E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস 

সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান অবিস্মরণীয় 

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ১৩ ১৬:৩৪:৫৭
সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান অবিস্মরণীয় 

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস ২০২৩। প্রতি বছর ১৪ফেব্রুয়ারি 'বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস' উদযাপিত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংবাদপত্রের গুণগত মান নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি হলুদ সাংবাদিকতা রোধে বাংলাদেশ প্র্রেস কাউন্সিল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এক কথায় গণমানুষের কথা যে মাধ্যমে প্রকাশ পায় সেটি হচ্ছে ‘গণমাধ্যম’। সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা ইলেকট্রনিকস, রেডিও অনলাইনের সঙ্গে পরিচিত হলেও গণমাধ্যমের সঙ্গে অনেকেই পরিচিত নন। আলাদা আলাদাভাবে শব্দগুলো ব্যবহার না করে এক কথায় আমরা ‘গণমাধ্যম’ ব্যবহার করে থাকি বা হয়। আর সেই গণমাধ্যম, সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মীদের (সাংবাদিকরা) বলা হয়ে থাকে ‘চতুর্থ রাষ্ট্র; জাতির বিবেক, জাতির আয়না, দর্পণ ইত্যাদি।’ আর এই সাংবাদিকরাই সংবাদপত্র বা কোনো গণমাধ্যমের কর্মী হিসেবে কাজ করেন। একজন সংবাদকর্মী থেকে একজন সাংবাদিক; সংবাদপত্র (গণমাধ্যম) হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের দর্পণ। সংবাদপত্র থেকে জাতি তথা রাষ্ট্র উপকৃতই হয়। সংবাদপত্র যেমন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তার অবাদ বিচরণ ও স্বাধীনতাও যেমন থাকা দরকার দায়িত্বশীলতাও রয়েছে। সংবাদপত্র নৈতিকতার চর্চা করে। বিবেকের শাসন করে। সমাজ তথা রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করতে পারে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কোথায় কীভাবে নৈতিকতার স্খলন হচ্ছে সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সংবাদপত্র। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও বহুকাল থেকে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন- বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে গতিশীল,জনবান্ধব,স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ রাখার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্য দিকে এই প্রতিষ্ঠান বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রবাহকে নিশ্চিত করছে একদিকে। সেই সাথে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেছে।

১৮৪৭ খ্রীস্টাদ্বে জমিদার কালীচরণ রায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্রিটিশ সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের রংপুর থেকে ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’ পত্রিকার প্রকাশের মধ্য দিয়ে এ দেশে সংবাদপত্র প্রকাশের যাত্রা শুরু। এর তিন পর এই জেলা থেকেই প্রকাশিত ‘দিন প্রকাশ’ এবং কুষ্টিয়া থেকে কাঙাল হরিনাথ সম্পাদিত ‘গ্রামবাংলা প্রকাশিকা’ সাংবাদপত্র শিল্পকে পাঠকের দ্বোর গোড়ায় নিয়ে আসে। যা আজও স্বমহিমা, স্বমর্যাদা, স্বর্কীয়তা, স্বাধীনতা আর জবাব দিহিতা নিয়ে টিকে আছে।
সংবাদপত্র পরিচালিত হয় সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল প্রবর্তিত আচরণবিধি,হাউজের নিজস্ব নীতিমালা এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠান প্রবর্তিত নীতিমালা ভিত্তিতে পরিচালিত হয় সংবাদপত্র।

গণমাধ্যমকর্মীদের বা সাংবাদিকদের সংগঠিত করার জন্য বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে। যার মধ্যে প্রেস ক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, রিপোর্টার্স ইউনিটসহ বিভিন্ন নামে। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে ‘প্রেস ইনস্টিটিউট’ নামে সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মী বা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনয়নের জন্য ‘প্রেস কাউন্সিল’ নামে আরো একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মনে করেন সংবাদ তাদের বিরুদ্ধে প্রচার বা প্রকাশিত হয়েছে, তারা সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম বা গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘প্রেস কাউন্সিল’-এ অভিযোগ করতে পারেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন বা বিধিও রয়েছে। সাংবাদিকরা যদি তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো ধরনের নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হন তাহলেও তারা প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ ধারায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘চিন্তা এবং বিবেকের স্বাধীনতা দান করা হলো। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হলো।’

একটি দাবিদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আছে কি না-এ প্রশ্নে সবার মনে বাসা বেঁধে আছে। সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম একটি পণ্য। তা প্রকাশ বা পরিচালনা করতে পুঁজির প্রয়োজন। এতে যেমন লাভ আছে, তেমনি লোকসানের ঘানিও টানতে হয়। সংবাদপত্রকে ভালো লাগলে মানুষ তা টাকা দিয়ে কেনে। ভালো না লাগলে কেনে না। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে বাংলাদেশের মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু করার আগেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। দেশের অগ্রযাত্রার জন্য সংবাদপত্র যেমন প্রয়োজন, তেমনি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও প্রয়োজন। এর সঙ্গে সাংবাদিকের স্বাধীনতাও জরুরি। একজন স্বাধীনচেতা সাংবাদিক, যিনি কোনো পক্ষভুক্ত নন; তার জন্য প্রয়োজন ওরকম একটি সংবাদপত্র, সেখানে পেশাদারিত্ব চলবে। মালিকের হস্তক্ষেপ থাকবে না। আজকাল সংবাদপত্রের মালিকরাই সম্পাদক হচ্ছেন। সারা জীবন পেশায় কাটিয়ে দিয়ে তিনি একজন পুঁজির মালিকের অধীনস্থ হয়ে গেলেন। কিন্তু তাতে কি স্বাধীন সাংবাদিকতা হবে? এভাবেই স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ ক্রমেই রুদ্ধ হয়ে আসছে। এখানেও যেমন প্রকৃত সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিকভাবে তো সাংবাদিকতা ঝুঁকির মধ্য থাকে সব সময়। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে সাংবাদিকদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, আর বিরোধী দলে থাকলে সাংবাদিকদের পক্ষে অবস্থান নেয়। গণমাধ্যম বা সাংবাদিকদের স্বাধীনতা দিচ্ছে বলে রাজনীতিকরা মুখে খৈ ফুটাচ্ছেন কিন্তু কতটুকু গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে সেটি প্রশ্নবিদ্ধ।

গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করার যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি দায়িত্ব রয়েছে দেশের প্রতিও। আর সেই দায়িত্ববোধের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী এবং ঢেলে সাজানোর বিকল্প নেই। ইতোমধ্যেই সারা দেশের সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন ও সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, এটি প্রশংসনীয়। আইনের পাশাপাশি সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যও উদ্যোগী হয়ে দায়িত্ব নেওয়া উচিত প্রেস কাউন্সিলকে। অনেক বছর পর হলেও প্রেস কাউন্সিল প্রতি বছর যে ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস’ পালন করছে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতি গণমাধ্যমের দায়িত্ব আর প্রেস কাউন্সিলের দায়িত্ব হওয়া উচিত পরিপূরক। সাংবাদিকদের প্রতি প্রেস কাউন্সিলের ভূমিকা থাকাটাও উচিত। ভবিষ্যতে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের অভিভাবক হিসেবে প্রেস কাউন্সিলকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু অবদান :-

১৯৭২ সালে স্বাধীনতা লাভের পর,পরই সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রশাসন, আইন, বিচার ব্যবস্থা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সহ এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্টদের জীবনের মানোন্নয়নে প্রতি বিশেষভাবে নজর দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ১৯৭১ সালের অনেক আগেই স্বাধীন বাংলাকে সহ¯ উন্নয়নের শিখড়ে পৌঁছানোর স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। তাই স্বাধীনতা লাভের পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সংবাদপত্র শিল্প এবং সাংবাদিকতা পেশাকে নিরপেক্ষ এবং জবাবদিহিতামূলক করার লক্ষ্যে তাঁরই নির্দেশে ও উদ্যোগে ১৯৭৪ সালে প্রেস কাউন্সিল এ্যাক্ট প্রণীত হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ২৫ আগষ্ট স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক চক্রের হাতে তিনি স্বপরিবারে নিহত হন। তিনি তাঁর স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেননি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আজকের যে সাফল্য তা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নেরই বাস্তব রুপরেখা।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমন একজন মানুষ- যাঁর শারীরিক ও মানসিক গঠনে বাংলার সুবজ শ্যামল প্রকৃতি, খেটে খাওয়া মানুষ, দরিদ্র নিঃস্ব মানুষের প্রভাব ছিল প্রবল। প্রত্যন্ত জনপদে টুঙ্গিপাড়ার জন্ম নেয়া খোকা এদের প্রভাবেই হয়ে উঠেছিলেন বাংলার ও বিশ্বের অন্যতম অবিসংবদিক নেতা। তাঁর স্মৃতি শক্তি ছিলো প্রখর। তিনি তাঁর জন্মভূমির টুঙ্গিপাড়ায় মানুষদের, নেতাকর্মীদের চিনতেন। তাঁদের নাম- ভালোমন্দ সব বিষয়ই তাঁর স্মরণে থাকতো। রাজনীতির বাইরে কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, খেলোয়ার শিল্পী, আমলা, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক সকলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো বন্ধুর মত। বিশেষ করে সাংবাদিকদের সাথে।

টুঙ্গিপাড়ার খোকা একটি জাতির মুক্তিদাতা, ও স্বাধীনতা স্থপতি হয়ে উঠেছিলেন তাঁর পেছনে ছিল সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের অবদান। যা তিনি সব সময় উপলব্ধি করতেন। আর তিনি নিজেও কিছুদিন এ পেশার সাথে জড়িত ছিলেন। তাই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের উন্নয়নে তিনি আমুত্যু কাজ করে গেছেন। এই পেশার দায়িত্ব কী, কী ভাবে এই পেশার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো যায়-এই বিষয়গুলো তিনি বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে- বক্তব্যে তুলে ধরেছিলেন। ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভায় বঙ্গবন্ধু প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন। এ দিন তিনি তাঁর ভাষণে সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন- ‘মাননীয় সভাপতি, সুধীবৃন্দ ও সাংবাদিক ভাইয়েরা, আপনারা জানেন, আমি আপনাদের অনেক সহকর্মী শুধু সাংবাদিক ছিলেন না, তাঁরা আমার ব্যক্তিগত বন্ধু ছিলেন। আমি অনেকদিন তাঁদের সঙ্গে জেলখানায় কাটিয়েছি। এবারের সংগ্রামে তাঁদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা আজ আমাদের মধ্যে নাই। তেমনি নাই ৩০ লক্ষ লোক, যাঁরা আত্মাহুতি দিয়েছেন স্বাধীনতার জন্য। তাঁদের কথা চিরদিন আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে এবং যে আদর্শের জন্য তাঁরা জীবন দিয়েছেন, সে আদর্শে যদি বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়, তাহলে তাঁদের আত্মা শান্তি পাবে।’

সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমার কয়েকটা স্পষ্ট আরজ আছে। আপনারা জানেন, বিপ্লবের মাধ্যমে এই স্বাধীনতা এসেছে এবং সে বিপ্লব ছিল রক্তক্ষয়ী। এমন বিপ্লবের পরে কোন দেশ কোন যুগে এতটা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে নাই, যা আমরা করছি। আমরা ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। এজন্য আপনাদের কোন কাজ কখনো কোনরকম হস্তক্ষেপ করি নাই। সাংবাদিকতার আদর্শ সম্পর্কে তিনি সেদিন বলেছিলেন- ‘আপনারা খবরের কাগজের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চারটি আদর্শের ভিত্তিতে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছি এবং এইসব আদর্শের ভিত্তিতেই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে, এটাও আপনারা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন। আমরা এই চারটি আদর্শের ভিত্তিতেই দেশের শাসনতন্ত্র তৈরি করতে চাই। কিন্তু গণতন্ত্রেও একটা মূলনীতি আছে। গণতন্ত্রের অর্থ পরের ধন চুরি, খুন-জখম, লুটতরাজ বা পরের অধিকার হরণ করা হয়। তার জনকল্যাণমূলক একটা নীতিমালা আছে। সাংবাদিকতারও এমনই একটা মূলনীতি আছে।’

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন- আপনারা দাবি করেছিলেন, আপনাদের পূর্ণ স্বাধীনতায় যেন কোনদিন হস্তক্ষেপ না করি। কিন্তু আপনাদেরও দায়িত্ব আছে। আপনাদের সাংবাদিক ইউনিয়নের যে আদর্শ আছে, সেগুলো মানলে কি মিথ্যা কথা লেখা যায়? রাতারাতি একটা কাগজ বের করে, বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে কেউ যদি বাংলার বুকে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে, তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই সেটা সহ্য করবেন না। কারণ, তা আমাদের স্বাধীনতা নষ্ট করবে। ‘ওভারসিজ পাকিস্তান’ নামে কোন সংস্থা যদি এখন থেকে খবরের কাগজ প্রকাশ করে, তাহলে আমাকে কী করতে হবে? আপনারা সামান্য কিছু লোকের স্বার্থ, যে ৩০ লক্ষ লোক রক্ত দিয়েছে, তাঁদের স্বার্থ দেখবেন? বিপ্লবের পরে এ দেশের সংবাদপত্র যে স্বাধীনতা পেয়েছে, তা এদেশে আর কখনো ছিল না। এই জন্যই রাতারাতি খবরের কাগজ বের করেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ ছাপানো হয়, ‘এক লক্ষ বামপন্থী হত্যা’, ‘বিমানবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ’ ইত্যাদি। কিন্তু এসব কি লেখা উচিত? এসব কার স্বার্থে ছাপানো হয়?

সংবাদপত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা তিনি বলেছিলেন- ‘আপনারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন। আমিও বলি। কিন্তু কোন কোন খবরের কাগজে এমন কথাও লেখা হয়, যা চরম সাম্প্রদায়িক। অথচ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে চব্বিশটি বছর প্রগতিশীল সাংবাদিকগণ সংগ্রাম করেছেন। আমরা সংগ্রাম করেছি, বাংলার মানুষ সংগ্রাম করেছে। আমাদের ছেলেরা, কর্মীরা জান দিয়েছে, জেল খেটেছে। সে নীতির বিরুদ্ধে যদি কোন সাংবাদিক লেখেন, তাহলে আপনারা কী করবেন? এটাও আপনাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন। (সূত্র: নিরীক্ষা, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট,জুলাই আগষ্ট, ২০১৩, পৃষ্ঠা নং- ৭-৯, ১৮-১৯) মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ইত্তেফাক এবং সংবাদ পত্রিকার পূণর্বাসনে তিনি এগিয়ে দিয়েছিলেন সহয়োগিতার হাত। যে সাংবাদিকরা বেকার ছিলেন তিনি তাঁদের সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সাংবাদিক জীবন

বঙ্গবন্ধু নিজেও কিছুদিন সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার পূর্ব পাকিস্তান প্রতিনিধি। তবে তিনি নিজেই যে সংবাদকর্মী বা সাংবাদিক ছিলেন, সে কথা কখনও কোন ভাষণে তিনি উল্ল্খে করেননি। এ তথ্যটি জানা যায় ২০১২ সালে প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ থেকে। সেখানে বিভিন্ন প্রসঙ্গে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধুর সাংবাদিক-জীবনের নানা কথা। কলকাতা থেকে চল্লিশের দশকে দৈনিক আজাদ-এর পর মুসলমানদের উদ্যোগে দৈনিক ইত্তেহাদ নামে আরও একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ইত্তেহাদ কেন প্রকাশিত হয়েছিল এবং এর প্রকাশনার পেছনে কারা ছিলেন সে প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন,হাশিম সাহেব মুসলিম লীগের সভাপতি হতে চাইলেন। কারণ, মওলানা আকরম খাঁ সাহেব পদত্যাগ করেছিলেন। শহীদ সাহেব রাজি হন নাই। মওলানা সাহেবকে অনুরোধ করে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করিয়েছিলেন। হাশিম সাহেব রাগ করে লীগ সেক্রেটারী পদ থেকে ছুটি নিয়ে বর্ধমানে চলে গিয়েছিলেন। যখন তিনি কলকাতা আসতেন মিল্লাত প্রেসেই থাকতেন। হাশিম সাহেব এই সময় ছাত্র ও যুবকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছিলেন। আমাদের অনেকেরই মোহ তাঁর উপর থেকে ছুটে গিয়েছিল।

সে অনেক কথা। তিনি কলকাতা আসলেই শহীদ সাহেবের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতেন। এর প্রধান কারণ ছিল মিল্লাত কাগজকে দৈনিক করতে সাহায্য না করে তিনি ইত্তেহাদ কাগজ বের করেছিলেননবাবজাদা হাসান আলী সাহেবের ব্যবস্থাপনা এবং আবুল মনসুর আহমদ সাহেবের সম্পাদনায় মাওলানা আকরম খাঁ সাহেবের দৈনিক আজাদও ক্ষেপে গিয়েছিল শহীদ সাহেবের উপর। কারণ, পূর্বে একমাত্র আজাদ ছিল মুসলমানদের দৈনিক। এখন আর একটা কাগজ বের হওয়াতে মওলানা সাহেব যতটা নন,তাঁর দলবল বেশি করে গতমসছিল। [শেখ মুজিবর রহমান: অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ইউপিএল, ২০১১, পৃষ্ঠা ৭২]। বঙ্গবন্ধুর এই লেখা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, দৈনিক ইত্তেহাদ বের হওয়ার পেছনে তৎকালীন বাংলার মুসলিম লীগের মধ্যেকার দ্বন্ধ কাজ করছিল। শহীদ সোহরাওয়ার্দী একদিকে যেমন মওলানা আকরাম খাঁ সম্পাদিত দৈনিক আজাদের প্রভাব থেকে বেড়িয়ে বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন, আবুল হাশিমদের মিল্লাত পত্রিকার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে চেয়েছিলেন। ফলে তাঁর অনুসারী আবুল মনসুর আহমদকে সম্পাদক করে নতুন কাগজ প্রকাশিক হল দৈনিক ইত্তেহাদ।[শেখ মুজিবর রহমান: অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ইউপিএল, ২০১১, পৃষ্ঠা ৭২]।

বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, মানিক ভাই তখন কলকাতায় ইত্তেহাদ কাগজের সেক্রেটারি ছিলেন। আমাদের টাকা পয়সার খুবই প্রয়োজন। কে দিবে? বাড়ি থেকে নিজেদের লেখাপড়ার খরচটা কোনোমতে আনতে পারি, কিন্তু রাজনীতি করার টাকা কোথায় পাওয়া যাবে? আমার একটু সচ্ছল অবস্থা ছিল, কারণ আমি ইত্তেহাদ কাগজের পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ছিলাম। মাসে প্রায় তিনশত টাকা পেতাম। আমার কাজ ছিল এজেন্সি গুলোর কাছ থেকে টাকা পয়সা আদায় করা, আর ইত্তেহাদ কাগজ যাতে চলে এবং নতুন এজেন্ট বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ করা যায় সেটা দেখা। বেশি দিন ছিলাম না। তবু অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, কারণ কাগজে নাম আছে, টাকা বাড়ি থেকেও কিছু পাওয়া যাবে। [অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৮৮]

বঙ্গবন্ধুর এই লেখা থেকেই বোঝা যায় দৈনিক ইত্তেহাদ-এর তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ (পূর্ব বাংলার) প্রতিনিধি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর বেতন ছিল মাসিক তিনশত টাকা। এত টাকা বেতন তখন কোন সচিবও পেতেন না। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে পড়লে কলকাতা থেকে বঙ্গবন্ধু এবং অন্যান্যরা ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় আসার পর বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে পরেছিলেন। তবে তার প্রভাব যে তখনো দৈনিক ইত্তেহাদ-এ ছিল তার কিছু তথ্য পাওয়া যায় আত্মজীবনীতে। যেমন, ‘আমি ঢাকায় এলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, আইন পড়ব। বই পুস্তক কিছু কিনলাম। ঢাকায় এসে শুনলাত গণতান্ত্রিক যুবলীগের এক সভা হয়ে গেছে। কার্যকরী কমিটির নতুন সভ্য কো-অপ্ট করা হয়েছে। পূর্বে ছিলাম সতেরজন এখন হয়েছে চৌত্রিশজন। কারণ, আমাদের সংখ্যালঘু করার ষড়যন্ত্র। আমাদের অনেকে নোটিশও পায় নাই। অন্য কোন কাগজ না ছাপলেও কলকাতায় ইত্তেহাদ কাগজ আমাদের সংবাদ ছাপাত ইত্তেহাদেও নোটিশ ছাপানো হয় নাই। [অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ৮৭]

বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠা ও কর্ম প্রয়াস

সাংবাদপত্র শিল্পের ব্যবস্থাপনাকে গতিশীল, জনবান্ধব করা, বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার প্রসার ঘটানো, দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে থাকা এবং হলুদ সাংবদিকতা রোধের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৪ সালের এ্যাক্টের আলোকে (প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪-এর ১১ (বি) ধারা, ২০০২ সালে যা সংশোধিত।) একটি আধা বিচারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা হয় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের।

১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ছত্রিশ বছর ধরে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল সংবাদপত্র শিল্পের গাইড হিসেবে কাজ করে চলেছে। দেশে সংবাদপত্র শিল্পের অবস্থাকে গতিশীল ও উন্নয়নের হাতিয়ার করতে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল যে আচরণবিধি প্রণয়ন করে এর উল্লেকযোগ্য দিকগুলো হচ্ছে:-

১. দেশের কোন সংবাদপত্র ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী কোন তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকবে। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সমুন্নত রাখবে।

২. সংবাদপত্রে যা প্রকাশিত হবে তা সবই হবে জনস্বার্থে। জনগণকে আকর্ষণ করে অথবা তাদের উপর প্রভাব ফেলে এমন বিষয়কে সংবাদপত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

৩. সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য হতে হবে নির্ভুল ও সত্য।

৪. গুজব ও অসমর্থিত প্রতিবেদন প্রকাশের পূর্বে সেগুলোকে চিহ্নিত করা এবং যদি এসব প্রকাশ করা অনুচিত বিবেচিত হয় তবে সেগুলো প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫. সংবাদপত্র ও সাংবাদিক বিতর্কিত বিষয়ে নিজস্ব মতামত জোরালোভাবে ব্যক্ত করার অধিকার রাখেন।

৬. কুৎসা মূলক বা জনস্বার্থ পরিপন্থি না হলে বাহ্যত ব্যক্তিবিশেষের স্বার্থবিরোধী হলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষ স্বাক্ষরিত যে কোন বিজ্ঞাপন সংবাদপত্রে প্রকাশের অধিকার সম্পাদকের আছে। কিন্তু এই ধরনের বিজ্ঞাপনের প্রতিবাদ করা হলে সম্পাদককে তা বিনা খরচে মুদ্রণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. ব্যক্তি অথবা সম্প্রদায়বিশেষ সম্পর্কে তাদের বর্ণ, গোত্র, জাতীয়তা, ধর্ম অথবা দেশগত বিষয় নিয়ে অবজ্ঞা বা মর্যাদা হানিকর বিষয় প্রকাশ না করা। জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সাম্প্রদায়িকতাকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

৮. অন্যান্য গণমাধ্যমের তুলনায় সংবাদপত্রের প্রভাবের ব্যাপ্তি ও স্থায়িত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি; এ কারণে যে সাংবাদিক সংবাদপত্রের জন্য লিখবেন তিনি সুত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সংবাদের সত্যতা সম্পর্কে বিশেষভাবে সাবধান থাকা এবং ঝুঁকি এড়ানোর জন্য সুত্র সমূহ সংরক্ষণ করতে হবে।

৯. কোন অপরাধের ঘটনা বিচারাধীন থাকাকালীন সব পর্যায়ে তার খবর ছাপানো এবং মামলা বিষয়ক প্রকৃত চিত্র উদঘাটনের জন্য আদালতের চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করা সংবাদপত্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে বিচারাধীন মামলার রায় প্রভাবিত হতে পারে, এমন কোন মন্তব্য বা মতামত প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত ঘোষণার আগ পর্যন্ত সাংবাদিককে বিরত থাকতে হবে।

১০. সম্পাদকীয়ের কোন ভুল তথ্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ যদি প্রতিবাদ করে, তবে সম্পাদকের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে একই পাতায় ভুল সংশোধন করে দু:খ প্রকাশ করতে হবে।

১১. বিদ্বেষপূর্ণ কোন খবর প্রকাশ করা যাবে না।

১২. সম্পাদক কর্তৃক সংবাদপত্রের সকল প্রকাশনার পরিপূর্ণ দায়িত্ব স্বীকার করতে হবে।

১৩. সম্পাদক কর্তৃক সংবাদপত্রের সকল প্রকাশনার পরিপূর্ণ দায়িত্ব স্বীকার করতে হবে।

১৪. কোন দুর্নীতি বা কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আর্থিক বা অন্য কোন অভিযোগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রতিবেদকের উচিত ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে সাধ্যমতো নিশ্চিত হওয়া এবং প্রতিবেদককে অবশ্যই খবরের ন্যায্যতা প্রতিপন্ন করার মতো যথেষ্ট তথ্য যোগাড় করতে হবে।( সূত্র: বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল)

উল্লেখ্য, প্রত্যেকটি সংবাদপত্রেরই নিজস্ব নীতিমালা ও আদর্শ রয়েছে। প্রেস কাউন্সিল প্রবর্তিত আচরণবিধি এর বিরোধী কিছু নয়। আর এ কারণেই দেশের সংবাদপত্র শিল্প গণমাধ্যমের শীর্ষস্থান দখল করে আছে। এই নীতিমালাগুলো সুনির্দিষ্ট করলে যা দাঁড়ায় তা হল-শালীনতাবোধ/বস্তুনিষ্ঠতা/সার্বিক ভারসাম্য রক্ষা,/ আক্রমণাত্মক মনোভাব বর্জন/ প্রলোভন ও তথ্যকে হত্যা না করা/ প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও প্রকাশ/ হলুদ সাংবাদিকতা বর্জন/ অশুভ চাপ থেকে মুক্ত থাকা/ নিজস্ব মতামত বর্জন/ভ্রান্তি স্বীকার ও সংশোধনী প্রকাশ/ সংবাদ মাধ্যমের নিজস্ব নীতিমালা মেনে চলা/ব্যাপক জনগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা/ দূর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের কর্তব্যবোধ/পক্ষপাতহীন সেবার মনোভাব/দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে থাকা/পাঠকের জন্য শিক্ষনীয় বিষয়াদির উপস্থাপন/দুস্থ-মানসিক ভারসাম্যহীনদের প্রতি সহানুভুতি/সকল জাতি,ধর্ম ও সপ্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ/সমাজ উন্নয়নে দায়িত্বপালন/বহুমুখী জ্ঞান, ধারণা ও বিষয় উপস্থাপন/পরিস্থিতিগত পরিমিতিবোধ/জনগণের জানার অধিকার/শিশুদের কথা ভাবা/একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা ও মান উন্নয়নে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আইন প্রণয়ন করেন। ওই বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। তাই বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিনটিকে 'বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল দিবস' হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।২০১৬ সালে বাংলাদেশ আইন কমিশন সুপারিশ করেছে যে প্রেস কাউন্সিলকে সাময়িকভাবে কোন সংবাদপত্র বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হবে।

সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার মান বজায় রাখার ও সংশোধন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও সুরক্ষার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো অনাড়ম্বরভাবে দিবসটি পালন করা হয়।পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল হল বাংলাদেশের একটি আধা বিচারবিভাগীয় সংস্থা, যা বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আইনের অধীন বাংলাদেশের সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ ও বাক স্বাধীনতা রক্ষা করে। আর ৩ মে ‘বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ নিয়ে নামমাত্র লেখালেখি হয়। কিন্তু সেটিও আশানুরূপ নয়। অন্তত বছরের এ দুটি দিন শুধু সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হোক এবং জেলা উপজেলায় না হলেও কেন্দ্রীয়ভাবে সাংবাদিকদের মহাসমাবেশ ঘটানো হোক। যেটি হতে পারে সাংবাদিকদের মহামিলন এবং একে অপরের প্রতি আত্মার সম্পর্কের একটি অধ্যায়; সেটির বড় ভূমিকা রাখতে পারেন সম্পাদক, গণমাধ্যমের মালিকপক্ষ প্রেস কাউন্সিল বা প্রেস ইনস্টিটিউট।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test