E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ফেসবুক সাংবাদিকতা ও দুটি কথা 

২০২২ জুন ১২ ১৬:০৫:৪৫
ফেসবুক সাংবাদিকতা ও দুটি কথা 

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু


ফেসবুকে লেখালেখি কিংবা সাংবাদিকতা করা নিয়ে ইদানিং নানামত ও বিশ্লেষণ প্রায়ই আবার ফেসবুকের কল্যাণেই দেখতে পাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে বেশ জোরালো তর্ক বিতর্কও অনেককে করতে দেখছি। ফেসবুকে কেউ কিছু লিখে 'জনপ্রিয়তা' পেলেই আবার কেউ কেউ দেখি, ওই ফেসবুকের জনপ্রিয় লেখককে নানাভাবে আক্রমণ করে অশোভন ভাষায় আক্রমণও করছেন।

তাই ফেসবুকে লেখালেখি কিংবা রিপোর্ট প্রকাশ করাটাকে যারা ভালো চোখে দেখেন না, তাদের সঙ্গে আমি কখনও একমত পোষণ করতে পারিনি এবং পারবোও না।

আমি একজন মফস্বলের সামান্য সংবাদকর্মী। প্রায় ১৬ বছর প্রথম আলো ও প্রায় ৪ বছর কালের কণ্ঠে কাজ করে এখন দৈনিক বাংলা ৭১ পত্রিকায় কাজ করছি। এছাড়া, নবীনগরের কথা নামে আমার একটি নিজস্ব নিউজ পোর্টাল আছে। যেখানে আমি নিয়মিত চলমান নানা বিষয় নিয়ে ভার্চুয়ালি লাইভ টকশো করে থাকি। ইতিমধ্যে ১৫১টি পর্বের টকশো লাইভ করেছি।

বিশ্বাস করুন, বিগত প্রায় দুই যুগ ধরে প্রথম আলো ও কালের কণ্ঠে কাজ করে যতটুকু পরিচিতি পেয়েছি, গত কয়েক বছরে ইন্টারনেটের এই জামানায় অনলাইন নিউজ পোর্টাল নবীনগরের কথায় লেখালেখি এবং লাইভ টকশো করে তার চেয়েও ঢের বেশী আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত হতে পেরেছি বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এবং সেটি সম্ভব হয়েছে কেবলই এই বহুল জনপ্রিয় ফেসবুকের কল্যাণেই।

কারণ আমি আমার লেখালেখি এবং বলাবলির যাবতীয় কর্মযজ্ঞ ফেসবুকে শেয়ার করে সেগুলো মানুষকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছি বলেই মানুষ সেগুলো প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছেন।

আজ সকালে আশরাফুল নামে আমার এক ছোটভাই সাংবাদিকতা কি ও কত প্রকার? এ নিয়ে একটি নাতিদীর্ঘ লেখা ফেসবুকে লিখেছে। অথচ তার লেখাতেই ফেসবুক সাংবাদিকতা নিয়ে সমালোচনা করেছে।

মজার বিষয় হচ্ছে, তার ণেখায় ফেসবুক সাংবাদিকতার সমালোচনাটা কিন্তু ছোটভাই ফেসবুকের মাধ্যমেই পোস্ট করেছে। তবে আমি মনে করি, ফেসবুক সাংবাদিকতাই বর্তমানে সবচেয়ে বেশী মানুষ গ্রহণ করছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে লেখায় যেন বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষতা থাকে।

তাহলে ফেসবুক সাংবাদিকতা নিয়ে কেউ কখনও আর নাক সিটকাতে পারবে না। আমি মনে করি, যিনি ভালো লিখতে পারেন, বলতে পারেন এবং আচার আচরণেও যাঁর সাংবাদিকতাসুলভ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়, তিনিইতো প্রকৃত সাংবাদিক।

এখন ধরুন, আপনি বাংলাদেশের নামকরা কোন পত্রিকা কিংবা টেলিভিশনে তদ্বির করে টাকার বিনিময়ে (আজকাল এমনটা প্রায়ই শুনছি) পত্রিকার কার্ড, চোঙা ও নিয়োগপত্র নিয়ে আসলেন। কিন্তু নিজে কখনও ভালো করে দুলাইন লিখতে জানেন না, ভালোভাবে কথাও শুদ্ধভাবে বলতে পারেন না। আপনার মূলধন কেবল "কপি পেস্ট" করা। তাহলে বড় পত্রিকায় কাজ করলেও আপনাকে কি সাংবাদিক বলা যাবে?

শুধু তাইনা, লেখালেখিতো জানেনইনা, এমনকি আপনার আচার আচরণেও সাংবাদিকতার কোন লেশমাত্র নেই! কেবল টাকার জোরে তদ্বির, পেশীশক্তি কিংবা দালালি, চামচামি করে সর্বত্র সাংবাদিকগিরি দেখান। তাহলে আপনি যত বড় মিডিয়াতেই কাজ করেন, আপনাকেতো আমি কখনও ভাই সাংবাদিক হিসেবে মেনে নিতে পারবো না।

অথচ দেখুন, এর বিপরীতে তদ্বির, দালালি কিংবা টাকার জোর নেই, কিন্তু পড়াশুনা, মেধা, শ্রম দিয়ে সততার মাধ্যমে বড় পত্রিকা নয়, কেবল ফেসবুক কিংবা কোন অনলাইন নিউজ পোর্টালেও নিয়মিত সত্যের পক্ষে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে লড়ে যাচ্ছেন, লিখে যাচ্ছেন এবং সাহসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বলেও যাচ্ছেন, তাহলে তিনিইতো হলেন প্রকৃত কলমযোদ্ধা কিংবা রিয়েল সাংবাদিক।

সবসময় অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখতে পারেন, সাহস করে সরকারি দলের মন্ত্রী, এমপিসহ প্রশাসনের বিরুদ্ধেও সত্যটা সাহসের সঙ্গে তুলে ধরতে পারেন, সেই তিনি ফেসবুকে লিখেন নাকি অনলাইনে লিখেন, সেটিতো দেখার বিষয় নয় ভাই।

যিনি কারও কাছেই মাথা নত না করে সত্যটা সাহস করে লিখতে পারেন, বলতে পারেন তাকেইতো আমি প্রকৃত সাংবাদিক বলবো, নাকি বলেন?

এবার সেই সাহসী কলমযোদ্ধা তাঁর সাহসীকতাপূর্ণ লেখা বা বলা ধরাভাঙ্গাডটকমে লিখলেন নাকি কাশেম টিভিতে বললেন, সেটিতো আমার কাছে ধর্তব্য কোন বিষয় নয়। আমি মনে করি, এই যে সাহস করে মেধা খাটিয়ে, শ্রম দিয়ে অনুসন্ধ্যানী রিপোর্টের মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠভাবে সত্যটা আপনি ফেসবুক কিংবা যেকোন অনলাইন নিউজ পোর্টালে তুলে ধরলেন, সেটিইতো প্রকৃত সাংবাদিকতা। আর আমিতো মনে করি, সাধারণ পাঠক বা দর্শকও আপনার সেই লেখা কিংবা বলাটা খুঁজে বের করে পড়তে কিংবা দেখতে সেখানেই হুমরী খেয়ে পড়বে। এটিই তো বাস্তবতা।

আর এরকম সাহসতো দূরের কথা 'কপি পেস্ট' পলিসি জানা না থাকলে আপনার সাংবাদিকতার পরিচয়ই যেখানে থাকে না, সেখানে আপনি যত বড় মিডিয়াতেই কাজ করুন না কেন কিংবা প্রেসক্লাবসহ যত বড় সংগঠনেই সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদে থাকুন না কেন, সাধারণ মানুষ তথা পাঠকের কাছে আপনার দু পয়সারও দাম নেই বলে আমি অন্তত মনে করি। তবে হ্যাঁ, প্রশাসন ও সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদদের কাছে হয়তো আপনার নানারকম পদপদবী, দালালি আর চাটুকারীতার মূল্য রয়েছে!! ওদের কাছে হয়তো বাহ্যিকভাবে আপনি 'তথাকথিত দাম' পেতে পারেন। কিন্তু সাধারণ পাঠক বা মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, স্নেহ হয়তো কখনও পাবেন না।

সুতরাং আমি মনে করি, সাংবাদিক মানেই দালালি আর চাটুকারীতা নয়। সাংবাদিক মানেই সত্যটা সবসময় লিখতে হবে এবং সাহস করে সত্যটা বলতেও হবে। সেটি আপনি ফেসবুকে লিখলেন নাকি অনলাইন কোন পোর্টালে লিখলেন, সেটি আমার কাছে কোন বিবেচ্য বিষয় নয়।

আপনি লিখতে পারেন, এটিই আপনার পরিচয়। সুতরাং ফেসবুক কিংবা অনলাইনে যারা লেখালেখি করেন, তাদেরকে নিয়ে দয়া করে আর নাক শিটকাবেন না প্লিজ। কারণ, বর্তমান সময়ে বহু নামীদামী সাংবাদিকও ফেসবুক থেকে (নাগরিক সাংবাদিকতা) প্রতিনিয়ত তথ্য সংগ্রহ করেই দাপটের সঙ্গে সুসাংবাদিকতা করছেন।

সুতরাং বর্তমানযুগে ফেসবুক সাংবাদিকতাকে এভয়েড করার কোন সুযোগ নেই। আমি মনে করি, ফেসবুকের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দ্বী কেবল ফেসবুক- নিজেই। যার জলন্ত প্রমাণ সারা বিশ্বে এখন অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের জয় জয়কার!!

লেখক :বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা ৭১।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test