E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিএনপির ১০ দফা দাবি সম্পর্কে একটি মূল্যায়ন  

২০২২ ডিসেম্বর ১২ ১৬:৫৮:৩৯
বিএনপির ১০ দফা দাবি সম্পর্কে একটি মূল্যায়ন  

আবীর আহাদ


একজন মুক্তিযোদ্ধা হিশেবে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে উপস্থাপিত ১০ দফা দাবি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশের সংবিধান ও আইন- আদালতের কবর রচনা করে জাতিবিরোধী অসাংবিধানিক ও অস্বাভাবিক সরকার আনার চক্রান্তের রাজনীতি প্রচলনের পাশাপাশি সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক যুদ্ধাপরাধ, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষাবলম্বনের এক জংলি দলিল বলে আমার কাছে প্রতিভাত হয়েছে।

চক্রান্তমূলক ১০ দফা দিয়ে বিএনপি প্রকারান্তরে দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দিয়ে অসাংবিধানিক ও অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্রের রাজনীতির পথই আঁকড়ে ধরে আছে। তাদের আসল উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিচার বন্ধ করা। সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের মুক্ত করা। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি প্রমাণ করলো যে, সংবিধান, আইন, আদালত কোনো কিছুরই তারা পরোয়া করে না। স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।

মূলত: দেশে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কোনোভাবে আলেম, ওলামা, ইসলামী চিন্তাবিদ, ইসলাম ধর্ম প্রচারক ধরনের কোনো বন্দি নেই। যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে প্রকাশ্য উচ্চ আদালত কর্তৃক সাজা নিশ্চিত হয়ে যারা বন্দি আছে তারা কেউই প্রকৃত আলেম-ওলামা, ইসলামি চিন্তাবিদ, ইসলাম ধর্ম প্রচারক নয়।যারা আটক ও সাজাপ্রাপ্ত আছে তারা ধর্মের অপব্যবহারকারী, ধর্ষক ও বলৎকারকসহ বিভিন্ন মামলায় দন্ডিত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। দেশের কেউই আইন আদালতের ঊর্ধ্বে নন, এমনকি মসজিদের ইমাম বা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল বা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক নেতাও আইন আদালতের ঊর্ধ্বে নন।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সুনির্দিষ্ট রায়ের পর বিচার বিভাগকে সম্পৃক্ত করে পুরাতন ধাচের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার কোনোই সুযোগ আর অবশিষ্ট নেই। তারপরও পুরাতন পরিত্যক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, আরপিও বাতিল করার দাবি তুলে বিএনপি সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে সংঘাত-সংঘর্ষের মাধ্যমে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতায় যাওয়ারই ইঙ্গিত দিয়েছে।

বিএনপির আমলেই রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক চালু এবং পরিচালক নিয়োগ শুরু হয়। দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত বিএনপির চালু করা দুষ্ট চক্রের অশুভ প্রভাব থেকে এখনো মুক্ত হতে পারছে না। বিএনপি যতবার ক্ষমতায় ছিল ততবারই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে ইনডেমনিটি দিয়েছে। বিএনপির আমলে বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীগুলোকে হাওয়া ভবনের অধিনস্থ করা হয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নিজেদের তোলা দাবি যে ভুলে যায়, তার প্রমাণ হলো জিয়া, খালেদা জিয়া, ইয়াজউদ্দিন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করেনি।

বিএনপির ক্ষমতা পুনঃদখলের আন্দোলনের ১০ দফায় চলমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে জাতীয় অর্থনীতি সচল রাখা, মানুষের আয় ও জীবিকা রক্ষাসহ জনজীবনে স্বস্তি বজায় রাখার কোনো প্রস্তাব নেই। বিএনপির সময় দফায় দফায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, পানির দাম অযোক্তিকভাবে বাড়িয়েছিল। তারা নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতেও পারেনি, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়াতে পারেনি। দেশের উন্নয়ন বিএনপির লক্ষ্য নয়, তাদের মূল লক্ষ্য দুর্নীতি ও লুটপাটের চারণভূমিতে বাংলাদেশকে ফেলে দিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার।

অতএব, দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দিয়ে অসাংবিধানিক অস্বাভাবিক জংলি সরকার আনা, যুদ্ধাপরাধ-জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস-দুর্নীতির অপরাধের বিচার বন্ধ, সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী-দুর্নীতিবাজদের মুক্ত করা এবং সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করার জন্য বিএনপি-জামায়াত ও এদের রাজনৈতিক পার্টনারদের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি সম্পর্কে সজাগ থাকা এবং দেশ ও জাতিবিরোধী এই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক, মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test