E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাংলাদেশ বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত

২০২০ নভেম্বর ২৮ ১৩:৫৬:০৪
বাংলাদেশ বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত

আবীর আহাদ


দেশপ্রেম ঈমানের অংগ । ঈমানের চৈতনিক অর্থ বিশ্বাস, আস্থা, ন্যায়পরায়ণতা ও সততা ইত্যাদি । বাঙালি জাতির ভাষা সংস্কৃতি স্বাধীনতা ও আর্থসামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে সীমাহীন অত্যাচার নির্যাতন জেল জুলুম ও মৃত্যুকে পায়ে মাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই ঈমানী দায়িত্ববোধ থেকে বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন । বাঙালি জাতিও তাঁর এ আহ্বান ও নির্দেশনার মধ্যে দেশপ্রেমের বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়ে তাতে সাড়া দিয়ে জীবন সম্ভ্রম ও সহায়সম্পদ দিয়ে পরাক্রমশালী পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে । ত্রিশ লক্ষ মানুষের জীবন, তিন লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম, সোয়া কোটি মানুষের দেশত্যাগ এবং দেড় লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধার শৌর্য ত্যাগ ও বীরত্বে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।

দেশের সাধারণ মানুষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের মহাসমরে অবতীর্ণ হলো, অথচ ঈমানের ধ্বজাধারী ইসলামী মোল্লা সমাজ স্বজাতির পক্ষে না-দাঁড়িয়ে বিজাতীয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষাবলম্বন করে । তাদেরই রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, পিডিপি, নেজামী ইসলাম প্রভৃতি পাকিপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো পাকিবাহিনীর সহযোগী সশস্ত্র রাজাকার আলবদর আলশামস আলমুজাহিদ ও তথাকথিত শান্তি কমিটি গঠন করে ঐসব হত্যা ধর্ষণ লুটপাট অগ্নিসংযোগ সংঘটিত করার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল ।

মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের পর থেকে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিবাহিত হলেও সেইসব রাজনৈতিক দলসহ ইসলামী হুজুর সম্প্রদায় এখনো বাংলাদেশকে মনেপ্রাণে মেনে নেয়নি । বিশেষ করে বিশাল সংখ্যক আলেম উলেমা আমাদের ভাষা সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনার বিপক্ষে অবস্থান করেন । জাতীয় বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় শোক দিবস, বাংলা নববর্ষ ও বাঙালি সংস্কৃতি-ঐতিহ্য প্রভৃতির প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই । আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিমালা গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তারা ইসলামবিরোধী কুফরি মতবাদ আখ্যা দিয়ে থাকে ।

আজ কয়েক বছর হলো, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর অন্যতম দোসর নেজামী ইসলামের নেতা প্রয়াত মাওলানা আহমদ শফির নেতৃত্বে আইএস জঙ্গিদের আদলে গড়েওঠা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বুকে সর্বকালের সুসংগঠিত জংলি সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে যাকে-তাকে কাফের ও মুরতাদ বলছে । বিশেষ করে বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মীয় অংঙ্গনে অত্যন্ত নিরীহ বলে পরিচিত আহমদীয়া সম্প্রদায়কে অমুসলমান ও কাফের ঘোষণা করার জন্য ঐ হেফাজতী নেতা রাজাকার মাওলানা আহমদ শফি সরকারের ওপর প্রবল চাপসহ ইসলামী জঙ্গি অভ্যুত্থানের ভয় দেখিয়েছিলো ।

তারা প্রতিবেশী ভারতের আভ্যন্তরীণ নাগরিকত্ব আইনকে পুঁজি করে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনার উপাদান তৈরি করে উভয় দেশের মধ্যকার সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের বন্ধনে ফাটল ধরিয়ে মূলত: মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে । এদের পশ্চাতে এদেশের বিএনপি জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামী দলসহ পাকিস্তান, আইএস, সৌদি আরব, তুরস্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং হালে চীন যাবতীয় মদদ দিয়ে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই । অর্থাত্ ছলে-বলে কলে-কৌশলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরণই তাদের মূল লক্ষ্য । কারণ এসব বিদেশি রাষ্ট্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো । ভারত-সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তাদের সবাইকে পরাজিত করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছিলো বলেই তারা ছলে-কলে-কৌশলে এখনো আমাদের বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে ।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলো, বিশেষ করে জঙ্গিবাদী হেফাজতে ইসলাম যখন আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, জাতীয় স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাঙালিত্ব, প্রগতিশীল চিন্তাধারাসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ও মৃত্যু দিবস উদযাপনের বিরোধিতা করে আসছে, যখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে নানাধরনের বিষোদ্গার করছে, ভাস্কর্যকে বুড়িগঙ্গায় ডুবিয়ে দেয়ার হুমকি দেশব্যাপী ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করছে----তখন আহমদীয়া সম্প্রদায় সগৌরবে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্রীয় মূলনীতিমালার প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জানিয়ে আসছে । আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে তাই আহমদীয়া সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাই ।

আমরা বাংলাদেশের অন্যান্য ইসলামী দল, সংগঠন ও সংস্থার প্রতি একটি বার্তা দিতে চাই । সেটি হলো, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বসবাস করতে হলে অবশ্যই তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতি অনুগত থাকতে হবে । বাঙালি জাতির পিতা হিশেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মেনে নিতে হবে । ভাষা শহীদ দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পনোরো আগস্ট জাতীয় শোক, বাংলা নববর্ষ ইত্যাদি জাতীয় চেতনার প্রতি আনুগত্য পোষণ করতে হবে । রাষ্ট্রীয় চার মৌলনীতি গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে নির্দ্বিধায় মেনে নিতে হবে । এদেশে সব ধর্মের লোকেরা বুক ফুলিয়ে তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করবে । কেউ তাতে বাধা দিতে পারবে না ।

ইসলামী মোল্লাদের স্মরণ করে দিয়ে বলতে চাই, বিভিন্ন ইসলাম অধ্যুষিত দেশের জাতির পিতা যেমন, পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, ইনেদানেশিয়ার সুকর্ণ, মিশরের জামাল নাসের প্রমুখদের বিষয়ে তারা একেবারে নিরব কিন্তু বাংলাদেশের জাতির পিতার কথা উঠলেই তারা তারস্বরে না-না ধ্বনি তুলে হযরত ইব্রাহিম (আ:)-কে টেনে আনেন । বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে বাঙালি জাতির পিতৃত্ব নিয়ে তারা ইসলামকে টেনে এনে একটা ধুম্রজাল সৃষ্টি করেন, কিন্তু উপরোক্ত মুসলিম দেশসমূহের জাতির পিতাদের নিয়ে তাদের কোনোই মাথাব্যথা নেই । হযরত ইব্রাহিম (আ:)-কে মুসলমান সম্প্রদায়ের পিতা বলা হয়ে থাকে । এ নিয়ে কারো আপত্তি নেই । কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে তো মুসলমান নয়, বাঙালি জাতির পিতা বলা হয়েছে । এখানে তো সংঘাত নেই । মূলত: বঙ্গবন্ধুকে বাঙালি জাতির পিতা বলতে তাদের অনীহা পাকিস্তানি মুসলিম চেতনার কারণে । যেহেতু বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে সেহেতু তাদের সব গোস্বা ঐ বঙ্গবন্ধুর ওপর----মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর । অথচ ঐ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের দয়ায় স্বাধীনতাবিরোধী মোল্লা সমাজ প্রাণ ফিরে পেয়ে এদেশে বাস করে আসছে । কিন্তু অকৃতজ্ঞের মতো সেই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তাদের যতো ঘৃণা । মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির ওপর তাদের বিদ্বেষ । বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর তাদের রাগ ।

সর্বক্ষেত্রে ইসলামীকরণ করতে গিয়ে এই অর্ধশিক্ষিত মোল্লা সমাজ মুসলমান সম্প্রদায়ের ব্যক্তির নাম ও পোশাক নিয়েও নসিহত করে থাকে । মুসলিম পরিবারের শিশুদের নামের ক্ষেত্রে তারা আরবী ভাষার নামের পক্ষে ফতোয়া দিয়ে থাকে । জোব্বা ও পাগড়িকে তারা ইসলামী পোশাক বলে গণ্য করে । এই মূর্খরা বুঝে না যে, আরবী নাম মানেই ইসলামী নাম নয় । হযরত মোহাম্মদ (স:) এর সময়ও আরবে বহু অমুসলিম, বিধর্মীরা বসবাস করতো, তাদের নামও ছিলো একই আরবী ভাষার নামে । এমনকি ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের পূর্বে হযরত মোহাম্মদ (স:) এর নামটিও ঐ আরবী নাম থেকে এসেছিলো । ইসলাম প্রবর্তনের পরে তো রাসুল ও তাঁর সাহাবীদের নামে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি ! এখন তো আরবী নামধারী লক্ষ লক্ষ ইহুদি-খৃস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ আরবজাহানে বসবাস করেন । সুতরাং আরবী নামের সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই । পোশাকের ক্ষেত্রেও তাই । আরবের উচ্চতাপের আবহাওয়াগত কারণে মুসলমান ইহুদি খৃস্টান ও অন্যান্য ধর্মের সবাই একই ধরনের জোব্বা ও পাগড়ির পোশাক ব্যবহার করেন । সুতরাং ইসলামী পোশাক বলতেও কিছু নেই । ওগুলো আরবীয় পোশাক ।

ইসলামী মোল্লারা আরেকটা মারাত্মক ফতোয়া দিয়ে থাকে । সেটি হলো, মুসলমান ছাড়া কেউ আল্লাহর কাছে গণ্য হবেন না বা তারা বেহেস্তে যেতে পারবেন না । অথচ পবিত্র কোরআনে এধরনের একটি আয়াতে আছে, যেমন, 'মুসলমান ইহুদি খৃস্টান সেবিয়ানস মেজিয়ানস স্ক্রিপচার্চ পলিথিস্ট, এর বাইরে আর যারা আছে, যারা আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সৎ পথে চলে, তাদের কোনো ভয় নেই ।' এখানে কি শুধু মুসলমানদের কথা বলা হয়েছে ? মোল্লারা কথায় কথায় ধর্মের বিরোধিতাকারী, সমালোচনাকারী ও ভিন্ন ধর্মের লোকদের কাফের, মুরতাদ, নাস্তিক ইত্যাদি অভিধায় মণ্ডিত করে তাদেরকে হত্যা করা জায়েজ বলেও ফতোয়া দেয় । অথচ কোরআনের আরেক জায়গায় এভাবে বলা হয়েছে, কোন ধর্ম সঠিক কোন ধর্ম বেঠিক----কে মুত্তাকি কে কাফের তার বিচারের এখতিয়ার একমাত্র আল্লাহর ওপর ।' ধর্ম নিয়ে জবরদস্তি না করতে এবং যার যার ধর্ম তার তার কাছে বলেও কোরআনে উল্লেখ রয়েছে । কোরআনের এসব দার্শনিক বাণীর মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি সংঘটনে ধর্মনিরপেক্ষতার শিক্ষা ফুটে উঠেছে । এজন্য বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয় মূলনীতিমালার মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ লিপিবদ্ধ করে গেছেন । ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয় । রাষ্ট্র ধর্মের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সমাজে প্রচলিত সব ধর্মের নিরাপত্তা বিধান করবে । প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে । ধর্ম নিয়ে কেউ কারো ওপর চড়াও হতে পারবে না ।

অপরদিকে ধর্ম শিক্ষার বিনিময়ে ও ধর্মের নামে অর্থকড়ি না নিতেও পরিষ্কার বলা হলেও মোল্লা হুজুররা ওয়াজ মাহফিল বা বিভিন্ন সময় কারো কাছ থেকে অর্থ নিয়ে সেই অর্থদাতাকে তার চৌদ্দগোষ্ঠীসমেত বেহেস্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেন !

ধর্ম একটি দর্শন তাতে সন্দেহ নেই । কিন্তু ধর্মগুলো অর্ধশিক্ষিত কাঠ মোল্লাদের হাতে পড়ে সেটি তাদের ব্যবসায়ী পুঁজিতে পরিণত হয়ে পড়েছে । ফলে সততা, সভ্যতা, একতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, পরমতসহিষ্ণুতা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ধর্ম যতোটা না বাধা, তার চেয়ে বহুগুণ বাধা এই মোল্লার দল । তারা একটু আলিফ বে তে ছেসহ কিছু সুরা ও মসলা মুখস্থ করে মনে করে তারা ধর্মকে পুরোপুরি শিখে ফেলেছে, তারাই ধর্মগুরু ও পণ্ডিত ! এরাই সমাজে ধর্মের সাথে ধর্মের বিরোধ ঘটিয়ে, আস্তিক-নাস্তিক, কাফের-মুরতাদ, বিধর্মী-অমুসলিম প্রশ্ন তুলে হানাহানি মারামারি রক্তারক্তি খুনোখুনি বাঁধিয়ে বিকৃতসুখ লাভ করে থাকে । মূলত: যে কাজটি আল্লাহর এখতিয়ারে সেই কাজটিই মোল্লারা নিজেদের এখতিয়ারে নিয়ে নিয়েছে । যেমন কোরআনে বলা হয়েছে, ইসলামকে তিনিই রক্ষা করবেন----অথচ তথাকথিত ইসলামী পণ্ডিত 'আল্লামা' হেফাজতিরা আল্লাহ্ নাম ধারণ করে তারাই ইসলাম রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে 'হেফাজতে ইসলাম' সৃষ্টি করেছেন । যে এখতিয়ারটি আল্লাহর, সেটি এখন আহমদ শফির অনুসারীদের এখতিয়ারে !

সুতরাং এই নাতিদীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদসহ রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির সাথে প্রকৃত ইসলাম বা অন্য কোনো ধর্মের সাথে সম্পর্ক, বিরোধ বা সাংঘর্ষিক কোনো কিছু নেই । ধর্ম হলো যার ব্যক্তি ও সম্প্রদায়গত ব্যাপার । কিন্তু একটি জাতির রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আদর্শ ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালার সাথে সেই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বসবাসকারী সব ধর্মাবলম্বী মানুষের পারস্পরিক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, জাতীয় ঐক্য, শান্তি-শৃঙ্খলা ও জাতীয় চেতনার প্রশ্ন জড়িত বিধায় রাষ্ট্রটি হবে অবশ্যই জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি দেশ । এ-নিরিখে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উপরোক্ত আদর্শ ও চেতনার ভিত্তিতে । সুতরাং অন্যান্য শ্রেণী-পেশা-সম্প্রদায়সহ এদেশের নাগরিক হিশেবে সব ধর্মের মোল্লা-পুরোহিত ভিক্ষু ও যাজকদেরও এই দেশের আদর্শ ও চেতনার সাথে মিশে যেতে হবে ।

লেখক :মুক্তিযোদ্ধা লেখক গবেষক।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test