E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লে. কর্নেল ফারুক খানের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ পদবীর বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করা উচিত

২০২১ নভেম্বর ২৮ ১৪:৫৯:৪১
লে. কর্নেল ফারুক খানের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ পদবীর বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করা উচিত

আবীর আহাদ


লে. কর্নেল ফারুক খান (অব:) মহান জাতীয় সংসদের গোপালগঞ্জ-১ আসনের পরপর ৫ বারের সম্মানিত সংসদ সদস্য। সম্ভবতঃ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক একজন কেবিনেট মন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য। বাংলাদেশের আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে তিনি অত্যন্ত সুপরিচিত ও সজ্জন ব্যক্তি। সে-হিশেবে তিনি একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি আমার এলাকার সংসদ সদস্য। আমারও অতি প্রিয়। আমাদের একে অপরের সম্পর্ক বেশ মধুর। তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্থানের পশ্চাতে আমারও কিছু ভূমিকা রয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা ফারুক খান স্বাধীনতার ৫০ বছর পর, তাও বেসামরিক গেজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ভুয়ামুক্তিযোদ্ধা-বিরোধী আন্দোলনের প্রবক্তা ও একজন লেখক হিশেবে আমাকে সংগতকারণে তাঁর বিষয়ে কথা বলতে হয়। লিখতে হয়। লিখছিও। সবকিছু মিলিয়ে আমি নিজেও এক চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি!

আগেই বলেছি, মাননীয় সংসদ সদস্য ফারুক খান একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ব। এতোবার সংসদ সদস্য হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাঁর সরব উপস্থিতি, সেই তিনি কোনোদিন কোনোকালেই নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে উপস্থাপন করেননি, সবাই জানেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাননি, মুক্তিযুদ্ধের পুরো ন'মাস ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। কেউ বলেন, পাকিস্তানে তিনি আটক ছিলেন, কেউ বলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ভারতের বিপক্ষে পাক-ভারত সীমান্তে যুদ্ধ করেছেন! এখন তাঁকে নিয়ে দেশব্যাপী বিশাল বিতর্কের সূত্রপাত ঘেটেছে। এতে করে সচেতন দেশবাসী, তাঁর পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব-শুভানুধ্যায়ী ও তাঁর সংসদীয় এলাকার জনসাধারণ চরম এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। তিনিও যে তেমনি এক মানসিক অশান্তির মধ্যে পড়েছেন তা সহজেই অনুমেয়।

সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জামিল ডি আহসান (বীরপ্রতীক)-এর কোনো এক সূত্রে ফেসবুকে প্রদত্ত মন্তব্য থেকে জানা যায় যে, ফারুক খান পাকিস্তানে 44 PMA Long Course থেকে commission পেয়ে 2/Lt পদে এপ্রিল ৭১এ 24 Punjab Battalion-এ যোগ দেন। 3 Dec এ পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে পশ্চীম পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে 24 Punjab-এর সাথে যুদ্ধে নিয়জিত থাকে। 16 Dec পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যুদ্ধ-বিরতি ঘোষনা করে ।

স্বাধীনতার পর পাকিস্তানে আটকে পড়া অন্যান্য সামরিক বাহিনীর সদস্যরা দেশে ফিরে এলে তাদেরকে চাকরির ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে চাকরিতে আত্তীকরণ করা হয়। সে প্রেক্ষিতে
ফারুক খানের চাকরি East Bengal এ ন্যস্ত করা হয়।

উপরোক্ত তথ্য অনুযায়ী ফারুক খান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরম বন্ধু ভারতের বিপক্ষে যুদ্ধে লিপ্ত ২৪ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়নের একজন জুনিয়র কর্মকর্তা!

তর্কের খাতিরে যদি কেউ বলেন যে, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কোনো বিশেষ কারণে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তিনি অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। এ যুক্তি সঠিক নয়। সামরিক ও বেসামরিক সব মুক্তিযোদ্ধা চেইন অব কমান্ড অনুযায়ী যে যার বাহিনীর সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তাদের তালিকা সামরিক হলে সেনা গেজেটে, আর বেসামরিক হলে বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফারুক খান ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকলে হতেন সেনা গেজেটের মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু সেনা গেজেটে তার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি। মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না বলেই তো স্বীকৃতি মেলেনি। এভাবে কেটে গেছে সুদীর্ঘ ৫০ টি বছর। ইতোমধ্যেই তিনি জাতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। সেই প্রভাব খাটিয়েও তিনি সেনা গেজেটে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়ে কিছুদিন আগে জামুকার চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী একজন দানবের সহযোগিতায় তিনি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বেসামরিক গেজেটের 'বীর মুক্তিযোদ্ধা' বলে স্বীকৃতি লাভ করেছেন!
ফলে ফারুক খানের মুক্তিযোদ্ধা হওয়াটা কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা বা সচেতন দেশবাসী মেনে নিতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে সচেতন দেশবাসীর পাশাপাশি ফারুক খানের নিজের কাছেও চরম বিব্রতকর তাতে সন্দেহ নেই। ফারুক খানের জীবনে চাওয়া পাওয়া অনেক ঘটেছে। মুক্তিযোদ্ধা হলে ২০ হাজার টাকা মাসিক সম্মানী পাবেন, এমন সংকীর্ণ হীনস্বার্থে তিনি তাড়িত হবেন তা কি তাঁর মতো ব্যক্তির পক্ষে শোভা পায় ? পায় না। কারণ তার পরিবারটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে না থাকলেও, স্বাধীনতার সুফল তারা প্রাণ ভরে উপভোগ করছেন! বাংলাদেশের প্রথমসারির ধনাঢ্য পরিবারের মধ্যে তাদের অবস্থান অনেক ওপরে। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তিনি যা না নন, তাই যদি হতে চান, সেটা হবে চরম দু:খজনক ঘটনা ফলে সভ্যতা ভব্যতা সততা নৈতিকতা ও আদর্শ বলতে কিছু অবশিষ্ট থাকে না।

এমনি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ফারুক খানের উচিত ভুল স্বীকার করে তার বেসামরিক "মুক্তিযোদ্ধা" গেজেট প্রত্যাখান করা, অথবা তিনি যদি সত্যিকার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকেন, তাহলে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি নিয়ে তাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার ক্ষেত্রে জনসমক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনে অবতীর্ণ হয়ে সব বিভ্রান্তি, বিতর্ক ও বিব্রতকর পরিস্থিতির অবসান ঘটানো উচিত বলে মনে করি।

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

২৮ মার্চ ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test