বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব
মোহাম্মদ ইলিয়াস
যার একটি ডাকে সারা দেশের লোক এক হয়ে নিজের জীবন তুচ্ছ করে যুদ্ধে যোগ দিয়ে দেশকে স্বাধীন করে আনে। তিনি তো অনন্য এক নেতা। সারা বিশ্বে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রয়েছেন ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার সর্বোচ্চ স্থানে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানতে চান কেমন ছিলেন সেই নেতা, কেমন ছিল তার ব্যক্তি জীবন, যার এক ডাকে লাখো মানুষ জীবন দিতেও ভাবেনি একটিবার!
কালজয়ী নেতৃত্বে তিনি ছিলেন পাহাড়ের মতো অবিচল, কিন্তু ব্যক্তিজীবনে মুজিব ছিলেন সাদামাটা-সাধারণ একজন প্রিয়তম স্বামী আর স্নেহশীল পিতা।
বঙ্গবন্ধুর জীবন যাপনে দেখা যায়, তিনি ছিলেন পরিপাটি ও ফ্যাশন সচেতন। এখন থেকে ৫০ বছরের বেশি সময় আগে তিনি যেসব পোশাক পরেছেন, এখনো মানুষ সেই পোশাক পরতে চায়। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে হালের জনপ্রিয় মডেল অনেকেই মুজিব কোট পরছেন।
বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পৃথিবীর অসামান্য ব্যক্তিদের অন্যতম। তিনি শুধু একজন বড় মাপের রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, ছিলেন তাত্ত্বিকও। বঙ্গবন্ধুর মধ্যে এই উভয় গুণের সমন্বয় ছিল বলেই হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাসে যে অর্জন সম্ভব হয়নি, তার নেতৃত্বে মাত্র নয় মাসেই তা অর্জিত হয়েছে। যে কোনও ব্যক্তি, রাজনীতিক ও দেশপ্রেমিকের চেয়ে তার ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি ছিলে দৃঢ়প্রত্যয়ী। যাকে আমরা বলতে পারি নিজ বিশ্বাসের প্রতি বিশ্বস্ত, সংশপ্তক।
বঙ্গবন্ধু একজন নেতা ও তাত্ত্বিক হিসেবে মানুষের অধিকার আদায় ও পূরণে কতটা ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের প্রতি তার পক্ষপাত, নিষ্ঠা, শ্রদ্ধা ছিল কতটা, তা এ লেখায় তার কয়েকটি বক্তব্যের আলোকে চেষ্টা করব উপস্থাপন করার। জন-অধিকার পূরণে সক্রিয় ও সোচ্চার হওয়ার গুণ বা বৈশিষ্ট্য তার ছাত্রজীবনের উন্মোচিত হয়েছিল। পাকিস্তানের ২৪ বছরের জিঞ্জিরে বঙ্গবন্ধুর জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে কারান্তরে। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে অন্য মামলায় আবার করা হয়েছে গ্রেফতার।
তবু তিনি কখনোই আপস করেননি। মুচলেকা দিয়ে মুক্তির সুযোগ এসেছে অজস্র বার, কিন্তু সেসবে করেননি ভ্রূক্ষেপ। নিজের চাওয়া, স্বপ্নের প্রতি থেকেছেন অবিচল। আর বিরল এ গুণই তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়ার পর জাতির জনকের মহিমা ও মর্যাদায় করেছে অধিষ্ঠিত। বিনিময়ে বাঙালি পেয়েছে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব। আর বিশ্ব মানচিত্রে নিজেদের স্বতন্ত্র ঠিকানা।
বিশ্বের যেসব জাতির জনক রয়েছেন, তাদের জীবন-কর্ম ও আত্মত্যাগের প্রতি দৃষ্টি দিলে আমরা দেখি—তারা প্রত্যেকেই ছিলেন জাতির মঙ্গলের জন্য উৎসর্গিত প্রাণ। এক্ষণে আমরা স্মরণ করতে পারি মেক্সিকো ও ভারতের জাতির জনকের দুটি অমূল্য উক্তি। মিগুয়েল হিডালগো মেক্সিকোর স্বাধীনতার জন্য অসাধারণ ভূমিকা ও অবিশ্বাস্য আত্মত্যাগের কারণে মেক্সিকান জাতির জনক ও মেক্সিকোর স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হিসিবে পরিচিত ও সর্বজনস্বীকৃত। উনিশ শতকের শুরুতে মিগুয়েল হিডালগোর নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনেই স্পেনের কাছ থেকে মেক্সিকো লাভ করে স্বাধীনতা।
স্পেনের অন্যায়-অবিচার ও নিষ্ঠুরতা এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যে, ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে হিডালগো নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবর্তে শুরু করেন সংঘাতমূলক রাজনীতি। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, ‘যেভাবেই হোক, দখলদার অপশক্তির নৃশংস থাবা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে, তাড়াতে হবে সাম্রাজ্যবাদী শকুন, হয় স্বাধীনতা না হয় মৃত্যু।’
১৮১০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হিডালগো এক বক্তৃতায় বলেন, ‘মেক্সিকানরাই মেক্সিকো শাসন করবে। কোনো বিদেশি শক্তি নয়।’ হিডালগোর মৃত্যুর একশ’ বছরের বেশি সময় পর বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার সংগ্রামের সঙ্গে অতি সহজেই সমান্তরাল একটা রেখা টানা যায়। বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত বক্তৃতার মূল্যায়ন ও পর্যালোচনায় স্পষ্ট হয়—তিনি হিডালগোর মতোই হয়ে উঠেছিলেন জাতীয় নেতার প্রতিভূ। বিশেষ করে সময়, পরিস্থিতি, ভৌগোলিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতার আলোকে হিডালগোর বক্তৃতার সঙ্গে বিস্ময়কর রকমের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিচর্চায়, কর্ম ও বক্তৃতামালায়। হিডালগো যেমন বলেছিলেন, ‘হয় স্বাধীনতা, নয় মৃত্যু’, বঙ্গবন্ধুও তেমন বলেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, আরও দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।… প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। যার যা আছে, তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’
এ যেন ভিন্ন ভিন্ন স্থান ও সময়ে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করছেন একই ব্যক্তি। একই ইশতেহারে তারা একাগ্র ও অবিচল। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে, সবার আগে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার লক্ষ্যে সংশপ্তকের ভূমিকা পালন করলেও তিনি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে কখনোই বিচ্যুত হননি। সশস্ত্র ও সংঘাতমূলক রাজনীতির পথে মাড়াননি পা। সম্ভবত বিশ্বের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুই একমাত্র রাজনৈতিক নেতা, যিনি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্যে থেকেই সশস্ত্র এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি জাতির মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপ্নকে করেছেন বাস্তবায়ন, দিয়েছেন সাফল্য ও সার্থক পরিণতি।
ভারতের জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ওরফে মহাত্মা গান্ধী ১৯৪২ সালের ৮ আগস্ট ‘quit india’ শিরোনামে দেওয়া এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘আজ আমাদের বৈরিতা ব্রিটিশ জনগণের সঙ্গে নয়। আমরা লড়াই করছি ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ব্রিটিশের পক্ষ হতে ক্ষমতা প্রত্যাহারের প্রস্তাব বৈরিতার মাধ্যমে আসবে না। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত আত্মত্যাগের ও তার মূল্যবোধের পবিত্র প্রেরণাকে আহ্বান করতে পারি না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে না পারছি।’
বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতায়ও একই কথার প্রকাশ ঘটেছে প্রোজ্জ্বলভাবে। মহাত্মা বলেছেন ব্রিটিশ জনগণের কথা, বঙ্গবন্ধু বলেছেন পাকিস্তানের জনগণের কথা। এভাবেই যেন আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতির জনকের সমান্তরালে খুঁজে পাই আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৫৬ সালের ২১ জানুয়ারি পাকিস্তান আইন পরিষদের অধিবেশনে যুক্তফ্রন্ট প্রণীত ২১ দফা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, জনগণ তাদের ২১ দফার জন্যই ভোট দিয়েছে এবং সেই দফাসমূহের একটি হচ্ছে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন। তিনি তখন থেকেই কেন্দ্রের হাতে প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও মুদ্রার ভার অর্পণ করে প্রদেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার পক্ষে প্রচারণা চালাতে থাকেন। তিনি স্বায়ত্তশাসন চাওয়ার পেছনে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করান কেন্দ্রের পাঞ্জাবি শাসকদের শোষণকে। তাদের সম্পর্কে বলেন, ‘তারা পাকিস্তানের এক হাতকে (পশ্চিম পাকিস্তানকে) শক্তিশালী করে অন্য হাতকে (পূর্ব পাকিস্তানকে) দুর্বল করছে। এই নীতি ভুল এবং এটাই দেশকে (পাকিস্তান) ধ্বংস করবে।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, তার অভিযোগ পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে নয়, বরং পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিপক্ষে। বঙ্গবন্ধু সর্বদাই গণমানুষের পক্ষে থেকে আমজনতার চাওয়া আর তাদের অধিকার আদায়কে করেছেন রাজনীতির ব্রত। তিনি জনগণকে ভালবাসতেন এবং তাদের কল্যাণে যে কোনো প্রকার ত্যাগ স্বীকারে ছিলেন সদা প্রস্তুত।
১৯৫৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘…তাঁরা (গণপরিষদ সদস্যরা) যদি সুন্দর কাপড়চোপড় পরিধান করেন, তাতে আমাদের মনে করার কিছু নেই। কিন্তু জনগণেরও তা পাওয়া দরকার। মহোদয়, প্রকৃত অবস্থাটা কী? জনগণ কাফনের কাপড় পাচ্ছে না। পূর্ব বাংলায় কবর দেওয়ার সময় সেই লাশগুলো এক টুকরো কাফনের কাপড়ও পায় না এবং সেগুলোকে হয় নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় নতুবা কাফন ছাড়াই দাফন করা হয়। এই হলো গিয়ে অবস্থা। জনগণের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা পাওয়া উচিত এবং তাদের কর্মসংস্থান করা দরকার। মহোদয়, শাসনতন্ত্রে এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি সভ্য দেশেই এসব বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়। জনগণ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ছুটে বেড়াচ্ছে, কিন্তু কাজ পাচ্ছে না। তাদের কর্মসংস্থান অবশ্যই করতে হবে। আপনারা বেতন, ভাতা কমিয়ে নিন, তাদের যেভাবেই হোক চাকরি দিন।’ নিজের বেতন কম করে হলেও তিনি জনগণের কল্যাণার্থে কিছু করার তাগিদ যেমন দিচ্ছেন, তেমনি চীনের সমাজতান্ত্রিক নেতা মাও সেতুংয়ের উদাহরণ টেনে বলছেন, জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য গভর্নরের বেতন প্রয়োজনে কম দেওয়া হোক। তিনি জানাচ্ছেন, চীনের মতো দেশের অভিভাবক যদি ৫০০ টাকা মাসিক বেতন নিতে পারেন, তাহলে আমরা কেন আমাদের অভিভাবক তথা গভর্নরকে ৬০০ টাকা দিচ্ছি। ওখান থেকে ১০০ টাকা কমিয়ে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য দিয়েছেন জোর তাগিদ ও উদাত্ত আহ্বান।
এই ঘটনার নিরিখে যেমন বঙ্গবন্ধুর জনগণের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতার নজির পাওয়া যায়, তেমনি দৃষ্টান্ত মেলে ছাত্রজীবনের একটি ঘটনায়ও। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা দাবি-দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু এর প্রতি সমর্থন জানান। কর্মচারীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অযৌক্তিকভাবে তাকে জরিমানা করে। তিনি এ অন্যায় নির্দেশ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। বঙ্গবন্ধুর এই ত্যাগও প্রকারান্তরে জনগণের জন্য। এই ঘটনায় প্রতীয়মান হয়, ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন জনগণের জন্য নিবেদিত প্রাণ।
পশ্চিম পাকিস্তানিরা যে আমাদের বন্ধু নয়, তা ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর যত দিন গেছে স্পষ্ট করে হয়েছে প্রতিভাত। তাদের কূটকৌশল ও চক্রান্ত শেখ মুজিব পাকিস্তান রাষ্ট্রের সূচনালগ্নেই উপলব্ধি করেছিলেন। তার প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল যৌক্তিক। যার অকাট্য প্রমাণ ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে বাঙালি জাতি খুঁজে পেয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। যে স্বপ্ন প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের মধ্য দিয়ে প্রথম দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে প্রায় দুই যুগ অপেক্ষা করার পর নানামুখী লড়াই আর সংগ্রাম শেষে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুই হলেন অনন্য এক রাজনীতিক, যিনি অহিংস উপায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে জনমত সংগঠিত করেছেন এবং সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটিয়েছেন। জনমতকে সংগঠিত করে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ মোকাবিলা করেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন, স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন। যেমন স্বপ্ন একদিন দেখেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র (১৯২৯-১৯৬৮)। ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’ শিরোনামে ১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই লাখ নিগ্রো ও শ্বেতাঙ্গের উপস্থিতিতে তিনি বলেছিলেন, “বন্ধুগণ, যদিও হতাশায় নিমগ্ন আমাদের ভবিষ্যৎ, তবুও আমি স্বপ্ন দেখি। এ স্বপ্ন আমাদের সত্তার উৎস থেকে উঠে আসা স্বপ্ন। আমার স্বপ্ন, প্রকৃত সত্যের মূলে এই জাতি একদিন সোজা হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের মুক্তির জন্য একসঙ্গে রুখে দাঁড়াতে পারবো এই আশায়, একদিন আমরা স্বাধীন হবো। সেদিন আর দূরে নয়, যেদিন সমগ্র মানুষ মুক্তির আনন্দে নতুন করে গাইবে, ‘জয় হে স্বাধীনতা’।’’
বঙ্গবন্ধু ও স্বদেশকে নিয়ে এরকম স্বপ্নই দেখেছিলেন। এ কারণে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান), বাংলা ভাষা আর বাঙালির সুখ-দুঃখ-স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে তার জীবন ও রাজনীতি। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সালের ২৫ আগস্ট করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদে বলেন, ‘…স্যার, আপনি দেখবেন ওরা পূর্ব বাংলা নামের পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তান নাম রাখতে চায়। আমরা বহুবার দাবি জানিয়েছি যে, আপনারা এটাকে বাংলা নামে ডাকেন। বাংলা শব্দটার একটা নিজস্ব ইতিহাস আছে, আছে এর একটা ঐতিহ্য।’
‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’র মতো বঙ্গবন্ধুও এখানে স্বপ্নের কথা বলেছেন, এ কারণেই প্রিয় জন্মভূমিকে ‘বাংলা’ নামে ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বাংলা নামের ঐতিহ্যের কথা বলে তার সুবর্ণ অতীতের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এটাই সত্য যে, বঙ্গবন্ধুরও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের মতো একটা স্বপ্ন ছিল, যার পুরোটাই আবর্তিত ছিল বাংলাভাষা, বাঙালি জাতি বাংলাদেশ ও তার জনগণকে ঘিরে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের করেছিলেন ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ বলে। সক্রিয় ছিলেন রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। অসাম্প্রদায়িক সমাজ বাস্তবায়নের স্বপ্ন ছিল তার। সেই লক্ষ্যেই তিনি ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ প্রত্যাহার করেন।
স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই তিনি ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি পেশ করেন, যা ছিল প্রকৃতপক্ষে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। স্বপ্ন প্রতিষ্ঠার জন্য, সেই লক্ষ্য থেকে ১৯৭০ সালের ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বলেন, ‘‘একসময় এ দেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে। … একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোনও কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যাই নাই। … জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি, আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’র পরিবর্তে শুধু ‘বাংলাদেশ’।’’
নেতা ও তাত্ত্বিক এই উভয় গুণের সমাহার একজন মানুষের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়। অর্থাৎ বড় কোনো তাত্ত্বিকের মধ্যে খুব কমই একজন বড় মাপের সংগঠক ও নেতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। আবার বড় কোনো নেতার মধ্যে তাত্ত্বিক কিংবা দার্শনিকের উপস্থিতি খুব কমই পরিলক্ষিত হয়। বাঙালি জাতির সৌভাগ্য হলো শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন রাজনীতিবিদকে পাওয়া, যিনি একইসঙ্গে বড় মাপের রাজনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় ‘পোয়েট অব পলিটিকস।’ এর সবটাই সম্ভব হয়েছিল তার দেশ ও জাতির প্রতি তার দৃঢ়প্রত্যয় ও অসামান্য ব্যক্তিত্বের কারণেই।শেখ মুজিবের হাঁটা-চলা, তার কথা বলা সব কিছুতেই বেরিয়ে এসেছে তার অনন্য রুচিশীল ব্যক্তিত্ব।
লেখক : মোহাম্মদ ইলিয়াছ
সহকারী অধ্যাপক ও বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
(আইএইচ/এএস/আগস্ট ৩১, ২০২২)
পাঠকের মতামত:
- পাকিস্তানের হলে চলছে বাংলাদেশের সিনেমা
- গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ফল ১ মে, ক্লাস শুরু ১ আগস্ট
- টানা চতুর্থবার কমলো স্বর্ণের দাম
- যমুনা নদীর বামতীরে সমন্বিত পানি সম্পদ সম্ভাব্যতায় মতবিনিময়
- সাবেক এমপি মকবুল হোসেন স্মরণে লোহাগড়ায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল
- হাসপাতালের নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উম্মনের বিরুদ্ধে
- টানা ৪০ দিন জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল উপহার পেলো ৪ কিশোর
- স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, তিন সন্তান নিয়ে বিপাকে স্ত্রী
- সুবর্ণচরে আ.লীগ নেতার হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
- দাবদাহে ঢাকায় উৎপাদনশীল খাতে বছরে ক্ষতি ২৭০০ কোটি ডলার
- ঘুমন্ত হেলপারকে পুড়িয়ে হত্যা: একজনের দায় স্বীকার, দুজনের রিমান্ড
- ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রউফ উন নবী
- বউ-শাশুড়ির ঝগড়ায় মধ্যস্থতা করতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের
- মস্কো উৎসবে পুরস্কৃত ‘নির্বাণ’
- মাভাবিপ্রবিতে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
- মহাসড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা
- শৈলকুপায় তীব্র তাপদাহে শরবত বিতরণ
- এজেন্টদের মেরে যমুনায় ফেলার হুমকি, ২ আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
- রানা প্লাজা নিছক দুর্ঘটনা নয়: আইবিসি
- চুয়াডাঙ্গায় তীব্র রোদ ও গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন
- গরমে স্বস্তি দিতে ছাত্র অধিকার পরিষদ’র শরবত বিতরণ
- কুমিল্লায় সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায়
- মা-মেয়ের লেবুর শরবতে চলে সংসার
- বরগুনায় তীব্র তাপপ্রবাহে ছাত্রলীগের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
- শরণখোলায় শুকিয়ে গেছে খাবার পানির উৎস, নেই গোসল টয়লেটের পানিও
- দিনাজপুরে শেষ হলো তথ্য ও আদিবাসী মেলা
- ‘দেশ বর্তমানে কঠিন সংকটে পড়েছে’
- নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর
- ‘লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উদ্বোধন করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি’
- ‘প্লিজ কেউ বোলারদের বাঁচান’
- ভারতের অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী?
- দিনাজপুরে ৫ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি
- ‘আ. লীগের নেতাকর্মীরা এখন পাকিস্তানের প্রশংসায় গদগদ’
- ‘গাছ লাগিয়ে গিনেজ বুকে নাম লেখাবে ছাত্রলীগ’
- শনিবার সাপ্তাহিক ‘ছুটিই থাকছে’ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
- ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে কে এই সর্বভুক আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর
- বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে ডেমরায় বাসে আগুন
- কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সম্পত্তি দখলমুক্ত করার দাবিতে মাদারগঞ্জে মানববন্ধন
- নড়াইলে বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজ
- হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার না থাকায় অনেককে শোকজ, নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা
- কক্সবাজার সৈকতে হিটস্ট্রোকে পর্যটকের মৃত্যু
- তীব্র তাপপ্রবাহে বেঁকে হয়ে যাচ্ছে রেললাইন, দুর্ঘটনার আশংকা
- পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হলো ইসতিসকা নামাজ ও বিশেষ দোয়া
- যোগারদিয়া বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হলেন সোহেল রানা ফরহাদ
- বাগেরহাটে ট্রাক চাপায় তিন ভ্যানযাত্রী নিহত
- ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের পদ পেলেন সুবর্ণ সন্তান জাহিদ
- দিনাজপুরে ইকো ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আঞ্চলিক কর্মশালা
- বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মহা সম্মেলনে সভাপতি দিপ্তীময় তালুকদার সম্পাদক মৃনাল তঞ্চঙ্গ্যাঁ
- ফরিদপুর ডুমাইনের ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা জেলা প্রশাসকের
- চিফ হিট অফিসারের নিয়োগ নিয়ে যা বললেন মেয়র আতিক
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- সিলেটের ভ্রমণ কাহিনী
- শুধু প্রভাবশালীদের পক্ষেই আইন!
- অম্ল-মধুর যন্ত্রণায় অপু বিশ্বাস
- লাইন ধরে খেতে হয় লিখনের জগা খিচুড়ি !
- আমার বোন শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি : চিনে নিন কে এই বরকত!
- 'ইতিহাসের ইতিহাস'
- ধনী হওয়ার আট কার্যকর উপায়
- মেয়ে পটানোর কৌশল!
- লক্ষাধিক রাখাইন জনগোষ্ঠী আড়াই হাজারে নেমে এসেছে
- উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের নতুন যাত্রা ১ বৈশাখ
- লোভী মানুষ চেনার সহজ উপায়
- আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ১৪'তোমার সহজাত উদারতা তোমাকে আকাশের সীমানায় উন্নীত করলেও তোমার ঘনিষ্ঠ অনেকের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ তোমার নৃশংস মৃত্যুর পথে কোনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি'
- বাংলা বই পড়ার ওয়েবসাইট
- শাকিবের নায়িকা শ্রাবন্তী, অপুর নায়ক জিৎ
- মঠবাড়িয়ায় ৯ বছরের শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা
- হুমায়ূনের মৃত্যুর কারণ মদের পার্টি !
- দেশে ফিরছেন তারেকস্ত্রী জোবায়দা রহমান
- বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়
- ইউটিউবে নায়লার আত্মপ্রকাশ
- নেপালের ভূমিকম্প প্রাকৃতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি !
- বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে !