E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রীতম দাশ গ্রেফতার : বার্তাটির তাৎপর্য্য ভয়ংকর

২০২২ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৪:৪৭:৩২
প্রীতম দাশ গ্রেফতার : বার্তাটির তাৎপর্য্য ভয়ংকর

রণেশ মৈত্র


বার বার মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে,  তোমরা হিন্দু-তোমরা রাষ্ট্র বিরোধী-এ দেশ তোমাদের নয়।” কিন্তু এ কথাগুলো সরাসরি না বলে, সরাসরি কাউকে ধরে নিয়ে ভারতের বা মিয়ানমারের বা চীনের সীমান্তে গলাধাক্কা দিয়ে” যাও আর যেন মুসলমানের এই দেশে এসো না” বলা এ জাতীয় কোন কথা বলা হচ্ছে না বটে-তবে যা করা হচ্ছে একের পর এক তা গলাধাক্কার চাইতে কম নয়।

কথাগুলি অত্যন্ত বিচলিত চিত্তে লিখতে বাধ্য হচ্ছি। প্রিয় কবি নজরুলের ভাষায় বলি, “দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়েছি”। অত:পর ইচ্ছা হয়, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো করে চীৎকার দিয়ে বলি “খামোশ”। কিন্তু মওলানা ভাসানী যা বলতে পারতেন-আমি কি তা তেমন করে বলার উপযুক্ত? সংশয়ান্বিত বোধ করি নিজেকে। আবার এ কথাও মনে হয়-একটি দল গোছাই। ইংরেজী-বাংলার ব্যানার লিখে রাজপথে কয়েকশ হিন্দু ও অসাম্প্রদায়িক এবং বন্ধু স্থানীয় মুসলিম ও আদিবাসী যুবক-যুবতী সকল সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদেরকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে দাঁড়িয়ে মানবন্ধন, সমাবেশ ও মিছিল করি এই সরকারের সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।

আমার মনে এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিক কারণ হলো সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বানোয়াট অভিযোগে গ্রেফতার প্রীতম দাশ” শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি। খবরে বলা হয়েছে:
“ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতার মামলায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা প্রীতম দাশকে গ্রেফতার করেছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেলখানাতেও পাঠানো হয়েছে। প্রীতম দাশকে গ্রেফতার এবং কারাগারে পাঠানোর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। এ ঘটনায় সিলেটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের আশংকা করছেন সিলেটের নাগরিক সমজা। সবাই জানেন প্রীতম দাশ সম্পূর্ণ নিরপরাধ এবং একজন দেশপ্রেমিক সন্তান।

জানা যায়, বর্তমান বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে গত ৭ জুলাই অনলাইন নিউজ পোর্টাল “জাগো নিউজ ২৪.কম এ মুনতাসির মামুনের একটি প্রকাশিত হয়। ওই প্রবন্ধের শেষে তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে পাকিস্তানের তরুণ সমাজের মনোভাব তুলে ধরেন। পাকিস্তানের তরুণদের মতে, নিবন্ধটিতে মুনতাসির মামুন লিখেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। তাদের বিনিয়োগ পলিসি অনেক ভাল-তাই অনেক বিদেশী রাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। তাদের নেতৃত্ব অনেক ভাল....ইত্যাদি।

প্রবন্ধের শেষাংশে পাকিস্তান পরিস্থিতি বুঝাতে ঊর্দু সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক সাদত হোসেন মান্টোর একটি ঘটনা উল্লেখ করে পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, ভারত ভাগের পর অনেক মুসলমান লেখক থেকে গিয়েছিলেন ভারতে। মান্টো চলে এসেছিলেন পাকিস্তান এবং নানা নিগ্রহ সহ্য করে দুস্থ অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর আগে তাঁকে একজন জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আপনার দেশেল খবর কি?” “করাগারে জু’মার নমাযে যে দৃশ্য হয়-অবস্থা ঠিক তাই”, বলেছিলেন মান্টো।

“সেটি কেমন”-আবার প্রশ্ন। এর জবাবে মান্টো বলেন, “আযান দেয় বাটপার, ইমামতি করে খুনি, পেছনে নমায পড়ে সব চোরের দল।” পাকিস্তানের অবস্থা এখনও তেমনই। ফেসবুকে কেন যেন এই মন্তব্যটা ঊঁকি দিচ্ছে। আল্লাহ যেন বাংলাদেশকে হেফাজত করেন-শেখ হাসিনাকে সুস্থ রাখেন।

এরপর ৮ জুলাই রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা প্রীতম দাশ তার ফেসবুকে মান্টোর মন্তব্যটি পোষ্ট করেন। তখন প্রীতম দাশের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার কোন অভিযোগ ওঠে নি। পরবর্তীতে মান্টোর ঊদ্ধৃতি নিয়ে গত ২৮ জুলাই সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের ছেলে এবং মৌলভী বাজার-২ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান নামের ফেসবুক পেজ থেকেও একই স্ট্যাটাস দেওয়া হয়।

এর পর গত মাসে বেতন বাড়ানোর দাবীতে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। গত ২৭ আগষ্ট চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন শ্রীমঙ্গলে একটি সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে। সেই সমাবেশে ছাত্র লীগের একটি অংশ হামলা চালায়। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সামন্বয় কমিটির সদস্য প্রীতম দাশ ও রিয়াজ খান সহ অন্তত: ১০ জন সেই হামলায় আহত হন। হামলার একদিন পর ২৮ আগষ্ট গুরুতর আহত অবস্থাতেই হামলাকারীদের নাম প্রকাশ পূর্বক তাদের শাস্তির দাবীতে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে পর পর দুটি সংবাদ সম্মেলন হয়।

অতঃপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গলে ব্যাপক জনমত ও সামাজিক ঐক্য তৈরী হয়। ফলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের একাংশের প্রত্যক্ষ মদদে হামলাকারীদের অন্যতম ছাত্রলীগ নেতা আবেদ হোসেন প্রীতম দাশের ধর্মীয় পরিচয় ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরীর ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে শ্রীমঙ্গলে আগে থেকেই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরী করতে সক্রিয় একটি চক্র এই সাম্প্রদয়িক প্রচারণায় অংশ নেয় এবং শ্রীমঙ্গল শহরে একটি মিছিল বের করে। সেই মিছিলে প্রীতম দাশের ছবি ব্যবহার করে দাবি করা হয়েছিল প্রীতম ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছেন এবং তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী তাঁকে গ্রেফতার করা হোক।

এরপর প্রীতমকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে গত ২৯ আগষ্ট প্রীতমের পোষ্টের স্ক্রিনসট যুক্ত করে ছাত্রলীগ নেতা আবেদ লেখেন, “আমি তার ফেসবুকে ৭ জুলাই এর একটি পোষেটর স্ক্রিনশট দিলাম যেখানে সে দেশের অবস্থা নাজেহাল বুঝাতে গিয়ে আমাদের ইসলাম ধর্মকে ব্যঙ্গ করে, জুমার নমায, মসজিদের ইমাম এবং নমাজ পড়াকে ব্যঙ্গ করেছে।

তিনি লেখেন, “আমি শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রমাসন ও শ্রীমঙ্গল থানার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, এ ধলনের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে যারা পবিত্র ধর্ম নিয়ে উস্কানীমূলক কথা বলে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে তারা কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে তা বের করা দরকার।”

আবেদের এই ষ্ট্যাটাসের পর তার অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীসহ আরও অনেকে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেন। এরপর ৩১ আগষ্ট প্রীতম দাশকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয় শ্রীমঙ্গলের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা” ব্যানারে সেই মিছিল থেকে প্রীতমকে গ্রেফতারে গত শুক্রবার পর্য্যন্ত সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।’

অতঃপর প্রীতমের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে গত ৪ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছিলেন স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী মাহবুব আলম ভূঁইয়া। ওই মামলায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল শহরের একটি বাড়ী থেকে প্রীতমকে গ্রেফতার করা হয়।

এ প্রসঙ্গে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (পরিদর্শক তদন্ত) হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের জানান, জনপ্রিয় লেখক মান্টোর একটি উক্তি গত ৮ জুলাই ফেসবুকে পোষ্ট করেন প্রীতম, তার প্রেক্ষিতেই মামলা হয়েছে।

প্রীতম দাশকে গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয় কমিটি। তারা অবিলম্বে প্রীতম দাশের মুক্তিও দাবী করেছে। সিলেটের নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক আবদুল করিম প্রীতম দাশের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, “ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভীতি ছাড়াতেই একের পর এক এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। হিন্দুরা কিছু বললেই বলা হচ্ছে ধর্ম অবমাননা। মান্টোর উক্তি অনেকেই ব্যবহার করছেন। তাদেরকে কেউ কখনও ধর্ম অবমাননার কথা বলে নি। একটি হিন্দু ছেলে লিখেছে বলেই এটা হচ্ছে।”

প্রীতম দাশকে গ্রেফতার ও সাজা দেওয়ার দাবীতে সোচ্চার শ্রীমঙ্গলের ছাত্রলীগের একটি অংশ। তারাই সেখানে নানা নামে নানা ব্যানারে দিনের পর দিন প্রীতম দাশের গ্রেফতারের দাবীতে মিছিল করেছে। “শ্রীমঙ্গলের জাগত মুসলিম জনতা” ব্যানারে যে মিছিল হয়েছিল, বুঝতে আদৌ অসুবিধা হয় না যে, তার পেছনেও ওই একই ছাত্রলীগ নেতারা সক্রিয়ভাবে উস্কানীদাতা হিসেবে কাজ করেছেন।

অপরদিকে শ্রীমঙ্গলের পুলিশও বুঝিয়ে দিল যে তারা ছাত্রলীগের কর্মচারী-রাষ্ট্রের না। রাষ্ট্র এখন পর্য্যন্ত সাংবিধানিকভাবে সবার-প্রীতমেরও। আসল কথা ধর্ম অবমাননা নাকি যে কোন অজুহাতে বিপদে ফেলে হিন্দুদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করা ও এমন উদ্দেশ্য থাকলে তা সফল হবে না।

এ কথা কি ওই ছাত্রলীগ নেতারা জানেন যে সাদত হোসেন মান্টো একজন অত্যন্ত খ্যাতনামা ঊর্দু লেখক? তাঁরা কি এও জানেন যে ওই উক্তি তিনি করেছিলেন পাকিস্তানের অবস্থা বুঝাতে? তাঁরা কি জানেন, সাদত হোসেন মান্টোর যে বইতে ওই উক্তি লিখিত ও মুদ্রিত আছে সরকার বে-আইনী ঘোষণা করে নি। ফলে ওই বইটি একটি বিখ্যাত পুস্তক যা পৃথিবীর বহুভাষায় অনুদিত হয়েছে।

শ্রীমঙ্গলের পুলিশকে জিজ্ঞেস করি সাদত হোসেন মান্টোর, বা রবীন্দ্রনাথের বা নজরুলের লেখাগুলি কোন বিবেচনায় ধর্ম অবমাননা” বলে বিবেচিত হবে? নজরুলের যে কবিতার বারবার ইল্লেখ আছে ‘ভগবান’, ‘ভগবান’-সেই ক্ষেত্রে পাকিস্তান আমলে কবিতাটির ইসলামীকরণ করা হয়েছিল ‘ভগবান’, ‘ভগবান’ তুলে দিয়ে তার স্থলে ‘রহমান’, ‘রহমান’ লিখে কিন্তু তা টেকে নি-পাকিস্তান সরকারকেই তা প্রত্যাহার করে নিতে হয়। তারা রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করেছিল-কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন ওই পাকিস্তান আমলেই।

তাই সাদত হোসেন মান্টোর উক্তিকে ‘ধর্ম অবমাননা’ বা ‘রাষ্ট্র বিরোধিতা’ বলে যারা মাতম করছেন, মিছিল করছেন, মামলা দিচ্ছেন, মামলা নিচ্ছেন-তাঁরা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়েই নিক্ষিপ্ত হবেন।

সহিংসতার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের হিন্দুদের মামলা বিগত ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা-২০টির বেশি মামলা দায়েল-বিচার হয় নি একটিরও “শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি সহিংসতা ও তার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপের পরিণতি কেমন দাঁড়াচ্ছে-তা স্পষ্ট করে বুঝতে সহায়ক বলে তার সামান্য অংশ উদ্ধৃত করছি। এটি গত এক বছরের ঘটনাসমূহের একাশংশ মাত্র।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক লিখেছেন-বিগত এক বছরে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলা, মঠ-মন্দিরে, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘর ভাঙচুর, প্রতিমা ভাঙা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০ টির বেশী মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু একটিরও বিচার কাজ শুরু হয় নি। আবার এসব হামলার যাঁরা শিকার তাঁরা থাকছেন আতংকে। ফের হামলা হতে পারে এই ভয়ে এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকে মামলা করতেও চান না।

প্রতিবেদক লিখেছেন, সারা দেশের মত চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা সমূহের কোন বিচার হয় নি। মামলাগুলির তদন্তে কোন অগ্রগতিও নেই বললেই চলে। গত এক বছরে ২০ টির বেশী মামলা হলেও একটিরও বিচার কাজ শুরু হয় নি। সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার পর পর তাৎক্ষণিকভাবে কিছু তোড়জোড় দেখা গেলেও যতই দিন গড়াতে থাকে ততই যেন তা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তদন্ত প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা, ভয়ভীতির কারণে সাক্ষীদের অনাগ্রহসহ নানা কারণে বছরের পর বছর এসব মামলার বিচার প্রক্রিয়া থমকে থাকে। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে সাম্প্রদায়িখ হামলার বহু ঘটনার ব্যাপারে কোন মামলাও দায়ের হয় না।

পূজাম-পে হামলা, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাটসহ প্রতিটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর দেশের সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয়, অতীতের ঘটনাসমূহের বিচার না হওয়ায় বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। প্রমাসনের পক্ষ থেকে বিচারের আশ্বাস দেওয়া হলেও এসব মামলার ‘কচ্ছপগতি’ দূর হচ্ছে না।
হিন্দু শিক্ষক নিগ্রহ, ফেসবুকে সাম্প্রদায়িকতার ও সাম্প্রদায়িখ শক্তির বিরুদ্ধে পোষ্ট দেওয়ার ‘অপরাধে’-তাকে ‘ধর্মের অবমাননা’ বলে মিথ্যা মামলা ডিজিট্যাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করে অসংখ্য হিন্দু, সাংবাদিক, সমাজকর্মীকে সীমাহীন হয়রানি করা হচ্ছে।

দেখাই যাচ্ছে-অপরাধ একটাই। হিন্দু ঘরে জন্মগ্রহণ। কিন্তু ওই ঘরে জন্ম নিয়ে যাঁরা পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন করলেন, আড়াই দশক ধরে ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন করলেন-কারা নির্য্যাতনের শিকার হলেন, মুক্তিযুদ্ধ করলেন-যে কোটি কোটি মানুষ ৭০ এ নৌকায় ভোট দিলেন-তাঁরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন? বঙ্গবন্ধু, মওলানা ভাষানী, মনি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ সহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীও কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন?
কেউ কি চেয়েছিলেন বাহাত্তরের সংবিধান বদলে সংবিধান ও রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িকীকরণ?

তবুও বলি, এমন ঘটনা আর যেন একটিও ঘটে না। চাই প্রীতম দাশের নি:শর্ত মুক্তি, তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও সংশ্লিষ্ট ছাত্রলীগ নেতাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার কারণ তারা সাম্প্রদায়িক উস্কানী দিয়ে বেড়াচ্ছে।

লেখক : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ, সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত।

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test