E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাঙালীর শেষ তুরুপের তাস

২০১৪ সেপ্টেম্বর ২১ ১১:০১:২৭
বাঙালীর শেষ তুরুপের তাস

সংগীত মজুমদার : আপেক্ষিক অর্থে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ভাবাটা যেমন বোকামি, ঠিক তেমনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হেরে যাওয়া মানে যে গোটা বাঙালী জাতি নিজেদের কাছে হেরে যাওয়া; সেটা ভুলে যাওয়াটা ও বোকামি। কারন, এই একটিমাত্র দলই এখনো স্বাধীন বাংলাদেশে গনতন্ত্র অব্যাহত রাখার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কাজ করে যাচ্ছে।

বাঙালীর ঐতিহাসিক একটা রোগ আছে। সেটা হচ্ছে 'ভুলা রোগ'। বর্তমানে এই ভুলা রোগাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশে আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যারা আবার সুশীল, নিরপেক্ষপ্রেমিক, নব্য দেশপ্রেমিক, নব্য চেতনাধারী নামক নানা শ্রেনীতে বিভক্ত। দেশের সাধারন মানুষের সরকারের কাছে চাওয়া থাকবেই; চাহিদা থাকবেই। কিন্তু যারা এই বাংলার স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনৈতিক প্রকৃত ইতিহাস জেনেও না জানার, না বোঝার এবং ভুলে থাকার ভান ধরে সঠিক পথে আসতে ঘাড়ত্যাড়ামো করে তাদের কাছ থেকে যেকোনো চাওয়া বা চাহিদার দাবিও সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

ক্ষমতার রাজনীতি দেখিয়েই হোক আর রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা খাটিয়েই হোক; বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস সত্যিকার অর্থেই নির্মম নির্যাতন সহ্য করে রাজনীতির মাঠে মাঠ কামড়ে টিকে থাকার ইতিহাস। যার সাথে সমগ্র জাতির স্বাধীনতার ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

ক্ষমতার রাজনীতি ও একধরনের রাজনৈতিক কৌশল। যে তীক্ষ্ণ কৌশল সঠিকভাবে প্রয়োগে ব্যর্থ হয়ে দেউলিয়া হয়েছে বা হওয়ার পথে বাংলাদেশে ক্ষমতার রাজনীতি প্রদর্শনের সর্বপ্রধান চরিত্র এরশাদ অথবা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মতো ক্যান্সার আক্রান্ত কতিপয় রাজনীতির নামে ফাটকাবাজি প্রদর্শন করা দল।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নিজস্ব ধারাবিচ্যুত কার্যকলাপের দরুন নানাক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। কারন, ক্ষমতা মাঝে মাঝে মানুষকে অন্ধ করে দেয়। আর সেই ক্ষমতা প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে ব্যবহার করে কতিপয় অতিলীগার-উচ্চফলনশীল কিন্তু পুষ্টিহীন নেতাকর্মী অথবা দল সমর্থিত ব্যক্তি। যাদের আয়ের উৎস থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল কিছুই হচ্ছে নামধারী রাজনীতি। যার ফলশ্রুতি- ধান্দাবাজি আর ঠকবাজি, যেখানে রাজনীতির মূল ব্রত হওয়া উচিত 'সেবা'। আর বঞ্চিত- সাধারণ জনগোষ্ঠী। তাই, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জিতলে কতিপয় মানুষ জেতে- কথাটি ক্ষেত্রবিশেষে মিথ্যে নয়। এই প্রেক্ষিতে দলটিতে শুদ্ধি অভিযান অত্যাবশ্যকতার দাবিদার।

ভুলা রোগের কথায় আসাটা জরুরী! কারন, দেশের মানুষ যেমন ভুলা রোগে আক্রান্ত তেমনি নীতিহীন রাজনীতির বেড়াজালেও অনেকে অনেক কিছু ভুলে যান। যেমন, খালেদা জিয়া ভুলে গেছে তার সঠিক জন্মতারিখ। একশ্রেণীর মানুষ ভুলে গেছে বাঙালী জাতির জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আর জাতির পিতা হত্যা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক আবহ।

প্রকৃত ইতিহাস অজ্ঞতার কারনেই নতুন প্রজন্মের একাংশ আজ ভুয়া যুক্তিতর্ক আর চেতনা নিয়ে মডারেশনে বিশ্বাসী। তাদের মনোভাব কাকসুশীল আর চিন্তাধারা স্রেফ জ্ঞানপাপী। নব্য এই দেশপ্রেমিক শ্রেণীটির কতিপয় আছে যারা আবার লোক দেখানো বাম ঘরানার অনুসারী। যারা সর্বদা রাজনীতির পেছেনে লাল ঝান্ডা ঢুকিয়ে নিজেদের কাকবিপ্লবী প্রমানে মরিয়া। কিন্তু, বাস্তবতা বলে দেয় বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেশের প্রায় সিংহভাগ নাগরিকই দলীয় রাজনীতির অন্তর্ভুক্ত অথবা দলীয় চেতনায় মনে প্রানে বিশ্বাসী অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দলীয় সম্পৃক্ততা বিদ্যমান।

বাংলাদেশের রাজনীতির গতি আর বাঙালীর মতি দুটোই সর্বদা পরিবর্তনশীল। সমস্ত বাঙালীরা এখন পর্যন্ত কাউকেই নিজেদের কর্তা বলে মেনে নিতে পারেনি। না পেরেছে পুরোপুরি আওয়ামীলীগকে মানতে না বিএনপি না অন্য কাউকে। তাই তারা রাজনীতির গোলকধাঁধায় নিজেদের ঠকাতেই ওস্তাদ। কিন্তু, সব কথার পেছনেও কথা থেকে যায়। আর এদেশের রাজনীতিতে সেই কথাটি হচ্ছে- 'Best of the worst'

বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত যদি এ প্রকার দলের অস্তিত্ব হাজারো চড়াই উৎরাইয়ের পরেও টিকে থেকে থাকে তবে সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনক শেখ মুজিবের আদর্শ ধারন করা কোটি বাঙালী যখন দলটির সমর্থক, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মতো সফল রাষ্ট্রনায়ক যখন দলটির সভানেত্রী তখন দলটির প্রতি বাঙালীর আশা ভরসা দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর দলটিও তার স্বাধীনতা পরবর্তী স্বল্প ক্ষমতাকালীন সময়েও সেই আশা ভরসা পূরনে কাজ করতে আগ্রহী; সেটা অস্বীকারেরও কোনো উপায় নেই। কারন, দলটি হারলে যে গোটা জাতি হারে সেটা বহুবার প্রমানিত। তাই বহুবার বোকামি করাটাও বীরের জাতি হিসেবে বোধ হয় বাঙালীর বহুবার মানায় না!

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test