E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শব্দকল্পদ্রুম

২০১৪ অক্টোবর ২৪ ০০:৪৬:৫৩
শব্দকল্পদ্রুম

মুহম্মদ জাফর ইকবাল :

ঠিক কীভাবে এটা শুরু হয়েছে তার খুটিনাটি মনে নেই। সারা পৃথিবীতেই বানানের একটা প্রতিযোগিতা হয়-আমাদের দেশেও হয়েছে তবে সেটা বাংলার জন্য নয়- ইংরেজীর জন্য। খুব চমত্কার আয়োজন কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে মনটা ভরে যায়। তখনই সম্ভবত মনে হয়েছিল বাংলার জন্য এরকম একটা আয়োজন কী আরো বেশি প্রয়োজন নয়? ইংরেজী বানানের মাঝে একটা শৃঙ্খলা আছে, বাংলা বানান নিয়ে আমি নিজেই হাবুডুবু খেয়ে যাই, ছেলেবেলায় একরকম বানান লিখেছি, এখন অন্যভাবে লেখা হয়। চেনা শব্দগুলো কেমনজানি অচেনা মনে হয়। আমি সেটা নিয়ে মোটেও অভিযোগ করছি না, ভাষা থেকে জীবন্ত আর কিছু পৃথিবীতে নেই। যেই ভাষা যত বেশি জীবন্ত সেই ভাষায় তত বেশি পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনে ভাষা ততবেশি সমৃদ্ধ হয়। কাজেই পরিবর্তন নিয়ে বুড়ো মানুষের মত অভিযোগ করা যাবে না।

কাজেই দেশের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাংলা বানানের প্রতিযোগিতা একটা সুন্দর বিষয় হতে পারে, কিন্তু সমস্যা হলো সেটা আয়োজন করবে কে? আমাদের দেশের সংবাদপত্র এরকম অনেক কিছু আয়োজন করে কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে যখন একটি সংবাদপত্র এরকম কিছু আয়োজন করায় সাহায্য করে তখন অন্য সব পত্রিকা সেটাকে রীতিমত বয়কট করে। রীতিমত ছেলেমানুষী ব্যাপার, চমৎকার আয়োজনগুলো পর্যন্ত কেমন জানি একঘরে হয়ে যায়। তবে আমাদের বাংলা বানান প্রতিযোগিতার বেলায় সমস্যাটার সমাধান খুব সহজে হয়ে গেল, বাংলাদেশের বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা এই উদ্যোগটি নিতে রাজী হল।

পিপীলিকা আমাদের জন্য নুতন কিছু নয়- আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ গবেষকরাই এটা তৈরি করেছে। এক অর্থে এটি আমাদেরই প্রতিষ্ঠান। সাথে আছে এক সময়কার জিপিআইটি, যেটি বর্তমানে accenture! আমার জানা মতে পিপীলিকা এক অর্থে এই দেশে একটা বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটা ইন্ডাস্ট্রির প্রথম যৌথ একটা উদ্যোগ।

কোনো কিছু শুরু করতে হলে তার একটা নাম দিতে হয়; তাই বাংলা বানান প্রতিযোগিতাটিরও একটা নাম দরকার। যারা এটা আয়োজন করেছে তারা চিন্তা-ভাবনা করে এর নাম দিয়েছে ‘শব্দকল্পদ্রুম’ -এর থেকে যথাযথ নাম হওয়া সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। আমাদের প্রজন্মের সবাই শব্দকল্পদ্রুম শব্দটির সাথে পরিচিত সুকুমার রায়ের এই নামে একটি কবিতার কারণে। (কবিতার প্রথম দুটি লাইন এরকম: ঠাস্ ঠাস্ দ্রুম দ্রুম, শুনে লাগে খটকা-/ ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা!) তবে শব্দকল্পদ্রুমের আরো একটি পরিচয় আছে, দ্রুম মানে বৃক্ষ বা গাছ। কল্পদ্রুম বা কল্পতরু মানে এমন একটি গাছ যার কাছে যা-ই চাওয়া যায় সেটাই পাওয়া যায়। তাই শব্দকল্পদ্রুম মানে শব্দের একটি কল্পতরু অর্থাৎ তার কাছে যে কোনো শব্দ চাইলেই সেই শব্দটি পাওয়া যাবে। সোজা কথায় সেটি হচ্ছে অভিধান বা ডিকশনারি। সত্যি কথা বলতে কী রাধাকান্ত দেব নামে একজন খুব জ্ঞানী মানুষ চল্লিশ বছর খাটাখাটনী করে ১৮১৯ খ্রীষ্টাব্দে শব্দকল্পদ্রুম নামে একটা বাংলা অভিধান তৈরি করেছিলেন। আমাদের বাংলা বানান প্রতিযোগিতার নামকরণ করার পর আমরা আবিষ্কার করলাম ঠিক এই নামে হায়াৎ মামুদ একটা অসাধারণ বই লিখেছেন। শুদ্ধভাবে বাংলা লেখা শেখার জন্য এই দেশের কিশোর-কিশোরীদের জন্য এর থেকে চমৎকার কোনো বই আমার চোখে পড়েনি।

তথ্য প্রযুক্তির কারণে সারা পৃথিবীতেই বানানের একটা সর্বনাশ হয়ে গেছে। একটা সময় ছিল যখন কিছু একটা করতে চাইলে বানানটি শুদ্ধভাবে লিখতে হতো- আজকাল তার আর দরকার হয় না। ভুলভাল একটা বানান লিখলেও সার্চ ইঞ্জিনগুলো ঠিকঠাক উত্তর দিয়ে দেয়। অন্যদের কথা জানি না, আমি নিজেও গুগল ব্যবহার করতে হলে শুদ্ধ বানান লেখার জন্য এতো ব্যস্ত হই না- আলসেমী করে কাছাকাছি একটা লিখে বসে থাকি। বাংলার জন্যও আজকাল সেটা ঘটতে যাচ্ছে- তাই আমরা ঠিক করেছি, আমাদের পিপীলিকা সার্চ ইঞ্জিনে কেউ ভুল বানান লিখলে তাকে অন্ততপক্ষে শুদ্ধ বানানটি জানিয়ে দেয়া হবে। এক অর্থে পিপীলিকা সার্চ ইঞ্জিনকে ইচ্ছে করলে বাংলা অভিধান কিংবা শব্দকল্পদ্রুম হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। কাজটি অনেক সহজ হতো যদি বাংলা একাডেমি তাদের অভিধানের শব্দগুলো আমাদের ব্যবহার করতে দিতো। এখন আমাদের প্রায় বিশ হাজার শব্দ নুতন করে টাইপ করতে হচ্ছে।

এটি সত্যি একসময় ভাষার জন্য সকল কাজকর্ম গবেষণা করতেন ভাষাবিদেরা, আজকাল তার পরিবর্তন হয়েছে- এখন তথ্য প্রযুক্তিবিদেরাও ভাষার জন্য কাজ করে। আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই যখন দেখি বাংলাকে কম্পিউটারে ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলা ভাষার বিচিত্র বিচিত্র দিকে রীতিমত বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছে! যে বিষয়গুলো শুধু ভাষাবিদেরা জানতেন, যেগুলো নিয়ে কথা বলতেন, আজকাল আমার ছাত্র-ছাত্রী কিংবা তরুণ-শিক্ষকেরা সেগুলো নিয়ে কথা বলে। দেখে খুব ভালো লাগে তবে সত্যি সত্যি যদি বাংলা বানান প্রতিযোগিতার যদি সত্যিকারের একটা উদ্যোগ নিতে হয়, তাহলে সেখানে আমাদের দেশের বড় বড় ভাষাবিদ-লেখক-সাহিত্যিকদের একটু সাহায্য নেয়া দরকার। দেশের বড় বড় মানুষেরা বড় বড় কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাই ধরেই নিয়েছিলাম তাদের সমর্থন পাব কিন্তু তারা হয়তো সত্যিকার অর্থে আমাদের সাহায্য করতে পারবেন না।

কিন্তু আমি খুব বিস্ময়ের সাথে আবিষ্কার করলাম এই দেশের বড় বড় ভাষাবিদ-কবি-সাহিত্যিক লেখকেরা আমাদের অনেক সময় দিলেন। তাদের সাথে কথা বলে শব্দকল্পদ্রুমকে শুধু বানানের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে বাংলা ভাষার জন্য ভালোবাসার একটা উদ্যোগ হিসেবে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা করা হলো। শুধু ঢাকা শহরে না করে সারা দেশে করার ইচ্ছে; কিন্তু ব্যাপারটা কেমন হবে তার কোনো ধারণা নেই, তাই পরিকল্পনা করা হলো প্রথমে চট্টগ্রামে একটা পরীক্ষামূলক পর্ব করে দেখা হবে। সেই অভিজ্ঞতা যদি ভালো হয় তখন সারা দেশে তার আয়োজন করা যেতে পারে।

গত শুক্রবার ১৭ অক্টোবর এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে শনিবার সারাদিন চট্টগ্রাম শহরের সেন্টপ্লাসিড স্কুলে শব্দকল্পদ্রুমের আয়োজন করা হলো। অন্যদের কথা জানি না, এই দুটি দিন অসংখ্য শিশু-কিশোরের সাথে থেকে আমি অপূর্ব কিছু সময় কাটিয়েছি।

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এই দেশের শিশু-কিশোরদের কাছে খুব প্রিয় একটি নাম, তাকে কোনোভাবে একটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত করাতে পারলেই সেই অনুষ্ঠান সফল হয়ে যায়। শব্দকল্পদ্রুমে শুধু আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার নন, শিশু-কিশোরদের প্রিয় লেখক আলী ইমাম এবং ভাষাবিদ হায়াৎ মামুদও ঢাকা থেকে চলে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার উপস্থিত প্রায় বারোশত শিশু-কিশোরের সাথে গল্প করে আমাদের মাতৃভাষার কথা বললেন। সাধারণত তার বক্তব্যের পর অন্য কেউ কথা বলতে সাহস পায় না কিন্তু আমাদের অনুষ্ঠানে একটা অসাধারণ ঘটনা ঘটে গেল। তার বক্তব্যের পর হুইল চেয়ারে বসে বসে সাবরিনা সুলতানা শিশু-কিশোরদের বোঝালো কেন আমাদের দেশে হুইল চেয়ারে বসে থাকা শিশুই হোক, কিংবা বাক বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুই হোক সবারই স্কুলে যাবার অধিকার আছে। সাবরিনা সুলতানা এতো সুন্দর করে কথা বলেছে যে, সব শিশু মন্ত্রমুগ্ধের মতো কথা শুনেছে! আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এই শিশুগুলো যখন বড় হবে, বড় বড় দায়িত্ব নেবে তখন কিন্তু তারা এই দেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেবে।

শব্দকল্পদ্রুমে বানান এবং ভাষার মজার মজার অনেক কিছু নিয়ে ঘণ্টাখানেকের একটা লিখিত পরীক্ষার মতো হয়েছিল। বাংলাদেশের শিশুদের জন্য এই ধরনের অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, নানা ধরনের অলিম্পিয়াড হয়। তবে আমার ধারণা, এই প্রথম একটি প্রতিযোগিতা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েরা অংশ নিয়েছে এবং ব্রেইলে উত্তর লিখে দিয়েছে। আমার খুব আনন্দ লেগেছে যখন দেখেছি, তাদের বাংলা বানানের জ্ঞান অন্যান্য ছেলে-মেয়ের তুলনায় যথেষ্ট ভালো।

ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের অনুষ্ঠানে আমরা সবসময়ই তাদেরকে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ করে দেই- যারা এ ধরনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছে তারা জানে, কতো বিচিত্র ধরনের প্রশ্ন দিয়ে তারা বড় বড় মানুষদের নাস্তানাবুদ করে দেয়। ভাগ্যিস সেখানে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, আলী ইমাম এবং হায়াৎ মামুদের মতো মানুষেরা ছিলেন, তাই তাদের বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তর দেয়া গেছে। কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হয়নি- মানুষ মারা গেলে কেন সেটাকে ‘পটল তোলা’ বলা হয়, সেরকম একটা প্রশ্ন। দোয়েল পাখি থেকে কাক অনেক বেশি, তাহলে জাতীয় পাখি কাক কেন হলো না- সেরকম আরেকটি প্রশ্ন! (সাথে সাথেই কাক আর দোয়েল পাখি নিয়ে ভোটাভুটি করে অবশ্যি দোয়েল পাখিকেই জাতীয় পাখির সম্মান দিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছিল।)

সব প্রশ্নই যে মজার প্রশ্ন ছিল তা নয়, কিছু কিছু প্রশ্ন আমাদের লজ্জিত করেছে, ব্যথিত করেছে। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছেলে আমাদের জিজ্ঞেস করল ভাষা মতিনের মতো একজন মানুষ যিনি মৃত্যুর পর নিজের চোখ পর্যন্ত দান করে গেছেন তাকে কেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হল না? আমাদের কাছে মাথা নিচু করে থাকা ছাড়া এই প্রশ্নের আর কোনো উত্তর ছিল না।

প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার দেয়া হয়- দেখে মনে হতে পারে এটি বুঝি খুব আনন্দের একটা অংশ, আসলে এই অংশটি আমার কাছে একটু দুঃখের। যারা পুরস্কার পায় তাদের আনন্দ থেকে আমাকে বেশি দুঃখ দেয় যারা পুরস্কার পায়নি বলে মন খারাপ করে। সেজন্য এধরনের অনুষ্ঠানে আমি সবসময়ই বাচ্চাদের বোঝানোর চেষ্টা করি প্রতিযোগিতা বিষয়টা আসলে খুব ভালো কিছু নয়। পৃথিবীর কোনো বড় কাজ প্রতিযোগিতা দিয়ে হয় না, সব বড় কাজ হয় সহযোগিতা দিয়ে। এই যে বাংলা ভাষার জন্য ভালোবাসার অনুষ্ঠান শব্দকল্পদ্রুম-এর আয়োজন করার জন্যও অনেক ভলান্টিয়ার দিন-রাত কাজ করেছে। ভলান্টিয়ারদের খুঁজে বের করা হয়েছে ইন্টারনেটে ঘোষণা দিয়ে। আমি নিজের চোখে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস করতাম না যে, শুধু ইন্টারনেটের ঘোষণা দেখে এতোগুলো ছেলে-মেয়ে কাজ করার জন্য চলে এসেছে। (ফিরে আসার বাসের সময়টা হঠাৎ করে এগিয়ে নিয়ে আসায় আমার হঠাৎ করে চলে আসতে হয়েছে বলে এই ভলান্টিয়ারদের ঠিক করে ধন্যবাদ পর্যন্ত দিয়ে আসতে পারিনি!)

কোনো অনুষ্ঠানে গেলে আমাকে বাচ্চাদের অনেক অটোগ্রাফ দিতে হয়। আজকাল শুধু অটোগ্রাফ শেষ হয় না, তার সাথে সাথে ফটোগ্রাফও তোলা হয়। শুধু ফটোগ্রাফে শেষ হয়ে যায় না- সেলফি তুলতে হয়। যারা এখনো শব্দটার সাথে পরিচিত হয়নি তাদের বলে দেই, নিজের ছবি নিজে তোলার নাম সেলফি, আগে ডিকশনারিতে এই শব্দটি ছিল না, এখন যোগ করা হয়েছে।

ডিকশনারিতে নতুন শব্দ যোগ করা যায় তার এরকম জলজ্যান্ত উদাহরণ আছে বলে শব্দকল্পদ্রুমে আমরা ছেলে-মেয়েদের নতুন শব্দ তৈরি করারও একটা সুযোগ করে দিয়েছিলাম। প্রথমবার বলে আমরাই পাঁচ ধরনের মানুষের কথা বলেছি। প্রথমটি ছিল, যার সত্যিকারের বন্ধু নেই, সব ফেসবুকের বন্ধু! এ ধরনের মানুষের ছেলে-মেয়েরা অনেক বিচিত্র নাম নিয়ে এসেছে। কয়েকটা এরকম ফেসবুকানী, ফেস-পোকা কিংবা আলে-বন্দের! ঠিক এরকম, যে শিক্ষক ক্লাসে পড়ায় না কিন্তু কোচিংয়ে পড়ায় তার নাম দিয়েছে ল্যাম্পো মাস্টার, কোচিক্ষক কিংবা লোভীক্ষক। যে দিনরাত কম্পিউটারে গেম খেলে, তাকে বলেছে গেমখিলাড়ি কিংবা গেমাবাবু। পাকিস্তান-বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলায় যে পাকিস্তানকে সাপোর্ট করে তাদেরকে বেশিরভাগই রাজাকার ডেকেছে। এছাড়াও আছে পাকিংলাদেশি এবং বাংকিস্তানি! যে ভাত খেতে চায় না শুধু ফ্রাইড চিকেন খেতে চায় তাদেরকে নাম দিয়েছে হাভাতে চিকেন কিংবা খুবই সংক্ষেপে চিকু! নিছক মজা করার জন্যই এই নতুন শব্দের জন্ম। কিন্তু কে বলবে একদিন হয়তো এরকম একটা শব্দ ডিকশনারিতে স্থান পেয়ে যাবে।

২.
এতোক্ষণ যে কথাগুলো বলেছি সেটা হচ্ছে ভূমিকা, এবারে আসল বক্তব্যে আসি। আমরা দিন-রাত বাংলায় কথা বলি বলে এই ভাষাটি কী অসাধারণ সেটা সবসময় লক্ষ্য করি না। কম্পিউটারে বাংলা ভাষার স্থান করে দিতে গিয়ে আমি নিজে অনেক কিছু প্রথমবারের মতো আবিষ্কার করেছি, যেগুলো ভাষাবিদেরা বহুদিন থেকে জানেন যারা একটু সচ্ছল তারা বাংলা থেকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে ইংরেজীতে। অনেক পরিবারেই ছেলে-মেয়েদের পাওয়া যাবে যারা বাংলা পড়তে পর্যন্ত চায় না। অনেকেই বাংলা পড়তে চাইলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প পড়তে চায় না। অনেক ছোট ছোট শিশু টেলিভিশনের সামনে বসে বসে বাংলা শেখার আগে হিন্দি শিখে বড় হচ্ছে। টেলিভিশনে এক ধরনের বিচিত্র বাংলা উচ্চারণ আছে।

রেডিওতে সেটি আরো ভয়াবহ। আজকাল সবচেয়ে সস্তা মোবাইল টেলিফোনেও বাংলা লেখা যায় কিন্তু বেশিরভাগ এসএমএস লেখা হয় ইংরেজী হরফে। ইচ্ছে করলে এই তালিকা আরো অনেক দীর্ঘ করা যায় কিন্তু মন খারাপ করা কথা লিখতে ভালো লাগে না।

তাই আমার মনে হয়, যারা বড় হয়ে গেছে তাদেরকে হয়তো বাংলা ভাষা নিয়ে আর উৎসাহিত করা যাবে না। কিন্তু যারা ছোট তাদের ভেতরে নিশ্চয়ই নতুন করে একটা ভালোবাসার জন্ম দেয়া সম্ভব। সবাই মিলে সেই কাজটাই শুরু করে দেই না কেন?

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট.

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test