E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্ট 

রাজনৈতিক নয় বিবেচনা করতে হবে বাস্তবতায় 

২০২৩ এপ্রিল ০১ ১৫:৪৭:২১
রাজনৈতিক নয় বিবেচনা করতে হবে বাস্তবতায় 

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


সম্প্রতি বেশ ভালোভাবেই আলোচনায়  এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত মানবাধিকার রিপোর্টটি। ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট দেশটির বাধ্যবাধকতা মেনে ২০২২ সালের বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্রাকটিসেস শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার চুক্তিগুলোর আলোকে প্রণীত বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক এই বার্ষিক প্রতিবেদনে ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের স্থানীয় মানবাধিকার ও শ্রমিকদের অধিকারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিগত পাঁচ দশক ধরে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। তাই  বিশ্ববাসী দীর্ঘদিন ধরেই দেখে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের এই মানবাধিকারের রিপোর্ট। অনেক সময় মনে হয় এটি তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুজিঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে আস্তে আস্তে যুক্তরাষ্ট্রের এ রিপোর্টের গুরুত্ব হারাচ্ছে অনেকাংশেই। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাই আলোচনাটা একটু বেশি। সরকার এবং বিএনপি বেশি বেশি আলোচনা করে রিপোর্টটিকে জনগণের সামনে নিয়ে এসেছে আরো জোড়ালোভাবে। 

এক পক্ষ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এটাকে ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণের জন্য অপরপক্ষে বিরোধীরা প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এ রিপোর্টকে সত্যি প্রমাণের জন্য। বিরোধী পক্ষের ধারণা এই রিপোর্টেই বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে এবং আমেরিকা আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে পরাজিত করতে সহায়তা করবে। কিন্তু ভেবে দেখছি না সত্যি আর মিথ্যা প্রমাণের লড়াই হেরে যাচ্ছে দুপক্ষই জিতে যাচ্ছে সমালোচকরা। কারন রিপোর্টটিতে এমন কতগুলো বিষয় রয়েছে যে যেগুলোকে একেবারে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না আবার সবগুলিকেই সঠিকভাবে ধরে নেওয়াও যাচ্ছে না। যেসব মানবাধিকারের কথা এই রিপোর্টে উত্থাপন করা হয়েছে তার চেয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের দেশের অবস্থা আরো জটিল। মাঝে মাঝেই প্রশ্ন জাগে এ রিপোর্ট কি আগামী নির্বাচনের যড়যন্ত্র কি না ?

কারণ দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ এবং ইত্যে সময়ে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা অনেকের চোখে ভালো লাগেনি। তাদের চাওয়া দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালেঅ না হউক এবং বিশৃংঙ্খলা সবসময় থাকুক তাহলে হয়তো তাদের অনেক সুবিধা। বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন, কারাগারের পরিস্থিতি, ধরপাকড়, আটক বা গ্রেফতারের প্রক্রিয়া ও কারাবন্দিদের সঙ্গে আচরণ, বিচারব্যবস্থা, মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজ ও সরকার সমালোচকদের প্রতি হুমকি, হয়রানি, নির্যাতন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবের বিষয়গুলো প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। হ্যাঁ একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে মানবাধিকার হরণ করার মতো ঘটনা ঘটছে না। তবে এখানে যে বিষয়গুলো উত্থাপন করা হয়েছে সেগুলির সূচকে আমরা যে একেবারেই নিচু পর্যায়ে সে কথা আমাদের দেশের জনগণ খুব একটা সঠিক বলেই মনে করে না।

পৃথিবীটা আস্তে আস্তে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে একথা সত্য। সার্বিক বিচারে সব জায়গায় মানবাধিকারের প্রশ্ন ভুলন্ঠিত হচ্ছে একথা হলফ করেই বলা যায়। সবচেয়ে সমালাচনার বিষয় জন্ম নিয়েছে বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য। সমস্যাটা হলো আজকে যে রিপোর্ট দেখছি তার মাঝে ২০১৮ সালের নির্বাচন কেন আনা হলো এটি একটি প্রশ্ন থেকে যায় এবং কথাটি আরো আগের রিপোর্টে আনা প্রয়োজন ছিল কিন্তু সামনে নির্বাচনকে নিয়ে এসব কথা এখন বলায় জনসাধারণের মাঝে প্রশ্ন জেগেছে বিস্তর। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ধারণা হলো আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এ রিপোর্টটি সামনে আনা হয়েছে এবং নির্বাচনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই এ ধারণাটিকে একেবারেই বাদ দেওয়া যায় না। এবার এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মিডিয়াতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এসেছে তার মধ্য থেকে কয়েকটি মন্তব্য তুলে ধরে আলোচনায় যাওয়া যাক। বেশ কয়েকটি মন্তব্য যেমন অবাঞ্চিত অন্যদিকে কয়েকটি মন্তব্য আবার ভেবে দেখার মতো।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই প্রতিবেদনকে “ অযৌক্তিক” এবং যুক্তরাষ্ট্রেও গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন। এই মন্তব্যে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক যেমন এ রিপোর্টকে অস্বীকার করেছেন অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রকেও একটি খোঁচা দিয়েছেন। আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এটিকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো এতদিন যেসব অভিযোগ করে আসছে তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিবেদনে যা এসেছে তা বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য ঘটনা। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ি মনে হচ্ছে বিএনপির এতদিনের বক্তব্যের সাথে এ রিপোর্টের একটি সাদৃশ্য রয়েছে। তাদের মতের প্রতিফলন ঘটেছে এ রিপোর্টে। তারা এতদিন যেসব কথা বলে আসছে তা যে সত্য আমেরিকা তা প্রমাণ করেছে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন এদেশে সব সময়ই ছিল। দলীয় সরকারের অধীনেও যেসব নির্বাচন হয়েছে, তখনও এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একইভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন ছিল। এই বক্তব্যে অনেকটাই মধ্য পন্থা অবলম্বন করেছেন জাতীয় পার্টি। তবে সবচেয়ে আশাজাগানো মন্তব্য হলো সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবং দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, মার্কিন ষ্টেট ডিপার্টমেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনটি দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর খুব বেশি নেতিবাচক বাচক প্রভাব পড়বে না।

এ ধরণের প্রতিবেদন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রতিবছরই প্রকাশ করা হয়। মূল কথা হলো বিশ্ব মোড়লদের অন্যতম একটি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র তাই তাদের এ রিপোর্ট আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অনেকটাই সাড়া পড়ে। পৃথিবীর অন্য বেশির ভাগ দেশ এই রিপোর্ট তৈরি করলে আজ এত হৈচৈ হতো বলে মনে হয় না। কারন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব মোড়ল হওয়ায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মতো দেশে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পায়। তবে যে দেশ যে রিপোর্টই প্রণয়ন করুক তার মাঝ থেকে সঠিক তথ্য নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এ রিপোর্টে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। কেবলমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় নয় বিচার করতে হবে বাস্তবতায়। ভুলের বিচারের ভার তুলে নিতে হবে নিজেদের কাঁধে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরো উন্নয়ন ঘটাতে হবে না হলে অনেক উন্নয়নই জনগণের কাজে আসবে না।

লেখক :শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test