E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মন্দিরের পর এবার গির্জায় কোরআন? 

২০২২ ডিসেম্বর ২৮ ১৫:১৩:৩১
মন্দিরের পর এবার গির্জায় কোরআন? 

শিতাংশু গুহ


সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা। একাত্তর টিভি’র খবর অনুযায়ী বড়দিন উদযাপন শুরুর আগেই একজন গোলাম চৌধুরী লাল কাপড়ে মুড়িয়ে একটি কোরআন শরীফ রাজশাহীর একটি গীর্জায় রেখে আসে। গির্জার এক সেবিকার সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেয়া হয়, পুলিশ এসে কোরআন উদ্ধার করে এবং গোলাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করে। পুলিশ কমিশনার আবুল কালাম সিদ্দিক জানিয়েছেন, গোলাম চৌধুরী সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ, এবং তিনি নিজেকে ‘নবী’ দাবি করেছেন। 

২০২১-শে দুর্গা পূজায় কুমিল্লায় একইভাবে একজন ‘ইকবাল’ মণ্ডপে একটি কোরআন রেখে এসেছিলো, এবং তাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৌলবাদী গোষ্ঠী হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সংঘবদ্ধ আক্রমন চালায়, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, বা মৃত্যু’র ঘটনা ঘটে। বিশ্বব্যাপী এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটে। চার্চে কোরআন রাখায় তেমন ঘটনা ঘটেনি, এটি সুখের বিষয়। এটিও সত্য, যাঁরা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ঘটায় তাঁরা জানে, গীর্জায় আক্রমন হলে খবর আছে!

কুমিল্লার ঘটনার পর পুলিশ বলেছিলো, ‘ইকবাল মানসিক ভারসাম্যহীন’, যা পুলিশ প্রায়শঃ বলে থাকে। সম্ভবত: এই প্রথম পুলিশ বললো, গোলাম চৌধুরী পাগল নয়? এটি ভাল লক্ষণ, পুলিশ সত্য বলছে। ২০২২ মোটামুটি হিন্দু বা অন্য সংখ্যালঘু’র জন্যে ভালো গেছে, মানে বড় ধরণের কোন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেনি, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ছিলো। অর্থাৎ সরকার চাইলে দেশে হিন্দুদের ওপর বা সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার চায় কিনা?

রবিবার ইংরেজী নববর্ষ ২০২৩, সবাইকে নুতন বছরের অভিনন্দন। এটি নির্বাচনী বছর, হয়তো ঘটনাবহুল বছর। নির্বাচনী ডামাডোলে হিন্দুরা নির্যাতীত হোক, তা কাম্য নয়, যদিও সেই সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। কারণ নির্বাচন এলেই হিন্দুদের ওপর আক্রমনের একটি মৌসুম ছিলো, ১৯৭৫- ২০১৪ পর্যন্ত এটি ছিলো, ২০১৮’র নির্বাচনে ভোট হয়নি, তাই হিন্দু নির্যাতন হয়নি, এটি একদিকে আশীর্বাদ বলতে হয়? দেশে কি আদৌ ভোটের দরকার আছে?

দেশে আসলে গোলাম চৌধুরী বা ইকবাল-দের সংখ্যা কত? এদের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষের সংখ্যাটা বেশ বড় তা বুঝতে কষ্ট হয়না? এজন্যে এদের বিচার হয়না, অন্তত: ২০২২ পর্যন্ত হয়নি। ২০২৩-এ হবে? হওয়া দরকার। হিন্দুরা এজন্যে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন চাইছে, সংখ্যালঘু কমিশনের দাবী জোরদার হচ্ছে। সম্ভবত: আওয়ামী লীগকে এবার হিন্দু ভোট পেতে ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সন্নিহিত অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে?

২০১২ থেকে ২০২২, এই এক দশক আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংখ্যালঘু, বিশেষত: হিন্দুদের ওপর যত নির্যাতন হয়েছে, তাতে এ মুহূর্তে হিন্দুদের কাছে, ‘যাহা বিএনপি, তাহা-ই আওয়ামী লীগ’! হিন্দুরা আগে আওয়ামী লীগকে ‘রক্ষক’ ভাবতো, সেই ভুল ভেঙ্গে গেছে। হিন্দুরা বুঝতে শিখছে, ‘চাচা, আপন জান বাঁচা’। অল্পকিছু মানুষ এখনো আছে, তাছাড়া তথাকথিত প্রগতিশীল শক্তি, আওয়ামী লীগ, বা অন্যান্য দল সবার ভূমিকা হিন্দুরা দেখে শিখেছে, যে, ‘বাঁচতে হলে লড়তে হবে’’!

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test