E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের স্বাধীনতা 

২০২১ মার্চ ২৭ ১৫:১০:২৬
৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের স্বাধীনতা 

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমার তোমার প্রায় সকলেরই চাওয়া। কারন এ চাওয়া ছিল আমার পূর্ব পুরুষের। পলাশীর আম্রকাননে যে চাওয়ার অপমৃত্যু হয়েছিল মীরজাফরদের কারণে। যাদের রক্তে কেনা আমাদের এ স্বাধীনতা সেসব স্বাধীনতাকামী মানুষদের চাওয়া। কুচক্রী মহলের অপতৎপরতায় স্বাধীনতার সুফলে গড়মিল লক্ষ্য করা গেছে বিভিন্ন সময়। বিভক্তি রেখা স্পষ্ট হয়েছে ’৭৫ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর চাওয়া স্বাধীনতা আর ’৭৫ পরবর্তী স্বাধীনতার মধ্যে মত পার্থক্য চোখে পড়ার মতো ।

১৯৫২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ সালের নির্বাচন আর ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম একই সুত্রে গাঁথা হলেও ১৯৭৫ পরবর্তী স্বাধীনতার ধারাটা ঠিক উল্টো হয়েছিল। যার পরবর্তীতে প্রশ্ন এসেছিল স্বাধীনতায় কি পেলাম আর কি পেলাম না ? বড় কথা হলো স্বাধীনতা পেয়েছি। প্রশ্ন হলো কিসের স্বাধীনতা ? উত্তরে আমরা নির্ধিধায় বলতে পারি এ হলো মনের , অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা। সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দূরে থাকার স্বাধীনতা।

সব কিছু ছাঁড়িয়ে যেটা দেশকে অন্ধকারাচ্ছ করে তোলেছিল তা হলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতাকারীদের আস্ফলন। যার ফলে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা শব্দটি অনেকটাই মলিন হয়ে পড়েছিল। জনসাধারণ শুরু করেছিল পাওয়া না পাওয়ার হিসাব। কালের পরিক্রমায় ’৭৫শব্দটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা শব্দটিতে কালিমা লেপন করে পূর্বের স্বাধীনতার সাথে ভিন্নমাত্রা যোগ করে। কারন এ ভঙ্গুর যাত্রাটাকে আলাদা করে তোলেছিল স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিরা যাতে যোগ হয়েছিল আওয়ামীলীগের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। প্রশ্ন আসতে পারে ওই বিপক্ষ শক্তি কারা ? উত্তর সহজে দেওয়া গেলেও বুঝে উঠা অনেক কঠিন। কারন স্বাধীনতা বিরোধী বা স্বার্থন্বেষী মানুষের মাঝে খুব একটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরের স্বাধীনতাটা একেক জন একেকভাবে চিন্তায় নিয়েছে। নুতন প্রজন্মের নিকট করেছে বিতর্কিত। তবে একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে সাধারণ মানুষের নিকট স্বাধীনতার ফলটা ফ্যাকাশে হয়ে ছিল এ হত্যা কান্ডের পর। মানুষ তার চিন্তার সম্প্রসারণ শক্তিটা হারিয়ে ফেলে। পরবর্তী প্রজন্ম এসব ইতিহাসের জন্য হতাশ হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা ’৭৫ পূর্ববর্তী ইতিহাস স্বচোখে অবলোকন করেনি তাদের জন্য বিষয়টি আরো জটিল হয়ে উঠে। পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিকভাবে শিক্ষা না দেয়ার কারণে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি সেনাদের চিনতে পারলেও চিনতে পারেনি এদেশের লোকদের যারা নিজের সাথে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী। ঠিক পরের ইতিহাসটা আরো জটিল।

সামরিক বাহিনীর কিছু বিপদগামী সদস্যরা যখন জাতির জনককে হত্যা করে তখন স্বাধীনতার মূলস্রোতটি গতি হারিয়ে উল্টো পথে চলতে শুরু করে যা অনেকটাই পালহীন নৌকার মতো হয়ে যায়। দেশের পবিত্র সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে হত্যাকারীদের বিভিন্ন্ পদ দিয়ে পুরষ্কৃত করা এবং ইনডেমনিটি দিয়ে এসব হত্যা কান্ডের বিচার রোধ করার ফলে সাধারণ মানুষের কাছে উন্মোচিত হয় হত্যার রহস্য। যারা হত্যা করেছে তখন সময় প্রায় সবাইই সরকারী কর্মকতার্ কিংবা শেখ মুজিবের লোক।

এখানেই থামতে হয় কারন আটকে যায় কলম হারিয়ে যায় শক্তি গতিহীন হয় স্বাভাবিকতা। তারা দলের ও সরকারের ভিতরে থাকলেও প্রকৃত পক্ষে তারা দেশ বিরোধী এবং স্বাধীনতা বিরোধী। দেশের অগ্রযাত্রায় পাকিস্তানি আত্মা যাদের মধ্যে বসবাস করছিল ক্ষমতার লোভ নিয়ে এ স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে। আলোকপাতের বিষয় শেখ মুজিবকে হত্যার পর আমরা স্বাধীনতা কেমন পেলাম ? হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের কিছু পরে যে রাজনীতি শুরু হয়েছে তা কখনই নব প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার কোন ভালো বার্তা এনে দিতে পারেনি। সঠিক পথে যে স্বাধীনতা চলতে পারেনি তা নব প্রজন্মের কাছে ভালো বার্তা দিবে না এটাই স্বাভাবিক। যার ফলে এখন প্রশ্নবিদ্ধ হলো স্বাধীনতার ফল। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে বহুদূর এগোলেও স্বাধীনতা শব্দটি সামনে এলেই মনের কোনে ভেসে উঠে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর। যেখানে স্বাধীনতার বীজের আত্মপ্রকাশ শুরু হয়েছিল। আর সেখান থেকেই স্বাধীনতার মূল রক্তের স্রোত মিসেছে পদ্মা মেঘনা যমুনায়।

রক্তে লাল হয়েছে এদেশের স্বাধীনতা ফ্যাকাশে হয়েছে সাধারণ মুক্তিকামী মানুষের স্বপ্ন। সেখানে এসেই ধাক্কা লাগে স্বাধীনতার মূল ধারায়। থমকে যাওয়া স্বাধীনতায় আজো পথ খুঁজে নব প্রজন্ম। সব ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হলেও স্বাধীনতার নিকটবর্তী প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতাটা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের ফলে অভিশপ্ত হয়ে উঠেছিল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মানুষ অনেক কিছুই ভুলে যায় কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী হয়ে থাকে যুগের পর যুগ। কারন ইতিহাস বদলে ফেলা যায় না। যদিও বারবার এ চেষ্টা করা হয়েছিল ’৭৫ পরবর্তী সময়ে। ১৫ই আগস্টের হত্যা কান্ডের পর ঘাতকরা ধরেই নিয়েছিল যে, শেখ মুজিবের ইতিহাসের সমাপ্তি। কিন্তু ইতিহাস বড়ই নির্মম। ইতিহাস ক্ষনিক সময়ের জন্য আড়াল করতে পারলেও একেবারে মুছে ফেলা যায় না। বরং যতবার একে মুছবার চেষ্টা করা হয় ততবারই ফিরে আসে আরো শুদ্ধ হয়ে আঘাত করে আরো জুড়ে।

পলাশীর আম্রকাননে নবাবের পরাজয় যেমন মানুষ আজ ভুলেনি তেমনি স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার ফল ভোগ করেও আত্মতৃপ্তির জায়গাটা তৈরি হয়নি এদেশে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে যে স্বাধীনতার বীজ রোপন হয়েছিল তার সঠিক ফল ভোগ করার সময়টা থেমে যায় ’৭৫ পরবর্তী। নতুন প্রজন্মের ভাবনায় স্বাধীনতা কি রকম তা জানতে হলে অন্তরের স্বাধীনতাকে জানতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে বিভিন্ন ভাবে অপপ্রচারের মাধ্যমে পরিচালিত করে ভুল একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। নতুন করে শুরু হয় উল্টো পথে চলা তাই বর্তমান প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা শব্দটি অনেকটাই আক্ষেপের জায়গায় পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মাধ্যমে যেমন ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে বারবার তেমনি দেশের অগ্রগতিকে বাঁধাগ্রস্থ করা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে।

যার ফলে স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরও একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারেনি বাংলাদেশ। এর অভিশাপ বইতে হচ্ছে তরুনদেরকে। এর দায়ভার পূর্ববর্তী প্রজন্মের উপর চাপাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন হচ্ছে। অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে এদেশ। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে এদেশের নতুন প্রজন্ম। বাঁচার স্বপ্ন দেখছে কোটি কোটি মানুষ। ’৭৫ পূর্ববর্তী এদেশের কান্ডারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যোগ্য উত্তরসূরী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের কঠিন স্বপ্ন শপথের বলে বলীয়ান হয়ে নতুন আশা জাগাচ্ছে শেখ মুজিবের রক্তের উত্তরসূরী। মানুষ আজ ভাবতে শিখছে নতুন আশায়। স্বাধীনতার এত বছর পরও স্বাধীনতার বীজ মন্ত্রে যে ব্যাপক ফারাক তার সমাপ্তির আপ্রাণ চেষ্টায়রত বঙ্গকন্যা। স্বাধীনতা শব্দটিতে দুর্নীতি নামক ধূলি জমেছে।

ধুলিতে ঢেকে সবুজ শ্যামল বাংলার সুন্দর রুপ করেছে তোলেছে অভিশপ্ত। এই হাতাশা থেকেই তরুণ প্রজন্মের স্বাধীনতা নামটির প্রতি যে অনীহা তৈরি হয়েছে তা দূর করা না গেলে জাতির জন্য অশনি সংকেত। কারন এই তরুণরাই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। তাদের উপরে ভর করে দেশ এগিয়ে যাবে। বাংলার আকাশে উদিত হবে সোনালী স্বপ্ন। পলাশীর আম্রকানন থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ীর যে সেতু বন্ধন তৈরি হয়েছিল তা থেকে মুক্তির কোন বিকল্প নেই। এই সেতু বন্ধন বাংলার অগ্রযাত্রাকে বারবার লুন্ঠন করা চেষ্টা করেছে। এখনও এর পরিসমাপ্তি হয়নি। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম তাই বিশ্বাস করে পূর্ববর্তী প্রজন্ম এমন একটি বাংলাদেশের চিত্র রেখে যাবেন যা দেখে স্বাধীনতা বিরোধীরাও চমকে উঠবে।

যারা এদেশকে স্বতন্ত্রভাবে দেখতে চায়নি তাদের মুখে কালিমা লেপন করে বাংলাদেশ তার স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যাবে। আর একাজে নেতৃত্ব দিবে স্বাধীনতার অগ্রসৈনিকরা এবং সহযোগিতায় থাকবে স্বাধীনতাপন্থী বর্তমান প্রজন্ম। স্বাধীনতাকে সুন্দর রুপ দিয়ে গড়ে তোলতে হলে এর কোন বিকল্প নেই। তবে আশার বানী এই যে ক্রমান্বয়ে সঠিক পথে চলা শুরু হয়েছে বিভিন্ন অগ্রগতির মাধ্যমে। দেশ আজ পৃথিবীর নিকট রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বিভিন্ন উন্নয়নের মাধ্যমে তাই এ প্রজন্মের নিকট স্বাধীনতার সুফল সুদূর প্রসারী নয় বলেই মনে হয়।

দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারলে বর্তমান প্রজন্মের নিকট স্বাধীনতার ফলটি সুমিষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক। কারন স্বাধীনতার যে ফল তা পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল বাঁধা দুর্নীতি। দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশই দেশের সাধারণ মানুষের একমাত্র মূল চাওয়া। কারন রক্ত দিয়ে কেনা এ স্বাধীনতা কখনও মানুষের মঙ্গল বার্তা বয়ে নিয়ে আসবে না একথা বলা যেতে পারে না।

লেখক :শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test