E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অভেদ হতে হতে অভেদাত্মা হই

২০২২ নভেম্বর ০১ ১৪:৫৭:২৩
অভেদ হতে হতে অভেদাত্মা হই

পীযূষ সিকদার


আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেলেন আমরা কী সেই দিকেই হাঁটছি না সে পথ থেকে বহুদূর চলে এসেছি। কষ্ট হয় তখন যখন আমরা বঙ্গবন্ধুর বেঁধে দেয়া পথে হাঁটছি না। দেশটা কেমন জানি উল্টোরথে চলছে। ৭৪-এর সাধারণ ক্ষমার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু নিজেকেই খুন করে ফেলেছেন। যার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বারংবার। বিশ্বজুড়ে এখন চলছে যুদ্ধের ডামাডোল। এরই মধ্যে আমাদের দেশে পুনরায় রাজাকারদের পদচারণায় ভরে গেছে। মাদ্রাসা কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা শুধু জঙ্গী উৎপাদন করছি। মানুষ হবার দীক্ষাটা একাডেমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় থাকার দরকার থাকলেও মানুষ হবার শিক্ষাটি একেবারে অনুপস্থিত। যে কারণে জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থায় কী মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার আলো জ্বলছে না। 

স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও মানুষ হবার শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়নি। তাই তো হতাশা বেড়েছে। মনুষত্বের বড় অভাব দেখা দিয়েছে। মানব জাতির মনুষ্যত্বর সংকট বড় সংকট। আমরা নিজেরাই বারবার মনুষ্যত্বকে গলা টিপে হত্যা করেছি। মানুষ হবার মন্ত্র আমরা ভুলতে বসেছি আমাদের মননশীলতায়। চারিদিকে যে মানুষ দেখি মুখোশধারী তাদের অভিব্যক্তি দেখলেই বোঝা যায় তারা মানুষরুপী পশু। মানুষ যে নাই তা বলছি না মানুষ আছে বলেই মনুষ্যত্বের ধ্বজা আমরা দেখছি। সেই মানুষগুলি যারা মনুষ্যত্ব অর্জন করে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে তারা সংখ্যায় কম। চারিদিকে মুখোশ আর মুখোশ। মুখোশে ছেয়ে গেছে দেশ। আমরা মানুষ বলে যাকে ভাবছি কিছুক্ষণ পর তার মুল মুখ বেড়িয়ে আসে। রাজনীতির দিকে একটু পলকপাত করলেই মুল সত্য বেরিয়ে আসে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই লড়ে যাচ্ছেন। একা আমরা কতটুকুই বা করতে পারি। তার চারিদিকে মুখোশে ঠাসা। তবু শেখ হাসিনা একাই কোটি হয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে।

প্রতিদিনকার খুন জখম-এর জন্য আমরাই দায়ী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরাই মেরে ফেলেছি। এর জন্য আমাদের কোন রুপ অনুতপ্ত নেই। বঙ্গবন্ধুর দুর্বলতা তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। মানুষকে ভালোবাসার ফল তিনি সপরিবারে নিহত হলেন। শিশু রাসেলকেও তারা রেহাই দেয়নি। মাথার মধ্যে কোন এক বোধ কাজ করে। নারীতে টান লাগে আমরা দেশটাকে ভালোবাসতে পারলাম না! শেখ মুজিবকে ভালোবাসতে পারলাম না! যার জন্য একটি দেশ পেয়েছি তাকেই ভালবাসতে পারলাম না। ব্যথা বোধ করি। আজ যে আমরা বড় বড় চেয়ার দখল করে আছি। শেখ মুজিব জন্ম না নিলে এই বড় বড় চেয়ার দখল করে থাকতো পাকিরা। এ কথা কে কাকে বোঝাবে! দেশ আজ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। পদ্মা সেতু তার একটি মহৎ উদাহরণ। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় শুধু বাসে নয় ট্রেনেও যাতায়াত করতে পারবো। গ্রামের রাস্তা ঘাট ঝকঝকা পরিষ্কার। একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে শেখ হাসিনা এগিয়ে চলেছেন উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম। সোনার বাংলা গড়তে নিরলস কাজ করে চলেছেন। কোন ভয় তিনি পান না। তাঁর বাবা যে স্বপ্ন বপন করে গেছেন তারই পরিচর্যা করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চারিদিকে কণ্টকাকীর্ণ পথ। রক্তাক্ত হতে হতে পথ চলছেন। তাঁর পিতাকে যারা যারা খুন করেছে সেই খুনীর ছুরি এখনও রক্তাক্ত। আমরা ক্ষমা করেই চরম ভুল করেছি। ৭৪-এর সাধারণ ক্ষমার মধ্য দিয়ে রাজাকারদের সংগঠিত হবার সুযোগ করে দিয়েছি। এখন বাস, ট্রেন, রিক্সা, ভ্যানে, অটোতে, চায়ের দোকানে, মিটিং-এ মিছিলে দেশোদ্রোহীতায় ঠাসা। যেদিকেই তাকাই মানুষরুপী শয়তানে ভরে গেছে দেশ। তারপরও শেখ হাসিনা ভয় পান না। তিনি এ লগনে মহাবীরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

চারিদিকে মানুষ খুঁজি। মানুষ খুঁজে পাই না। তবুও শেখ হাসিনা মনুষ্যত্বের জয়গান গেয়ে চলেছেন অনবরত। তিনি বলেন, ‘‘মনুষ্যত্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির মুক্তি ঘটবে।’’ ভেবে পাই না এই দেশে বসবাস করেও এই দেশের রিরোধীতা করছি। নিজের মাকে ভালো না বেসে সৎ মাকে মা বলছি। বর্তমানে আমরা একটি সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হচ্ছি। জানি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংকটের মোকাবেলা করবেন এবং এর একটা বিহিত করবেন কঠিন হাতে। একই সাথে ভয়ও করে। আমরা তো জাতিতে খুনি কখন জানি আমরা তাঁকে খুন না করে ফেলি! ভালো মানুষের জায়গা নেই বুঝি এই মাটিতে। আমরা মনের অজান্তেই খুন করে ফেলেছি জাতির জনককে ও জাতীয় চার নেতাকে। আমার মন বলে বাঙালি মাত্রেই খুনি। নইলে যারা আমাদের একটি মানচিত্র উপহার দিলো। সুন্দর একটি জন্মভূমি উপহার দিলো। তারাই রাতারাতি আমাদের শত্রু বনে গেলো।

কোনদিকে যাচ্ছি আমরা। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা দেশে না ফিরলে দেশটাকেই আমরা গোগ্রাসে গিলে ফেলতাম। হায়রে দেশ! হায়রে স্বাধীনতা! হায়রে মুজিব! ভীষণ কষ্ট হয়। দেশটির জন্য। আমরা কোথায় যাবো কোথায় যাচ্ছি! নৌকার হাল শেখ হাসিনা না ধরলে মধ্য সাগরে আমরা ডুবে মরতাম। তাঁর মতো দেশপ্রেমিক আমাদের ললাট লিখন। দেশে ফিরে সাহস ভরে দেশমাতৃকার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ভয় পান না কিছুই। ভালোবাসার চরম মূল্য দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আশে পাশে মানুষ কই? ক্ষমতা ক্ষমতা ক্ষমতা! শুধুই ক্ষমতার দাপট। যে উদ্দেশ্যে রাজনীতিতে আসে হেরে যায় টাকার কাছে। উদ্দেশ্য সফল হয় না। ব্যাংক ভরে যায় টাকায়। পোশাকের সাথে মিল রেখে দামী গাড়িতে চড়ে। জনগণ-এর কথা ভুলে যান। জনগণই ক্ষমতার উৎস। এ কথা ভুলে যান নেতা কর্মীরা। আবার যখন বড় চেয়ার দরকার হয় তখন জনগণই ক্ষমতার উৎস কথাটি ভুলে যান। সোনার বাংলা কেবল বুলিতে পরিণত হয়। যে যায় লংকায় সেই হয় রাবন। কথাটি সত্য মনে হয়। তেলবাজদের দৌরাত্ব অনেক বেড়েছে। যারা দেশমাতাকে ভালোবাসেন তারা ক্ষমতার কেন্দ্রে আসতে পারেন না। পা চাটারাই বড় বড় পদ পায়। তারাই ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকে। এখনও একই রকম। এই ক্ষুদে কলম লেখক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে, দেশ ও দেশমাতাকে যারা ভালোবাসে তাদের কাছে টেনে নেন। তাহলে বাঙালি জাতির মুক্তি ঘটবে। মুক্তি ঘটবে সোনার বাংলার।

মিথ্যা দিয়ে সত্যকে চাপা দেয়া যায় না। সত্যকে ছাই চাপা দিয়ে আটকানো যায় না। আগুনের ধর্মও তাই। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলা হয়েছে। জঙ্গীরা কিছু করতে পারেনি। এক অলৌকিক কায়দায় শেখ হাসিনা বেঁচে যান। পায়ে পা তুলে ব্রান্ডি হুইস্কি খেয়ে তারেক জিয়া অঙ্গুলি নির্দেশ করলে বাংলাদেশ শাসন করা যায় না। শাসন করতে গেলে ভালোবাসা দরকার। একমাত্র ভালোবাসাই পারে পরিবর্তন আনতে। যুদ্ধ জঙ্গীবাদ দিয়ে আর যাই হোক ক্ষমতায় যাওয়া যায় না। যদিও ক্ষমতায় আসে, শেখ হাসিনার আন্দোলন সংগ্রামের কাছে টিকতে পারবে না।

চারিদিকে এ কিসের রাজনীতি? দুর্ভিক্ষের কারণ রাজনীতি। সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সত্যিই কি দুর্ভিক্ষ ঘনায়ে আসে। আমাদের নেত্রী আগাম টের পান। রাজনীতি তার রক্তে শিরায় শিরায়। পান থেকে চূণ খসলে তিনি টের পান। তাঁর দোষ এখানেই। বুদ্ধিদীপ্ত কথনে কথনে একদিন তিনি সোনার বাংলা গড়বেই। রাজাকাররা আজ চিহ্নিত। যুব সমাজ দেয়ালে দেয়ালে লিখে দিচ্ছে রাজাকারের বাড়ি। নতুন প্রজন্মের উপর আমার ভারী বিশ্বাস। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। সজীব ওয়াজেদ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সারাদিনমান কাজ করে চলেছেন। পুতুলও কম যায় না অটিস্টিক নিয়ে তাঁর কাজ বিশ্ববাসীকে ভাবিয়েছে।

বিশ্বাস করি কাকে! চারিদিকে অবিশ্বাসীরা ভরে গেছে। আমাদের একমাত্র ভরসার জায়গায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বাসবাসী তাঁর কিছু হলে দেশটা রসাতলে যাবে। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থণা করি হে, সৃষ্টিকর্তা, তুমি দেশমাতাকে শতায়ু করো। তাহলেই আমরা আমাদের সোনার বাংলার চিরন্তন রুপটি দেখে নিতে পারবো।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে অশনি সংকেত। বলা যায় এক ভয়াল ক্ষণ। চারিদিকে অরাজকতা। চুরি খুন ডাকাতি বেড়ে যায়। মানুষ নির্যাতিত হতে থাকে। কেউ নেই এই ভয়াল দিনগুলিতে আলোর মশাল নিয়ে আলোর পথ দেখাবে। ঘরে ঘরে কান্নার রোল ওঠে। মেজর জিয়া দেশটাকে এবং দেশের মানুষকে একটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। রাজনীতি জটিল হয়ে পড়ে। অতি রাজনৈতিক চালে সেও একদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। মেজর জিয়া যে নোংরা রাজনীতি রেখে গেলো সেই জঞ্জাল সরাবে কে? শেখ হাসিনা সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে দেশের মাটিতে পা রাখলেন। মানুষ আবার নতুন করে জেগে উঠলো। তিলে তিলে তিনি বটবৃক্ষ হলেন। ধীরে ধীরে বটবৃক্ষ ছায়া দিল। আঠারো কোটি মানুষ সেই ছায়ার নিচে দম ছেড়ে বাঁচলো। কে শোনে কার কথা! মানুষ শোনে কি মানুষের কথা! সত্যিই তো মানুষ পেলাম কই? মানুষ কই? মুখোশে ঠাসা। মুখগুলিতে মুখোশ দিয়ে আঁটা। মনুষ্যত্বের যে অমোঘ বাণী আমাদের মাননীয় শেখ হাসিনা শুনিয়ে গেলেন সেই মনুষ্যত্ব কই? মানুষের মনুষ্যত্ব অর্জনই শেষ কথা। শেখ হাসিনার দিকে তাকালেই মনুষ্যত্বের মূল কথাটি প্রতিয়মান হয়। তাকে চেনা যায় বোঝা যায়। মুখোশ নেই কোনো। বেদনায় বেদনায় সে হয়েছে একজন সহজ মানুষ।

দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। কাকে শুধাই! কেউ কি বলতে পারবেন? একা মানুষ ১৮ কোটি হয়ে কথা বলে। অথচ আমরা তাঁর কাজের খুঁতটিই ধরলাম। আমরা প্রশংসা করতে ভুলে গেছি। যে মানুষটি ঘুম হারাম করে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছেন তাকে সমর্থন দেই। পেছনে তাকে নিয়ে সমালোচনায় বিভোর না হই। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাই পারবেন বাংলাদেশ নামক ভূ-খন্ডটিকে সোনায় সোনায় ভরিয়ে তুলতে। যার গেছে সেই বোঝে কী গেছে আমার। শেখ হাসিনা হারিয়েছেন। হারানোর মর্মব্যথা সেই জানে। দেশকে ভালোবেসে বেসে ফতুর হয়ে যাবে তবু ভালোবাসা কমবে না।

পরিশেষে আমি বলতে চাই- আমি দেশ নিয়ে হতাশ নই। যতদিন শেখ হাসিনা আছেন। আসো মানুষ হবার দীক্ষা নিই। শেখ হাসিনার নির্দেশে নির্দেশে আসো আমরা সোনার বাংলা গড়ি। জানি একদিন দেশ সোনায় সোনায় ভরে উঠবে। আর কোনদিন মা হারাবে না তার আদরের ধন। সন্তান হারাবে না তার পিতাকে। একটি বোতাম টিপেই আমরা পেয়ে যাবো আমাদের দৈনন্দিন হালচাল। সেই দিন দূরে নয়। এসো আমরা সবাই মিলে মানুষে মানুষে বিভেদ ভুলে সোনার বাংলা গড়ি। অভেদ হতে হতে অভেদাত্মা হই।

লেখক : শিক্ষক ও নাট্যকার।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test