আমার পিতা সাংবাদিক ওয়াসিল উদ্দিন
ফখরুল আলম সমর
আমার জন্ম ১৯৭১ এর অগ্নিঝড়া মুক্তিযুদ্ধের সময়, সাভার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের হেমায়েতপুর গ্রামে। যুদ্ধের সময় জন্মেছি বলে বাবা নাম রেখেছিলেন ‘সমর’। সমর মানে যুদ্ধ। বাবাতো সাংবাদিক। ঘেটেঘুটে সুন্দর বাংলায় নামটি দিয়েছিলেন। বাবা স্কুলে ভর্তির সময় তিন বছর কমিয়ে অফিসিয়াল জন্ম তারিখ দিয়েছিলেন ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, ছাত্রলীগ, ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্টের বিভৎস কালো রাতের কথা তো আমি বুঝিনি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমি বাবার কাছ থেকে এসব ইতিহাস কিছু কিছু শুনেছি।
বুদ্ধি বাড়া ও স্কুলে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার উৎসুকটা আমার মনে বাড়তে থাকে। আমার সাংবাদিক পিতা ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতেন। তিনি সাংবাদিকতা জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একমাত্র “দৈনিক সংবাদ” পত্রিকাতেই কাজ করেছেন, কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা ও সাংবাদিকতা জীবনের উন্নতির আশায় অন্য কোনো পত্রিকায় যোগদান করেন নাই। তিনি একাধিকবার ঢাকা জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
জীবন্ত বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখি নাই। কিন্তু তাঁর মহান সংগ্রামী জীবন এবং তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মসূচি জেনেছি আমার পিতার কাছ থেকে, পত্র-পত্রিকা, বই পুস্তক পড়ে, যা আমাকে এই মহান নেতার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। তাই জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার স্থপতি, জুলিওকুরি শান্তি পুরষ্কার প্রাপ্ত “শেখ মুজিব” আমার স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু।
বুদ্ধি বাড়া ও স্কুলে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা ‘বঙ্গবন্ধু” হত্যার উৎসুক্যটা আমার মনে থেকেই যায়। আমার বাবা প্রচুর লেখাপড়া করতেন। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের নানা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখতেন, রাখতেন যথেষ্ঠ জ্ঞান। এখানে একটি কথা অবশ্যই বলা দরকার দৈনিক সংবাদ পত্রিকার মালিক, সম্পাদক, সাংবাদিক কর্মকর্তা কর্মচারী সবাই ছিলেন প্রগতিশীল অসম্প্রদায়িক সমাজতান্ত্রিক চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী। কাজেই এ পত্রিকার সাথে বা পত্রিকার সাংবাদিকদের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এবং আওয়ামী লীগের ছিল ভাল সম্পর্ক। বাবা নিজেও যেমন রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন, তেমনি রাজনৈতিকভাবে আমাদের ভাই- বোনদের সচেতন করার চেষ্টা করতেন, শৈশবেই তিনি আমাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস এবং রাজনৈতিক আলোচনা মুখী করার চেষ্টা করতেন। তিনি প্রতিদিনই ঘরে নিয়ে আসতেন একটি “দৈনিক সংবাদ”সহ একাধিক দৈনিক সংবাদপত্র। হাতে কোন খাবারের প্যাকেট না নিয়ে আসলেও “দৈনিক সংবাদ” পত্রিকাটি নিয়ে আসতে কখনোই ভুলতেন না।
আমার বাবা তৎকালীন সময়ের জাতীয় পর্যায়ের একজন খ্যাতিমান স্পোর্টসম্যানও ছিলেন। তিনি প্রতিযোগিতায় প্রাদেশিক পর্যায়ে একাধিকবার প্রথম হয়েছেন। তিনি একজন ভালো কাবাডি খেলোয়ারও ছিলেন। এ কারণে তিনি যেমন দৈহিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন, তেমনি দৃঢ় মনোবলের অধিকারী ছিলেন।
আমার বাবা প্রতিদিনই সকালে ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকার খবরগুলো সামনে নিয়ে আমার ভাই-বোনদের সাথে আলোচনা করতেন। শুনতে না চাইলেও শোনাতেন। উনিতো আগের রাতেই সব জেনে যেতেন, তাই উনার পড়তে হতো না। আমাদের হাতে ধরে সব পড়াতেন ও আলোচনা করতেন। “বঙ্গবন্ধু” প্রসঙ্গে আলোচনা হলেই আমি খুব উৎসাহ পেতাম। আমার বাবা ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদে’ বিশ্বাসী রাজনৈতিক সচেতন লোক ছিলেন এবং আমাদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ভাই-বোনসহ সবাইকে অনেক কিছু বুঝাতেন। তিনি শোনাতেন তাঁর রাজনৈতিক জ্ঞানের বিশাল ভান্ডারের কথা। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিশুকাল থেকে শিক্ষা জীবনের ও সংগ্রামী জীবনের কথা। বাবার কাছ থেকেই শুনি বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনসহ ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১১ দফা, ১৯৬৯ ছাত্র আন্দোলনের কথা, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় ও মুক্তিযুদ্ধের কথা, যুদ্ধের পরবর্তিকালের কথা। বাবা বলতেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বলে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে বা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের হেমায়েতপুরের বাড়ি পাকবাহিনীরা কেন গান পাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল, কেন আমরা সিংগাইর থানার চরাঞ্চলে নৌকায় নৌকায় বাস করেছিলাম, কেন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম তা আমার বাবা আমাদেরকে বুঝিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে বাবা বলেছিলেন, “পাক শাসকরা বিশ্বাস করতো এদেশের প্রগতিশীল বামধারার সকল সাংবাদিক, সাহিত্যিক, লেখক ও কবি বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে শক্তিশালী করেছে। যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির মূলভিত্তি। দৈনিক সংবাদের সাংবাদিকদের ওপর বেশি ক্ষোভ ছিল পাক শাসকদের। কারণ তাদের কাছে রিপোর্ট ছিল দৈনিক সংবাদ পত্রিকাটি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার কট্টর সমর্থক ছিল। শুধু তাই নয় এই পত্রিকা ৬ দফার পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালায় এমনকি ৬ দফার লিফলেট ছাপিয়ে ছিল। কারণ তখন কোনো প্রেস এ কাজটি করতে সাহস পায়নি অথচ সংবাদ পত্রিকা সেখানে নিজেদের টাকা দিয়ে লিফলেট ছাপিয়ে দিয়েছিল প্রচুর পরিমাণে। তাই পাক সরকার দৈনিক সংবাদের সাংবাদিকদের বড় শত্রু মনে করতো।
কারণ ৬ দফাকে পাক শাসকগোষ্ঠী মারাত্মক ভয় করতো। তারা টের পায় ৬ দফা মূলত পাকিস্তান থেকে পূর্ব বাংলা বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগের একটি কর্মসূচি বা কৌশল। যার জন্য তারা আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী করে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করার চেষ্টা চালিয়েছিল। এ মামলায় তারা বঙ্গবন্ধু ছাড়াও ৩৪ জনকে আসামী করে। কিন্তু বাংলার মানুষ ৬ দফার পক্ষে দাঁড়িয়ে ব্যাপক জংগী আন্দোলন গড়ে তোলে। যার জন্য আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। এতে ৬ দফার জনপ্রিয়তা আর বেড়ে যায়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ৬ দফা বাস্তবায়নের জন্য নৌকায় ভোট দেয়। ভোটে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে তরান্বিত করে। কাজেই ৬ দফার জন্য পাক সরকার যেমনি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মীদের শত্রু মনে করতো তেমনি ৬ দফার ব্যাপারে যারা সাহায্য সহযোগিতা করেছে তাদেরও শত্রু মনে করতো। যার জন্য পাক সরকার দৈনিক পত্রিকা সংবাদ-এর বিজ্ঞাপন বন্ধ করে পত্রিকাটিকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা চালায়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সংবাদ অফিসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় সেখানে মৃত্যু বরণ করেন সাংবাদিক শহীদ সাবের। এটা টের পেয়েই আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। আমাকে না পেয়ে পাক হানাদাররা গান পাউডার দিয়ে আমাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে আমি তোমাদের সবাইকে নিয়ে নৌকায় নৌকায় চর থেকে চরে থেকেছি।”
বাবা আমাদের সাথে আলোচনা করে যা বলতেন, তার অনেক কথাই পরবর্তিতে বই, পুস্তক, পত্রিকায় বিভিন্ন গুণীজনের লেখায় দেখতে পাই। বাবা ‘দৈনিক সংবাদ পত্রিকা’ সম্পর্কে যা বলতেন, তার অনেক কথাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর লেখা কারাগারের রোজনামচা বইয়ে পড়ে জানতে পেরে। বঙ্গবন্ধু কারাগারে রোজনামাচা গ্রন্থের ১০১ পৃষ্ঠায় ১৯৬৬ সালের ১৭ জুন লেখেন ...... সারাদিন একই চিন্তা। এবার জেলে এসে একদিনও শান্তিতে থাকতে পারলাম না। ঘরে বাইরে করতে করতে দিন চলে গেল। রাতটাও কেটে গেল একই চিন্তায়। আগামীকাল খবরের কাগজ এলে সঠিক খবর পাওয়া যাবে এই আশায় রইলাম। আমি বলে দিয়েছি দৈনিক পাকিস্তান রাখবো না, ‘দৈনিক সংবাদ’ কাগজ যেন দেওয়া হয়। পূর্বেই ছিল ইত্তেফাক, আজাদ, অবজারভার, মর্নিং নিউজ আর ডন। এখন সংবাদও আসবে। ইত্তেফাকের কী হবে এখন ঠিক বলতে পারি না।
বঙ্গবন্ধু কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থের ৫৪ পৃষ্ঠায় ১৯৬৬ সালের ৯ জুলাই লেখেন- আমাদের পাকিস্তানের কেন্দ্রিয় সরকার তিনটা কাগজের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে। একটা সংবাদ, পূর্ব পাকিস্তানের কাগজ, আর দুইটি ‘নওয়াই ওয়াক্ত’ ও ‘কোহিস্তান’-পশ্চিম পাকিস্তানের। প্রায় সকল কাগজকেই সরকার ছলে বলে কৌশলে নিজের সমর্থক করে নিয়েছে। যে দু’চারটা কাগজ এখনও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে জনগণের দাবি দাওয়া তুলে ধরছে তাদের শেষ করার পন্থা অবলম্বন করেছে সরকার। ইত্তেফাক প্রেস তো বাজেয়াপ্ত। ঢাকার কাগজের মধ্যে পয়গাম, পাসবান সরকারের সমর্থক কাগজ। প্রথমোক্ত দু’টাই প্রেস ট্রাস্টের। ইত্তেফাক তালাবদ্ধ। সংবাদের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে শেষ করার অবস্থা। পাকিস্তান অবজারভার তো ‘যখন যেমন, তখন তেমন, হায় হোসেন, হায় হোসেনের দলে।’ কখন যে আঘাত আসে বলা যায় না।
১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ পাক হানাদার সেনারা ‘সংবাদ’ অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। যেখানে আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করেন সাংবাদিক শহীদ সাবের। এ কথাও অনেক বই-পুস্তকে পাওয়া যায়।
বাবার মতই আমি আমার বড় মামা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: রফিকুল ইসলাম ঠান্ডু মোল্লার কাছ থেকেও অনেক ইতিহাস শোনেছি ও শিখেছি। তিনি ছাত্র জীবনেই সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দীক্ষা নিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে যোগদান করেন ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে। বিশেষ করে ১৯৬৯ সালের ছাত্র গণআন্দোলনে তার ছিল সাভার অঞ্চলে বিশাল ভূমিকা। পরবর্তিতে মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধের পর ন্যাপ মোজাফরের নেতা হিসেবে কিছুদিন সক্রিয় থাকেন। তারপর তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এই সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি বা বাম রাজনীতিযুক্ত থাকার কারণে প্রচুর রাজনৈতিক বই পড়তেন এবং অন্যদের পড়ানোর চেষ্টা করতেন। তাঁর রাজনীতির আলোচনায় আমার জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি বলে মনে হয়। শুধু আমিই নই, আমার অন্যান্য ভাইসহ সাভার এলাকার অসংখ্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীও রাজনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে। আমার বড় মামা সাভারসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠচক্র বা রাজনৈতিক আলোচনা সভা করে দলীয় নেতা কর্মীসহ ছাত্র-যুবকদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলার প্রয়াস চালান। তাঁর আলোচনায় আমিও নিয়মিত অংশ গ্রহণ করতাম। তিনিও তাঁর আলোচনায় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতেন। তাঁর আলোচনায় তিনি তুলে ধরতেন ১৯৪৭ সালের পর বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে কীভাবে আন্দোলন করে বাংলাদেশের মানুষকে সশস্ত্রযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে। সেই ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রণ্টের নির্বাচন ১৯৬৬ সালের ৬ দফা এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়। এ নির্বাচনের পর ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দেন। বাবার ও মামার আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি মারাত্মকভাবে অনুপ্রাণিত হই বা উৎসাহ পাই। এই উৎসাহ থেকেই ধীরে ধীরে যুক্ত হতে থাকি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগের সাথে। পর্যায়ক্রমে হয়ে যাই ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। ঐ সময়ে আমার বড় ভাই মঞ্জুরুল আলম রাজীব ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়। তার পরের মেয়াদে একই ধরণের দুর্যোগের সময়ে আমি আবার ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হই।
ঐ সময়গুলো ছিল দেশ জাতি, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের এক চরম ক্রান্তিকাল। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান। ৯১-৯৫ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার দুঃশাসন আমলে আমার অগ্রজ সাভারের দুঃসাহসী ছাত্রনেতা মঞ্জুরুল আলম রাজীবের আমিই ছিলাম অন্যতম ভেনগার্ড। একাধিক মামলা খেয়েছি, নির্যাতন সয়েছি, গ্রেফতার হয়েছি। ১৯৯১ সালে সাভার আড়াপাড়া মোড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে যুবলীগ নেতা সনাতন শীলকে কুপিয়ে হত্যা করলো যুবদলের হেলাল বাহিনীর হেলাল। রাস্তায় সনাতনের লাশ পড়ে রইলো। হেলালের ভয়ে স্থানীয় আওয়ামী নেতারা দেখতে এলো না। ফোনাফোনি করতে লাগলো। রাজীব ভাই সদ্য জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছে। রাজীব ভাই ছুটে আসলো সাথে আমি সমর ভেনগার্ড। একটা ভ্যানগাড়ী ভাড়া করে লাশটা দুই ভাইয়ে তুলে নিয়েই আওয়াজ তুললাম সনাতন হত্যার বিচার চাই। রাজীবের কথা শুনেই চলে আসে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত কিছু নেতা-কর্মী। জমায়েত হয়ে ঢাকা-আরিচা রোডে মিছিল করলাম। এই মিছিলে প্রতি মূহুর্তেই ছিল সন্ত্রাসী হেলাল বাহিনীর গুলি ও কোপ খাওয়ার ভয়। বাবাও সনাতনশীলের লাশ দেখেছিলেন এবং চোখের পানি ঝঁরিয়ে ছিলেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হন। ঐ বছরেই ১৭ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাটিতে পদার্পণ করেন। বাবা আমাকেসহ বড় তিনভাইকে সাথে নিয়ে অ্যারপোর্টে গিয়েছিলেন নেত্রীকে এক নজর দেখতে। আমি ঝাপসা এক পশলা আমার প্রাণের নেত্রীকে জীবনের প্রথমবার দেখলাম।
আমি ১৯৯১-৯২ সালে সাভার কলেজে ভর্তি হই। আমিসহ ছাত্রলীগ সম্মুখ সারির কর্মীরা প্রতি মূহুর্তেই ভয়-ভীতি হুমকির মুখোমুখী থাকি। সুকান্তের ভাষায়-“অবাক পৃথিবী! অবাক করলে তুমি জন্মেই দেখি ক্ষুদ্ধ স্বদেশভূমি।” সাভার কলেজ আমাদের জন্যও একই অবস্থা ও অনিরাপদ।
তবে ঐ সময়ে রাজীব ছিল সাভার কলেজের সংগ্রামী সাহসী ভিপি। রাজীবের মেয়াদের পর আমাকে ছাত্রলীগ প্যানেলে ভিপির মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিএনপির উচ্চমহলের নির্র্দেশ, রাজীবের ভাই সমর যেন ভিপি পদে জয়ী হতে না পারে। আমাকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হলো। যেমনি আমার বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলমকে জাকসুতে ভিপি পদে সরাসরি বেগম জিয়ার হস্তক্ষেপে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আমিসহ তিন ভাইকে আমার ‘বাবা-মা’ সব সময়ে সাহস জুগিয়েছেন। হতাশ হতে দেন নাই। ‘বাবা-মা’ এর নিজস্ব জমি বিক্রী করে আমাদের মামলার খরচ জুগিয়েছেন, ঢাকাসহ নানা জায়গায় আত্মগোপনে থাকার খরচ জুগিয়েছেন।
চলে এলো ১৯৯৬ এর নির্বাচন। তৎকালীন স্বৈরাচারী বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলন। এ আন্দোলনের ঢেউ সাভারেও ওঠলো। রাজীব ছিল তার অন্যতম সারথী। আমিও ছিলাম তাঁর অন্যতম সহযাত্রী। দীর্ঘ একুশ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজয় অর্জন হলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা সরকার প্রধান হলেন। হাফ সেরে বাঁচলাম। ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লাম। বিধি বাম। ১৯৯৬ এর ৯ নভেম্বর সাভারের রেজিস্ট্রি অফিস প্রাঙ্গনে যুবদল নেতা মজনু খুন হয়। মজনু এলাকায় জমির দালালী করতো। বিএনপি ক্ষমতার ওই সময়ে সে নানাভাবে নানা মানুষের জমি দখল করতো। নিজ এলাকাসহ ঢাকা শহরেও তার অনেক শত্রু ছিল। আমরা দুইভাই ঐদিন ঢাকার নবাবগঞ্জে এক জনসভায় গিয়েছিলাম ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খান মজলিশ কাকুর সাথে ।
সাভারে ঐ সময়ে ছিল বিএনপির এমপি ডা: সালাহউদ্দিন বাবু। রাজীবকে এক নম্বর ও আমাকে দুই নম্বর আসামী করে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হলো। দুই ভাইয়ের হাজত বাস, কয়েক মাস পর জামিনে বেড়িয়ে এলাম। রাজনৈতিক কর্মকান্ড জোরেসোরে চালিয়ে যেতে লাগলাম। ঐ সময়ে সংসদ চলছিল। সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ দিয়ে সংসদে বললেন, “রাজীব-সমর এই খুন করে নাই-এটা চক্রান্ত ......।”
২০০১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান লতিফুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচনী প্রচারণায় নামলেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ নির্বাচনে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে ও তত্ত্বাবধায়ক প্রধান লতিফুর রহমানের প্রকাশ্য পক্ষপাতিত্বে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হলো।
বিজযের দিনই বিএনপি-জামায়াত সারা দেশে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর বিশেষ করে সংখ্যালুঘু সম্প্রদায়ের ওপর তান্ডব চালায়। সকালেই টের পেলাম অস্ত্র-শস্ত্র সজ্জিত যুবদল ও বিএনপি ক্যাডাররা পুলিশসহ আমাদের বাড়ি আক্রমণ করতে আসছে, ‘বাবা’ অফিসে। ‘মা’ একা। আমি ও রাজীব ছাত্রলীগ কর্মী বেষ্টিত। আত্মীয়-স্বজন, সুহৃদরা সকলেই বলছে তোমরা দু’জন চলে যাও, আমরা সব দেখব। আমরা দুই ভাই বললাম, আমাদের না পেয়ে ওরা আমার ‘মায়ের’ গায়ে হাত দিতে পারে। বাড়িতেই থাকব, মরলে বাড়িতে মরব, লড়াই করে মরব। রাজীবেরও একই মত। পরে আমার বড় মামী হামিদা বেগম, সেজো মামী হেনা আফরোজ জোর করে ঝাপটে ধরে পাড়ার দুইজন মহিলার বোরকা নিয়ে আমাদের দুইজনকে বাড়ির পাশের গলি দিয়ে সাভার বাজার রোডে ঢুকিয়ে দেয়। ঐ সময়েই আমাদের সাহসী ও নিবেদিত কর্মীরা মানব ঢাল করে আমাদের নিয়ে যায়। ঐ সময়েই রাজীবের এক বন্ধু ওখানেই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। বড় মামী আমাদের দুইজনকে স্কট করে গাড়িতে ঢুকিয়ে দেয়। ইতোমধ্যে বিএনপি ক্যাডার ও পুলিশ এসে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে। চলে আসি ঢাকায় নিজেদের জানাশুনা ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের আশ্রয়স্থল এক বাড়িতে। শুনেছিলাম, সাথে সাথেই মজনুর ভাই খোরশেদের ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশ চলে আসে। আমার ‘মা’ কে গালিগালাজ করে। পাড়ার লোকেরা প্রতিবাদ করে। পরবর্তিতে বড় ভাই, রাজীব মজনু হত্যার মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে জামিন বাতিল হয়। আমি কোর্টে হাজিরা দেই নাই। নানাভাবে আত্মগোপনে থেকেই লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। রাজীবের রিমান্ডসহ অনেক লম্বা নির্যাতনের ইতিহাস যা ঐ সময়ের বহু পত্র পত্রিকায় ওঠেছে।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নেত্রীর ওপর গ্রেনেড হামলার দিন আমি স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ দিবসে হাজির হই। প্রাণে রক্ষা পাই। আমিই প্রথম সাভারের মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মাহবুবা পারভিনকে আহত-নিহতদের মাঝে উদ্ধার করি এবং আমার সহকর্মীদের নিয়ে ঢাকা বঙ্গবন্ধু চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিন-শেডে নিয়ে আসি। পরে রাজীব’রা ওকে বঙ্গবন্ধু চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মূল ভবনে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।
জামায়াত-বিএনপি জোট চলমান নিপীড়ন নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার জন্য নানামূখী ষড়যন্ত্র করে। এ ষড়যন্ত্রের পথ ধরেই ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশের ক্ষমতা দখল করে ফকরউদ্দিন ও জেনারেল মঈনউদ্দিনের নেতৃত্বে সরকার। জেনারেল মঈনউদ্দিনের সেনা সরকার, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ওপর কঠোর আচরণ শুরু করে দিল। অনেক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়। জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের ওপরও অমানবিক আচরণ করা হয়। এই সময়ে অনেক উচ্চ পর্যায় থেকে জানতে পারলাম, বড় ভাই রাজীব এবং আমাকে ক্রস ফায়ারে দিয়ে দিতে পারে। তাই আমরা যেন দ্রুত দেশের বাইরে চলে যাই। আমারতো কোনো পাসপোর্টই নাই, রাজীবেরও নাই। ঐ সময়গুলোতে আমি কোনো দিন দেশের বাইরে যাই নাই। লড়াই সংগ্রামেই ব্যস্ত থেকেছি। কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং বর্তমান সাংসদ ও হুইপ স্বপন ভাই বেনাপোলের বিশ্বস্ত পুলিশ দিয়ে রাজীবকে বর্ডার পার হতে সাহায্য করলেন। কলকাতায় সাভারের এক হিন্দু পরিবার রাজীবকে আশ্রয় দিল। কয়েকদিন পর আমিও চলে এলাম। বর্ডার ক্রসের সময় অবাঙালি বিএসএফ আমাকে ধরে ফেলছিল। প্রচন্ড মারধোর করেছিল, পরে আমি দু’হাত তুলে বলেছিলাম, ‘আমি শেখ মুজিবের লোক, জয় বাংলার লোক, দেশে আমার জীবনের ঝুঁকি তাই ভারতে চলে যেতে চাচ্ছি।’ ওরা আমাকে ভারতে ঢুকিয়ে দেয়। আমিও একই আশ্রয়ে চলে আসি।
সেনা সরকার দেশে নেতৃত্বের শূণ্যতা তৈরি করার জন্য ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ প্রধান মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে এবং আওয়ামী লীগকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করে। সরকারের এই ষড়যন্ত্রের সাথে হাত মিলায় আওয়ামী লীগের কতিপয় কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় নেতাকর্মী। এই সময়ে জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বেই ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সঠিক দিক নির্দেশনা। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের কথা জানতে পেরে সারাক্ষণ ছটফট করতে থাকি কখন বাংলাদেশে চলে এসে আন্দোলনে শরিক হব। জানতে পারি জননেত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতারের পরের দিনই আমার বড় ভাই জাহাঙ্গীর সাভার বাসস্ট্যান্ডে দুঃসাহসী এক প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। খবর পেয়ে আমার মন সাহসে এবং আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। ঐদিন অপরাহ্নে যৌথবাহিনী জাহাঙ্গীর ভাইকে সাভারের আমার মিন্টু মামার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে চক্ষু বেঁধে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। পরপরই আমি ও রাজীব আত্মগোপন করে ঢাকায় চলে আসি। ফার্মগেট, মিরপুর ১ নম্বর, কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের আশ্রয়ে থাকি এবং মানিক মিয়া এ্যাভিনিউস্থ সংসদ ভবন এলাকায় প্রয়াত জাতীয় নেতা জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে জননেত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং খামারবাড়ি এলাকার কৃষিবিদ নেতাদের নিয়ে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণ করতে থাকি এবং নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে সম্পৃক্ত হই। আন্দোলন চলমান থাকে নেত্রীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত। এ আন্দোলনের শামিল হয়ে সাভারসহ ঢাকা জেলায় হাসিনা মুক্তি আন্দোলন গড়ে তুলি। আন্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্য ঝটিকা মিছিল, সভা-সমাবেশ ইত্যাদি করতে থাকি।
আন্দোলনের ফলে সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিয়ে দেশে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর “স্বপ্নের সোনার বাংলা” প্রতিষ্ঠান কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সে কর্মসূচি সফল ও বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় আজও সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত আছি। আগামী দিনে বঙ্গবন্ধু কন্যার স্মার্ট বাংলাদেশের সফল কর্মীও হতে চাই। ইতিমধ্যেই বাবা ও মায়ের দোয়া-আশীর্বাদের, আদর-সোহাগের চলমান ধারাতেই রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এরমধ্যে ২০১০ তারিখের ১০ সেপ্টেম্বর প্রাণ প্রিয় বাবা ইন্তেকাল করেন।
আমি এখন একজন পূর্ণ বয়স্ক পরিপক্ক রাজনৈতিক সচেতন আওয়ামী লীগ কর্মী ও একনিষ্ঠ বঙ্গবন্ধু প্রেমিক। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার আদর্শ ও আমার প্রেরণা। আমি সাভার থানা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। পরপর দুই বার সাভার উপজেলার প্রথম শ্রেণির শিল্পসমৃদ্ধ তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান। কিছুদিন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ছিলাম। সারাক্ষণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার প্রেরণা মাথায় নিয়ে মাঠে ময়দানে ঘুরে বেড়াই। বাবা নেই। তার কথা স্মরণ করে জীবিত ‘মা’কে সালাম করে ঘর থেকে প্রতিদিন বেড়িয়ে পরি। এলাকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণের অগ্রযাত্রায়। আমি একজন মাতৃভক্ত মধ্য বয়সী অবিবাহিত তরুণ। ‘মা-বাবার’ দোয়াইতো আমাকে ও রাজীবকে দুর্দিনে খালেদা জিয়ার নীল ক্যাকটাসের আক্রমণ থেকে এবং নানা চক্রান্তকারীদের সাজানো মামলা মোকদ্দমা থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে এবং আজও আল্লাহর রহমতে এবং ‘মায়ে’র দোয়াতেই বেঁচি আছি। আজও মনে পড়ে, দুঃসময়ের দিনগুলোতে আমার ‘মা’ দিনরাতভর জায়নামাজই পরে থাকতেন। রাব্বুল আলামিনের কাছে আমাদের নিরাপত্তার জন্য দোয়া করতো। এখনও ‘মা’ প্রায় তাইই করে। মাকে নিয়ে আমি একাধিকবার পবিত্র ওমরাহ পালন করেছি।
বর্তমানে পরিচ্ছন্ন আমার পরিষদ কার্যালয়। ফুল-ফল সবজিতে ঘেরা সবুজ বেষ্ঠিত প্রাঙ্গণ ও একটি দোতলা দালান। স্থানীয় সরকারি কর্মকান্ডসহ সামাজিক কর্মকান্ডের সবকিছুর ছোঁয়ার আধুনিক আমার পরিষদ কার্যালয়ে বিদ্যমান। করোনা, দুর্যোগে আমি জীবনকে বাজী রেখে করোনা বিষয়ক সকল ধরণের মানবিক ও ঝুঁকিপূর্ণ সেবায় সেবার কাজ করেছি। চরম সময়ে আমি নিজে করোনা রোগীর দাফনও করেছি। করোনার সময়ে কৃষকের ধান কেটেছি। দুইবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। Hospitalized হয়েছি। এইতো সেদিনই Post-covid-Syndrome এ আক্রান্ত হয়ে বিষ-ব্যথায় যন্ত্রণায় কাতর হয়ে সর্বশেষ ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে অনেকটা সুস্থ হয়েছি।
শীতের মৌসুমের শুরুতেই আমি প্রতিদিন রাতের বেলায় দরিদ্রদের কম্বলসহ বৃদ্ধ, শিশুদের শীতবস্ত্র বিলিয়েছি। দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের পোষাক-আশাকসহ তাদের চাহিদামত সবকিছু দিয়ে যাচ্ছি।
পবিত্র মাহে-রমজানের সময় আমি প্রায় প্রতিদিনই ঢালাওভাবে দরিদ্রদের ইফতারি, খিচুরী খাইয়েছি। বিশ রোজা থেকে আমি প্রতিবছর “বিনামূল্যের দোকান” খুলি যার নাম ‘মানবতার দোকান’। দরিদ্র পরিবারকে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য-দ্রবাদি বিতরণ করি ও তাদের পরিবারের ছোট সদস্যদের জামা কাপড় বিতরণ করি। এছাড়া আমি দরিদ্রছাত্রদের জন্য বাই-সাইকেল বিতরণ করি। প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ আমার একটি নিয়মিত কার্যক্রম।
আমার সেবামূলক কার্যক্রমগুলো করি “ওয়াসিল উদ্দিন ফাউন্ডেশনের” নামে। আমার সাাংবাদিক বাবা ওয়াসিলউদ্দিনের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যই আমি “ওয়াসিলউদ্দিন ফাউন্ডেশন” গড়ে তুলেছি। রাজীবসহ অন্য ভাইয়েরাও সাহায্যের হাত বাড়ায়। বাবার নামে আমি একটা “ওয়াসিলউদ্দিন গণপাঠাগারও” করেছি। প্রতিবছর “ওয়াসিলউদ্দিন ফাউন্ডেশন ও ওয়াসিলউদ্দিন গণপাঠাগারের” উদ্যোগে আমি একুশের বই মেলা করি।
আমার সামাজিক কর্মকান্ডের কোনো শীত-গ্রীষ্ম নাই। খাওয়া ফেলে আমি চপ্পল পায়ে লুঙ্গি গেঞ্জি পরে অসহায় মানুষের বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়ি। প্রভাবশালীদের দখলী রাস্তা, খাল-বিল, পুকুর উদ্ধারে আমি সক্রিয় ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করি। আমি নির্ভয়, নির্ভীক, ভরসা আল্লাহ, সাথে ‘মায়ের’ দোয়া। আর আদর্শ বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রেরণা। আমি কাজ ছাড়া থাকতে পারি না। ঢাকা-আরিচার মহাসড়কের তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়নের অংশ পরিলক্ষিত হলেই আমার রুচিবোধ মানুষের চোখে পরবে। আমি নিজেকে একজন বিশুদ্ধ অসাম্প্রদায়িতক, বিশুদ্ধ মুসলিম, নির্ভেজাল বঙ্গবন্ধু প্রেমিক ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নিবেদিত অনুসারী মনে করি। সাভারে আলেম-ওলামাকুলও আমাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে ও আমার মূল্যবোধকে পছন্দ করে। আমিও তাদেরকে সহায়তা দেই। আবার বলি- আমার ‘মা’ আমাকে অনেক দোয়া করে, অনেক ভালোবাসে, তবে ‘মা’র একটাই কথা, তোর বিয়ে কি আমি দেখে যেতে পারব না? সময়ই যেন হয়ে ওঠছে না। আপনারা সবাই বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা, আমার জন্মদাত্রী স্নেহময়ী মা এবং জান্নাতবাসী পিতা ওয়াসিলউদ্দিন এর জন্য দোয়া করবেন। জয় বাংলা!
লেখক : চেয়ারম্যান, তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন, সাভার।
পাঠকের মতামত:
- ‘প্রান্তিক মানুষকে মূলধারায় নিয়ে আসতে কাজ করছি’
- তিউনিসিয়া থেকে নিজ গ্রামে এসেছে রাজৈরের ৫ যুবকের মরদেহ
- নির্বাচিত হলে সততার সাথে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবেন মাসুদা বেগম
- ফরিদপুরে কবি মিনতি দত্ত মিশ্রকে সংবর্ধনা
- চেয়ারম্যান প্রার্থী ওদুদ মণ্ডলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগ
- চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে সাতক্ষীরার এক নারীকে সৌদি আরবে বিক্রির অভিযোগ
- কাপাসিয়ায় ইউসিবি ব্যাংকের উদ্যোগে কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ
- মহম্মদপুরে বিভিন্ন মামলার ৬ আসামী আটক
- এপ্রিলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি
- দিনাজপুর পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত ২
- ‘মুক্ত সাংবাদিকতার চর্চা পরিবেশগত সঙ্কট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে’
- ব্যাকআপ না থাকায় ভোটে দাঁড়াবেন না হিরো আলম
- শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
- বরিশালে বাস চাপায় হেলপার নিহত
- সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার
- আগৈলঝাড়ায় বিএনপি’র আহ্বায়ক রেজা ও যুগ্ম আহ্বায়ক লাভলু ভাট্টির দল থেকে পদত্যাগ
- এবার বলিউডের গানে আসিফ
- ‘সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে ওরাল ক্যানসার অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব’
- নগরকান্দায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই চারটি দোকান
- ফরিদপুরে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত
- উত্তরায় নিবন্ধিত রিকশাচালকদের মাঝে ছাতা বিতরণ
- ধামরাইয়ে ২য় ধাপের উপজেলা নির্বাচন ২১ মে
- কাপাসিয়ায় নদীতে ডুবে কিশোরের মৃত্যু
- পাংশায় বাস ও ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত ৮
- নোয়াখালীতে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা
- বশেমুরবিপ্রবি’তে ‘বি’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন
- গোপালগঞ্জে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বাসমতি চাল উৎপাদিত
- যশোর-নড়াইল মহাসড়কে পিচ গলে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে দুদক
- নিখোঁজের একদিন পর নদী থেকে শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
- ‘জনগণের কাছে হেরে যাওয়ার আগে ক্ষমতা ছেড়ে দিন’
- ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম লক্ষ্য সিরিজ জয়’
- ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করলো তুরস্ক
- শুধু অভিযোগ নয়, করুন প্রশংসাও
- আজ বিশ্ব মুক্ত-গণমাধ্যম দিবস
- চট্টগ্রাম থেকে হজ ফ্লাইট শুরু ১৪ মে
- জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রস্তাব গৃহীত
- ১০ টাকার টিকিটে চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী
- ‘বিক্ষোভের অধিকার সবার আছে, বিশৃঙ্খলার নয়’
- ‘প্রধানমন্ত্রীর উদারতার জন্যই বেগম জিয়ার শাস্তি স্থগিত রয়েছে’
- এসএসসি পরীক্ষার ফল ১২ মে
- 'পূর্ব বাংলায় অতি সাংঘাতিক মাত্রায় ত্রাস, বর্বরতা ও গণহত্যা চলেছে'
- কাপ্তাইয়ে ঝড়ে চলন্ত গাড়ির ওপর ভেঙে পড়ল গাছ, আহত ২
- মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় কামাল হোসেন ফের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত
- পটুয়াখালীতে সাংবাদিক-রাজনীতিক আব্দুর রশিদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
- আরেক দফা কমলো স্বর্ণের দাম
- ‘দেশে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা আছে’
- ‘তাপপ্রবাহে শ্রমজীবীদের বাঁচাতে সরকার কিছুই করছে না’
- ‘শাকিবের পরিবার বিরক্ত হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে’
- কাপাসিয়ায় স্কাউটসের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- সাভারে পৃথক অভিযানে ৫ আসামি গ্রেফতার
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- সিলেটের ভ্রমণ কাহিনী
- শুধু প্রভাবশালীদের পক্ষেই আইন!
- অম্ল-মধুর যন্ত্রণায় অপু বিশ্বাস
- লাইন ধরে খেতে হয় লিখনের জগা খিচুড়ি !
- আমার বোন শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি : চিনে নিন কে এই বরকত!
- 'ইতিহাসের ইতিহাস'
- ধনী হওয়ার আট কার্যকর উপায়
- মেয়ে পটানোর কৌশল!
- লক্ষাধিক রাখাইন জনগোষ্ঠী আড়াই হাজারে নেমে এসেছে
- উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের নতুন যাত্রা ১ বৈশাখ
- লোভী মানুষ চেনার সহজ উপায়
- আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ১৪'তোমার সহজাত উদারতা তোমাকে আকাশের সীমানায় উন্নীত করলেও তোমার ঘনিষ্ঠ অনেকের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ তোমার নৃশংস মৃত্যুর পথে কোনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি'
- বাংলা বই পড়ার ওয়েবসাইট
- শাকিবের নায়িকা শ্রাবন্তী, অপুর নায়ক জিৎ
- মঠবাড়িয়ায় ৯ বছরের শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা
- হুমায়ূনের মৃত্যুর কারণ মদের পার্টি !
- দেশে ফিরছেন তারেকস্ত্রী জোবায়দা রহমান
- বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়
- ইউটিউবে নায়লার আত্মপ্রকাশ
- নেপালের ভূমিকম্প প্রাকৃতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি !
- বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে !