E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগে একটি প্রস্তাব 

২০২৩ জানুয়ারি ০৭ ১৫:৩১:২৫
ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগে একটি প্রস্তাব 

চৌধুরী আবদুল হান্নান


“তেমনি এ পর্ষদকে অধিক কার্যকর করতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দক্ষ ও স্বনামধন্য সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকারদের মধ্য থেকে পরিচালক নেওয়ার প্রস্তাব করা যায়। কারণ ব্যাংকাররাই তো ব্যাংক ভালেবোঝেন।” সম্প্রতি সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক নিয়োগে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে। এ নীতিমালায় পরিচালকদের এক-তৃতীয়াংশ থাকবেন নারী এবং অন্যদের মধ্যে থাকবেন চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, অবসরপ্রপ্ত জেলা জজ বা আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং ব্যাংকার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এযাবৎ কোনো যোগ্যতা, দক্ষতা যাচাই না করেই মূলত রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক পরিচালক নিয়োগ হয়ে আসছে। দলীয় আনুগত্য বিবেচনায় পদ-পদবি কিছু একটা যেখানে না দিলেই নয়, অগত্যা ব্যাংকের পরিচালক বানিয়ে দেওয়া।

শিক্ষিত বেকার লোকটি এখন আর বেকার নন, তিনি এখন ব্যাংকের ডাইরেক্টর। ব্যাংকিং খাতের চলমান অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, ঋণ খেলাপিদের দৌরাত্ম্য রোধ করতে এবং ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এ নীতিমালা প্রনয়ণের উদ্যোগ সময়োচিত বলতেই হবে।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বেশ আগে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “সত্যিকারভাবে যারা ব্যাংকিং বোঝে তাদের পর্ষদে নিয়োগ দেওয়া হবে। চাকরি নেই বলে একটি ব্যাংকের পরিচালক বানিয়ে দিলাম, সেটা আর হবে না।”

তিনি অন্য এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বলেছিলেন, “ব্যাংক পর্ষদ কোনো খেলার জায়গা নয়, যে কাউকেই আর পরিচালক বানানো হবে না।”

অর্থমন্ত্রীর এমন ভাবনায় আমরা আশার আলো দেখেছিলাম এই ভেবে যে পতোন্মুখ ব্যাংক ব্যবস্থা এবার ঘুরে দাঁড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে কিন্ত বাস্তবে তা হয়নি। তবে ব্যাংক ও আর্থিক খাত রক্ষায় কোনোই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, তা নয়। দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেখানে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল, অবশ্য তার কোনো সুফল মানুষ দেখেনি।

দেশের অর্থভান্ডার ব্যাংক রক্ষার্থে বিশেষজ্ঞগণ ব্যাংক কমিশন এবং রাঘব বোয়াল ঋণ খেলাপিদের লাগাম টানতে স্পেশাল ট্রাইবুনাল গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্ত এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কার্যত মুখ খুলেনি আর বাংলাদেশ ব্যাংকের তো সাহসই নেই। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ খাতটি দুষ্ট চক্রের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

অবশেষে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সদ্য ঘোষিত ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগের নীতিমালা আমাদের আবারও আশান্বিত করে।

এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য, অদক্ষতা ও আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে অতীতে দু’টি বড় সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।

পর্ষদ সদস্যরা ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন না, হস্তক্ষেপও করার কথা নয়। তারা ব্যবস্হাপনা কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। একটি ব্যাংকের পরিচালক ওই ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত ক্ষমতাবান ব্যক্তি , এখানে ক্ষমতার ব্যবহার বা অপব্যবহার করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, নিয়োগ-বদলিসহ ঋণ মঞ্জুর, সুদ মওকুফ নানা বিষয়ে তদবির বাণিজ্য করার অবাধ সুযোগ থাকে তাদের এবং তারপর ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চেয়ারম্যানের মধ্যে যদি বাড়তি সখ্যতা তৈরি হয়, তাহলে তো কথাই নেই। অসৎ ও অর্থলোভী লোকের অনুপ্রবেশ ঘটলে অবাধে অর্থ বের করে নেওয়ার পথ খুলে যায়।

পরিচালনা পর্ষদই একটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কিন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সামগ্রিকভাবে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

প্রতিটি ব্যাংকের বিজ্ঞ পরিচালনা পর্ষদ সক্রিয় থাকলে “ব্যাংক কমিশন” নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমান্তরাল আলাদা একটি সংস্থা সৃষ্টি করার যৌক্তিকতা দেখি না, কারণ এই কমিশনও যে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই।

তাছাড়া, বোর্ড সভার প্রতিটি কার্যবিবরণী সভাশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানোর নিয়ম আছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বোর্ডের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পূর্বে তাদের অনুমতি গ্রহণের বাধ্যবাদকতা রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতেই রয়েছে, কেবল প্রয়োজন ব্যাংকিং বিধি-বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা।

অর্থ মন্ত্রণালয় ঘোষিত ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের নীতিমালাটি কার্যকর হলে ব্যাংক ব্যবস্থা সুশাসনের দিকে অগ্রসর হবে, সন্দেহ নেই ।

এ নীতিমালায় এক-তৃতীয়াংশ নারীর অংশ গ্রহণ থাকার কথা বলা হয়েছে এবং তেমনি এ পর্ষদকে অধিক কার্যকর করতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দক্ষ ও স্বনামধন্য সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকারদের মধ্য থেকে পরিচালক নেওয়ার প্রস্তাব করা যায়। কারণ ব্যাংকাররাই তো ব্যাংক ভালো বোঝেন। অপরদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনভাবে কাজ করার সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test