E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রসঙ্গ উন্নয়ন প্রকল্প লুট

২০২২ এপ্রিল ২২ ১৫:০৮:২৮
প্রসঙ্গ উন্নয়ন প্রকল্প লুট

আবীর আহাদ


কোনো প্রকৌশলী অথবা কোনো প্রকৌশলী সংস্থা কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সরকারের বিভিন্ন ছোটো মাঝারি বড়ো ও মেগা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা, মূল্যায়ন ও মূল্যমান যাচাই ও নির্ণয় করে পরিকল্পনা মন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি (NEC= National Economic Council)। এনইসি সেসব প্রকল্প যাচাই করে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে পাঠিয়ে দেয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একনেক (ECNEC = Executive Committee of the National Economic council)-এর কাছে। এটাই হলো বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের অনুমোদন পদ্ধতি বলে আমার ধারণা।

এখন সংগতভাবেই উদাহরণস্বরূপ প্রশ্ন আসে, একটি প্রল্পের মধ্যে যখন একটি বালিশের ক্রয়মূল্য আটাশ হাজার টাকা, বালিশের কভারের ক্রয়মূল্য ছাব্বিশ হাজার টাকা, একটি পর্দার ক্রয়মূল্য পঁয়ত্রিশ হাজার, একটি বইয়ের ক্রয়মূল্য পঁচাশি হাজার টাকা, একটি কম্পিউটার মেরামতের ব্যয়মূল্য পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা, একটি নারকোল গাছের মূল্য নয় লক্ষ টাকা, একটা এক্সরে মেশিন পাঁচ কোটি টাকা ইত্যাদি ইত্যাদি দেখানো হয়, সেগুলো কি NEC ও ECNEC এর কর্তাদের চোখে পড়ে না?

প্রকল্পসমূহের এসবের কল্পনাতীত ব্যয় ও ক্রয় মূল্য যদি এমন অসম্ভব অস্বাভাবিক মনে হয়, তাহলে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই করার এখতিয়ার অবশ্যই এনইসি'র। চূড়ান্ত অনুমোদনের পূর্বে একনেকেরও নিশ্চয় সেটি যাচাই করা কর্তব্য। দু'টি জাতীয় কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে ঐসব প্রকল্পের অসম্ভব অস্বাভাবিক ব্যয় ও ক্রয়মূল্য অনুমোদন লাভ করে তা আমাদের মতো নির্বোধ মানুষের পক্ষে বুঝা খুবই কঠিন। আমাদের মনে হয়, এ দু'টি জাতীয় কমিটির কর্তাব্যক্তিরা এসব প্রকল্পের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও যাচাইকর্মে হয় অজ্ঞ, অথবা এসব কমিটিদ্বয়ের মধ্যে অবস্থানকারী কিছু কমিশনখোর ব্যক্তি প্রকল্প প্রস্তুতকারী/পরিচালক ও ঠিকাদারদের যোগসাজশে নানান ছলেকলেকৌশলে প্রকল্পগলো অনুমোদন করিয়ে নেন!

সুতরাং ছোটো মাঝারি বড়ো ও মেগা প্রকল্পের অসম্ভব অস্বাভাবিক ব্যয় ও ক্রয়মূল্যের দায়ভার থেকে এনইসি (NEC) ও একনেক (ECNEC) মুক্ত নয়। দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে যেসব সাগর লুটের ঘটনা ঘটে চলেছে সেসবের জন্য প্রকল্প প্রস্তুতকারী, প্রকল্প পরিচালক, ঠিকাদার এবং এনইসি ও একনেক সমানভাবে দায়ী এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এভাবে এসব উন্নয়ন প্রকল্প, কেনাকাটা ও ব্যাঙ্ক লুটের বিশাল অর্থের একটা অংশ কালো টাকা হয়ে দেশের বাজারে প্রবেশ করছে, যার কুফল হিশেবে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশচুম্বি মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলছে। অপরদিকে আরেকটি বিরাট অংশ বৈদেশিক মুদ্রায় হুন্ডিসহ অন্যান্য অসাধু উপায়ে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে! এ প্রক্রিয়ায় দেশে চরম মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে। এদেশ থেকে পাচারকৃও সেসব অর্থ বিদেশে বিনিয়োগের পাশাপাশি এসব অপকর্মের সাথে জড়িত অপরাধীচক্র বিভিন্ন দেশে সেকেণ্ড হোম বানিয়ে রাজকীয় জীবনযাপন করছে!

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এমন অবারিত সাগরচুরি মেনে নেয়া যায় না। এসব কার্যক্রমের সাথে জড়িত রাষ্ট্র পরিচালক ও লুটেরাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় এনে, লুটকৃত অর্থ ফেরত আনাসহ তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test