E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস শেখ মুজিব

২০২২ ডিসেম্বর ১৩ ১৫:৪২:৩১
বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস শেখ মুজিব

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে তৎকালীন বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সাহসিকতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিলো।

হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্ত স্বাধীন হয়ে বাঁচার আকাঙ্খা বাঙালির আজীবনের লালিত স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনন্য দৃষ্ঠান্ত স্থাপনের ঘটনাগুলোর অন্যতম।

দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পথ পেরিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং চূড়ান্ত পর্বে মুক্তিযুদ্ধে এসে উপনীত হয় বাঙালি। আর জাতির এই স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মৃক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিব।

স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি যেমন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন, তেমনি স্বাধীনতা অর্জন ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালির জাতির জনকে পরিণত হন। এ জন্য বঙ্গবন্ধুকে অত্যাচার, নির্যাতন, বার বার কারাভোগ এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে তিনি অসীম সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন তার চূড়ান্ত লক্ষ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিকে। আর এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাঙালি জাতির জনকেই পরিণত হননি, তার দেশপ্রেম, নেতৃত্বের গুণাবলী, সাহসিকতা বিশ্বের নির্যাতিত এবং গণতন্ত্রকামী মানুষের মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণা ও উৎসাহ যুগিয়েছিলো।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশ্ব নেতাদের উচ্ছ্বাস, আবেগ, অনুভূতি, মূল্যায়নের ভেতর দিয়ে সেটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর সমকালীন বিশ্বে যে কয়জন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যক্তি বিশ্ব রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছিলেন তাদের প্রত্যেকেই নির্যাতিত মানুষের মুক্তি আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নির্ভিকতা, সাহসিকতাকে উচ্চমাত্রায় প্রশংসা করেছেন। তাদের মূল্যায়নের মধ্য দিয়েই বিশ্ব পরিসরে বঙ্গবন্ধুর উচ্চতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রাষ্ট্রীয় গণ্ডি পেরিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই হয়ে উঠেছিলেন জনপ্রিয় বিশ্বনেতা। বিশ্ব মানবতা, স্বাধীনতা, বৈপ্লবিক পরির্তন ও নির্যাতিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে যেমন লেনিন, মহাত্মা গান্ধী, মাঙ সেতুং, হো চি মিন, মার্টিন লুথার কিং, জর্জ ওয়াশিংটন, ফিদেল কাস্ত্রো, লুমুম্বা, নকুমা, নেলসন ম্যান্ডেলা অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও তেমনি বিশ্বের কোটি কোটি বাঙালি এবং মুক্তিকামী মানুষের মাঝে অমর হয়ে আছেন।

১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ আন্দালনের (ন্যাম) সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু যোগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনে তিনি ছিলেন বিশ্ব নেতাদের প্রধান আকর্ষণ। এ সম্মেলনে কিউবার বিপ্লবী নেতা ও প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রো বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এ মানুষটি হিমালয়ের সমান। সুতরাং হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি। ’

১৯৭৫ সালে ১৫ ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার খবর শুনে বিশ্বের শোষিত মানুষের এই কিংবদন্তি নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে। ’

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি জান্তা কারাগারে বন্দি রাখে, বার বার তাকে হত্যার প্রচেষ্টা চলানো হয়। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তীব্র প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি ওঠায় পাকিস্তানি জান্তা পিছু হটতে বাধ্য হয়। বিশ্ব জনমতের চাপে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানিরা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ৭২ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে যান। সে সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথ ছিলেন দেশের বাইরে। তিনি বঙ্গবন্ধুর আসার খবর পেয়ে দ্রুত দেশে ফেরেন। তাদের সাক্ষাতের সময় হিথ নিজে এসে বঙ্গবন্ধুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যান। শুধু একটি সদ্য স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নয়, জনগণের নেতা হিসেবে তার রাজনৈতিক উচ্চতাই বঙ্গবন্ধুকে এই পর্যায়ে নিয়ে যায়।

সেখান থেকে দেশে ফেরার আগে তিনি ১০ জানুয়ারি দিল্লি আসেন। সেখানেও তিনি অসাধারণভাবে সম্মানিত হন। দিল্লি পৌঁছালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান। সেখানে প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে ও স্বাগত জানাতে জনতার স্রোত অঘোষিত জনসভায় রূপ নেয়।

সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের পথ চলা শুরুর তিন মাসের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১ থেকে ৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। সোভিয়েত জনগণ বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানাতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ছিলো। তিনি মস্কো বিমান বন্দরে পৌঁছালে তাকে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগর্নি, প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন, কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান (সাধারণ সম্পাদক) লিওনিদ ব্রেজনেভ বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান। সোভিয়েত ইউনিয়তনে বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া হয় উষ্ণ সংবর্ধনা। এ সম্মান একটি রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে নয়, নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর এক জন বলিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা হিসেবেই বঙ্গবন্ধুকে এই সম্মান দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের বন্ধু বলে আখ্যায়িত করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ বাংলাদেশ থেকে ভারত সৈন্য প্রত্যাহার উপলক্ষে ঢাকায় আসেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ১৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ও সুখের দিন বটে। কারণ আজ শেখ মুজিবের জন্মদিন। তিনি হলেন এ দেশের মুক্তিদাতা। শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের বন্ধু।’

শান্তির জন্য বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৪ সালে শান্তি পরিষদ জুলিও কুরি পদক দেয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি অবস্থায় বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধুর আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তথাকথিত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সামরিক আদালতে শেখ মুজিবের বিচার হবে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার এ ঘোষণায় গোটা বিশ্ব প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়লে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার অবস্থান জনপ্রিয়তা আরও স্পষ্ট হয়। তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট এক বিবৃতিতে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্য নিয়ে নতুন করে বাড়াবাড়ি করলে তার প্রতিক্রিয়া অনিবার্যভাবে পাকিস্তান সীমান্তের বাইরে ছড়িয়ে পড়বে। ’

বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধুর এ জনপ্রিয়তার কারণে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার পর্যন্ত আশঙ্কা করেন ইয়াহিয়ার (পাকিস্তানের সামরিক জান্তা) প্রতি সমর্থনের জন্য নিক্সন (মার্কিন প্রেসিডেন্ট) প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর ক্ষোভ সৃষ্টি হবে। এ কারণে পাকিস্তানকে এই বলে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়, ‘শেখ মুজিবকে ফাঁসি অথবা দীর্ঘদিন কারাবন্দি করে রাখা হলে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারাবে। ’

স্বাধীনতার পর হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে মন্তব্য করলেও নেতৃত্বের গুণাবলীর কারণে তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করতে বাধ্য হন। ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তেজি এবং গতিশীল নেতা আগামী ২০ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না। ’

এই সময় ১১ জন মার্কিন সিনেটর এক যৌথ বিবৃতিতে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। ’

হেলসিনকি ভিত্তিক বিশ্ব শান্তি পরিষদের (ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল) এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রহসনের বিচার এবং নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইয়াহিয়া খানের স্বৈর-সরকার বিশ্বদরবারে জনগণের অধিকার অবজ্ঞা ও সকল নৈতিকতা বিবর্জিত শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ১৬৯টি আসনের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণ শেখ মুজিবুর রহমানের দলকে ১৬৭টি আসনে বিজয়ী করাই ছিল তার একমাত্র অপরাধ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতক চক্রের হাতে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর বিশ্ব নেতারা মর্মাহত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ব একজন নির্যাতিত মানুষের নেতাকে হারালো বলে তারা মন্তব্য করেন।

এ ঘটনায় ব্রিটিশ হাউস অব লর্ডসের সদস্য ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শীর্ষস্থানীয় যোদ্ধা ফেনার ব্রকওয়ে বলেছেন, সংগ্রামের ইতিহাসে লেনিন, রোজালিনবার্গ, গান্ধী, নকুমা, লুমুমবা, ক্যাস্ট্রো ও আলেন্দের সঙ্গে মুজিবের নামও উচ্চারিত হবে। তাকে হত্যা করা ছিল মানব হত্যার চেয়ে অনেক বড় অপরাধ। শেখ মুজিব শুধু তার জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেননি। তিনি তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যও সংগ্রাম করেছিলেন। ‘শেখ মুজিব, জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী ও দ্য ভ্যালেরার থেকেও মহান নেতা’।

বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার খবর শুনে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘শেখ মুজিব নিহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল। ’

নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট বলেন, ‘মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে। ’

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ট্যাঙ্ক উপহার দিয়েছিলো মিশর। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এতটাই দুঃখ পেয়েছিলেন যে, তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমারই দেওয়া ট্যাংক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে হত্যা করেছ! আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি। ’

তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের কাছে বলেছিলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা তোমাদের জাতির জন্য সবচেয়ে বড় শোকের ঘটনা। ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্যও এটি অনেক বড় শোক। ’

বঙ্গবন্ধুর মতোই নৃশংস হত্যার শিকার শ্রীলংকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষণ কাদির গামা। তিনি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব বুদ্ধিজীবী ও শ্রমজীবী উভয় শ্রেণির মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়া গত কয়েক শতকে বিশ্বকে অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও যোদ্ধা উপহার দিয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে যান, তার স্থান নির্ধারিত হয়ে আছে সর্বকালের সর্বোচ্চ আসনে। ’

ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর। ’ ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলেন, ‘আপসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। ’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর লন্ডন অবজারভার পত্রিকার এক ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইরিল ডুন তার এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এমন একজন নেতা, যার রক্ত, জাতি, ভাষা, সংস্কৃতি এবং জন্মের পুরোটা জুড়েই ছিল পূর্ণাঙ্গ বাঙালিত্ব।

জাপানি বুদ্ধিজীবী মুক্তি ফুকিউরার বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মূল্যায়ন ছিলো, ‘এশিয়ায় তোমাদের শেখ মুজিবের মতো সিংহ হৃদয়বান নেতার জন্ম হবে না বহুকাল।

ব্রিটেনের সাবেক এমপি জেমসলামন্ডের বক্তব্য ছিল- ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি, বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।’

বাঙালির বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণার উৎস যা বিশ্ব নেতাদের তার সম্পর্কে মন্তব্য থেকেই প্রমাণ প্রমাণ মেলে। নিজেও বিশ্বের শোষিত মানুষের পক্ষে তার অবস্থান তুলে ধরেছিলেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ”বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত, শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।”


লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test