E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মন্ত্রী বলেই কি অমুক্তিযোদ্ধা শ ম রেজাউল করিম যাচাই বাছাইয়ের বাইরে ?

২০২১ জানুয়ারি ২৯ ১৮:৩২:৪০
মন্ত্রী বলেই কি অমুক্তিযোদ্ধা শ ম রেজাউল করিম যাচাই বাছাইয়ের বাইরে ?

আবীর আহাদ


সরকারের মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য শ ম রেজাউল করিম এমপি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ বছরের বালক । তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধা হিশেবে সরকারি গেজেটভুক্ত হন ! তাঁর গেজেট নাজিরপুর উপজেলা (পিরোজপুর) নং ১৪৯৩, তারিখ :১৪/০৫/২০০৫ । ভারতীয় তালিকা, লাল মুক্তিবার্তা বা অন্য কোনো গেজেট তাঁর নাম নেই । সরকারের বিদ্যমান আইনে একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সর্বনিম্ন বছর সাড়ে ১২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই নিরিখেও শ ম রেজাউল করিম মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার যোগ্য নন । অপরদিকে তাঁর মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র প্রশিক্ষণ, যুদ্ধের রণাঙ্গন ও সহযোদ্ধা বলেও কিছুই নেই । অতএব শ ম রেজাউল করিম একজন ভুয়া/অমুক্তিযোদ্ধা । অথচ তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেজে সরকারি খাতায় অবস্থান করছেন । রীতিমত সরকারি ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি ভোগ করে আসছেন ! মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের এসব জালিয়াতি নিয়ে আজ থেকে এক বছর পূর্বে আমি ফেসবুকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম । সেটি সংযুক্ত :https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=818240948610204&id=100012729181774

আগামীকাল মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই । শুধুমাত্র বেসামরিক গেজেটধারীদের যাচাই বাছাই । মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমও সেই বেসামরিক গেজেটধারীদের একজন । ভারতীয় ও লাল মুক্তিবার্তা তালিকায় তাঁর নাম থাকলে তিনি যাচাই বাছাই কার্যক্রম থেকে রেহাই পেতেন । কিন্তু তিনি চলতি যাচাই বাছাইযোগ্য বেসামরিক গেজেটধারী বিধায় অবশ্যই তিনি যাচাই বাছাই কমিটির সামনে উপস্থিত হতে বাধ্য ।

অথচ বিস্ময়কর ও দু:খজনক সত্য এই যে, জামুকা থেকে প্রেরিত নাজিরপুর উপজেলার যাচাই বাছাই তালিকার মধ্যে অন্যান্য বেসামরিক গেজেটধারীদের নাম থাকলেও শ ম রেজাউলের ১৪৯৩ নং গেজেটটি নেই ! অর্থাৎ যাচাই বাছাইযোগ্য হলেও শ ম রেজাউল করিমের নাম যাচাই বাছাই কমিটিতে পাঠানো হয়নি ! এমনি করে আরো কতোজন রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, এমপি, আমলা, ব্যবসায়ীসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থানকারী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা চলতি যাচাই বাছাই কার্যক্রম থেকে নিষ্কৃতি লাভ করেছেন তা কে জানে !

এখন আমাদের প্রশ্ন, মন্ত্রী হলেই কি তিনি বিদ্যমান আইন কানুন নিয়ম শৃঙ্খলার বাইরে ? যাচাই বাছাইযোগ্য হলেও কেনো মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নাম যাচাই বাছাই তালিকায় বা কমিটির কাছে গেলো না, এটা কি তিনি সরকারের মন্ত্রী বলে ? তিনি কি মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে যাচাই বাছাই থেকে নিষ্কৃতি পেলেন, না তাঁর কেবিনেট সহযোগী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী খাতির করে তাঁর নাম যাচাই বাছাই থেকে বাদ দিলেন ? এটা কি প্রজাতন্ত্রের সাংবিধানিক পদের অমর্যাদা নয় ? সত্য গোপন করা, জোচ্চুরি, প্রতারণা, জালিয়াতি----এসবই ক্রিমিনাল অফেন্স ।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক তাদের ভুয়োমি ও অন্যায় যোগসাজশ ঢেকে রাখতে গিয়ে কি এ রাষ্ট্রীয় প্রতারণা আদতে ঢেকে রাখতে পারলেন ? এ রাষ্ট্রীয় প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে মাননীয় দুই মন্ত্রী সমভাবে রাষ্ট্রীয় শপথ ভঙ্গ করেছেন, সংবিধান লংঘন করেছেন----বিদ্যমান আইন কানুন নিয়ম ও শৃঙ্খলা পদদলিত করে নিজেদের পদকে কলুষিত করার পাশাপাশি এ প্রতারণা ও জালিয়াতির দায় চাপিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু-কন্যার সরকারের কাঁধে ! এ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীর কাছে এ বার্তাটি প্রকাশ পাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষা করছে ! এর মাধ্যমে এ দুই মন্ত্রীর এ প্রতারণার দায় সরকারের ওপর গিয়ে পড়ছে ।

অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরো একটি প্রহসনের জন্ম দিয়েছেন বিভিন্ন উপজেলা/থানায় ২০১৭ সালের বাণিজ্যনির্ভর যাচাই যাচাই কমিটির সদস্যদেরকে ৩০ জানুয়ারি-২০২১ সালের যাচাই বাছাই কমিটির সাথে যুক্ত করে । অথচ তিনি আমার সঙ্গে চলতি মাসের ১লা জানুয়ারি এক আলাপচারিতায় দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন যে, ২০১৭ সালের যাচাই যাচাই কমিটির সদস্যদের কোনো অবস্থাতেই ২০২১ সালের কমিটিতে রাখা হবে না । তাঁর সেই ঘোষণাটিও মিথ্যাচার হিশেবে পরিগণিত হলো । দেশের অধিকাংশ উপজেলা/থানায় গঠিত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির মধ্যে ২০১৭ সালের যাচাই যাচাই কমিটির সদস্যদের পুনর্নিয়োগ দিয়ে যাচাই বাছাই কার্যক্রমকে বাণিজ্যিক প্রকল্পে রূপদান করে দিয়ে তিনি আরো একটি নির্মম প্রহসনের জন্ম দিলেন !

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test