল্লার ওপর । কোরআনের এসব আয়াতদৃষ্টে এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিভিন্ন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে-----ধর্মবিভক্ত সমাজ পরিচালিত হবে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে----বিশেষ কোনো ধর্মদ্বারা নয় ।

পরিশেষে এ সিদ্ধান্তেই আসতে হব যে, রাষ্ট্রের একটি ধর্মবিশ্বাস থাকতে হবে, তবে সেটি কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্ম নয়, সেটি হবে ন্যায়বিচার । অর্থাত "ন্যায়বিচার"ই রাষ্ট্রধর্ম ।

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা লেখক গবেষক,চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test