E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে স্বপ্ন পুড়ে ছাই, বাতাসে শুধু কান্নার আওয়াজ 

২০২৩ এপ্রিল ০৬ ১৫:৪৮:০০
বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে স্বপ্ন পুড়ে ছাই, বাতাসে শুধু কান্নার আওয়াজ 

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


ভয়াবহ এক আগুন দেখল দেশবাসী। দেশবাসী নয়, পুরো বিশ্ব দেখল সে আগুন। ভয়াবহ সে আগুনে পুড়ে ছাই হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত কাপড়ের বাজার, বঙ্গবাজার। ক্ষুদ্রার্থে বঙ্গবাজার পুড়লেও, বৃহদার্থে বঙ্গবাজার নামের আড়ালে পুড়ল চারটি বড় কাপড়ের মার্কেট। দোকান মালিকদের দাবি, এ ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার।

৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুনের শুরু। সে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও, নেভেনি এখনও পুরোপুরি। সে আগুনে ছাই হয়েছে হাজার হাজার দোকানির স্বপ্ন। নিঃস্ব হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। সবহারা মানুষের কান্না আর হাহাকারে ভারী হয়েছে বাতাস।

বঙ্গবাজার। দেশের অন্যতম বৃহৎ পোশাকের মার্কেট। মধ্য রমজানে এসে ঈদুল ফিতর সামনে রেখে জমজমাট বেচাকেনার স্বপ্ন নিয়েই হয়তো মঙ্গলবার ভোরে সেহেরির পর ঘুমিয়েছিলেন সেই মার্কেটের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী। সে ঘুম শেষ করতে পারেননি তারা। ডাক-চিৎকারে যখন ঘুম ভেঙেছে, ততক্ষণে তাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়েছে গোটা বঙ্গবাজার। বেচাকেনার স্বপ্ন তো দূরের কথা, দোকানে দোকানে জীবিকার যে সম্বল, তার কিছুই অবশিষ্ট নেই।

দোকানের মালামাল পুড়ে গেছে প্রায় সবই, মার্কেটের সামনে জমে গেছে সেই ছাইয়ের স্তূপ জীবিকার সম্বল হারানোর কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে বঙ্গবাজার এলাকার বাতাসসব হারানো মানুষগুলো এমন কান্নায় ভেঙে পড়েন, কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন!সবাই জানেন, আর পাওয়ার কিছু নেই। তবু ধ্বংসস্তূপে চলে সন্ধান, কিছু যদি মেলে!

আগুনের খবর পাওয়ার ২ মিনিটের মাথায়ই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় প্রথম ফায়ার ইউনিটটি। এক একে প্রায় অর্ধশতাধিক ফায়ার ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। আগুনের ভয়াবহতা টের পেয়ে সেনা, বিমান, নৌবাহিনী ছোটে ঘটনাস্থল লক্ষ্য করে। পাশে দাঁড়ায় বিজিবি, আসে র‍্যাব।

অসংখ্য মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম, চেষ্টা, প্রার্থনা, কান্না আর ভয়াবহ ধ্বংসযঘ্জের পর অবশেষে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। সাড়ে ছয় ঘণ্টা ধরে জ্বলে সব পুড়িয়ে অঙ্গার করে প্রায় নিভে আসে। তবে এখনও ধিকি ধিকি জ্বলছে, ধ্বংসস্তূপে। সব পুড়ে শেষ হওয়া পর্যন্ত এ আগুন নিভবে না।

জানা গেছে, শুধু বঙ্গবাজার কাঠের মার্কেটেই দোকান রয়েছে আড়াই হাজারের মতো। সামনে ঈদ। সবাই ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনার পণ্য তুলেছিলেন দোকানে। আগুন কেড়ে নিল সব।

এখন আর ব্যবসায়ীদের পুঁজি বলতে কিছু থাকল না। তাদের পক্ষে কথা বলেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, রমজানের ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়ীদের যেন সাত শ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দাবি, এলাকাটি অর্থাৎ পুরো মার্কেটপ্লেসটি ২০১৯ সালই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। মার্কেটসংশ্লিষ্টদের এ জন্য ১০বার নোটিস করা হয়েছিল বলেও দাবি করা হয় দপ্তরটির মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে ভয়ানক ওই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন নেভাতে দিনভর সেখানে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার বাহিনীসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আগুনের ভয়াবহতার এক পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে হামলা ও নির্বিচারে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও আগুন ও ধোঁয়ায় আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতজন। যাদের মধ্যে একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগেও ১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুড়েছিল বঙ্গবাজার। পরে নতুন করে গড়ে তোলা হয় ওই মার্কেট। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই আগুনে বঙ্গবাজারের গুলিস্তান ইউনিটের কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্তদের হাহাকার: পোড়া ছাইয়ের মাঝে সর্বশেষ সম্বল খুঁজে বেড়াতে দেখা গেছে অনেককে। ঘটনাস্থলের পাশে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কান্না-আহাজারিও ছিল ব্যাপক। এ ছাড়া আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই পাশের দুটি মার্কেটের পোশাক পণ্যগুলো অধিকাংশই সরিয়ে ফেলা হয়। যেগুলো বঙ্গমার্কেটের চারপাশে এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাস্তা ও ফাঁকা স্থানে রেখে পাহারা দিচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে এর মাঝেও অনেক পণ্য চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অনেক ব্যবসায়ী।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বঙ্গবাজারের আগুন: ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রয়টার্স, এপি, আলজাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান ও সিজিটিএন, ডেকান হেরাল্ড, আল আরাবিয়া নিউজ, আরব নিউজ, হিন্দুস্তান টাইমসসহ প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা ও সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে পথে বসা ব্যবসায়ীরা কী আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন? কবে আবার তাদের মুখে ফুটবে হাসি?

বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তার আশ্বাসে ব্যবসায়ীদের মনে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার ঘটেছে, হয়তো সময়ের আবর্তনে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি, নতুন করে স্বপ্ন বুননে এগিয়ে যাবে। আবারও মাথা উঠে দুর্বার গতিতে ছুটবে জীবনের সারথি।

লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test