E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করা হলে দেশে যুদ্ধ ঘোষিত হবে

২০২০ অক্টোবর ০৭ ১৫:৪২:৩২
মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করা হলে দেশে যুদ্ধ ঘোষিত হবে

আবীর আহাদ


একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবীর আহাদ গত ০৫ অক্টোবর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ''মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র বেঁচতে চায় সরকার'' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্রে সরকারের গৃহীত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিনাশী প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এটা করা হলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, চেতনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে দেশে যুদ্ধ ঘোষিত হবে ।

আজ এক বিবৃতিতে আবীর আহাদ বলেন, প্রথম আলো পত্রিকার অবিশ্বাস্য এ প্রতিবেদনে আমরা স্তম্ভিত । নির্বাকই শুধু নয়-----আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে আগুন জ্বলে উঠেছে । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ গৌরবময় অধ্যায় ও অর্জন । সেই মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র জাতির গৌরবের পবিত্র প্রতীক ও চেতনার স্মারক সত্তা । এসব অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাজি রাখা অকুতোভয় প্রত্যয়ের বিজয়-স্মারক, জাতির অতুল বৈভবময় প্রাপ্তির অমূল্য স্মৃতিচিহ্ন ।

আবীর আহাদ সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, জাতির সেই ঐতিহাসিক মর্যাদাপূর্ণ অবিস্মরণীয় বিজয় চিহ্নকে কি বিক্রি করা যায় ? দেশের সব ব্যাঙ্ক ও সরকারি কোষাগার চলমান সীমাহীন লুটপাটের কারণে কি নি:শেষ হয়ে গেছে যে, সরকারি ব্যয়নির্বাহ করতে এখন মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করতে হবে ? এ সিদ্ধান্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও সম্ভ্রম হারানো মাবোন আর শহীদের আত্মার সঙ্গে নির্মম ও নিষ্ঠুর প্রতারণা ও তামার সামিল । এটাকে কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না । মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিক এই সংবাদে দারুণভাবে মর্মাহত, হতাশ এবং বিক্ষুব্ধ । জাতির শৌর্য বীর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্বের প্রতীক এসব অস্ত্রশস্ত্র বিক্রির মন্ত্রণা কার মস্তিষ্কপ্রসূত ? কারা এর পরামর্শদাতা-----আমরা তাও জানতে চাই ।

আবীর আহাদ বলেন, অতীতের ধারাবাহিকতায় চলে আসা সরকারের দুর্নীতি, লুটপাটসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণের ফলে সচেতন দেশবাসী ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা হতাশার তিমিরে অবগাহন করছেন । ঠিক এ সময়ে সরকারের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও মাফিয়া অপশক্তি মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রতীক মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করে কমিশন খাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে মূলত: স্বাধীনতার বেদীমূলে চরম আঘাত হেনেছে ।

আবীর আহাদ বলেন, সরকারে যে-ই থাকুন না কেনো, মুক্তিযুদ্ধের স্মারকসত্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের স্পন্দন যুদ্ধকালীন ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করার চেষ্টা করা হলে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত জাগ্রত জনগণ অবশ্যই সে-চক্রান্তের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত । আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের একটার পর একটা ঘটনায় বিস্ময়ে হতবাক যে, তার নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও তার অপরিণামদর্শী কার্যকলাপে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চরম অবক্ষয় ঘটে চলেছে যা খুবই বেদনাদায়ক । ইতোমধ্যেই একটা কথা উঠেছে যে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের উত্থান, সেই আওয়ামী লীগের হাতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পতন ঘটতে যাচ্ছে ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবীর আহাদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধীরা কারা, যারা মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র বিক্রির পরিকল্পনা করছে ? সেটা সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে । জাতির সামন সেসব কুলঙ্গারদের নামধাম প্রকাশ করতে হবে । আমরা এই সংবাদের সত্যাসত্য জানতে চাই । সংবাদ মিথ্যা হলে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে । আর সংবাদ সত্য হলে দেশদ্রোহী হঠকারী এ উদ্যোগ গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । আমরা জানি, বাংলাদেশকে নিয়ে একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে । আমরা সেই ষড়যন্ত্র অবশ্যই রুখে দেবো, দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেবো । একাত্তরের চেতনা-ঋদ্ধ দেশপ্রেমিক নাগরিক এখনো জেগে আছে, প্রয়োজন হলে দেশমাতৃকার সম্ভ্রম রক্ষার্থে আবার তারা জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে কোনোই দ্বিধা করবে না ।

পরিশেষে আবীর আহাদ সরকারের প্রতি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যবিনাশী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাঘাতী এ প্রক্রিয়া এখনি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়গাথাঁগুলো দেশের প্রতিটি উপজেলাভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে তাতে সেসব স্মারকগুলো সংরক্ষণ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যেক জাতীয় দিবসে প্রজন্ম পরম্পরায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে । অবিলম্বে সরকারকে ঘোষণা দিতে হবে যে, মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করা হবে না ।

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test