E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নামকরণ-নামবদল : ইতিহাসের নিরীখে

২০২০ আগস্ট ২৪ ২৩:২৫:৫৫
নামকরণ-নামবদল : ইতিহাসের নিরীখে

রণেশ মৈত্র


বিগত ৭ জুলাই এর দৈনিক সংবাদ এর চতুর্থ পৃষ্ঠায় “বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ নামকরণের উদ্যোগ” শীর্ষক খবরটি বিশেষভাবে দুটি আকর্ষণ করলো। নামকরণের সাথে ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে মর্য্যাদা প্রদান-হৃত গৌরব উদ্ধারে নামবদল যে ইতিহাসকে সামনে রেখে এবং তাকে মর্য্যাদা দিতেই করা হয়, এই অনুভূতির মহা আকালের যুগেও যে বরিশালের সুধি সমাজ তা ভুলে যান নি-তা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিলো।

১৯৪৭ এ পাকিস্তান হতে না হতেই অন্তত: সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে নামবদলের প্রতিযোগিতা শুরু হয় শুরু হয় রাস্তা-ঘাট-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নানা স্থাপনার নাম পরিবর্তনের ঢেউ। আবার ১৯৭২ এ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তেমনই রদবদলের হিড়িক পড়ে যায় প্রধানত: তৈল মর্দনের মাধ্যমে কোন মতলব হাসিল এবং দ্বিতীয়ত: নাম জাহিরের অনাকাংখিত উদ্দেশ্য নিয়ে। নতুন কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নতুন নাম দেওয়া বা সেভাবে নিজেকে ইতিহাসের মর্য্যাদায় আসীন করা আদৌ কোন সমালোচনার বিষয় নয়।

বিষয়টি অতি গুরুত্বের সাথে আলোচনার দাবী রাখে কারণ আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বীকৃতি-অস্বীকৃতির সাথে তা ওত:প্রতভাবে জড়িত। তাই সংবাদে প্রকাশিত ৭ জুলাই এর খবরটি উদ্বৃত করছি আমার প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের স্মরণে আনা ও দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। খবরটিতে বলা হয়েছে-

“বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নগরীর সরকারি কলেজের নাম পরিবর্তন করে মহাত্ম আশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ” নামকরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। বরিশালের জেলা প্রশাসকের একটি স্মরকের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রাণালয় ২৯ জুন তারিখে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের মতামত চাওয়া হয়েছে।

অবিভক্ত ভারতবর্ষের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বরিশালের মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত। দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করা মহাত্মাআশ্বিনী কুমার দত্ত। তাঁর একক উদ্যোগে ও অর্থায়নে বরিশালে প্রতিষ্ঠিত হয় তাঁর পিতার নামে ব্রজ মোহন বিদ্যালয়। পরে তিনি তাঁর পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ব্রজমোহন কলেজ (বি এম কলেজ)। পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই নিঃসন্তানআশ্বিনী কুমার দত্ত তাঁর বরিশাল নগরীর বাসভবন ও গৌরনদী উপজেলার বাটাজোরের বাড়ী ফেলে অসুস্থাবস্থায় কলকাতায় অবস্থানকালে মারা যান।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর তাঁর পরিত্রক্ত বাড়ীটি সরকার রিকুইজিশন করে এবং বি এম কলেজের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। এই ছাত্রাবাসে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যূত্থানের অন্যতম নায়ক ও বর্তমান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বি.এম. কলেজ থেকে আই.এম.সি পাশ করেন। পরবর্তীতে বরিশালের তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস সহ অপরাপর ব্যক্তিদের উদ্যোগে মহাত্মার বাড়ীতে “বরিশাল নৈশ কলেজ” প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এই সময়েই আওয়ামী লীগ, ন্যাপসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে কলেজটির নাম “মহাত্মাআশ্বিনী কুমার কলেজ” রাখার দাবী জানানো হলেও মুসলিম লীগের নেতারা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গীর কারণে সেই দাবীর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে নি। পরবর্তীতে মহাত্মার বাসভবনেই বরিশাল দিবা ও নৈশ কলেজ চালু হয়। এরশাদ সরকারের আমলে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয় এবং বরিশাল বাসীর প্রতিবাদকে অগ্রাহ্য করে অবিভক্ত ভারতবর্ষের ঐতিহ্য মহাত্মাআশ্বিনী কুমার দত্তের দোতলা বাসভবনটি মাটিতে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এখন সেই বাড়ী এবংআশ্বিনী কুমার দত্তের নিকটাত্মীয়য়ের পার্শ্ববর্তী বাড়ীর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সরকারি বরিশাল কলেজ। মাহাত্মার বাড়ীর পুকুরটির বৃহদাংশ ভরাট করে সেখানে অন্য স্থাপনা নির্মান করা হয়েছে।

তবে বরিশালের অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তমনা মানুষেরা চাচ্ছেন সর্বত্যাগী মহাত্মাআশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি মহাত্মার নামে রাখা হোক। আর এসব মানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবীর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রালয়ের পক্ষ থেকে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে প্রেরিত পত্রে তাঁর মতামত জানতে চেয়েছেন। বরিশাল বাসীর প্রত্যাশা বোর্ড চেয়ারম্যান বরিশাল বাসীর দাবী ও প্রত্যাশা অনুযায়ী তাঁর মতামত দেবেন।”

বরিশাল একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। মনে আনন্দ অনুভব করি, সেখানকার আজকের প্রজন্মের সচেতন, দেশপ্রেমিক মানুষেরা তাঁদের অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে সমুজ্জল রাখতে সমর্থ হবেন। সম্ভবত: শহীদ স্মৃতিতে গড়ে ওঠা সংগীত বিদ্যালয়কে দখলের পাঁয়তারা থেকেও বরিশালবাসী তাকে রক্ষা করতে পেরেছেন। লেখনীর দ্বারা সে আন্দোলনেও বরিশালবাসীর সাথে সংহতি জানিয়েছিলাম। বরিশালের জেলা প্রশাসকও ধন্যবাদার্হ। তিনিও এই মহান কাজে বরিশাল বাসীর সাথে একাত্ম এ খবরটি তখন জেনেছিলাম। সবার মত আমারও ঐকান্তিক কামনা, বরিশাল বাসীর আকাংখা পূরণে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানও এগিয়ে আসবেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।

পাবনার গৌরব

বরিশালের মহাত্মাআশ্বিনী কুমার দত্তের মতই পাবনাতেও একজন নিঃস্বার্থ শিক্ষানুরাগীকে স্মরণ করা যাক। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে শিক্ষা দীক্ষায় চরম-অনগ্রসর পাবনায় শিক্ষা আলো ছড়ানোর লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছিলাম শিক্ষার অগ্রদূত গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী। তখন ইংরেজ আমল। গোপাল চন্দ্র তাঁর বাড়ীর কয়েক বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠা করলেন একটি হাই স্কুল। স্কুলটির নামকরণে তিনি অবশ্যই পারতেন তাঁর অথবা তাঁর বাবা-মায়ের নামে স্কুলটির নামকরণ করতে। কিন্তু সে পথে হাটলেন না তিনি। স্কুলটির নাম রাখলেন পাবনা ইনষ্টিটিউশন। স্কুলটির উত্তরন পাশে সামান্য একটু জমিতে তিনি একটি কাঁচা বাড়ীতে থাকতেন। বাদ-বাকী কয়েক বিঘা জমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছিলেন পাবনা ইনষ্টিটিউশনের নামে।

এখানেই ক্ষান্ত হন নি গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী। পাবনা জেলার প্রথম কলেজটিও তিনিই স্থাপন করলেন পাবনা শহরের গোপালপুর মৌজার এক ভাড়া বাড়ীতে। অত:পর তিনি ব্যাপক প্রচেষ্টা চালান কলেজটির জন্য বড় সড় জায়গা সংগ্রহ করতে। এগিয়ে এলেন বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান জমিদার। তাঁদের অর্থায়নে রাধানগর এলাকায় গড়ে তুললেন কলেজটি। এবারেও এই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখলেন “পাবনা কলেজ”।

গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী দীর্ঘকাল যাবত পাবনা ইনষ্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক ও পাবনা কলেজের অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত থেকে মান সম্পন্ন শিক্ষায় ছেলে মেয়েদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে প্রয়াসী হয়েছেন। একদিন গোপাল চন্দ্র লাহিড়ীকে মৃত্যু বরণ করতেই হলো। তখন পাবনা ইনষ্টিটিউশনের পরিচালনা কমিটি স্কুলটির নাম রাখলেন পাবনা গোপাল চন্দ্র ইনষ্টিটিউশন। তাঁর জীবিতকালে এমন প্রস্তাব এলেও তাতে তিনি সম্মত দেন নি।

কিন্তু পাবনা কলেজের নামটিও পাল্টানো হলো। তবে তা প্রতিষ্ঠাতার নামে নয়। পাল্টে নাম রাখা হলো “পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ” ইংরেজ এক শাসকের নাম স্থায়ী করার লক্ষ্যে। হ্যাঁ, বস্তুত:ই স্থায়ী। ‘এডওয়ার্ড’ নামটি সরিয়ে অন্য কোন স্বাধীনতা সংগ্রামী, শিক্ষাবিদ বা সংস্কৃতিসেবীর নামে কলেজটির নামকরণ করার কথা ভাবাও হয় নি। কিন্তু প্রতিষ্ঠাতা গোপাল চন্দ্র লাহিড়ীর আদৌ স্থান জুটলো না তাঁরই কলেজে। কলংকময় পরাধীনতার স্মৃতিবাহী এডওয়ার্ডের নাম আজও দীপ্যমান। এমন কি, গোপাল চন্দ্র লাহিড়ীর নামে কোন হল বা তাঁর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন কোন কিছুই করা হলো না। ইতিহাস হারিয়েই গেল। আজকের প্রজন্মের কাছে পাবনা কলেজ ও গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী সম্পূর্ণ অচেনা থেকে গেলেন।

দানবীর জমিদার রায় বাহাদুর বনওয়ারী লাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাট্যমঞ্চ সহ একটি বিশাল হল। নাটকের অভিনেতা অভিনেত্রীদের সাজ-সজ্জার জন্য ছিল একটি পৃথক কক্ষ। বৃটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত এটির নাম ছিল বনমালী ইনষ্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটির নাম পাল্টানো হয়েছে এই তো মাত্র কয়েক বছর আগে। নতুন নামকরণ করা হয়েছে বনমালী শিল্প কেন্দ্র। কাজটি অযৌক্তিক এবং ইতিহাস বর্জিত। বনমালী ইনষ্টিউটের ব্যাপক সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। কয়েক কোটি টাকা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন ঐ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তা ছাড়াও কয়েজন বিত্তশালী কিছু কিছু ব্যাক্তিও অর্থ খরচ করেন এই সংস্কারের পিছনে। সংস্কারের শিকার হলো হলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রদত্ত নামটি। কিন্তু মানুষের কাছে এটি আজও “বনমালী ইনষ্টিউট”। পরিবর্তিত নাম পাবনা বাসী উচ্চারণও করেন না।

পাকিস্তান আমলে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানা নামে পাবনা শহরে জনপ্রিয় ছিল। নারী শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই শহরটিতে ছিল গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠিত হলো পাকিস্তান নামক কথিত মুসলমান রাষ্ট্র। আর যায় কোথা? রাতারাতি মহাত্মা গান্ধীকে বিদেয় দিয়ে স্কুলটির নাম রাখা হলো পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস্ হাই স্কুল। হারিয়ে গেল প্রতিষ্ঠিাকালীন গান্ধীজির নাম-আজ তা পূরাপূরি বিস্মৃত। আরও ছিল মাহাকালী পাঠশালা। ঠিক পাবনা টাউন হলের পূর্ব পার্শে¦। না, পাকিস্তান আমলেই স্কুলটির নাম পাল্টে পাবনা টাউন গার্লস স্কুল দেওয়া হলো। মহাকালির বিসর্জন দেওয়া হলো চিরতরে। কিন্তু ইতিহাস? ইতিহাসকেও যে বিদায় দিলাম তা কি আজও ভাবি আমরা?

এ ছাড়াও ছিল সরস্বতী পাঠশালা। এখন সেটা হয়েছে সেলিম নাজির হাই স্কুল। জায়গাটাও বদলেছে। সরস্বতী গেলেন নির্বাসনে পাকিস্তানের কল্যাণে। আজও তিনি নির্বাসনেই থেকে গেলেন। ইতিহাসও স্বভাবত:ই নির্বাসনে।

মুক্তিযুদ্ধ হলো নয় মাসব্যাপী সশস্ত্র লড়াই এর মাধ্যমে। বিজয় অর্জিত হলো ১৯৭১ এর ডিসেম্বরে। পেলাম স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ। ভাবা গিয়েছিলো শুধু রাজনৈতিক জীবন নয়-সমাজ জীবনেরও সর্বত্র ধর্মনিরপেক্ষতার ছাপ দৃশ্যমান হবে-পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িকীকরণ প্রক্রিয়া বিদায় নেবে।

কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি পড়লো। পৌরসভার চেয়ারম্যান ভ্ইস চেয়ারম্যন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হলেন। অতি দ্রুততার সাথে পাকিস্তাান আমলের অসম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িকীকরণের কাজটি দিব্যি জোরে সোরে সম্পাদন করলেন শহরের ৯৫ ভাগ সড়ক, কাঁচা-পাকা নির্বিশেষে ছিল মূলত: হিন্দু ব্যবসায়ীদের নামে। তাঁরাই ছিলেন রাস্তাগুলির নির্মাতা। আজ আর তার কোন চিহ্ন নেই। প্রায় সকল রাস্তারই নামের ইসলামীকরণ প্রক্রিয়া ১৯৭২-৭৩ সালে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান সম্পন্ন করলেন। আজও বেশীর ভাগ (প্রায় সবগুলি) রাস্তা তেমনই আছে। সাম্প্রাদয়িকীকরণ বদলাতে কেউ এগিয়ে আসতে আগ্রহী নন। তবুও পৌর কর্তৃপক্ষকে বলবো এই পথে পরিহার করে পুরাতন নামগুলিই উদ্ধার করা হোক।

ইদানিং হঠাৎ করেই পাবনা শহরেরর রাস্তা ঘাট, পার্ক প্রভৃতি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নাম করণ করা হচ্ছে। কিন্তু লোকে তাদের অভ্যস্ত পুরাতন নামেই রাস্তাগুলিকে চিনছে। এতে কি সম্মান থাকলো ঐ মুক্তি যোদ্ধাদের? আর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা তো কয়েক হাজার এই জেলাতে। যাঁদের নাম বাদ পড়লো-তাঁদেরই বা অপরাধ কি? এটাও ঠিক, সকল মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ করতে গেলে কয়েক হাজার নতুন রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু যাঁদের নামে করা হলো-তাঁদেরকে বাছাই করা হলো কোন ভিত্তিতে বা কোন নিরিখে?

সর্বশেষ ভিকটিম হলো পাবনা জুবিলী ট্যাংক। এর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা তাঁতিবন্দের জমিদাররা কিন্তু তা পরিচালনার দায়িত্ব পৌরসভার হাতে ন্যস্ত করেন নির্মাতারা। বিশাল এক পুকুর আছে পৌরসভা সংরক্ষিত। চার পাশ দিয়ে সকাল বিকেল বয়স্ক-তরুণ নির্বিশেষে হাঁটা, গল্পগুজব করার মত পাবনা শহরের একমাত্র স্থান। এক ডাকে চেনেন সবাই জুবিলী ট্যাংককে।

হঠাৎ করেই সম্প্রতি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে পার্ক হিসেবে ওটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু নিশ্চিত বলা যায়, যুগ যুগ ধরে, অতীতের মতই, পাবনার মানুষ জুবিলী ট্যাংক নামেই ডাকবেন।

পৌরসভার উচিত পুরাতন কোন কিছু মুক্তি যোদ্ধাদের নামে না করে তাঁদের সম্মান ও মর্য্যাদা রক্ষায় নতুন কিছু করা। তা ছাড়াও, নাম করণের ক্ষেত্রে কতৃপক্ষের কি আদৌ মাথায় এসেছে মওলানা ভাসানী, মওলানা তর্কবাগীশ, গৌরী প্রসন্ন মজুমদার, মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন, প্রমথ চৌধুরী, যাদব চক্রবর্তী, শহীদ ডাক্তার অমলেন্দু দাক্ষী, বেগম সেলিনা বানু, সুচিত্রা সেন, কাদেরি কিবরিয়া, কামাল লোহানী প্রমুখের নাম? এ নামগুলিকেও স্মরণীয় করে রাখা আমাদের দায়িত্ব-একথা যেন ভুলে না যাই।

লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test