E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্মৃতি কথা

হে রাজনীতি ফিরে পাবো কি আমার ‘মা’কে

২০২৩ জানুয়ারি ০৫ ১৭:১৩:০৭
হে রাজনীতি ফিরে পাবো কি আমার ‘মা’কে

মানিক বৈরাগী


হলিউড অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন এর পূর্ণদৈর্ঘ্য একটা ছবিতে সমুদ্র সৈকতে বসে আয়েসি ভাবে সিগারেটে সুখ টান দিচ্ছে আর সিগারেটের ধোঁয়া রিং করে করে উর্ধ্বাকাশে নিঃশেষ হচ্ছে। অড্রে হেপবার্ন হাতের আঙ্গুলে সিগারেট ধরা ও মুখে সিগারেট যে স্টাইলে সিগারেট পান করে আমার মা'র সিগারেট খাওয়ার স্টাইলও অড্রে হেপবার্ন এর মতো। মা সকালে ভাত বা রুটি খাওয়ার পরে উঠোনে ইজিচেয়ারে বসে চা'পান শেষে, আয়েস করে সিগারেট জ্বালাতেন। ইজিচেয়ারে বসে চোখবুঁজে সিগারেট টানতেন। এরপর জর্দা-খয়ের, নারকেল দিয়ে ধীরে ধীরে পান চিবোতেন। পানের পিক ফেলার জন্য একটা তছল্লা ছিলো সেখানে পানের পিক ফেলতেন। পান খাওয়া শেষ হলে ইজিচেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠানে হেটে হেটে আরও একটি সিগারেট খেতেন।

যখন হুকোর প্রচলন উঠে গেলো গৃহস্থালির চাবিকাঠি যখন বউদের হাতে চলে এলো তখন কি আরহুকো সাজানোর লোক কই। গ্রামে যখন দ্রুত নাগরিক জীবন ধারায় ধাবিত হচ্ছে হুকো ও কোন এক ফাকে আইল্লা (ফায়ার প্লেস) ঢেকির মতো হুকোর প্রচলন ও উঠে গেলো। কিন্তু মা হুকোর পরিবর্তে সিগারেট কে বেছে নিলেন। মা স্টার সিগারেট খেতেন আমার বাবাও স্টার সিগারেট খেতেন।

দুধে-আলতা গা'র রঙ মায়ের, খুব সুন্দর ছিল আমার মা। বেশিরভাগ সময় চুপচাপ থাকতো, সকালে কোরান তেলোয়াত শেষ করে নাস্তা করতেন তারপর চা-সিগারেট পান খাওয়ার পরে পাড়ার চাচি- দাদিরা আসতো উঠোনে বা কাচারি ঘরে গোল করে বসে পুতি পড়তেন সুর করে করে।পুতি পাঠের সময় অনেকেই হুহু করে কেঁদে উঠতেন।বিশেষ করে কারবালার হাসান-হোসেনের পুতি পাঠের সময়।

পুতি পাঠের আসরে চা-সিগারেট পান এসব চলতে থাকতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ধীরে ধীরে আমার মায়ের এসব আয়োজন একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে গেলো। দেশে তখন খালেদা-নিজামির শাসন চলছে, আমি বহু মামলার আসামি হয়ে ফেরারি। আমি মা'র খইল্লা ঝাড়া পোয়া অর্থাৎ থলে ঝাড়া কনিষ্ঠ সন্তান। আমার চিন্তায় হতাশায় এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে মা মারা যান। আমি আদরে কনিষ্ঠ সন্তান হওয়ার পরেও আওয়ামী রাজনীতির কারণে মায়ের সেবা-স্বশ্রূতা করতে পারিনি। বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার অপরাধে তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার আমাকে ফেরারি করে দেয়।কিন্তু রাজনীতি না জানা বুঝা মানুষটি সন্তানের জন্য দুঃশ্চিন্তা করতে করতে বেহেশত বাসি হলো। আমি মা হারা হলাম, মিথ্যা মামলার কারণে মায়ের জানাজা পড়তে পারলাম না,মা কে কবর দিতে পারলাম না।

আমাদের এসব ত্যাগ নির্যাতনের ফলস্বরূপ আজ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা একটানা ক্ষমতায়। কিন্তু আমি ফিরে পাইনি আমার বাবা - মা কে।জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া আমার ঘর পুনঃ নির্মাণ করতে পারিনি। জ্বালিয়ে দেয়া বইয়ের ভাজে ভাজে আমার মা'র পবিত্র ছোঁয়া, কাঠের সিন্দুকে বাবা-মার ছবি। সব পুড়ে ধ্বংস করেছে বিএনপি - জামাতের গুন্ডারা। বর্তমান সরকার কি ফিরিয়ে দিতে পারবে আমার মা কে বাবা কে? তাহলে কিসের জন্য এ-ই রাজনীতির জন্য জীবন বিনিময় বা ধ্বংস করলাম। প্রশ্ন থাকলো আপনাদের প্রতি। আজ মায়ের ১৯তম প্রয়াণ দিবস। মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীতে এ-ই স্মৃতি টুকু মনে পড়লো।

লেখক : সাবেক ছাত্র নেতা।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test