E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রুশ বিবৃতি: মুক্তিযুদ্ধের বন্ধুত্বেরই বহিঃপ্রকাশ

২০২২ ডিসেম্বর ২১ ১৮:৪৯:৫২
রুশ বিবৃতি: মুক্তিযুদ্ধের বন্ধুত্বেরই বহিঃপ্রকাশ

আবীর আহাদ


সাম্প্রতিকালে বাংলাদেশের রাজনীতি ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিএনপি যখন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছে, তখন ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চরম বিরোধী আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইয়োরোপীয় ইউনিয়নের তাদের বশংবদ কতিপয় দেশ আমাদের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে। তারা সমস্ত কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও নিরপেক্ষতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপির পক্ষে প্রকাশ্যে নেমে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে! তাদের কার্যকলাপ ও আচার-আচরণ দেখে মনে হচ্ছে যে, তারা একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার লক্ষ্য নিয়ে তারা বাংলাদেশের বুকে নিজেরাই যেনো একটা আন্তর্জাতিক বিরোধী দলের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পড়েছে। তাদের এহেন অসভ্য ও অকূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশের পক্ষে যে বক্তব্য নিয়ে রাশিয়া সরকার আবির্ভূত হয়েছে, তা যেনো মুক্তিযুদ্ধেরই বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ! বাংলাদেশবিরোধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশ ঘোলা জলে মাছ শিকারের ষড়যন্ত্র করছে, রাশিয়ার এ বিবৃতি তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় কার্যকরি দাওয়াই বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

২১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রুশ সরকার তাদের ঢাকাস্থ দূতাবাসের মাধ্যমে যে বিবৃতি প্রচার করেছে, তাহলো: যারা নিজেদের বিশ্বের শাসক বলে মনে করে, তারা ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ’ রক্ষার অজুহাতে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে' বলে মন্তব্য করেছে ঢাকার রুশ দূতাবাস। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার রুশ দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র সুরক্ষা বা অন্য কোনো অজুহাতে বাংলাদেশসহ তৃতীয় কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে রাশিয়া বদ্ধপরিকর।

রাশিয়ার দূতাবাস এমন এক সময়ে তৃতীয় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নিয়ে এ বিবৃতি দিল, যখন পশ্চিমা দেশগুলোর মিশনগুলোর ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও সচেতন দেশবাসী সরাসরি উষ্মা প্রকাশ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে এসব মিশন খোলামেলাভাবে তাদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছে।

রুশ দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অগ্রহণযোগ্যতা এবং তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা সম্পর্কিত ১৯৬৫ সালের জাতিসংঘের ঘোষণা অনুসারে, কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যা-ই হোক না কেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অন্য কোনো রাষ্ট্রের নেই। দুর্ভাগ্যবশত, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে (বিশেষত স্নায়ুযুদ্ধ শেষের পর থেকে) হস্তক্ষেপ না করার নীতি লঙ্ঘনের সমস্যাটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কারণ, অনেকে বিশ্বাস করে যে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে ওই নীতি লঙ্ঘন করতে পারে।

রাশিয়ার দূতাবাস বলেছে, নিজেদের উন্নত গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলে দাবি করা দেশগুলোর মধ্যে আধিপত্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো সবচেয়ে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। তারা শুধু জাতিসংঘের সার্বভৌম সদস্যরাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপই করে না, বরং নির্লজ্জ প্রতারণা, অবৈধ বিধিনিষেধ ইত্যাদি অবলম্বনও করে। ফলে বিশ্বের অনেক দেশের সার্বভৌমত্ব অভূতপূর্ব ঝুঁকির মুখে পড়ে।

রুশ দূতাবাস তাদের বিবৃতিতে সে দেশের ২০১৭ সালের একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিভিন্ন উপায় তুলে ধরেছে। সেগুলোর মধ্যে অবাণিজ্যিক ও বাণিজ্যিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা বা সমর্থন করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করা, জনমত গঠনের জন্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার, প্রতিবাদ উসকে দেওয়া এবং আঞ্চলিক নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা উল্লেখযোগ্য।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কৌশলগত স্বাধীনতা ও একটি ন্যায্য বিশ্বব্যবস্থার সার্বভৌম দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা দেশগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অন্যান্য সরঞ্জাম রয়েছে। যারা নিজেদের বিশ্বের শাসক বলে মনে করে, তারা ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ’ রক্ষার অজুহাতে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। এ ধরনের নীতি স্পষ্টতই বিশ্বব্যবস্থার স্থায়িত্ব নষ্ট করে এবং বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় ডেকে আনে। এর অসম্পূর্ণ তালিকায় আছে যুগোস্লাভিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া ও আফগানিস্তান।

রুশ দূতাবাস বলেছে, ‘তৃতীয় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে রাশিয়া তার নীতিগত অবস্থানে সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের মতো অনেক রাষ্ট্র বিদেশি শক্তির নেতৃত্ব অনুসরণ না করে তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থের জন্য তাদের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতি গঠন করে, তারা একই পথ অনুসরণ করে। আমরা এ দেশগুলোর আকাঙ্ক্ষাকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করি, যাতে তারা স্বাধীনভাবে তাদের আরও উন্নয়নের উপায়গুলো নির্ধারণ করে এবং এমন একটি ব্যবস্থা গঠন করে, যা নব্য ঔপনিবেশিক পদ্ধতির অধীন নয়।’

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test