E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বীর নিবাস নয়, সব মুক্তিযোদ্ধাকে গৃহঋণ দিন  

২০২০ অক্টোবর ২৫ ১৬:১৮:৩৩
বীর নিবাস নয়, সব মুক্তিযোদ্ধাকে গৃহঋণ দিন  

আবীর আহাদ


চলতি বছরের গোড়ার দিকে ১৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ি করে দেয়া হবে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বাহাদুর ঘোষণা দেয়ার পর উপজেলায় উপজেলায় যে বাণিজ্যিক ধান্দা শুরু হয়েছে, সেটাকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নির্মম তামাশা অভিহিত করে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান লেখক গবেষক আবীর আহাদ বলেছেন, দেশের ৯০% শতাংশ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলা চলে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করে চলেছেন । এ অবস্থায় ঐ তথাকথিত ১৪ হাজার বাড়ি কারা কীভাবে পাবেন তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয় । তাছাড়া এই বিরাট সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধাকে পর্যায়ক্রমে বাড়ি করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হলে সেজন্য কতোটি বছর অতিবাহিত হবে এবং ততোদিন মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে থাকবেন কিনা তা কি মন্ত্রীবাহাদুর বলতে পারবেন ? এ-ব্যতীত প্রত্যেক উপজেলায় প্রকৃতই গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধারা সরকারি খরচে নির্মিত বাড়ি পাবেন----- তার কী কোনো নিশ্চয়তা আছে ? অভিযোগ পাচ্ছি, উপজেলা পর্যায়ে একশ্রেণীর প্রতারকচক্র স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে পর্দার অন্তরালে সর্বোচ্চ ঘুষদাতা মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অগ্রিমও গ্রহণ করছে ! এ-প্রক্রিয়ায় আর্থিক প্রতিযোগিতায় কোনো প্রকৃতই গৃহহীন দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা নয়, বাড়িগুলো পাবে টাকাওয়ালা ও রাজনৈতিক যোগাযোগের অবস্থাসম্পন্ন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা । ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলা থেকে তথাকথিত সরকারি বীর নিবাস প্রাপকদের যে তালিকা সুপারিশ আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠনো হয়েছে তার মধ্যে উপরোক্ত আশংকার সত্যতা পাওয়া গেছে ।

আজ এক বিবৃতিতে আবীর আহাদ উপরোক্ত মন্তব্য করে বলেন, মন্ত্রীবাহাদুর এ পর্যন্ত যতোগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার কী পরিমাণ বাস্তবায়ন ঘটেছে তা তিনি না জানলেও আমরা জানি । তাঁর কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়িত হয়নি । তাঁর প্রতিটি বক্তব্য ফাঁপা বুলিতে পরিণত হয়েছে ।

আবীর আহাদ মুবিম মন্ত্রীসহ সরকারের উদ্দেশ্য বলেন, মুক্তিযোদ্ধারদের শৌর্য ত্যাগ ও বীরত্বে দেশটি স্বাধীন হয়েছে বলেই যিনি জীবনে যা কল্পনাও করেননি তিনি তাই হয়েছেন, হচ্ছেন এবং হতেই থাকবেন । অতএব জাতীয় দায়িত্ববোধ থেকেই সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে ভুয়াদের উচ্ছেদ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে ; সামাজিক নিরাপত্তাসহ তাদের ন্যূনতম আর্থসামাজিক উন্নত জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে ।

সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়ে আবীর আহাদ বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের বেকার সন্তানদের বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে সরকারি চাকরি প্রদানসহ বাজার মূল্যের সাথে সংগতি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধিসহ প্রত্যেক গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধাকে তাদের ভাতা থেকে মাসিক ৫০০০|= টাকা কেটে নেয়ার শর্তে এককালীন অতি নামমাত্র সুদে ২০ লক্ষ টাকার গৃহঋণ প্রদান করুন । যা করার তা মুক্তিযোদ্ধাদের জীবিতকালের মধ্যেই করতে হবে । কারণ মুক্তিযোদ্ধারা পৃথিবীতে আর তেমন বেশি দিন বাঁচবেন বলে মনে হয় না । এছাড়া তথাকথিত ১৪ হাজার বাড়ি বরাদ্দকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে টানাপোড়েনের মাধ্যমে একে অপরের সাথে চরম রেষারেষি ও হানাহানি সৃষ্টি হয়েছে । কারণ সব মুক্তিযোদ্ধাই তো এ-সুযোগ পাওয়ার সমান অধিকারী । সবাই মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিতে গিয়েছিলো । মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কেউ ছোটো বা কেউ বড়ো মুক্তিযোদ্ধা বলতে কিছু নেই । সবাই মুক্তিযোদ্ধা ।

বাড়ি দিতে হলে সবাইকে দিন, অন্যথায় এ অবাস্তব অবাস্তব জগাখিচুড়ি ও হানাহানিপূর্ণ পরিকল্পনা বাদ দিন । তারচে' ভালো, সবাইকে গৃহঋণের আওতায় ছেড়ে দিন । যার প্রয়োজন সে ঋণ নেবে অথবা নেবে না । এতে সবাই একটি সান্ত্বনা পাবে । কোনো মন খারাপের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না, হবে না কোনো হানাহানি । অপরদিকে এ ঋণের বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ঋণখেলাপীও হবে না । কারণ তারা ঋণ নেবে তাদের ভাতার বিপরীতে----যে ভাতাটি সরকারেরই হাতের মুঠোয়-----ভাতাটিই তাদের ঋণের নিরাপত্তা----কো-লেটারাল সিকিউরিটি । সুতরাং সরকারের কাছে আমার আবেদন, মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি না করে, তাদের মনে ব্যথা না দিয়ে অবিলম্বে তথাকথিত বীর নিবাস প্রদান প্রকল্প বাদ দিয়ে সবার জন্য গৃহঋণের সুব্যবস্থা গ্রহণ করুন । এতে চিরবঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের বেদনার্ত বুকে একটা অপার শান্তি ও সান্ত্বনা বয়ে আনবে ।

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধার সংসদ।

পাঠকের মতামত:

১৯ মার্চ ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test