E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার নতুন রাষ্ট্রপতির

২০২৩ এপ্রিল ২৫ ১৪:৩২:৩২
নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার নতুন রাষ্ট্রপতির

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে  শপথ গ্রহণ করেছেন মো. সাহাবুদ্দিন।পরবর্তী ৫ বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করবেন। নতুন রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ২৪ এপ্রিল সোমবার সকাল ১১টা থেকে বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে রাষ্ট্রপতির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোটবোন শেখ রেহানা, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সামরিক-বেসামরিক আমলারা।

২৪ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণ করলেন মো. সাহাবুদ্দিন। ২৩ এপ্রিল রোববার দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্বিতীয় পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করেছেন আবদুল হামিদ।শপথ গ্রহণের পরপরই নতুন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ার বদল করেছেন। নতুন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা ও ছেলে আরশাদ আদনান রনিসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ৭৩ বছর বয়সী মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরুর আগে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে স্বাগত জানান।

সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। বেলা ১১টায় শপথ গ্রহণ করেন নতুন রাষ্ট্রপতি।

মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংক পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম চুপ্পু। পিতা শরফুদ্দিন আনছারী, মাতা খায়রুন্নেসা। তিনি ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

রাষ্ট্রপতির দায়িত্বগ্রহণের আগে মো. সাহাবুদ্দিন ছিলেন পেশায় একজন আইনজীবী এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য। তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইতিপূর্বে জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।

তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মো. সাহাবুদ্দিন ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীর দ্বারা সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও তিনি ছাত্র জীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৫ সালে সংঘটিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কারাবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মো. সাহাবুদ্দিন ব্যক্তিগত জীবনে এক সন্তানের পিতা এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন।
উল্লেখ্য ২১ তম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে ৪১ দিনসহ টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ১০ বছর ৪১ দিন রাষ্ট্রপতির চেয়ারে ছিলেন।

স্বাধীনতার ৫১ তম বর্ষে ২২ তম রাষ্ট্রপতি

স্বাধীনতার পর গত একান্ন বছরে যারা সরকার প্রধান ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ রাষ্ট্রপতি, কেউ প্রধানমন্ত্রী, কেউ প্রধান উপদেষ্টা আবার কেউ সামরিক শাসন জারি করে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেছেন। তবে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২১ জন। মো. সাহাবুদ্দিন চুপপুকে এই দায়িত্বে ২২তম রাষ্ট্রপতি পাচ্ছেন বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার করে রাষ্ট্রপতি হোন। আবার ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পুনপ্রবর্তন করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কারা কারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের নাম-তালিকা নিম্নে তুলে ধরা হয়েছে। ০১। শেখ মুজিবুর রহমান : ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ মোট ২৭০ দিন।০২। সৈয়দ নজরুল ইসলাম : ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ মোট ২৭০ দিন। (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি)।০৩। আবু সাঈদ চৌধুরী : ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩ মোট এক বছর, ৩৪৬ দিন।০৪। মোহাম্মদউল্লাহ : ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩ থেকে ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৪ মোট ১ বছর, ৩৪ দিন। (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি)।০৫। মোহাম্মদউল্লাহ : ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৪ থেকে ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ মোট ৩৬৩ দিন।০৬। শেখ মুজিবুর রহমান : ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ মোট ২০২ দিন।০৭। খন্দকার মোশতাক আহমেদ : ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ মোট ৮৩ দিন।০৮। আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম : ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ থেকে ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ মোট এক বছর, ১৬৬ দিন।০৯। জিয়াউর রহমান : ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ থেকে ৩০ মে ১৯৮১ মোট চার বছর, ৩৯ দিন।

১০। আবদুস সাত্তার : ৩০ মে ১৯৮১ থেকে ২০ নভেম্বর ১৯৮১ (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি)

১১। আবদুস সাত্তার : ২০ নভেম্বর ১৯৮১ থেকে ২৪ মার্চ ১৯৮২ মোট ২৯৮ দিন।পদ খালি (২৪ – ২৭ মার্চ ১৯৮২)।১২। আ ফ ম আহসানউদ্দিন চৌধুরী : ২৭ মার্চ ১৯৮২ থেকে ১০ ডিসেম্বর ১৯৮৩ মোট ১ বছর, ২৫৮ দিন।১৩। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ : ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ মোট ৬ বছর, ৩৬০ দিন।১৪। শাহাবুদ্দিন আহমেদ : ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ থেকে ১০ অক্টোবর ১৯৯১ মোট ৩০৮ দিন।১৫। আবদুর রহমান বিশ্বাস : ১০ অক্টোবর ১৯৯১ থেকে ৯ অক্টোবর ১৯৯৬ মোট চার বছর, ৩৬৫ দিন।১৬। শাহাবুদ্দিন আহমেদ : ৯ অক্টোবর ১৯৯৬ থেকে ১৪ নভেম্বর ২০০১ মোট পাঁচ বছর, ৩৬ দিন।১৭। এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী : ১৪ নভেম্বর ২০০১ থেকে ২১ জুন ২০০২ মোট ২১৯ দিন।১৮। জমির উদ্দিন সরকার : ২১ জুন ২০০২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২ মোট ৭৭ দিন।
১৯। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ : ৬ সেপ্টেম্বর ২০০২ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ মোট ছয় বছর, ১৫৯ দিন।২০। জিল্লুর রহমান : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ থেকে ২০ মার্চ ২০১৩ মোট ৪ বছর, ৩৬ দিন।২১। মো. আবদুল হামিদ : ১৪ মার্চ ২০১৩ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত।২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

পরিশেষে বলতে চাই, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অভিষিক্ত। এ অর্জন ধরে রাখতে হলে যে স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক গতিশীলতা প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে পারে দেশের রাজনীতি। রাজনীতিবিদদের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্ত দেশকে গভীর সংকটে ফেলে দিতে পারে। দেশের এমন অবস্থায় মো.সাহাবুদ্দিনের মতো একজন রাষ্ট্রপতি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করেছেন। ফলে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয় থাকার কথা। আমরা আশা করি, তাঁর অভিভাবকত্ব আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।এইজন্য অভিনন্দন- মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো.সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে। সবচেয়ে বেশি অভিনন্দন পাওয়ার অধিকার যিনি রাখেন তিনি হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন।
রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তা আবারো প্রমাণিত হলো। তিনি শুধু বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরী। তার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।

আরেকটি যুগান্তকারী মাইলফলক আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে ঘিরে যার অধীনে ও নির্দেশনায় পরিচালিত হবে নির্বাচন, তিনি হলেন ২২ তম রাষ্ট্রপতি মো.সাহাবুদ্দিন চুপ্প। তিনি শুধু একজন ব্যক্তিই নন, তার প্রথম পরিচয় তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। একজন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি তাঁর বুকে লালন করেন দেশপ্রেম- আর সেই দেশপ্রেম প্রমাণের মহেন্দ্রক্ষণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হবে এটাই জাতির প্রত্যাশা।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test