E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাংলাদেশের প্রগতিশীলরা আসলে কি?

২০২১ ফেব্রুয়ারি ০২ ১৫:০২:৪১
বাংলাদেশের প্রগতিশীলরা আসলে কি?

শিতাংশু গুহ


আমাদের দেশের অ-সাম্প্রদায়িক মানুষগুলোর চরিত্র বেশ চমৎকার। তাঁরা নিজেদের ‘প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও মুক্তিবুদ্ধি’র মানুষ ভাবতে বেশ পছন্দ করেন। এঁরা ভারতের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার, বা পশ্চিমা বিশ্বের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। সমস্যা শুধু, এরা নিজ দেশের ‘তলা-ফুটো’ তা দেখেন না! 

এহেন প্রগতিশীলরা ভারতের গরু নিয়ে সোচ্চার, কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দু জমিজমা জবর-দখল, মন্দির-মুর্ক্তি ভাঙ্গা, জোর করে ধর্মান্তকরণ দেখতে পাননা, বা দেখতে চাননা! কাশ্মীর নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথার অন্ত নেই, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম তাদের এজেন্ডায় নেই! ভাস্কর্য ভাঙ্গার বিরুদ্ধে এঁরা সোচ্চার, কিন্তু মূর্তি ভাঙ্গার বিরুদ্ধে এদের মুখে ‘টু-শব্দ’ নেই?

এঁরা ভীষণ প্রগতিশীল, রোহিঙ্গাদের জন্যে মানবিকতা উথলে পরে। রামু, নাসিরনগর, অভয়নগর, রংপুরে সংখ্যালঘু নির্যাতন ছোটখাট ঘটনা মনে করে এড়িয়ে যান! এদের বক্তব্য স্পষ্ট, ইসলাম শান্তির ধর্ম। যাকিছু খারাপ তা জামাত-বিএনপি’র কাজ? জঙ্গীবাদ এদের অপছন্দ। এতে ধর্মের বদনাম হয়? তবে বিন লাদেনের মৃত্যুতে বুকটা ফেঁটে যায়। কাসেম সুলেইমানি হত্যায় ট্রাম্পের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেন।

এরা আগাগোড়া অসাম্প্রদায়িকতা চর্চা করেন, সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানের রহিম থাকলে তাদের সমস্যা হয়না, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকা উচিত বলে মনে করেন, এবং এদের অকাট্য যুক্তি হচ্ছে, রাষ্ট্রের ভাষা থাকলে ধর্ম থাকতে সমস্যা কোথায়? এঁরা সানন্দে মেনে নিয়েছেন, আজানের সময় পুজো মন্ডপের মাইক বন্ধ থাকতে হবে, উল্টোটা নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশে চলেনা!

এঁরা কোরান তেলোয়াত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন, মাওলানা রেডি থাকেন। অন্যদের বেলায় মাইকে বলা হবে, গীতা, ত্রিপিটক বা বাইবেল থেকে কেউ পাঠ করতে চাইলে প্লীজ মঞ্চে আসুন। কোরান তেলোয়াত যতক্ষন খুশি চলতে পারে, অন্যগুলো সংক্ষিপ্ত হওয়া চাই! বাংলাদেশের প্রগতিশীলদের অবস্থা অনেকটা লজ্জাবতী পাতার মত, মৌলবাদের হুঙ্কারে মাথা গুঁজে থাকতে পছন্দ করেন।

এহেন একজন প্রগতিশীল সাদা-মনের(?) মানুষ সদ্য বললেন, ‘দাদা, আপনি অযথাই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন দেখেন, কোথায় নির্যাতন হচ্ছে? আমরা তো দেখিনা? হেঁসে তাকে বলি, ‘আপনি ভারত নিয়ে খুব ব্যস্ত, ভারতের ভ্যাকসিনে খুঁত ধরতে সচেষ্ট বা অং সান সূচি’র পতনে উল্লসিত, তাই বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন দেখার সময় পাননা’।

‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের’ চেতনার ধারক-বাহক(!) এসব অ-সাম্প্রদায়িক, ‘প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও মুক্তিবুদ্ধি’র মানুষগুলোর জন্যে দু:খ হয়, এঁরা যে কি তাঁরা নিজেরাও জানেনা? আত্মজিজ্ঞাসা বা আত্মোপলদ্ধি নেই! এক অজানা গন্তব্যে ছুঁটে চলেছেন তাঁরা। উল্টোদিকে যাঁরা আছেন তাঁদের কথা আর নাই-বা বললাম।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test