E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের পাকড়াও করার সময় এসেছে

২০২৩ এপ্রিল ০৫ ১৬:০৫:৩০
ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের পাকড়াও করার সময় এসেছে

চৌধুরী আবদুল হান্নান


খেলাপি ঋণ বর্তমানে এমন নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে যে, ব্যাংক ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার ভাবনা এখন মরীচিকা এবং এ খাতটি প্রকৃতই দুষ্টদের অভয়ারণ্য। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিরা, তারা ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা বের করে নিয়ে আর ব্যাংকমুখী হন না, ঋণ পরিশোধে করার তোয়াক্কা করেন না। অতীতে কাউকে শক্ত করে ধরা হয়নি বলে দিনে দিনে তাদের দৌরাত্ম্য সীমা অতিক্রম করে গেছে। তারা এমনিতেই ক্ষমতাশালী, তারপর ব্যাংকের বিপুল টাকা হাতে আসার পর আরও বেশি ক্ষমতার অধিকারী। অবস্থাটা এমন পর্যায়ে গেছে যে, তারা এখন ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকারদেরই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান।

পক্ষান্তরে ভালো গ্রাহক ব্যবসায়ীরা কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন এবং ব্যাংকের স্বাভাবিক সুবিধা পেতেই তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। টাকা মানুষের শুধু ক্ষমতাই বাড়ায় না, বেপরোয়াও করে। আর যে টাকা কষ্টার্জিত নয়, এমনি এমনি হাতে এসেছে সে টাকার ক্ষমতা অনেক ব্যাপক।

সামর্থ আছে, ব্যবসাও ভালো চলছে কিন্ত ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছেন না, তারাই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। ব্যাংকের নিজের কোনো টাকা নেই, আমানতকারীদের জমা টাকা দিয়েই তারা ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে ।জনগণের জমা টাকা এভাবে অপাত্রে চলে যাচ্ছে কিন্ত ফেরত আসছে না এবং তারা একটি ভয়াবহ বার্তা ধারণ করেন যে, ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করলে কিছু হয় না, তাদের ধরার ক্ষমতাও ব্যাংকের নেই।

পরিশ্রম ছাড়া প্রাপ্ত অর্থ বাজার অস্থিরতা সৃষ্টি করে যার অভিঘাত সামাল দিতে হয় প্রতিটি নাগরিককে। এ সকল ঋণ খেলাপিরা সাধারণ নাগরিকদের জিম্মি করে রেখেছেন আর তারা ব্যাংকের অর্থ বিদেশে পাচার করছেন, বিলাসী জীবন যাপন করছেন। এমন ধারা সহ্য করার ক্ষমতা কারও থাকার কথা নয়।

অঢেল টাকা থাকার সুবাদে সমাজে তারা অনেকটা উঁচু আসনে সমাসীন এবং মানুষ প্রকৃত চেহারা চিনতে না পেরে তাদের সমীহও করে। যারা জনগণের অর্থ আত্মসাতকারী, বিদেশে অর্থ পাচারকারী, অর্থনীতির রক্ত শোষণকারী তারা তো “হোয়াইট কালার ক্রিমিনাল”। তাদের কেন মানুষ সমীহ করবে, সম্মানের চোখে দেখবে?

সমাজ যাতে অন্তত ঘৃণার চোখে দেখে সে জন্য তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। তাদের চিহ্নত করার এ দায়িত্বটা দেশের সচেতন মানুষদের নিতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ অর্থ লোপাটকারীদের দিকে ঘৃণাভরে তাকায়।

গতানুগতিক মিষ্ট, মধুর কথা বলে তাদের পাকড়াও করা করা যাবে না, যত দ্রুত সম্ভব তাদের আইনের জালে আটকাতে হবে।পুলিশ যেমন দাগী আসামিকে খুঁজে, প্রয়োজনে তেমনি ঋণ খেলাপিকে খুঁজবে।

যে ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হয়েছে, আদায়ের মূল দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে, সরকারের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যাংকের ঋণ আদায় করে দিতে আসবে না। আদালতে মামলা দায়ের করে বসে থাকলে চলবে না, পিছনে দৌঁড়াতে হবে।

ব্যাংক ম্যানেজার এবং সংশ্লিষ্ট আইনজীবী আন্তরিক হলে ব্যাংক ঋণ আদায়ে আদালতে ভালো ফল পাওয়া যায়। ব্যাংকিং পেশায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, টাকা আদায়ের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করার পর অনেক ব্যাংক ম্যানেজার মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীর ওপর দায়িত্ব দিয়ে নিজের দায়িত্ব এড়াতে চান। ফলে মামলা কেবল চলতেই থাকে, শেষ আর হয় না।

পত্রিকায় খবরে প্রকাশ, চট্টগ্রাম অন্চলে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করে প্রভাবশালী গ্রাহকদের কাছথেকে ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে আশাতীত সাফল্য পাওয়া গেছে। প্রাইম ব্যাংকের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির তিন ঘন্টার মধ্যে ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ করে জামিন নিয়েছেন এক ব্যবসায়ী।

জেল খাটা থেকে বাঁচতে ১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ তাৎক্ষণিক ফেরত দিয়েছে মেসার্স লোটাস করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এভাবে চাপে পড়ে বহু বছর যাবৎ খেলাপি হয়ে থাকা ১২শ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ করেছেন এই অঞ্চলের ৬৪২ ঋণ খেলাপিরা (সমকাল ০১ এপ্রিল, ২০২৩)।

আদালতের কঠোর অবস্থানের কারণেই প্রভাবশালী ঋণ খেলাপিরা বাধ্য হয়েছেন ঋণ পরিশোধ করতে। চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতের এ অনন্য কার্যধারা দেশের সব অঞ্চলের ব্যাংকারগণকে অনুপ্রাণিত করবে এবং সেক্ষেত্রে তাদের উচিৎ হবে ওই অঞ্চলের ব্যাংকারদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে এ কাজে অবিলম্ব অগ্রণী হওয়া। তাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে অভুতপূর্ব সাফল্য বলে আমার নিশ্চিত বিশ্বাস।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test