E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অগ্নিকাণ্ড! ‘দুর্ঘটনা’ নাকি ‘নাশকতা’

২০২৩ এপ্রিল ০৪ ১৬:১২:৩৩
অগ্নিকাণ্ড! ‘দুর্ঘটনা’ নাকি ‘নাশকতা’

রহিম আব্দুর রহিম


৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০মিনিটের দিকে ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। খবর পাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট। বেলা ১১টা নাগাদ ৫০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করে।এরপরও আগুন বেপরোয়া, ৫০টি ইউনিটের সাথে যোগ দেয়, বাংলাদেশ সেনা ও বিমান বাহিনীর সাহায্যকারী ও নৌবাহিনীর সম্মিলিত দল। আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়েছে বাহিনীর হেলিকপ্টার ইউনিট ও জলকামান। আধুনিক যুগে আগুন নেভানো বা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা বা অসক্ষমতার হিসাব মিলানোর আগে বহু আপদ বিপদের দেশে ফি বছর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্র কোথায়? তার হিসাব মেলানো এখন সময়ের দাবী।  

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত ৫ বছরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৪শ ৯২টি। এসব ঘটনায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৫'শ ২৩ কোটি টাকা। গত বছর (২০২২) আগুন লাগার ঘটনায় ক্ষতি হয়েছে ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। বিগত ১০ বছরে ক্ষতির পরিমান সোয়া ৪হাজার কোটি টাকারও বেশী। ২০১৯ সালের ২০ ফ্রেবুয়ারি রাজধানীর চকবাজার এলাকায় আগুন লেগে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত দুই শতাধিক। ২০১২ থেকে ২০২২এর ফ্রেবুয়ারি পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হয়েছে ১১৭৬জন। এরমধ্যে, ২০১২ সালে ২১০ জন, ২০১৩ সালে ১৬১ জন, ২০১৪ সালে ৭০ জন, ২০১৫ সালে ৬৮ জন, ২০১৬ সালে ৫২ জন, ২০১৭ সালে ৪৫ জন, ২০১৮ সালে ১৩০ জন, ২০১৯ সালে ১২০ জন, ২০২০ সালে ১৫৩ জন, ২০২১ সালে ৬০ জন, ২০২২ সালে ১০৬ জন। এসময়ের আহতের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। আগুন লাগার গতানুগতিক তথ্যাদি, শহরের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, লিকেজ গ্যাস লাইন কিংবা দাহ পদার্থ।

গ্রামের ক্ষেত্রে যে তথ্যাদি অসাবধানতার জন্যে চুলা বা খড়ের আগুন। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ভাষ্যও খুবই সহজ-সরল, "অসাবধানতায় অগ্নিকান্ডের প্রধান কারণ, এক্ষেত্রে জনসচেনতা বাড়ানোর জন্য ট্রেনিং দরকার। আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা পর্যাপ্ত।" তাদের এই ভাষ্য যদি সত্য হয়, তবে ট্রেনিং এর জন্য বরাদ্দ জরুরী, এরপর যা হবার তাই। বাংলাদেশে যত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তাতে গতানুগতিক তথ্যাদির বাইরে কোন অনুসন্ধানী তথ্যাদি সরকার সংশ্লিষ্ট কিংবা সাংবাদিক বন্ধুরা খুঁজে বের করতে পারি নি। উদঘাটন হয়নি কারণ বা রহস্য। মামলা মোকদ্দমার তো প্রশ্নই আসে না। কখনও তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তার প্রতিবেদন অপ্রকাশিত। দুর্ঘটনাজনিত আগুন লাগা, নৌকা ডুবি, সড়কে রক্ত ঝরতেই পারে। প্রাকৃতিক কারণে ভূমিকম্প, ঝড়, জলোজ্জ্বাস, বন্যা খরা হতেই পারে। এই বলে প্রতিবছর প্রতিক্ষণ!

বাংলাদেশের মানুষের আদর্শ, স্বভাব-চরিত্র, ক্ষোভ, হিংসা-প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ বা রিপুর তাড়নায় কোন ব্যক্তিমহল, গোষ্ঠী দ্বারা নাশকতা ঘটছে কি না তা ক্ষতিয়ে দেখার দায়িত্বই সরকারকেই নিতে হবে। দেশের বিভিন্ন কারখানা, স্থাপনা বা হাটে-বাজারে যেসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, তার অন্তরালে অনেক জানা-অজানা ঘটনা-অঘটনা, রহস্য-অনারহস্য থাকতেই পারে। লেখাটি যখন তৈয়ার করছিলাম, তখন একটি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, "আগুন থেকে রক্ষা করা মালামাল চুরি হবার অভিযোগ করেছেন একজন ব্যবসায়ী।" আর ভোঁতা তদন্ত কমিটি নয়, সম্পদ ও জীবন রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজন শক্তিশালী রহস্য উদঘাটন কমিটি।

লেখক : শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সংগঠক।

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test