E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সামাজিক বিষফোঁড়া ‘কিশোর গ্যাং’ একটি নব্য আতঙ্কের নাম

২০২২ জুলাই ২৬ ১৫:১৬:৪৭
সামাজিক বিষফোঁড়া ‘কিশোর গ্যাং’ একটি নব্য আতঙ্কের নাম

মোহাম্মদ ইলিয়াস


কিশোর গ্যাং যেহেতু এটি একটি সামাজিক অপরাধ। তাই সমাজের সবার দায়বদ্ধতা রয়েছে। আপনার এলাকায় এমন কোনো সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকান্ড দেখলে অতি দ্রুত পরিবারকে জানাতে হবে এবং এতেও কোনো সুফল না এলে তবে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। এবং তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে যাতে অন্যরাও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। নইলে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাবে। এর পাশাপাশি সমাজের নেতৃস্থায়ীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভা-সমাবেশ, মিটিং, জনসভার আয়োজন করতে হবে কিশোর গ্যাংয়ের কুফল সম্পর্কে। বই বিতরণ, লিফলেট, ব্যানারসহ প্রচারণাও করতে হবে। বিশেষভাবে অভিভাবকদের সতর্ক করতে হবে। এখন তথ্যপ্রযুক্তি উৎকর্ষতার যুগ। আকাশ সংস্কৃতি হাতে হাতে। যার কারণে উঠতি বয়সি কিশোর-কিশোরীরা এ পথে চলছে। আর এটাকেও পুঁজি করে একদল কিশোররা বিভিন্ন নামে-বেনামে গ্রম্নপ, পেজ খুলে কিশোর অপরাধ করছে। এবং তাদের পরিকল্পনা, আলাপ-আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে। রিফাত মিন্নি তারই বড় উদাহরণ। এছাড়া এই অনলাইন পস্ন্যাটফর্মে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকার সুন্দরী কিশোরীদেরও টার্গেট করে। আবার কাউকে কিডনাফও করে এবং অর্থ-পণের দাবি করে। এছাড়া এ সদস্যরা নারীদের উক্ত্যক্তসহ সাইবার বুলিংও করে। যা সত্যিই পীড়াদায়ক। কিশোর গ্যাং বন্ধের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট মিডিয়া, পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক প্রচার করতে হবে। নাটক, সিনেমায়ও সমাজ সচেতনতামূলক প্রচারণা করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি কিশোর সংশোধন প্রতিষ্ঠান আরও বেশি বেশি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিদেশি ভয়ংকর অ্যাকশন চ্যানেল দেখা হতে তাদের বিরত রাখতে হবে। কেননা এসব ছবির প্রভাব কিশোরদের উপর প্রভাব বিস্তার লাভ করে। আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের একটি অংশ পথে-ঘাটে, বাসস্ট্যান্ডে, সরকারি ভবনের নিচে, লঞ্চ টার্মিনালে বসবাস করে আর তাদের সামান্য মূল্যের মাধ্যমে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত করে একদল অপরাধীরা। এবং তারা এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে যায় এবং পথে-ঘাটে নানা অপরাধমূলক কাজে যোগদান করে। এজন্য এই পথশিশু কিশোরদের প্রতিও নজর দিতে হবে। তাদের লেখা পড়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে। এজন্য সরকারের সদিচ্ছা, এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। দেশের আলেম সমাজকে বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনায় কিশোর অপরাধের কুফল সম্পর্কে জনগণকে বোঝাতে হবে। আমাদের শিশু-কিশোরদের মধ্যে রয়েছে সীমাহীন উদ্দীপনা আর জয়ের নেশা। তাদের যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমেই তাদের মেধাকে কাজে লাগানো যায়। আর এরাই ভবিষ্যৎ জাতির কান্ডারি। তাই সবাই একান্ত প্রচেষ্টা কিশোর গ্যাং বন্ধ করতে পারে

দেশে ২০১২ সাল থেকে কিশোর গ্যাং নামক একটি সন্ত্রাসী সংস্কৃতির অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হলেও ২০১৭ সালে উত্তরায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আদনান কবির খুনের পর এদের কর্মকাণ্ড আলোচনায় আসে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে মাঠে নামে। ২০১২ সালে যেখানে কিশোর অপরাধে ৪৮৪টি মামলায় ৭৫১ জন আসামি ছিল, সেখানে ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসেই ৮২১টি মামলায় এক হাজার ১৯১ জন শিশু-কিশোর আসামি হয়। ২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন মতে, ঢাকা ও এর আশপাশে ১২টি এবং সারা দেশে কমপক্ষে ৩৫টি কিশোর গ্যাং ছিল (প্রথম আলো, ১৭ নভেম্বর ২০২০)। তবে বর্তমানে রাজধানীতে এ ধরনের ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা কমপক্ষে ৭৮ এবং সদস্যসংখ্যা দুই হাজারের বেশি (যুগান্তর, ২০ জুন ২০২১)। জানা যায়, তেজগাঁওয়ে ১৪টি, মিরপুরে ২৩, উত্তরায় ১১, গুলশানে একটি, ওয়ারীতে ছয়, মতিঝিলে ১১, রমনায় আট এবং লালবাগে চারটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে।

শহর নগর ছাড়িয়ে এখন গ্রামগঞ্জেও গড়ে উঠছে সামাজিক বিষফোঁড় কিশোর গ্যাং। দিন যত যাচ্ছে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় ততই গাণিতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে হত্যা খুন ধর্ষণ চুরি ডাকাতি হানাহানির মতো জঘন্যতম মহা অপরাধে। ফলে এই কিশোর গ্যাং এর অত্যাচারে সমাজে বসবাসরত জনমানুষ চরম অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। কোথাও কোথাও এই কিশোর গ্যাং এর পিছনে আছে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়। রাজনৈতিক নেতারা এদের পালন করে বলে এরা কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক শক্তির দাপটে চলে আর নেতাদের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে সামাজিক সকল অনাচার দিব্যি করে যাচ্ছে। একটি সমাজে একাধিক কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে। একেক নেতারা একেক গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে আর প্রতিপক্ষ শক্তিকে ঘায়েল করতে এই কিশোর গ্যাংকে ব্যবহার করছে। ফলে দিন দিন সামাজিক অবক্ষয় বেড়েই চলছে।

মান সম্মান আর নিরাপত্তার ভয়ে এই কিশোর গ্যাং এর ব্যাপারে সমাজে বসবাসরত জনগোষ্ঠীরা কেউ মুখ খুলতেও নারাজ। আবার যারা সামান্যতম প্রতিবাদও করছে তাদের বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। যদ্দরুণ, এদের ব্যাপারে সবাইকে নীরবতা অবলম্বন করতে দেখা যায়। এতে করে সমাজের শান্তি বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নৈতিক অবক্ষয়ের শেষ সীমায় পৌঁছে যাচ্ছে আর সমাজ জীবন হয়ে উঠছে নরকতুল্য। এদের লাগাম ধরতে সময় অনেক গড়িয়েছে। এখনো যদি যথাযথ পদক্ষেপে এগিয়ে না আসা হয় তাহলে এই জাতিকে নিকট ভবিষ্যতে কঠিন খেসারত দিতে হবে। তখন এদের নিয়ন্ত্রণে আর কোনো উপায়ই অবশিষ্ট থাকবে না। তাই এক্ষুনি এই কিশোর গ্যাং গড়ে উঠার কারণ ও এই গ্যাং প্রতিরোধের উপায় চিহ্নিত করে সমাধানের রাস্তা বের করতে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের সমন্বিত পদক্ষেপে এগিয়ে আসা সময়ের অপরিহার্য দাবি।

নানাবিধ কারণে সমাজে কিশোর গ্যাং গজিয়ে উঠছে। সেই কারণ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে এই সামাজিক বিষফোঁড় কিশোর গ্যাং নামক ক্যানসারের মূলোৎপাদন করতে হবে।

ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাব

দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের সমাজে সন্তানদের সাধারণ শিক্ষার যতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে ঠিক ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার ততটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে সন্তানরা বিপদের গড্ডালিকা প্রবাহে নিজেকে ভাসিয়ে দিচ্ছে আর নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে চরমভাবে ধাবিত হচ্ছে। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে এই কিশোররা প্রথমে ছোঁখাঁ নানা অপরাধে লিপ্ত হতে হতে একসময় মহা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে। সমাজের এমন কোনো হেন অপরাধ নেই যা এই কিশোর গ্যাংরা করছে না। কিশোরদের মাঝে নৈতিক ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে ব্যর্থ হলে তাদের নৈতিক অবক্ষয় রোধ দুরূহ হয়ে পড়ার পাশাপাশি সামাজিক জীবন চরমভাবে কলুষিত হয়ে পড়বে।

পারিবারিক কলহ

আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা অনেকটা ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। সামান্য কথাবার্তার জন্য কলহ বিচ্ছেদ খুন-খারাবি মামলা হামলা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবার ভাঙন, নিত্য কলহ সন্তানদের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পারিবারিক কলহের কারণে ওই পরিবারের সন্তানরা বেশির ভাগই বিপথে পরিচালিত হচ্ছে আর এর ফলস্বরূপ জড়িয়ে পড়ছে সামাজিক অপরাধে। এরাই নেতৃত্ব দিচ্ছে সামাজিক বিষফোঁড় কিশোর গ্যাং এর। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াঝাটিসহ পারিবারিক কলহ দমনে পরিবারগুলোকে নিজেই দায়িত্ব নিতে হবে। সন্তানরা যেন মা-বাবা থেকে আদর্শ শেখে সেই ব্যবস্থা পরিবারকে নিশ্চিত করতে হবে। এসব দিক থেকে যে পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি সচেতন সেই পরিবারের সন্তানরা বখে যায় না। বিপরীতে যে পরিবারে কলহ বিভেদ নিত্যকার ঘটনা সেই পরিবারের সন্তানরা সবচেয়ে বেশি বখে যাচ্ছে আর এরাই নেতৃত্ব দিচ্ছে সমাজের কিশোর গ্যাংদের। পরিবারের বড়দের আচার ব্যবহারে শালীনতা ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলাই এর সমাধান।

রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়

রাজনৈতিক নেতারা তাদের অবস্থান মজবুত ও প্রতিপক্ষ শক্তিকে ঘায়েল করতে এই কিশোর গ্যাংদের কাজে লাগাচ্ছে। তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র। তাদের পিছনে ব্যয় করছে বিপুল পরিমাণ টাকা পয়সা। ফলে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে এই বিপদগামী কিশোররা আরও চরম বেপরোয়া হয়ে উঠছে। জড়িয়ে পড়ছে সামাজিক নানা অপরাধে। মুহূর্তেই যত্রতত্র যার তার ওপর হামলে পড়ছে। প্রতিপক্ষ শক্তির ওপর খাচ্ছে জোর। এতে করে সমাজে বিশৃঙ্খলার জন্ম নিচ্ছে। কিশোরদের রাজনৈতিক দাবাগুটির মতো এই অপব্যবহার বন্ধে রাজনৈতিক নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের হীন উদ্দেশ্য সাধনে যেন কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে সেই বিষয়ও রাষ্ট্র প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। কিশোরদের রাজনৈতিক স্বার্থে জড়ানো নেতাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় এই বিষফোঁড় মূলোৎপাদন সম্ভব হবে না বরং দিন দিন আরও বেড়ে যাবে এবং নিরাময়হীন হয়ে উঠবে।

মাদকের সহজলভ্যতা

মাদকের ভয়াবহ সজলভ্যতায় সমাজের উঠতি বয়সের তরুণরা সবচেয়ে বেশি বিপদগামী হচ্ছে আর জড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ সামাজিক অপরাধে। এই অপরাধ ব্যক্তিগত পর্যায়ে থাকছে না তা রূপ নিচ্ছে গ্রুপ দলভিত্তিক। বিপদগামী কিশোর গ্যাং নিজেদের অপরাধ ঢাকতে সংগঠিত হয়ে নানা অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। মাদকের টাকা জোগাড়ে চুরি ডাকাতি ছিনতাইয়েও লিপ্ত হচ্ছে এই গ্যাংয়ের সদস্যদের। মাদকের আমদানি ব্যবহার জিরো টলারেন্সে না আনতে পারলে শত প্রচেষ্টা উদ্যোগে কোনো কাজে আসবে না। মাদক আমদানি ও ব্যবহারের সকল দ্বার বন্ধ করতে হবে। আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। তবেই আশানুরূপ ফল হয়তো মিলবে।

অপসংস্কৃতির কুপ্রভাব

আকাশ সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে সংস্কৃতির নামে আমদানি হচ্ছে অপসংস্কৃতির আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমাদের তরুণ কিশোরদের ওপর। অপসংস্কৃতির কুপ্রভাবে কিশোররা নৈতিক অধঃপতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। সংস্কৃতির নামে ভিনদেশি নোংরা সংস্কৃতির দ্বার রুদ্ধ করে আমাদের কিশোর তরুণদের বিপদগামীতার হাত থেকে বাঁচানোর মোক্ষম সময়ই এখনই। এই বিষয়ের অবহেলা উন্নাসিকতা আমাদের সামাজিক ভীত নষ্টসহ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের মেরুদ- ভেঙে দিয়ে একটি ভঙ্গুর ও মেরুদ-হীন জাতিতে পরিণত করবে।

ইন্টারনেটের অবাধ সুযোগ-সুবিধা

ইন্টারনেটের অবাধ সুযোগ-সুবিধার ফলে কিশোররা বেশি পরিমাণ বিচ্যুতির অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হচ্ছে। কিশোর বয়সের উঠতি উৎসুকি মন সহজে ইন্টারনেটের নোংরা সাইটে প্রবেশ করছে আর তার প্রভাবে ইভটিজিং শ্লীলতাহানি ধর্ষণসহ মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ইন্টারনেট থেকে এডাল্ট সাইটের নামে নোংরা অশ্লীল সাইটগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। নচেৎ আমাদের কিশোররা আরও বিপদগামী হয়ে পড়বে।

ভিডিও গেমসের কুপ্রভাব

পাবজি ফ্রি ফায়ারসহ ভিডিও গেমস খেলার ফলে কিশোরদের মানসিক বিকলাঙ্গতা সৃষ্টি হচ্ছে। তারা জীবনটাকে গেমসের মতো ভেবে মারামারি খুনাখুনির প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তাদের মানসিকতায় শত্রুভাবাপন্নতা সৃষ্টি ও শত্রু ঘায়েলে খুনের নেশা চেপে বসে আর সুযোগে সেটা ঘটিয়েও বসে। ফ্রি ফায়ার পাবজিসহ খুনাখুনির প্রশিক্ষণদাতা এই ভিডিও গেমসগুলো বন্ধ করা সময়ের অপরিহার্য দাবি। বারবার এই গেমসগুলো বন্ধের দাবি উঠলেও সরকার কোনো অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ করছে না তা আমাদের মোটেও বোধগম্য নয়।

আড্ডা ও অসৎসঙ্গ

যখন তখন যেখানে সেখানে আড্ডাবাজি যার তার সঙ্গে মেশা চলাফেরায় কিশোররা বিভিন্ন বদ অভ্যাসে লিপ্ত হচ্ছে আর এই বদ অভ্যাস তাদের নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে। এই সব আড্ডা যার তার সঙ্গে মেশা রোধে পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমন্বিত প্রচেষ্টা না চালালে এসব আড্ডা কখনো বন্ধ হবে না। সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে কার সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে সেই বিষয়ে পরিবারগুলোর উদাসীনতায় আজ কিশোররা বখে যাচ্ছে এবং প্রশাসনের শক্ত প্রতিরোধের অভাবও পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদি এসব আড্ডাবাজি বন্ধে প্রশাসন একাট্টা থাকত, পাড়া-মহল্লায় অভিযান অব্যাহত রাখত তাহলে সামাজিক নেতারাও সেসব আড্ডাবাজি বন্ধে প্রশাসন যন্ত্রকে কার্যকর সহযোগিতা করতে পারত। শহর গাঁয়ের এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই যেখানে কিশোরদের এই অবৈধ আড্ডাবাজি নেই। সারাদিন সারারাত এই আড্ডাবাজি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আবার এমন অবস্থা হচ্ছে যেন এই অবৈধ আড্ডাগুলোও মানিয়ে যাচ্ছে। এসব আড্ডা রোধে পরিবার সমাজ ও প্রশাসন সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপে এগিয়ে আসতে হবে। এই আড্ডাবাজিগুলো রোধ করতে পারলে কিশোর গ্যাংদের মেরুদ- অনেকটা ভেঙে যেত।

সর্বোপরি কিশোরদের নৈতিক অধঃপতনের কারণমূলে শক্ত আঘাত হেনে কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আমাদের সমাজ জীবনকে চরম হুমকির মুখে ফেলে দেবে। সামাজিক এই বিষফোঁড় মূলোৎপাদনে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে চরম বোকামি। এই কিশোর গ্যাং রোধে সব ধরনের পদক্ষেপই সময়ের অপরিহার্য দাবি। এই দাবির মর্ম অনুধাবনে কোনো গাফিলতি আদৌ কাম্য নয়। পরিবার সমাজ রাজনৈতিক নেতা রাষ্ট্র প্রশাসনের শক্ত কমিটমেন্ট হতে পারে কিশোর গ্যাং দমনের একমাত্র হাতিয়ার।কিশোর গ্যাং সমাজের উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নে র সোনার বাংলা বিনির্মানে বিষফোঁড়া মত ভূমিকা পালন করছে। দেশরত্ন জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী প্রজন্মকে একটি মোহমুগ্ধ আলোর দীপক হিসেবে তৈরী করতে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ৪১' বাস্তবায়ন আজকের এই কিশোরেরাই অদম্য ও দুর্নিবার ভূমিকা পালন করবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test