E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাকা কোথায় যায়?

২০১৪ সেপ্টেম্বর ০৭ ১৪:২৬:১৩
টাকা কোথায় যায়?

চৌধুরী আ. হান্নান : ছিনতাই ও ডাকাতি করা টাকা সরাসরি সমাজ অস্থির করার কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। ওই কাজ সহজ করার জন্য নতুন করে নগদ টাকায় অস্ত্র ক্রয়, নিজ দলকে আরও সংগঠিত করার কাজে এ সহজ লব্ধ অর্থ ব্যয় হয়। অবৈধ জমি দখলে গডফাদারদের হাতিয়ার হওয়া, কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ, চোরাচালান, মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হওয়া ইত্যাদি তাদের নিত্য দিনের কাজ কারবার।

যাদের হাতে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র আছে, যারা ‘আন্ডারওর্য়াল্ড’ এর রাজা তাদের তো কেবল ছিনতাই চাঁদাবাজি নিয়ে থাকলে চলে না। তবে দিনে দুপুরে যতই লক্ষ টাকা ছিনতাই হোক-তাতে আর কত টাকা যায়? আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্তরিক হলে আর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকলে ছিনতাই-ডাকাতি ঠাণ্ডা করা কোন কঠিন কাজ নয়।

কিন্তু ব্যাংক থেকে লুটে নেয়া বিপুল পরিমান অর্থের কি হবে? হাজার হাজার কোটি টাকা কীভাবে সমাজকে প্রত্যেক নাগরিককে কতটা অস্থিরতার মুখে ঠেলে দেবে তা কী আমরা ভেবে দেখেছি? প্রধানত রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলয়ে নিরন্তর অবস্থানকারীরা প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিয়ে যাচ্ছে। লোভী কিছু কর্মকর্তা এ কাজে সহযোগিতা করায় টাকা বের করে নেয়া সহজ হয়। নিকট অতীতে ও বর্তমানে চলছে এটাই। বর্তমানে কতিপয় ব্যাংক, বলতে গেলে দুর্বৃত্তের কবলে নিপতিত।

ব্যাংকিং সেক্টরে কেলেংকারী ধরা পড়ার সাথে সাথে তড়িঘড়ি করে নথি-পত্র দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করে দেয়ার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। ভাবটা এমন যে, এখন আমাদের আর কোন কাজ নেই, এ বিষয়ে এখন থেকে যতকাজ সবই দুদক করবে। ব্যাংকের অর্থ আদায় করে দেয়ার দায়িত্ব দুর্নীতি দমন কমিশনের নয়, তারা যতটুকু দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে সেটা নিয়ে কাজ করবে এবং দুর্নীতিবাজকে বিচারের আওতায় সোপর্দ করবে। অনেক সময় দেখা যায় দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতকৃত অর্থ আদায় হয়ে যাওয়ার পরও দুর্নীতির অপরাধে মামলা চলতে থাকে। একটি সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে কৌশলে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য সম্বলিত একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছে এবং বলা হয়েছে এখন দায়ীদের বিরুদ্ধে দুদকই ব্যবস্থা নেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিনান্সসিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (Finacial Intelligence Unit) থেকে আরও বলা হয়েছে যে বড় ধরনের দুর্নীতির কোন তথ্য পেলে তা দুদকে পাঠানো হয়ে থাকে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর বাড়তি বোঝা চাপানোর পূর্বে ব্যাংক তার নিজস্ব ‘হাতিয়ার’ ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক হওয়া জরুরী। যে কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা (পদোন্নতি বন্ধ,পদাবনতি, চাকুরীচুতি ইত্যাদি) গ্রহণ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টরের অবিভাবক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুর্নীতি-জালিয়াতির জন্য এ্যাকশন নিতে পারে। এভাবে সকল ‘অপশন’ ব্যবহার করার পরই কেবল নথি-পত্র দুদকে দেওয়া যেতে পারে। ফলে আত্মসাতকৃত অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং একই সাথে দুর্নীতি বিষয়ক অপরাধের তদন্ত দুদকের পক্ষ থেকে চলতে থাকবে। টাকা আদায়ের মামলা এবং দুদকের মামলা একই সাথে চলতে আইনগত বাধা হলে আইন সংশোধন করতে হবে। ইতোমধ্যে আত্মসাতকৃত অর্থের মূল বেনিফিসিয়ারীর নামে, বেনামে সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিক্রি করে টাকা আদায়ের পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ বাড়তি কাজ কে করবে? প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে বাড়তি কাজ করার মত ‘বোকা’ লোক এখন খুঁজে পাওয়া কঠিন। নিজের খেয়ে কেউ বনের মোষ তাড়াবে না।

আদায়কৃত অর্থের ওপর কমিশন প্রথা চালু করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। বেতনের পর বাড়তি আয়ের গন্ধ পেলে যার হাটতে কষ্ট হয়, সে দৌড়াতে শুরু করবে।

পরিস্থিতি ভয়ংকর পর্যায়ে চলে গেলে প্রচলিত আইন কাজ করে না। জরুরী আইন প্রয়োজন হয়। মাত্র তিনটি আলোচিত ঘটনায় (বেসিক ব্যাংক, হলমার্ক ও ডেসটিনি) বার হাজার কোটি টাকার বেশি লোপাট হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মোট কত টাকা আত্মসাৎ, লোপাট হয়েছে তার প্রকৃত অবস্থা জানা সহজ নয়। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানই স্ব-প্রনোদিত হয়ে এ তথ্য প্রকাশ করবে না! তাদের একটা ভাবমূর্তির ব্যাপার আছে না!

তবে প্রকৃত হিসাবটা পাওয়া গেলে তা দেশবাসীকে আতংকিত করার জন্য যথেষ্ট। এ বিপুল অর্থের কত অংশ ডলারে পরিবর্তিত হয়ে বিদেশে পাচার হয়েছে আর কত অংশ অবৈধ-কালো টাকার রূপ পরিগ্রহ করে দেশের অভ্যন্তরে দানবের মত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তার হিসাব কে দেবে?

বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর ভরসা না করে বিশিষ্ট ব্যাংকার, আইনজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ গ্রহণ করে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এসেছে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।





পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test