E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘যামু কই’?

২০২৩ এপ্রিল ০৮ ১৪:৫৭:২২
‘যামু কই’?

শিতাংশু গুহ


চট্টগ্রামের একটি স্কুলের দেয়ালে সাঁটা মনীষীদের ছবি রমজান মাসে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এমনিতে মনীষীদের ছবি ঢেকে দিলে কিচ্ছু আসতো-যেতো না, মনীষীদের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র ছবি আছে, তাই এটি নিয়ে কিছুটা হৈচৈ হচ্ছে। সরকার কি করবেন কেজানে! কিছু মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী হৈচৈ করছেন, কারণ বাতাস অনুকূলে। যাঁরা মনীষীদের কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছে তাঁরা নারীকে ঢাকছে, বিধর্মীদের ঢাকতে চাচ্ছে, একদিন হয়তো পুরো দেশটা ঢেকে দেবে।

বঙ্গবাজারে আগুনে বহু ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সবার যখন তাঁদের পাশে দাঁড়ানো দরকার, তখন বেশ ক’টি মিডিয়া ‘জনস্বার্থে’ আগুন নেভানোর দোয়া প্রকাশ করেছে। ভিডিও দেখা যাচ্ছে একজন হুজুর দোয়া পড়ে বালু ছিটিয়ে আগুন নিভাতে চেষ্টা করছেন। দু’জন খুঁজে বের করেছেন যে, সবকিছু পুড়ে ছারখার হলেও কোরান ও বুখারী শরীফ পুড়েনি। এক ‘আহাম্মক’ হিন্দুও খুঁজে পেয়েছেন যে, গীতা পুড়েনি। এটাই বাস্তবতা, ‘যামু কই’?

ক’দিন আগে অভিনেতা মামুনুর রশিদ ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’-র কথা বললেন। মামুনুল হক যখন বিখ্যাত, মাশরাফি বিন মুর্তজা তখন বললেন, ‘আপনি নড়াইল এলেন জানলে তো আপ্যায়ন করতে পারতাম, আপনাদের আমরা শ্রদ্ধা করি’। মামুনুল হক এখন জেলে, মাশরাফি’র সেই শ্রদ্ধা আছে কিনা জানিনা, তবে রুচির দুর্ভিক্ষ ছিলোনা? জাস্টিশিয়া সুপ্রিমকোর্টের সামনে থেকে পেছনে গেলে বা আবদুল জলিল ‘মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ স্বাক্ষর করলে অথবা শফি হুজুর আপ্যায়িত হলে রুচির দুর্ভিক্ষ হয়নি!

দেশ মদিনা সনদ অনুসারে চলছে। এতে মনীষীরা কালো কাপড়ে ঢাকা পড়লে কি আসে যায়! রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করাটা দরকার। মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে দেখা যায়, রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় এক হিন্দু দোকানীকে কান ধরে উঠবস করানো হচ্ছে, আর এক হিন্দুকে পেটানো হচ্ছে, কারণ তাঁরা দোকান খুলেছিলো। এক রেস্তোরায় সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে, ‘হিন্দু ভোজনালয়, রমজান মাসে মুসলমানরা দয়া করে ঢুকবেন না’। এক মন্দিরে নামাজের সময়সূচী ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে আজান ও নামাজের সময় মন্দিরের ঘন্টা না বাজে।

সবই রমজানের পবিত্রতার জন্যে। তাই মনীষীদের ছবি ঢেকে দেয়াটা কি খুবই বেমানান? সরকার যথেষ্ট ইসলাম দরদী, এক মন্ত্রী তা বর্ণনা দিতে ৫৬০টি আধুনিক মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণের কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন্। সরকার ইসলামের সেবা করলে জনগণ কেন তা করতে পারবে না? ‘সেবা’র সংজ্ঞা তো সবার কাছে একরকম হবার কথা নয়? কেউ মাদ্রাসা বানিয়ে সেবা করছেন, কেউ হিন্দু পিটিয়ে, কেউবা মনীষীদের ছবি ঢেকে দিয়ে! সবারই উদ্দেশ্য মহৎ, লক্ষ্য এক ও অভিন্ন, ‘সেবা’।

কাজেই মনীষীদের ছবি ঢেকে দেয়া হয়েছে বলে হইচই-এর কিছু নেই, বরং এদের নেতাকে পুরুস্কৃত করা দরকার, সৃজনশীল চিন্তার জন্যে ২০২৪-এ গবেষণায় তাঁকে ‘একুশে পদক’ দেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত। নিকট অতীতে এ দৃষ্টান্ত আছে! দেশে সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে, এক্ষেত্র বঞ্চিত থাকবে কেন? ঢাকার একটি দৈনিক হেডিং করেছে, ‘রিয়াজ-তারিন-সুইটিরা প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিল চান’, আমার ধারণায় এটিও ‘চিন্তাধারার উন্নতি’- সামনে নির্বাচন, যদি ‘টিকিট’ লাইগ্যা যায়!

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test