E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রোদেলা বাতাস কী যেন জানান দিয়ে যায়

২০২৩ এপ্রিল ০৩ ১৫:০৪:৩১
রোদেলা বাতাস কী যেন জানান দিয়ে যায়

পীযূষ সিকদার


আমরা কোনদিকে যাচ্ছি। পায়ে পায়ে ভাঙ্গনের শব্দ শুনি। ভাঙ্গন ঠেকাবে কে? কাউকেই বিশ্বাস করা যায় না। মানুষের মুখ নাই কোনো! যাকেই বিশ্বাস বাসি সেই শুধু ঠকিয়ে অট্রালিকা গড়ে। নিচে নামতে নামতে একেবারে নিচে নেমে গেছি। উপরে উঠার আর কোনো পথ নেই। মরি কী বাঁচি! শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আমাকে বাঁচাও। আমি জোরে চিৎকার করি। সেই চিৎকার কারো কান অবদি পৌঁছায় না। আমি কী শেষ পর্যন্ত মরে যাবো? আমাকে বাঁচান আমাকে বাঁচান। কেবলি গম্ গম্ শব্দে নিজ কানে সে শব্দ ফিরে আসে। আমি তলিয়ে যাচ্ছি। আরো গভীর থেকে গভীরে যাচ্ছি। আমাকে বাঁচানোর জন্য কেউ এগিয়ে আসে না! জোরে শ্বাস নেই। প্রাণপণ বাঁচার চেষ্টা করি। এক সময় নিজের ইচ্ছে শক্তিতে বেঁচে উঠি। চারিদিকে তাকাই। বিরান মাঠ। কেউ নেই! রবি ঠাকুরের ওই গানটি কানের কাছে কেউ গুন গুন করে গেয়ে যাচ্ছে- ‘‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলোরে...।’’

আমরা কোথায় যাচ্ছি। ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে ডু অর ডাই। পৃথিবীতে যখন এসেছি কিছু একটা করে যেতে হবে। সেই তাগিদেই লিখি। হাঁটি। চলি। বিরাম নেই। কথা বলি। ভালোবাসি। গান গাই। ঘুমাই। কারোর ইচ্ছে পূরণ বিধাতা করেন। কারোর ইচ্ছে আবার পূরণ হয় না। সময় পাল্টায়। সময়ে বসে সময়ের কথা লিখি। সে লেখা কী আগামীর কথা হয়ে যায়? নাকি যা লিখি যাচ্ছে তাই! বেঁচে থাকার অমোঘ অস্ত্র কলম। সেই কলমও কী আমার সাথে বিট্রে করে? নাকি কাল থেকে কালে আমি রয়ে যাবো তোমাদের হয়ে! জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি যে আমি একা! আমি জলে পরলে জল থেকে উপরে তোলার কেউ নেই। বিরামহীন এ কলম সাদা পৃষ্ঠায় কেবলি নানান চিত্রপট এঁকে যায়। সেকি ভবিষ্যতকে ছুঁবো বলে! নাকি ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নাই। সবই বর্তমান। বর্তমান শুধু অতীত ভবিষ্যতের সাথে হাত ধরাধরি করে ছুটছে। সে কী কুহক কল্পনা!

আমরা কোনদিকে ছুটছি। আমি তুমি সে! যতদূর চোখ যায় মিথ্যে মানুষ মিথ্যে কুহক কল্পনায় ঘুরছে। কোনো লক্ষ্য নাই। কেবলি নিজেকে ঘিরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। নিজের থেকে নিজেকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। আমিও যে তার থেকে বাইরে আছি তা নয়। ঘুরছি ক্রমাগত নিজেকে ঘিরে। মাথার ভিতর হঠাৎ করে বিদ্যুত চমক খেলে যায়। না-এই তো আমি! লিখছি। খাতা ভরে। একি আমি! না-যে আমি ঘুরে বেড়াই,কথা বলি, ভালোবাসি, অভিমান করি, রাগ করি। এটাই আমি! মেলাতে পারিনা হিসাব। কেবলি নিজের থেকে নিজে খসে পরছি। খসে পড়া আমি কী আমি! নাকি তার কোনো নাম নেই।

পায়ে পায়ে শুধু নিজের থেকে নিজে এগিয়ে চলছি। এই এগিয়ে চলার কোন নাম কী দেয়া যায়? নাকি তার কোনো নাম নাই। কেবলি ছুটে চলা। কোন বাহনে ভ্রমন করছি আমি! জীবনটাই একটা মস্তবড় ভ্রমন। এই ভ্রমনে কেউ এগিয়ে থাকে কেউবা পিছিয়ে। আমি কী পিছিয়ে পড়া কোনো নক্ষত্রলোক। নাকি এগিয়ে এগিয়ে স্বপ্নের বীজ বুনছি। স্বপ্ন সেতো এক কুহকের নাম! স্বপ্ন সেতো এক আশার নাম। আবার স্বপ্ন এক নৈরাশ্যের নাম। স্বপ্ন সেতো এক আশা জাগানিয়া গান। তাই তো সুর আর অসুরের দ্বন্দ্ব বাধে। আমার মধ্যেই সুর আর অসুর বিরাজমান। সুরের জিতই নিজের জিত। অসুর যখন নিজেকে খুবলে খায় তখন আমি পরাজিত। আমিত্ব তখনই অসুরে রুপ নেয়। এখানে আমি কোনো তত্ত্বকথা বলতে আসিনি। শুধু নিজের সাথে নিজের হিসাব কষছি। চেষ্টা থাকছে নিজেকে বদলানোর।

আমরা কোন পথে হাঁটছি। যাচ্ছি কোনদিকে। হিসাব মেলাতে পারিনা। আসে না কোনো উত্তর। একের পর এক ভুল পথে গমন করি। ভুল শুধরাই পরক্ষণেই আবার মস্তবড় ভুল আমার উপর জেকে বসে। পথ নাই কোনো। কোন পথে যাবো আমি! আমি তো আন্ধাকানা হয়ে বসে আছি। বাঁচনের মন্ত্র আমার জানা নেই। আমি নিজেকে খুঁজে বেড়াই। নিজেকে পাইনা। কোথায় আমি? আমি কী আমার মধ্যে নাকি মহাশক্তির রুপের মধ্যে আমি! নানা চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। আমাকে চেনার চেষ্টা করি। চিনতে পারি না। দ্বন্দ্বময় জীবনের দ্বান্দ্বিক ব্যাখ্যাই যদি হয় জীবন। সেই জীবনকে আমি ছুঁতে পারিনি। খসে খসে যায় আমা হতে আমি। নক্ষত্রপুঞ্জের পতন সে খসে যাওয়ার শব্দ। আমা হতে আমি খসে খসে আমিই থাকি নাকি বিরাট এক শূণ্যের অবতারণা হয়। মাঝে মাঝে কষ্টগুলোকে এক করি। ধূম্রবৃত্তের মতো খালি বড়হ য়। এক সময় শূণ্যে বিলীন হয়। এই শূণ্যে বিলীন হবার গল্পই কী জীবনের গল্প! নাকি জীবনকে ধরা যায় না ছোঁয়া যায় না। হাত দিয়ে আকাশ ছুঁই। আকাশ সরে সরে যায়। আমিও সরে সরে যাচ্ছি আমা হতে। আকাশের সমান বড় হবার স্বপ্ন একদিন দেখেছিলাম। সে স্বপ্ন আমা হতে দূরে সরে যায়। তাই আমার কাছে স্বপ্ন ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেলো।

হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠি। বসি। পানি খাই। হাঁপাতে থাকি। এক সময় আমার মধ্যে বোধ জাগ্রত হয়। হ্যাঁ স্বপ্নকে ছোঁয়া যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে স্বপ্ন আমাদেরকে দেখান। সেই স্বপ্নের পূর্ণতা তিনি দেন। দেশকে তিনি ভালো বাসেন। ভালোবাসার পথে পথে কাঁটা মাড়িয়ে রক্তাক্ত হতে হতে আরেকটি স্বপ্নের কথা ভাবেন। তিনি স্বপ্নকে মুঠ করে ধরেন। মুঠি মুঠি স্বপ্ন তাঁর দ’ুচোখ ভরে। আমরা কেনো পারবো না। পারতেই হবে। নইলে মনুষ্য জনম বৃথা যায়। কেউ একজন বলে উঠে অবয়ব ছাড়া ‘‘ওরে স্বপ্ন দেখ’’। স্বপ্ন দেখলেই অর্ধেক স্বপ্ন পূরণ হয়ে যায়। আমি তো আন্ধা কানা। দেখিও না শুনিও না। ‘‘স্বপ্ন দেখ’’।

আমাকে যে একদিন স্বপ্ন দেখিয়েছিলো সে এখন স্বপ্নবাজদের দলে ভিড়ে গেছে। তাই এখন মুঠি মুঠি স্বপ্ন কুড়াতে পারিনা। একদিন আমার পথটাকে যে একদিন রোপণ করে গেছে সে এখন অন্ধকারে গড়াগড়ি খায়। আলো অন্ধকারের বিপরীত কোণে দাঁড়িয়ে। অন্ধকার ছাড়া কিছু দেখি না। কিন্তু স্বপ্নটা তো মিথ্যা নয়! স্বপ্ন দেখে মানুষ। স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে। স্বপ্ন ছাড়া মানুষ ছন্নছাড়া অবোধ জীব। আমি কী ক্রমাগত অবোধ হয়ে যাচ্ছি। বোধহীন মানুষের মতো। মানুষ সেরা। বোধহীন হতে হতে মানুষ পশুদের দলে ভিড়েছে। আমিও কী বোধহীন পশু হয়ে যাচ্ছি! না! আমি মানুষ সর্বসেরা মানুষ। আমার স্বপ্ন আছে। স্বপ্নের বেসাতি আছে। স্বপ্নের সংসার আছে। সন্তান আছে। আমিও স্বপ্ন দেখি আরেক সকালের। সকালের দোয়েল আমার স্বপ্ন সাথী। মানুষ আসলে শেষ পর্যন্ত কই যায়? চারিদিকে মানুষের এত বাহার! স্বপ্নসাথী করে বাহারী রকমের মানুষ কই যায়! একমাত্র মানুষই বোল পাল্টায়। রং পাল্টায়। পাল্টাপাল্টির এ খেলায় মানুষ সময়ে মানুষ হয়। অসময়ে অমানুষ। আমি একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। স্বপ্ন মুঠি করে স্বপ্ন বপন করে চলি।

যদিও মাঝেমাঝে এই আমি হতাশার রাজ্যে ঢুকে পড়ি। নৈরাশ্য অথবা হতাশা আমার শিরায় শিরায়। যেনবা কখনো মৃত্যুকে স্পর্শ করে ফেলি! যমরাজ আমাকে নিতে এসেছে। আমি তখন যমরাজকে অনুনয় বিনয় করে বলি যাও। আমার স্বপ্নপূরণের বাকী আছে। যমরাজ অনুন্যাপায় হয়ে চলে যায়। আবার নিজেকে স্বপ্নের সামনে দাঁড় করাই। স্বপ্নবাজি করে পথ চলি আরেকটি ভোরের ইংগীতে। আমাকে আর কোনো হতাশা ছুঁতে পারে না। আমি আবার স্বপ্ন বুনতে থাকি। স্বপ্নের কী হাত আছে পা আছে চোখ আছে মাথা আছে! স্বপ্নের আরেক নাম জীবন। জীবন সংগ্রাম মনুষ্য জীবের স্বধর্ম। স্বধর্মের পথ ধরে স্বপ্ন আসে। সেই স্বপ্নের পাকাপোক্ত ভিত যিনি রচনা করতে পারেন তিনিই মানব থেকে মহামানব অথবা মহামানবী হয়ে উঠেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের ভিত গড়ার কারিগর তিনিই তো হয়ে উঠেন সময় থেকে সময়ে মহামানবী।

বহু স্বপ্নের কারিগর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে ভালোবাসেন। তাঁর কাছ থেকে আমরা শিখে নিয়েছি কিভাবে স্বপ্ন দেখতে হয় এবং তা রুপ দিতে হয়। সত্যি কী স্বপ্নের কৌশল শিখেছি নাকি এ মুখের বুলি। না-এ মুখের বুলি নয়। সত্যিই স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে শিখে ফেলেছি। ঠেকতে ঠেকতে শিখে নিয়েছি যুদ্ধের রণকৌশল।

আমরা কোথায় যাচ্ছি। কোনদিকে যাচ্ছি। ধর্মের লেবাসে চলে দিন-রাত্রি। যেখানে মানবধর্ম হবে সবার আরাধণা সেখানে আমরা শুধু ভাগ করছিÑহিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খৃষ্টান। আমরা মানুষ নই। আমরা হিন্দু। আমরা মুসলিম। আমরা বৌদ্ধ। আমরা খৃষ্টান। মানুষ হতে গিয়ে বানর হয়ে গেছি আমরা। তিনবেলা শুধু লম্ফঝম্ফ। ধর্মের আরাধনায় মানুষ হতে গিয়ে ছিটকে পরছি আমরা। মানুষতো নই এক একটি জানোয়ার। যার কোনো স্বপ্ন নেই। নেই স্বপ্নপূরণের বাসনা। স্বপ্নও আজ লেবাসধারী। ধর্ম ধর্ম করে হানাহানি মারামারি কাটাকাটি করছি। মানুষ হতে পারলাম না। একবার আমরা মানুষ হতে পারলেই সমাজ পাল্টে যেতো। মানুষ স্বপ্ন দেখতো। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে হাঁটছেন। আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছেন এভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়। এভাবে স্বপ্নের বাস্তবরুপটা দেখতে হয়। চারিদিকে যুদ্ধের দামামা বাজছে। খাদ্যের যোগান না দিয়ে আমরা খালি অস্ত্র কিনছি। চারিদিকে হাহাকার বাড়ছে। অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতো মানুষ! মানুষ দেখিনা কোনো। কেবলি মুখোশে ভরা চারদিক। কে আসল কে নকল বোঝা যায় না। তবুও স্বপ্ন দেখি আমরা। শেখ হাসিনার পথকে অনুসরণ করে। তাই তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে-ধর্ম যার যার উৎসব সবার। একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র চাই আমরা।চাই ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্রের মূল ধর্ম হবে মানবতা। মানবতার সিঁড়ি বেয়ে আমরা পৌঁছে যাবো ধর্ম-বর্ণগোত্রহীন সমাজ ব্যবস্থায়। ভুলে যাবো হিংসা দ্বেষ। উন্নয়নের ধারায় আমরা হবো হিরাক্লিস। দ্বন্দ্বকে সাম্যে রুপান্তরিত করবো। সাম্যে সাম্যে আমরা মিলিত হবো জীবন স্রোত। আনন্দের ফুল ফোটাবো আমরা। যেখানে থাকবে না কোনো হতাশা।

আশার বিরান মাঠে সোনা ফলাবো। পুনরায় দেশ হবে নদীমাতৃক। নদীর তটে তটে সভ্যতা গড়ে উঠবে। সকলের মুখে হাসি। গান আর গান। আবার জারি সারি আসরে আসরে মাতাবে। গাজীর গানে ভরে উঠবে উঠোন। রামযাত্রায় কুলনারীরা খুঁজে পাবে ঈশ্বররুপ কৃষ্ণকে। স্বামীরুপে কৃষ্ণকে। আবার উঠোনে উঠোনে ভরে উঠবে ধান। স্বপ্নের বীজ বপে বপে মুখোশহীন মানুষ হবে মা-নুষ। বন্দরে বন্দরে ছেয়ে যাবে দেশ। ঈশান কোণে দেখি তাই সাদা মেঘের খেলা। তাই সোনায় সোনায় ভেসে যাই আমরা। বিশ্বকর্মার কামারশালায় একদিন সোনার বাংলা রচিত হবেই। কাল থেকে কালে। অসময় থেকে সুসময়ে। ওই চেয়ে দেখো আমাদের সময় ফিরেছে। এক দুই তিন করে সোনার সিঁড়িতে পা রাখি। আবার রচিত হবে নতুন কোনো লেখকের হাতে নতুন করে সোনার বাংলা। অভিন্ন কলম কালিতে। আসছে। সময় আসছে। ধেয়ে আসছে সময়। আমাদের মুখ নাই কোনো! আছে। তাই তো রোদেলা বাতাস জানান দিয়ে যায় সুসময় আসছে।

লেখক : শিক্ষক ও নাট্যকার।

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test