E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

শেখ হাসিনা দিল্লি যাচ্ছেন, সবকিছু কী ঠিক হবে? 

২০২২ আগস্ট ২৭ ১৬:১৭:২৩
শেখ হাসিনা দিল্লি যাচ্ছেন, সবকিছু কী ঠিক হবে? 

শিতাংশু গুহ


বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক অবাক বিস্ময়কর প্রতিভা, তিনি সবার মনের কথা অবলীলায় বলে দিতে পেরেছেন। সেই কবে ‘চরিত্রহীন’ উপন্যাসে তিনি বলেছেন, “যাহাকে ভালবাসি, সে যদি ভালো না বাসে, এমনকি ঘৃণাও করে তাও বোধহয় সহ্য হয়! কিন্তু যাহার ভালোবাসা পাইয়াছি বলিয়া বিশ্বাস করেছি, সেখানে ভুল ভাঙ্গিয়া যাওয়াটাই সবচেয়ে নিদারুন। প্রথমটা ব্যথা দেয়, শেষেরটা ব্যথাও দেয়, অপমানও করে”। 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিয়ে হিন্দুদের অবস্থাটা তথৈবচ। হিন্দুরা আওয়ামী লীগকে ভালোবেসেছিল, বিশ্বাস করেছিলো। এ সময়ে বিশ্বাস ভঙ্গের ব্যথা ও অপমানে এঁরা দিশেহারা। হিন্দুরা কখনো জাপা বা বিএনপিকে ভালোবাসেনি, বিশ্বাস করেনি, তাই এদের থেকে পাওয়া আঘাত সহ্য করেছে, মেনে নিয়েছে। আশায় বুক বেঁধেছে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সব সমস্যার সমাধান হবে? তা হয়নি, ঘটেছে ঠিক উল্টো। ব্যথাটা তাই বেশি?

শুধু হিন্দুই বা বলি কেন, প্রগতিশীল শক্তি কি খুশি? এখন যে বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশ কি তাঁরা চেয়েছিলেন? তাঁদের একটি দায়িত্ব ছিলো, তাঁরা তা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। দায়িত্ব তাদেরও নিতে হবে। আজকাল শুনি, শেখ হাসিনা না থাকলে দেশের কি হবে? তাঁরা ভীত, আদৌ তাঁরা দেশে থাকতে পারবেন তো? কিন্তু কেন? প্রায় চৌদ্ধ বছর একনাগাড়ে ক্ষমতায় থেকে দেশটা-কে ঠিক করতে পারলেন না? যতই বুলি আওড়ান, লোকে বলে দেশের নাকি বারোটা বেজে গেছে!

সর্বক্ষণ বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু করেন, কাজ করেন উল্টো। বঙ্গবন্ধু মৌলবাদের সাথে আপোষ করেননি, আপনারা করেছেন। সামনের দুই বছর কঠিন সময়। কি হবে, কে জানে? আজকে টাকার মূল্যমান কমছে, কালকে বিদ্যুৎ নেই, পরশু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইত্যাকার সকল সমস্যা হয়তো একসূত্রে গাঁথা? আয়নাঘর, গুম নিয়ে বিদেশীদের তদন্ত দাবী, তত্বাবধায়ক সরকার, সবই আসছে। আরো কি আসবে কেজানে? উন্নয়নের সুফল কি পিঁপড়ায় খাবে?

কথায় বলে আওয়ামী লীগ হারলে সবাই হারে, জিতলে সুবিধাভোগীরা জিতে। এবার প্রথমদিকে কিছুটা ঠিক থাকলেও ২০১৪’র পর সবকিছু আগের মতই হয়ে যায়? যাঁরা আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্খী সবাইকে দূরে ঠেলে দেয়া হয়! হিন্দুরা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাঙ্ক, তাদের মেরেকেটে ঠান্ডা করে দেয়া হয়েছে। প্রগতিশীলরা বিভ্রান্ত, ইতস্তত: করছেন। ব্লগার, নাস্তিক নাম নিয়ে অনেককে হত্যা করা হয়েছে, তাঁরা দেশান্তরী, অথবা নীরব। শাহবাগ আন্দোলন পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে?

শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নির্বাচনী ব্যবস্থার বারোটা বেজে গেছে। বিচার বিভাগ নড়বড়ে, হয়তো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না? আইন-শৃঙ্খলার ব্যারোমিটার নষ্ট হয়ে গেছে। পার্লামেন্ট অকেজো, ৩৫০ সেট অলঙ্কার। সাংবাদিকরা কথা বলতে পারে না, অথচ আওয়ামী লীগের প্রতি মিডিয়ার একটি ‘সফ্ট-কর্নার’ ছিলো। দল হিসাবে আওয়ালী লীগের অবস্থা করুন, দল এখন হাইব্রীড নেতা-কর্মীতে ভরপুর, বিপদে পড়লে এঁরা কেঁটে পড়তে দেরি করবেন না?

আমি পঁচাত্তর দেখেছি। ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগের সুশাসন দেখেছি। ২০০৯-২০১৪ দেখলাম। এরপর কি হলো কেজানে, ‘কালে কালে আরো কত কি দেখিবো’? বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনকে অসম্মান করার জন্যে আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়? শোনা যায়, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সাথে দেখা না করায় খালেদা জিয়ার আজ করুন পরিণতি। অথচ আমাদের সরকারী কর্মকর্তারা প্রায়শ: আমেরিকাকে জ্ঞান দেন্!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছিলেন, ‘আইদার ইউ আর উইথ মী, অর উইথ দি এনিমি’। সরকারকে সম্ভবত: আগামী দিনে এটি পরিষ্কার করতে হবে, ‘যুক্তরাষ্ট্র না চীন’? ২০১৪ এবং ২০১৯’এ ভারত ভীষণভাবে পক্ষে ছিলো, আমেরিকা তাই জোর করেনি। ভারতের অবস্থান কি আগের মত আছে? শেখ হাসিনা দিল্লি যাচ্ছেন, সবকিছু কি ঠিক হবে? এ সফর অতীব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকগুলো চুক্তি হবে, নীরব সমঝোতা হবে কিনা সেটিই দেখার বিষয়।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test