E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিক্ষক পেটাতে আবারো জনপ্রতিনিধি?

২০২২ জুলাই ২৫ ১৫:৩২:২৮
শিক্ষক পেটাতে আবারো জনপ্রতিনিধি?

রণেশ মৈত্র


জনপ্রতিনিধিদের কাজ কি? তাঁদের আসল দায়িত্বই বা কি? আর ওই জনপ্রতিনিধি যদি হন একজন সম্মানিত সংসদ সদস্য, সে ক্ষেত্রেই বা সুনির্দিষ্টভাবে তাঁর বা তাঁদের দায়িত্ব কি? সংবিধানই বা এ ব্যাপারে কি বলে?

এই প্রশ্নগুলি নতুন করে দেশবাসীর সামনে উঠে এসেছে জনৈক কলেজ অধ্যক্ষকে জনৈক এমপি কর্তৃক বেধড়ক পেটানোর ঘটনার কারণে। রাজশাহী (গোদাগাড়ি তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজবাড়ী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুঁসি এবং হকিষ্টিক দিয়ে পিটিয়েছেন। শিক্ষক পেটানো নিয়ে আবারো প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে।

এর আগে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারী মাহতাব উদ্দিন কলেজে ঢুকে এক শিক্ষককে চড়-থাপ্পড় এবং আর এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের এমপি সেলিম ওসমান সেখানকার শ্রীযুক্ত ভক্ত নামক একজন জনপ্রিয় প্রধান শিক্ষককে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে কান ধরে তাঁর ছাত্র ও অভিভাবক এবং ব্যাপক সংখ্যক মানুষের সামনে কান ধরে ওঠ বস করান। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী চক্র, ছাত্র কেউই শিক্ষক পেটানো, লাঞ্ছিত করা বা হামলা করার ব্যাপারে কারো থেকে পিছিয়ে নেই। শিক্ষক লাঞ্ছনার বেশীরভাগ ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনপ্রতিনিধিদের জড়িত থাকার অভিযোগ বিস্তর। তাই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, একজন আইন প্রণেতা কিভাবে আইন ভঙ্গ করেন? এরপরও তাঁর নিজ পদে অধিষ্ঠিত থাকার এখতিয়ার বা বৈধতা থাকে কি-না?

আর শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষমতার বলয় সুসংহত করে রাখতে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রন মূলতঃ স্থানীয় এমপির হাতেই। ম্যানেজিং কমিটি এবং গভর্নিং বডি (কলেজের ক্ষেত্রে) পূরোটাই এমপির কর্তৃত্বে থাকে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়; জনপ্রতিনিধির নিজস্ব স্বার্থে এদিক-সেদিক হলেই শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনাগুলি ঘটে থাকে।

বিগত ৭ই জুলাই নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে সবার সামনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে বেপরোয়াভাবে পিটিয়ে জখম করেন এমপি ফারুক চৌধুরী। এ সময় গোদাগাড়ি উপজেলার সাতজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ আরো অনেকেই উপস্থিত থাকলেও এমপির হুংকারে বাধা দিতে সাহস পাননি। এমপি ফারুক চৌধুরীর বেপরোয়া লাথি, কিল, ঘুঁসি ও হকিষ্টিকের আঘাতে অধ্যক্ষের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালো দাগ পড়েছে। মারধরের পরে কান ধরে ওঠ বস করান।

মারধরের পরেও ওই অধ্যক্ষ তখন তা প্রকাশ করেননি। পরে, আজ থেকে দিন কয়েক আগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে নিজেকে নির্দোষ প্রমানের জন্য এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ভিকটিম অধ্যক্ষকে পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ সময় অধ্যক্ষ সেলিম রেজা এমপির হাতে মার খাওয়ার কথা অস্বীকারও করেছেন। তবে তাঁর শরীরের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানগুলি দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে অস্বীকার করেন। মুখে কালো দাগ কিভাবে হয়েছে সেটিও তিনি প্রকাশ করেননি।

সংবাদ সম্মেলনে এমপি ফারুক চৌধুরী দাবি করেন, তাকে ঘিরে বারবার চক্রান্ত করা হয়। এতে তিনি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং পারিবারিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন, তাঁর মানহানি ঘটেছে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের কাছে বিচার চান।

উল্লেখ্য, মাত্র মাসখানেক আগে সাভারের হাজি ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের মাঠে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের উপর অতর্কিত হামলা চালায় দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্র। ষ্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

গত ১৮ জুন মীর্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পড়িয়ে তাকে হেনস্তা করে কলেজের কিছু সংখ্যক ছাত্র ও স্থানীয়রা। বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমালোচনা থাকা ভারতের কট্টর সাম্প্রদায়িক দল বিজেপির নেত্রী নুপুর শর্মার ছবি দিয়ে এক ছাত্র??

লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test