E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শ্রমিকের পেশাগত নিরাপদ কর্মপরিবেশ চাই

২০২৩ এপ্রিল ২৭ ১৭:১২:১৭
শ্রমিকের পেশাগত নিরাপদ কর্মপরিবেশ চাই

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


২৮ এপ্রিল আন্তর্জাতিক পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস ২০২৩। ২০০৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আই এল ও) এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দিবসটি পালন করে আসছে। ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড এবং ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধস ও ব্যাপক প্রাণহানির পর বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হতে থাকে। মূলত রানা প্লাজা ধসের বিষয়টি স্মরণে রেখে বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শিকার, আহত বা নিহত শ্রমিকদের পেশাগত ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৬ সাল থেকে দিবসটি পালন হয়ে আসছে।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সব শেষ ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, দেশে মোট শ্রমশক্তি রয়েছে পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে কাজ করছে পাঁচ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে বস্ত্র ও পোশাক খাতে কাজ করে ৪০ লাখ শ্রমিক। এই পরিসংখ্যানেও দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক শ্রমিক পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে।

শ্রম আইন ২০০৬ এর ৫১ হতে ৯৯ ধারা সমূহে শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। শ্রম আইনের উক্ত ধারা সমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কলকারখানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, শ্রমিকদের যাতে স্বাস্থ্য হানি না ঘটে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ও যথাযথ তাপমাত্রা বজায় রাখা, প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য অন্তত ৯.৫ কিউবিক মিটার পরিমাণ জায়গার ব্যবস্থা করা, পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা, মহিলা এবং পুরুষ শ্রমিকদের জন্য পৃথকভাবে সৌচাগার ও প্রক্ষালণ কক্ষের ব্যবস্থা করা মালিকের দায়িত্ব। একই সাথে শ্রমিকের ক্ষতি হতে পারে এমন কোন ভারী জিনিস উত্তোলন, বহন অথবা নাড়াচাড়া করতে না দেয়ার ব্যাপারেও শ্রম আইনে উল্লেখ রয়েছে।
শ্রমিকের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অগ্নি দুর্ঘটনার কারণে অথবা অন্য কোন জরুরি প্রয়োজনে বহির্গমনের জন্য প্রত্যেক তলার সাথে সংযোগ রক্ষাকারী অন্তত একটি বিকল্প সিঁড়িসহ বহির্গমনের উপায় এবং প্রত্যেক তলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা উচিৎ।

কাজ চলাকালীন প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে কোন কক্ষ হতে বহির্গমনের পথ তালাবদ্ধ বা আটকে রাখা যাবে না। কোন দরজা স্লাইডিং টাইপের না হলে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তা বাইরের দিকে খোলা যায়, অথবা যদি কোন দরজা দুটি কক্ষের মাঝখানে হয়, তাহলে তা ভবনের নিকটতম বহির্গমন পথের কাছাকাছি দিকে খোলার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বহির্গমনের পথ বাধাগ্রস্ত কিংবা পথে কোন প্রতিবন্ধকতাও তৈরি করা যাবে না।

প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে সাধারণ বহির্গমনের জন্য ব্যবহৃত পথ ব্যতীত অগ্নিকাণ্ডকালে বহির্গমনের জন্য ব্যবহার করা যাবে- এরূপ প্রত্যেক জানালা, দরজা বা অন্য কোন বহির্গমন পথ স্পষ্টভাবে লাল রং দ্বারা বাংলা অক্ষরে অথবা অন্য কোন সহজবোধ্য প্রকারে চিহ্নিত করতে হবে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে, এতে কর্মরত প্রত্যেক শ্রমিককে অগ্নিকাণ্ডের বা বিপদের সময় তৎসম্পর্কে হুঁশিয়ার করার জন্য, স্পষ্টভাবে শ্রবণযোগ্য হুঁশিয়ারী সংকেতের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কক্ষে কর্মরত শ্রমিকগণের অগ্নিকাণ্ডের সময় বিভিন্ন বহির্গমন পথে পৌঁছার সহায়ক একটি অবাধ পথের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পঞ্চাশ বা ততধিক শ্রমিক/কর্মচারী সম্বলিত কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার আয়োজন করতে হবে, এবং এই বিষয়ে মালিক কর্তৃক নির্ধারিত পন্থায় একটি রেকর্ড বুক সংরক্ষণ করতে হবে।

কোন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক যদি দেখতে পান যে, উহার কোন ভবন বা যন্ত্রপাতি বিপজ্জনক অবস্থায় আছে এবং তা যে কোন সময় কোন শ্রমিকের শারীরিক জখম প্রাপ্তির কারণ হতে পারে, সে ক্ষেত্রে তিনি অবিলম্বে লিখিতভাবে মালিককে অবহিত করবেন। মালিক অবহিত হওয়ার তিন দিনের মধ্যে তৎসম্পর্কে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে এবং উক্ত ভবন বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার কারণে কোন শ্রমিক যদি জখম প্রাপ্ত হন তাহলে মালিক, অনুরূপ জখম প্রাপ্ত শ্রমিককে দ্বাদশ অধ্যায়ের অধীন উক্তরূপ জখমের জন্য প্রদেয় ক্ষতিপূরণের দ্বিগুণ হারে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন।

কোন কর্মক্ষেত্র বিশেষ করে যন্ত্রপাতি বা কাজের ধরন ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে, নিয়োগ কর্তাকে সর্বপ্রথমে ঝুঁকি সমূহ দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে শ্রমিকদেরকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি সরবরাহ করে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় সচেতনতার অভাবে কিংবা অনভ্যাসের কারণে শ্রমিকরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি ব্যবহার করতে অনীহা প্রকাশ করে। তাই শ্রমিকদেরকে ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত করে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি ব্যবহারের গুরুত্ব অবহিত করণ পূর্বক নিয়মিত প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। পেশাগত স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এমন শ্রমিকদের নিয়মিত মেডিকেল চেকআপের মধ্যে রাখতে হবে। যদি কোন শ্রমিক পেশাগত রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে হবে।

এমন কি কোন প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কর্মরত নয় কিন্তু পূর্বে কাজ করার কারণেও যদি কোন শ্রমিক পেশাগত রোগে আক্রান্ত হন অথবা আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে হয়, তাহলে শ্রম আইনের ধারা ৮২(২) মতে উক্ত শ্রমিকের চিকিৎসার দায়িত্বও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তার। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে কোন নতুন নিয়োগ দেয়ার আগে ঝুঁকি সম্পর্কে শ্রমিককে অবহিত করে নিয়োগ দান করা প্রত্যেক নিয়োগ কর্তার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। শ্রম আইনের ১৫১ ধারা ও তফশীল ৫ অনুসারে কর্মস্থলে দুর্ঘটনাজনিত কারণে শ্রমিক মারা গেলে ২ লক্ষ টাকা এবং স্থায়ীভাবে সম্পূর্ণ কর্ম অক্ষম হলে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, আংশিক অক্ষম হলে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার আনুপাতিক হারে ক্ষতিপূরণ, অস্থায়ীভাবে কাজ করতে অক্ষম হলে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত শ্রমিক মজুরি পাবে। তবে প্রথম ২ মাস পূর্ণ মজুরি, পরবর্তী ২ মাস দুই তৃতীয়াংশ এবং পরবর্তী ৮ মাস অর্ধেক হারে মজুরি পাবে। আবার পেশাগত রোগে আক্রান্ত হলে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত অর্ধেক হারে মজুরি পাবে। কিন্তু শ্রম আইনে বর্ণিত ক্ষতিপূরণ সমূহ আন্তর্জাতিক মানের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই শ্রম আইনে বর্ণিত প্রদেয় ক্ষতিপূরণের পরিবর্তে এর ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা উচিৎ বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করে। এই ধরনের ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্তৃক প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন খুবই জরুরি বলে মনে করি।

জাতিসংঘ ২০১৬ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নির্ধারিত সময় সীমার এক তৃতীয়াংশ সময় অতিবাহিত হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭টি লক্ষ্যের ৮ নম্বর লক্ষ্য হচ্ছে শোভন কাজ বাস্তবায়ন। শোভন কাজের অন্যতম শর্ত হচ্ছে কর্মক্ষত্রে শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নিয়োগ কর্তার লক্ষনীয় বিষয়

কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সেবা এবং নিরাপত্তা সুবিধা প্রতিটি শ্রমিকের বৈধ এবং আইনগত অধিকার। শ্রমিকদেরকের একটি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর কর্ম পরিবেশ প্রদান করতে হবে এবং কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপদ পরিবেশের অনুশীলন উন্নত করতে হবে। শ্রম আইন ২০০৬ এর অধীনে অন্তর্ভুক্ত পেশাগত স্বাস্থ্যসেবা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো হলঃ পরিচ্ছনতা, বায়ু চলাচল এবং তাপমাত্রা ব্যবস্থা, কৃত্তিম আর্দ্রকরণ, জনবহুলতা, আলোর ব্যবস্থা, অগ্নি সংক্রান্ত ঘটনা, অতিরিক্ত ওজন, বিল্ডিং এবং যন্ত্রপাতির সুরক্ষা, যন্ত্রপাতিকে ঘেরাও করা, চলমান যন্ত্রপাতির উপর বা কাছাকাছি কাজ করা, বিস্ফোরক বা দাহ্য গ্যাস ও ধুলা, বিপজ্জনক ধোয়ার বিরুদ্ধে সতর্কতা, ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম, ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা।(শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৫১-৯৯, সংশোধিত ২০১৩)

বিনামূল্যে সুরক্ষা

শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারা আছে যা কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত কর্মীদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারের বিধান উল্ল্যেখ করে। শ্রমিকের চোখের নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত চশমা বা চোখের আবরনের ব্যবস্থা থাকতে হবে যেখানে উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে উৎক্ষিপ্ত বা বিচ্ছুরিত কণা বা টুকরা থেকে অথবা অতিমাত্রায় আলো বা উত্তাপের কারণে চোখের ক্ষতির আশংকা থাকে। যেখানে শারীরিক আঘাত, বিষক্রিয়া বা গুরুত্বর রোগের সম্ভাবনা আছে এমন কোন ক্ষতিকর অপারেশনের ক্ষেত্রে, কর্মরত প্রতিটি শ্রমিকের জন্য সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা অথবা কাজটি যেখানে হচ্ছে তার কাছাকাছি জায়গায়, এবং অপারেশনে ব্যবহারিত সরঞ্জামের ব্যবহার অথবা অপারেশনের সাথে সম্পর্কিত প্রক্রিয়া এবং নোটিশের মাধ্যমে কোন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে জানানো এইসব বিষয় নিয়োগকর্তার দায়িত্বের মধ্যে পরে। ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য সরঞ্জাম দেওয়া সত্ত্বেও, এটি ব্যবহার না করা হলে তার দায়িত্ব শ্রমিকের নিজের হবে।

প্রশিক্ষণ

একজন নিয়োগকর্তা তার অধীনস্ত কর্মীদেরকে স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার উপর একটি বাস্তব এবং প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষন প্রদান করতে এবং কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য একটি সুরক্ষিত এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকে। একজন নিয়োগকর্তাকে কর্মক্ষেত্রে প্রশিক্ষন প্রদানের মাধ্যমে শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শারীরিক আঘাত, বিষক্রিয়া বা গুরুত্বর রোগের ঝুঁকি আছে এই ধরণের বিপদজনক অপারেশনের

ক্ষেত্রে, এটি নিয়োগকর্তার দায়িত্বের অধীনে পরে যে সেই অপারেশনে নিযুক্ত শ্রমিকের পর্যায়ক্রমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা এবং কাজের জন্য উপযুক্ত হিসেবে প্রমানিত না হলে তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। এই ধরণের অপারেশন এবং বিপজ্জনক মেশিনের কাজের সাথে নিযুক্ত কর্মীদেরকে অবশ্যই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন প্রদান করতে হবে এবং তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।(শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৪০(১খ),৭৮(ক৩),৭৯(গ), সংশোধিত ২০১৩) আর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের বিধান অনুযায়ী যেসব কল-কারখানা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ৫০ বা তার অধিক শ্রমিক নিয়োজিত আছেন, তাদের সেফটি কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আইনের এসব বিধান অধিকাংশ কল-কারখানাই মানছে না, যার কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বাড়ছে।

কারখানা নির্মাণের চেকলিস্ট থাকে। চেকলিস্ট অনুযায়ী কারখানায় অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ক্ষেত্রে বেশকিছু কাজ ও নিয়ম মানার বিষয় থাকে। এক্ষেত্রে কারখানা শুরুর আগের কিছু বিষয় থাকে, কিছু বিষয় কারখানা চলমান বা চালু অবস্থায় করতে হয়। এটা কারখানার ধরন ও অবস্থার আলোকে হয়ে থাকে। যেমন কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রেড লাইসেন্স, কারখানা লে-আউট প্ল্যান, পরিবেশ ছাড়পত্র, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের জন্য রাস্তা, প্রয়োজনীয় জেনারেটর, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা, পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শ্রমিকদের প্রবেশ ও বহির্গমনসহ মালিকদের ২০১৫ সালের শ্রম আইন ও বিধি বিধানসহ কতগুলো পূর্বশর্ত মানতে হয়। এসব ঠিকঠাক করে কারখানা প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই), ফায়ার সার্ভিস ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (বিডা) যথাযথ কর্তৃপক্ষের তদারকি ও কার্যকর পরিদর্শন হলে কারখানার টেকসই পরিবেশ রক্ষা ও অগ্নির ঘটনা ও বিস্ফোরণসহ নানা ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে পরিদর্শনের আলোকে অগ্নি ও অন্যান্য দুর্ঘটনা নিরোধের বিদ্যমান অবস্থা পর্যালোচনা করতে হবে। নিতে হবে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, যাতে কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হয়। এটি করা না গেলে বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি নেতিবাচকই থেকে যাবে। পোশাক রফতানিসহ আমাদের চামড়া রফতানি, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, জুতা ও বাইসাইকেলসহ রফতানি পণ্যগুলো বিদেশে নির্বিঘ্নে রফতানিতে যে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, তাতে সব কারখানা ও তার পরিবেশের প্রতিবন্ধকতা দূরকল্পে সরকারি নীতিসহায়তা ও তদারকি আরো জোরদার করা উচিত।

পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের সবার মনে রাখতে হবে – জীবনের জন্য কাজ, কাজের জন্য জীবন নয়। নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যয়ের প্রতি মালিকপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যয় মূলত মূলধনী খরচ বা বিনিয়োগ। এটা কখনোই অতিরিক্ত খরচ বা অপচয় নয়। নিরাপদ কর্ম পরিবেশ শুধু শ্রমিকের জীবন বাঁচায় না উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়ায়। ফলে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য যে কোন ধরনের খরচ বা বিনিয়োগ, দীর্ঘমেয়াদে তা শিল্পেরই লাভ। আন্তর্জাতিক পেশাগত ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিবসে রাষ্ট্র ও মালিক পক্ষ এ বিষয়টি যথাযথভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবে এমনটিই সবার প্রত্যাশা।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test